Skip to content

মহিষের বৈশিষ্ট্য ও মহিষের জাত পরিচিতি

মহিষের বৈশিষ্ট্য ও মহিষের জাত পরিচিতি

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের কৃষি ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সার্বিক অবদানের গুরুত্ব ও মহিষের বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় মোটামুটি ৫০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকেই গরুর পরেই মহিষের স্থান। সাধারণভাবে বর্তমানে মহিষকে এশিয়ার প্রাণী বলা হয়।

ভারত উপমহাদেশের মহিষ দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে পরিচিত। এজন্য দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারতের মহিষকে দুধ উৎপাদনের মেশিন বলা হয়।

বাংলাদেশের সব এলাকেতেই মহিষ পালন করা হয়ে থাকে। তবে বিশেষ নদীর চর, সদুদ্র উপকূল দ্বীপাঞ্চলে এবং হাওর-বাঁওড় এলাকায় মহিষ পালন করা হয় বেশি। এদেশে গৃহপালিত মহিষের সংখ্যা প্রায় ১.৪৭ মিলিয়ন (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০১৫-২০১৬)।

গরু পালনের তুলনায় মহিষ পালন তুলনামূলকভাবে সহজ আর কম ব্যয় বহুল। গরু পালনের খরচের তুলনায় মহিষ পালনের ক্ষেত্রে বাসস্থান এবং খাদ্য খরচ অনেকটা কম কারণ মহিষ বালুচর আর নদী বিধৌত বাথান এলাকায় সবুজ ঘাস খেয়ে থাকে। গরুর তুলনায় মহিষের রোগবালাইও অপেক্ষাকৃত কম।

এ পাঠ শেষে আপনি- মহিষের জাতের শ্রেণীবিভাগ জানতে পারবেন। নদী ও জলাভূমির বিভিন্ন প্রকার মহিষের বৈশিষ্ট্য ও মহিষের জাত পরিচিতি জানতে পারবেন। বাংলাদেশের মহিষ সম্পর্কে জানতে পারবেন।

(১) মহিষের বৈশিষ্ট্য

মহিষের বৈশিষ্ট্য সাধারন কিছু বৈশিষ্ট্য হলো-

চিত্র- মহিষ কাদামাটি ও পানিতে গড়াগড়ি করছে
চিত্র- মহিষ কাদামাটি ও পানিতে গড়াগড়ি করছে
  • মহিষ দেখতে কালো, ধুসর অথবা বাদামী রঙের দেখা যায়।
  • মহিষ গরম সহ্য করতে পারেনা এ কারণে কাদামাটি ও পানিতে গড়াগড়ি করতে পছন্দ করে। আরামের জন্য পানি আর ছায়াযুক্ত জায়গায় থাকতে আরাম বোধ করে। দিনের মধ্যভাগে এবং সূর্যাস্তের কিছুটা আগে মহিষকে বেশ কয়েক ঘন্টা কাদাপানিতে গড়াগড়ি করে অবস্থান করতে দিতে হয়।
  • মহিষ প্রধানত হালচাষ ও গ্রামীণ পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। তবে মহিষের দুধ ও মাংস উৎকৃষ্ট খাদ্য। এ ছাড়া মহিষের গোবর জৈব সার ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মহিষের হাড় পন্যসামগ্রী যেমন বোতাম, চিরুনি ইত্যাদি তৈরি এবং গবাদি প্রাণিখাদ্য ও সার হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
  • মহিষ গড়ে ১৫ বছর বাঁচে এবং সমগ্র জীবণচক্রে প্রায় ১৬-১৭টি বাচ্চা প্রদান করে থাকে।

(২) মহিষের জাতের শ্রেণীবিভাগ

গৃহপালিত মহিষের জাতগুলোকে আবাসস্থান ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর ভিত্তি কওে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  1. জলাভূমি মহিষ বা কাদাপানির মহিষ (Swamp Buffalo) এবং
  2. নদী মহিষ বা পরিষ্কার পানির মহিষ (River Buffalo)।

জলাভূমির মহিষ মহিষের বৈশিষ্ট্য:

চিত্র- জলাভূমির মহিষ
চিত্র- জলাভূমির মহিষ
  • জলাভূমির মহিষের বুক সাধারণত চওড়া, দেহ মাংসল ও গোলাকৃতির যা দেখতে অনেকটা ব্যারেলের মতো।
  • এদের শিং বেশ চওড়া, লম্বা ও চন্দ্রাকৃতির।
  • ষাঁড় ও গাভীর ওজন সাধারণত যথাক্রমে ৫০০ ও ৪০০ কেজি।
  • ষাঁড় ও গাভীর উচ্চতা সাধারণত গড়ে ১৩৫ সে.মি, হয়ে থাকে।
  • এদের পা খাটো এবং কপাল ও মুখমন্ডল চ্যাপ্টা।
  • গায়ের রং গাঢ় ধূসর থেকে সাদা হয়।
  • চামড়ার রঙ নীলচে কালো থেকে ধূষর কালো হয়ে থাকে।
  • গলকম্বলের উপরিভাগ থেকে গলার পাদদেশে পর্যন্ত বক্রাকৃতির দাগ থাকে।
  • এরা অত্যন্ত কম দুধ উৎপাদন করে, দৈনিক গড়ে ১ লিটারের মতো যা বাছুরের জন্যই যথেষ্ট নয়।
  • এরা ৩৯৪ দিনে গড়ে মাত্র ৩৩৬ লিটার দুধ দিয়ে থাকে।
  • শারীরিক বৃদ্ধির হার কম, ফলে বয়: প্রাপ্তি বিলম্বে ঘটে; সাধারণত তিন বছরের পূর্বে পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটে না।
  • গর্ভকালে ৩২৫-৩৩০ দিন।
  • সাধারণত নিচু কর্দমাক্ত জলাভূমিতে থাকতে পছন্দ করে, কাদায় গড়াগড়ি দেয় এবং জলাভূমি ও আইলের মোটা আঁশজাতীয় ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে।
  • এরা প্রধানত শক্তির কাজেই পটু। তাই হাল, মই ও গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হয়।
  • দুধ উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম কিন্তু মাংসের জন্য ভালো।
See also  গরু, মহিষ ও ছাগলের বাসস্থান কেমন হওয়া উচিত? গরু, মহিষ ও ছাগলের ঘর নির্মাণ পদ্ধতি

নদীর মহিষ: উন্নত জাতের নদীর মহিষের মধ্যে মুররা, নিলি, রাভি, মনিপুরী, জাফরাবাদী, নাগপুরী, কুন্ডি, সুরাটি, টোডো, মন্ডা, সম্বলপুরী, টরাই, মেহসানা উল্লেখযোগ্য।

নদীর মহিষের মধ্যে মুররা, নিলি, রাভি, সুরাটি, জাফরাবাদি প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মুররা, রাভি প্রভৃতি জাতের মহিষ দুধ উৎপাদনের জন্য ভালো।

(৩) নীলি মহিষের জাত পরিচিতি (Nili)

চিত্র- নীলি জাতের মহিষ
চিত্র- নীলি জাতের মহিষ

এ জাতের মহিষের সাথে মুররা মহিষের বেশ মিল আছে। এদের অনেক বৈশিষ্ট্য প্রায় এক রকম। বিজ্ঞানীদের মতে মুররা জাত থেকেই এদের উদ্ভব হয়েছে। তবে আকার, মুখাকৃতি ও কপালের মধ্যে বেশ পার্থক্য বিদ্যমান। পাকিস্তানের মন্টগোমারি জেলার শতদ্রু নদীর উভয় পাশে এদের আদি বাসস্থান। ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে নীলি জাতের মহিষ পাওয়া যায়। শতদ্রু নদীর নীল পানির বর্ণনায় এদের নামকরণ নীলি রাখা হয়েছে।

নীলি জাতের মহিষের বৈশিষ্ট্য:

  • এদের গায়ের ও পশমের রং কালো। কিন্তু ১০-১৫% বাদামি রঙেরও দেখা যায়।
  • দেহাকৃতি মাঝারি ধরনের।
  • কপাল, মুখ, থুতনি, পা এবং লেজের অগ্রভাগে সাদা চিহ্ন দেখা যায়।
  • অনেকটা লম্বাকৃতির মাথার উপরিভাগ স্ফীত এবং দুচোখের মধ্যবর্তী স্থান একটু চাপা।
  • ওলান এবং সিনায় মাঝে মাঝে পিঙ্গল চিহৃ দেখা যায়।
  • শিং ছোট ও শক্তভাবে প্যাঁচানো ঘাড় লম্বা, চিকন ও মসৃণ।
  • ওলান উন্নত লেজ লম্বা।
  • ষাঁড় ও গাভী মহিষের গড় উচ্চতা যথাক্রমে ১৩৭ ও ১২৭ সে.মি. এবং দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১৫৭ ও ১৪৭ সে.মি. এবং যথাক্রমে ওজন ৭০০ ও ৬০০ কেজি।
  • সুস্থ নিলি রাভি মহিষ প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ২০ লিটার দুধ উৎপাদন করতে পারে।
  • মহিষ নিরীহ ও শান্তশিষ্ট বিধায় ডেইরী খামারে পালন করা যায় এবং কৃষি কাজের জন্য বেশ উপযোগী।

(৪) রাভি মহিষের জাত পরিচিতি (Ravi)

চিত্র- রাভি জাতের মহিষ
চিত্র- রাভি জাতের মহিষ

এ জাতের মহিষ দুধের জন্য প্রসিদ্ধ। পাক-ভারতের অন্তর্গত রাভি নদীর উভয় পার্শ্বে এদের আদি বাসভূমি। এজন্য এদের নাম রাভি রাখা হয়েছে। পাকিস্তানের লায়ালপুর জেলা, ওকারা, মন্টগোমারি, ভারতের গুজরাট ও চিনাব নদীর উপতাকায় এবং ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে এদের পাওয়া যায়।

See also  গরুর নামের তালিকা, ছাগলের নামের তালিকা, মহিষের নামের তালিকা, ভেড়ার নামের তালিকা, ঘোড়ার নামের তালিকা

রাভি জাতের মহিষের বৈশিষ্ট্য:

  • রাভি মহিষ বৃহদাকৃতির দেহের অধিকারী।
  • গাভীর মাথা মোটা ও ভারি।
  • মাথার মধ্যভাগ উত্তল, শিং প্রশস্ত, মোটা ও কোকড়ানো।
  • থুতনি স্পষ্ট, ওলান সুগঠিত।
  • লেজ বেশ লম্বা এবং প্রান্তদেশে সাদা লোম আছে।
  • গায়ের রং কালো, তবে কোনো সময় বাদামি রঙেরও হয়।
  • ষাঁড় ও গাভী মহিষের উচ্চতা যথাক্রমে ১৩২ ও ১২৭ সেমি এবং দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১৫৪ ও ১৪৯ সেমি এবং ওজন যথাক্রমে ৬০০ ও ৬৪৫ কেজি।
  • নীলি-রাভী মহিষ প্রথম বাচ্চা প্রসবের পর প্রতিদিন ৯-১৮ লিটার হিসাবে মোট দুধ দানকালে ২৫০দিনে প্রায় ৩৬০০ লিটার দুধ দেয়।

(৫) মুররা মহিষের জাত পরিচিতি (Murrah)

চিত্র- মুররা জাতের মহিষ
চিত্র- মুররা জাতের মহিষ

এ জাতের মহিষের উৎপত্তিস্থল ভারতের উত্তর-পশ্চিমা ল বিশেষ করে, দিল্লির আশপাশ এলাকা। বর্তমানে পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও সিন্ধুতে এ জাতের মহিষ বেশি পাওয়া যায়। এটি দুগ্ধপ্রদানকারী বিশেষ জাত।

মুররা জাতের মহিষের বৈশিষ্ট্য:

  • এদের দেহ আকারে বেশ বড় হয়।
  • শিং ছোট এবং বাঁকানো হয়।
  • গায়ের রং সাধারণত কালো হয়।
  • স্ত্রী মহিষের পিছনের তুলনায় সম্মুখ ভাগ হালকা হয়।
  • এরা দুধের জন্য প্রসিদ্ধ।
  • একটি গাভী মহিষ দিনে প্রায় ২২-২৭ লিটার দুধ দিয়ে থাকে।
  • কপাল বড়, চওড়া ও উন্নত।
  • পা খাটো, মোটা এবং ওলানগ্রন্থি খুব বড়।
  • দেহের পশ্চাৎ ভাগ অপেক্ষাকৃত চওড়া ও ভারী।
  • গাভী ও ষাঁড়ের ওজন কম বেশি ৫৬৭ ও ৫৩০ কেজি।
  • বলদ মহিষ হালচাষ ও গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হয়।
  • বাঁট লম্বা, সামনের বাঁটের চেয়ে পিছনের বাঁট লম্বা।
  • বাৎসরিক দুধ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০-৩০০০ লিটার।

(৬) মেহসানা জাতের মহিষ (Mehsana)

চিত্র- মেহসানা জাতের মহিষ
চিত্র- মেহসানা জাতের মহিষ

ভারতের গুজরাট রাজ্যের উত্তরে মেহসানা জেলা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় এ জাতের মহিষ বসবাস করে। মুরাহ্ ও সুরতি জাতের মহিষের মাধ্যে সংকরায়ণের মাধ্যমে মেহসানা জাতের মহিষের উৎপত্তি হয়েছিল।

  • মেহসানা জাতের মহিষের দেহের গড়ন মধ্যম, মুখ ও ঘাড় লম্বাটে, হালকা পা, চওড়া কপাল।
  • কালো বর্ণ, মুখ, পা ও লেজের আগায় সাদা ছাপ আছে।
  • উন্নত বাটে সমৃদ্ধ বেশ বড় ওলান, নাকের ছিদ্র বড়, গলকম্বল নেই. কাঁধ বেশ চওড়া এবং কাস্তে আকারের বাঁকা শিং।
  • মেহসানা জাতের ষাঁড় প্রায় ৫৪০ কেজি এবং গাভী-মহিষের ওজন ৩৬৫-৪৫৫ কেজি।
  • তুলনামূলকভাবে অতি অল্প বয়সে মেহসানা জাতের মহিষ বাচ্চা দেয়, প্রতিবার বাচ্চা প্রসবের পর দৈনিক ২৬ লিটার হিসাবে প্রায় ২৬৭০ লিটার দুধ দেয় এবং দুধে চর্বির পরিমাণ ৬.৫%-৯.৩%।

(৭) জাফরাবাদী মহিষ (Jafarbadi)

চিত্র- জাফরাবাদী জাতের মহিষ
চিত্র- জাফরাবাদী জাতের মহিষ

ভারতের গিরবন এবং জাফরাবাদ শহরের চারপাশে জাফরাবাদী মহিষ বসবাস করে। ভারতের গুজরাটের কুচ ও জামালনগর জেলায় এ মহিষগুলো বেশি দেখতে পাওয়া যায়।

  • দীর্ঘদেহী জাফরাবাদী জাতের এ মহিষগুলো সর্বোচ্চ ১২০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • এই জাতের মহিষের বৃহদাকৃতির দেহ, কপাল খুবই স্পষ্ট, প্রশস্ত মোটা শিং ঘাড়ের উভয় পাশে উঁচু হয়ে থাকে।
  • ঘাড় মাংসল, গলগম্বল ও ওলান সুগঠিত, শরীর দীর্ঘ ও লম্বাটে এবং গায়ের রং কালো বা গাঢ় ধূসর।
  • স্বাভাবিক ভাবে জাফরাবাদী পুরুষ ও স্ত্রী মহিষের উচ্চতা যথাক্রমে ১৪০ এবং ১৩০ সে.মি., দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১৬৭.৫ ও ১৬০ সে.মি. এবং ওজন যথাক্রমে ৫৯০ ও ৪৫০ কেজি।
  • স্ত্রী মহিষ প্রতিদিন ১৫-২০ লিটার দুধ দেয় যাতে চর্বির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে; পুরুষ মহিষ চাষাবাদ ও গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হয়।
See also  গরুর নামের তালিকা, ছাগলের নামের তালিকা, মহিষের নামের তালিকা, ভেড়ার নামের তালিকা, ঘোড়ার নামের তালিকা

(৮) সুরতি জাতের মহিষ (Shurti)

চিত্র- সুরতি জাতের মহিষ
চিত্র- সুরতি জাতের মহিষ

সুরতি জাতের মহিষ দেশী বা নাডিয়াডি নামেও পরিচিত। ভারতের গুজরাট রাজ্যের কায়রু ও বড়োদা জেলায় এ জাতের মহিষ পাওয়া যায়।

  • গায়ের রং প্রধানত কালো ও তামাটে হয়, পশমের রং তামাটে ও ধূসর বর্ণের মিশ্রণ।
  • গাভীর গলা চিকন, ষাঁড়ের গলা মোটা ও ভারী, লম্বা চওড়া মাথা।
  • শিংয়ের মধ্যস্থল বেশ উঁচু ও উত্তলাকৃতির, শিং লম্বা কাস্তের মত চ্যাপ্টা।
  • গলকম্বল-চুঁড়া থাকে না, সোজা চওড়া পিঠ, লেজ সরু লম্বা, লেজের পশম সাদা এবং ওলান বড় ও সুবিন্যস্ত।
  • সুরতি মহিষ শুধুমাত্র দুধ উৎপাদনের জন্য পালিত হয় যা দৈনিক ৬ লিটার হিসাবে প্রতি বিয়ানে ১৫৫০-১৬০০ লি. দুধ দেয় এবং দুধে চর্বির পরিমাণ প্রায় গড়ে ৭.৫%।

(৯) কুন্ডি জাতের মহিষ (Kundi)

চিত্র- কুন্ডি জাতের মহিষ
চিত্র- কুন্ডি জাতের মহিষ

কুন্ডি জাতের মহিষ পাকিস্তানের সিন্ধু এলাকায় পাওয়া যায়।

  • খাটো মোচরানো শিং, গায়ের রং গাঢ় কাল, শক্তিশালী খাটো পা, ওলান ও বাঁটের গঠন উন্নত।
  • এদের বয়োঃসন্ধি একটু দেরীতে হয়। চার-পাঁচ বৎসর বয়সে প্রথম বাচ্চা দেয় এবং প্রায় ১০ বৎসর বয়স পর্যন্ত এরা দুধ দেয়।
  • ওজন প্রায় ৬০০ কেজি, প্রতিদিন প্রায় ১০-১২ লিটার দুধ দেয়, দুধ দেয়া ছাড়া অন্য কোন কাজের জন্য তেমন উপযোগী নয় কুন্ডি জাতের মহিষ।

(১০) বাংলাদেশের মহিষ

বাংলাদেশের মহিষের কোনো উল্লেখযোগ্য জাত নেই। উপকূলীয়, হাওর এবং আখ উৎপাদনকারী এলাকাসমূহে মহিষের বিস্তৃতি তুলনামূলক ভাবে বেশি দেখা যায়।

বাংলাদেশের মহিষকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- নদী, জলাভূমি এবং নদী ও জলাভূমির মহিষের সংকর।

বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যে সমতলভূমিতে নদীর মহিষ দেখা যায়। এরা প্রধানত ভারতের দক্ষিণ, মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের মহিষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। দেশের পূর্বাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় জলাভূমির মহিষ ও সংকর মহিষের অবস্থান।

বাংলাদেশে মুররা, নিলি রাভি জাতের মহিষ সরকারী খামারে (মহিষ প্রজনন খামার, বাগেরহাট) পালন করা হয়। খুলনা সরকারি মহিষ প্রজনন কেন্দ্রে দেশ স্বাধীনের পূর্ব থেকেই পাকিস্তান থেকে নীলি-রাভী জাতের মহিষ এনে জাতোন্নয়নের কার্যক্রম চলছে।

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন প্রকার মহিষের বৈশিষ্ট্য ও মহিষের জাত পরিচিতি জানলাম।

কৃষি কাজে কর্ষণের শক্তি হিসেবে, কাছাকাছি দূরত্বে পণ্য পরিবহণের কাজে এবং মানুষের নিকটবর্তী পথ চলাচলে গাড়ি টানার জন্য, অর্থ সাশ্রয়ী ও পরিবেশ দূষণমুক্ত শক্তির প্রযোজনে, খাদ্য বস্তু হিসেবে তুলনামূলকভাবে অধিক ননী-সমৃদ্ধ দুধ আর মোটা আঁশযুক্ত মাংসের উৎস হিসেবে, জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্য জৈব সার হিসেবে হাড় ও গোবরের ব্যবহার, মানুষের ব্যবহার্য সৌখিন সামগ্রী তৈরীর জন্য শিং, হাড় ও চামড়ার ব্যবহারের জন্য মহিষ পালনের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts