আমাদের দেশে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ও দারিদ্র দূরীকরণে দুগ্ধ খামারের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
দুগ্ধ খামার স্থাপনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপই একই সুতোয় গাঁথা। খামার স্থাপনের পূর্বে যেমন বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা করে কাজ করতে হয় ঠিক তেমনি খামার স্থাপনের পর খামারের বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি দিতে হয়। দুগ্ধ খামারের মূল উৎপাদিত দ্রব্য হচ্ছে দুধ। তাই দুধ বাজারজাতকরনের ব্যবস্থা সম্পর্কেও জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
খামার স্থাপনের উদ্দেশ্যই হলো তা থেকে মুনাফা অর্জন করা। সুতরাং দুগ্ধ খামারের আয় ব্যয়ের হিসেব সম্পর্কেও জানা আবশ্যক।
যে খামারে গাভী পালন করে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য উৎপাদন করা হয় তাকে ডেইরি খামার বলে।
বাণিজ্যিক ডেইরি খামারগুলো লোকালয় থেকে দুরে উঁচু স্থানে স্থাপন করতে হবে। খামারের বিদ্যুৎ ও অন্যান্য ব্যবস্থা পর্যাপ্ত হতে হবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বাজারজাতকরনের সুবিধা থাকতে হবে। খামারে অবশ্যই উন্নত জাতের ও অধিক দুধ উৎপাদনশীল গাভী পালন করতে হবে।
এই পাঠটি পড়লে আপনি- একটি দুধালো উন্নত জাতের গাভী চেনার উপায় বা গাভীর বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করতে পারবেন।
(১) উন্নত জাতের গাভী চেনার উপায় বা গাভীর বৈশিষ্ট্য
একটি দুধালো উন্নত জাতের গাভী চেনার উপায় বা গাভীর বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- উন্নত জাতের গাভী সামঞ্জস্যপূর্ণ নিখঁত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং সুন্দর ও আকর্ষণীয় চেহারার অধিকারী হবে।
- পিছনের অংশ বেশি চওড়া এবং দাঁড়ানো অবস্থায় পিছনের পা দুটি বেশি ফাঁক থাকে।
- দেহের আকার অনুপাতে বুকের ও পেটের বেড় গভীর হয়।
- ভালজাতের গাভীর পাঁজরগুলো আলাদা এবং স্ফীত দেখায়।
- দেহ বেশ বড় এবং দেহের আকার সামনের দিকে সরু এবং পিছনের দিকে ভারী হয়।
- চামড়া পাতলা ও মসৃণ প্রকৃতির হয়।
- ভালজাতের গাভীর শরীর ঢিলেঢালা ও নাদুশ-নুদুশ হয়।
- ওলান সুগঠিত নরম, আকারে বড়, চওড়া এবং ওলান শক্তভাবে শরীরের সাথে আটকানো থাকে।
- ওলানের বাঁট চারটি সমান আকৃতির ও সমান দূরত্বে অবস্থিত হবে।
- দুধ দোহনের আগে ওলান শক্ত থাকে এবং দোহনের পর চুপসে যায়।
- ওলানের সামনে নাভীর দিকে সুস্পষ্ট ও উন্নত দুগ্ধশিরা স্পষ্ট দেখা যায়।
- উন্নত জাতের গাভীর নাকের ছিদ্র বড় ও খোলা হয়।
- একটি উন্নত ও স্বাস্থ্যবান গাভীর স্বভাব অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির হয়।
(২) উন্নত জাতের গাভী পালনের জ্ঞান অর্জন করতে নিকটবর্তী কোন বাণিজ্যিক ডেইরি খামার পরিদর্শন
বাণিজ্যিক গাভী পালন করতে হলে গাভীর জন্য ভাল বাসস্থান প্রয়োজন। বাণিজ্যিক খামার বড় রাস্তার পাশে উঁচু জায়গায় করতে হয় যাতে বৃষ্টির পানি না জমে এবং দুধ দোহনের পর তাড়াতাড়ি স্থানান্তর করা যায়।
প্রোটিনের চাহিদা পূরণে দুুধের কোন বিকল্প নেই। আর তার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে উন্নত জাতের দুধাল গাভী পালন।
একটি বাণিজ্যিক ডেইরি খামার পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে উন্নত জাতের গাভী পালনের জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন-
- প্রথমে খামার কর্তীপক্ষের নিকট থেক অনুমতি গ্রহণ করে নিকটবর্তী কোন বাণিজ্যিক ডেইরি খামর পরিদর্শনে বের হন।
- খামার বিভিন্ন জাতের গাভী এবং তাদের ঘর পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করে খাতায় নোট করুন।
- খামারের গাভীর খাদ্য প্রদান ও অন্যান্য লালন পালন ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে খাতায় লেখুন।
- গাভীর রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা ও টিকা প্রদান সম্বন্ধে খামার তত্ত্ববধায়কের নিকট থেকে জেনে নিন।
- খামারের দৈনিক কার্যক্রম, উৎপাদন, আয় ও খরচের হিসাব রেজিস্টার খাতা দেখে বুঝে নিন এবং নোট করুন।
- খামারের দুধ দোহন পদ্ধতি ও পরিমাণ জেনে নিন।
- খামারের অন্যান্য স্বাস্থ্যসম্মত পালন ব্যবস্থা খাতায় নোট করুন।
দেশী গাভী সংকরায়নের মাধ্যমে উন্নত জাতের গাভীর উদ্ভাবন করা হয়েছে। সুষম খাদ্য প্রদান ও স্বাস্থ্যসম্মত পালন ব্যাবস্থার মাধ্যমে একটি সংকর বা উন্নত জাতের গাভী হতে দৈনিক ২৫ লিটার পর্যন্ত দুধ পাওয়া যায়।
উপরোক্ত আলোচনাটি থেকে আমরা উন্নত জাতের গাভী চেনার উপায় বা গাভীর বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে জেনেছি।
উন্নত জাতের গাভী সাধারনত ত্রিকোনাকৃতির হয়। এদের দেহের আকার অনুপাতে বুকের ও পেটের বেড় গভীর হয়।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।