Skip to content

 

দুধের গরুর খাবার তালিকা ও পরিচর্যা

দুধের গরুর খাবার তালিকা ও পরিচর্যা

এ আলোচনাটি শেষ অবধি পাঠ করলে আপনি- গাভীর বা দুধের গরুর পরিচর্যা বলতে কী বোঝায় তা জানতে ও বুঝতে পারবেন। গাভী পরিচর্যার বিভিন্ন কৌশলগুলো সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন। দুধের গরুর খাবার তালিকা ও সুষম খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া জানতে পারবেন।

(১) দুধের গরুর পরিচর্যা

দুধের গরুর পরিচর্যার লক্ষ্য হলো গাভী যাতে সার্বক্ষণিত স্বাস্থ্যবতী ও কর্মক্ষম থাকে সে ব্যবস্থা করা।

গাভী পরিচর্যারজন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে। যথা- স্বাস্থ্য ও হাববাবগত পরিচর্যা, সাধারণ বদঅভ্যাস বা দোষত্রুটি নিরাময়গত পরিচর্যা, প্রজনন ও প্রসবগত পরিচর্যা এবং দোহনকালের পরিচর্যা ইত্যাদি।

ক) স্বাস্থ্য ও হাবভাবগত পরিচর্যা

স্বাস্থ্য ও হাবভাবগত পরিচর্যা বলতে সাধারণ স্বাস্থ্যোর উপর শুভ প্রতিক্রিয়া করে এমন ধরনের কর্মকান্ড সম্পাদনকে বুঝায়। যেমন-

  • গাভীর শরীর আচড়ানো (grooming),
  • ব্যায়াম, খুর কাটা,
  • শিং সাজানো ও শিংছেদন (dehorning) ইত্যাদি।

এসব পরিচর্যায় গাভীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং উৎপাদনে শুভ প্রভাব পড়ে।

খ) সাধারণ বদঅভ্যাস বা দোষত্রুটি নিরাময়

  • কোনো গাভীর মধ্যে দুধ দোহনের সময় দোহনকারিকে লাথি মারা, নিজের বাট চোষা বা ঘরের বেড়া ভাঙ্গা প্রভৃতি বদঅভ্যাস দেখা যায়। একবার এসব বদঅভ্যাস কোনো গাভীকে পেয়ে বসলে তা ঠিক করা বেশ কঠিন। তবে উপযযক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে কিছু দোষত্রুটি নিরাময় করা সম্ভব।
  • দুধ দোহনের সময় লাথি মারা সাধারণত প্রথামবার বাচ্চা দেয়া বা নবীন গাভীর (heifer) বেলায় দেখা যায়। এক্ষেত্রে গাভীর লাথি মারার প্রকৃত কারণ জেনে সে অনুযায়ী তা প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ না জেনে আন্দাজের ওপর প্রতিকারের ব্যাবস্থা নিলে গাভীর মধ্যে এটি সব সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেতে পারে। তখন সে গাভীর দুধ দোহনের জন্য শিকল বা রশি দিয়ে তা দুপা বাধা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।
  • এ রকম আরও যে সব বদঅভ্যাসের উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো নিরাময়ের কিছু পস্থা উদ্ভাবন করা যেতে পারে। যেমন- বাট চোষনের বেলায় শিকল বা ষাঁড়ের নাকে পরানোর আংটি গাভীর নাকে পরিয়ে দেয়া যায় অথবা কাঁটাযুক্ত ঠোনা বা ঠুলি চাপিয়ে দিলে গাভী বাট চুষতে পারে না।
  • বেড়া ভাঙ্গার অভ্যাস নিরাময় কঠিন, তবে আক্রমণাত্মক দোষযুক্ত হলে গাভীর নাকে শক্ত হাতে ঘুষি মারা যেতে পারে।
See also  উন্নত জাতের গাভী পালন

গ) প্রজনন ও প্রসবগত পরিচর্যা

  • গাভীর প্রজনন ও প্রবসগত পরিচর্যা করতে হলে এদের শারীরতন্ত্রের জ্ঞান থাকা আবশ্যক। গাভীর গর্ভধারণকাল ও ঋতুচক্রের দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ২৮১ ও ২১৩ দিন।
  • বাচ্চা প্রসবের ৭৫-১১০ দিনের মধ্যে গাভীকে পাল দেয়ানো উচিত। প্রসব ও পরবর্তী গর্ভধারণের মধ্যে ৬০ দিনের বেশি ছাড় দেয়ার প্রয়োজন নেই। কেননা এ সময়ের মধ্যে জরায়ু স্বাভাবিক হয়ে থায়। এসব বিষয় বিবেচনা করে গাভীর পরিচর্যা করতে হবে। এতে গাভীর দুধ উৎপাদন সঠিক হবে।
  • কোনো গাভীকে এববার করে গর্ভধারণ করাতে যে সংখ্যক পাল দিতে হয় সে সংখ্যা দিয়ে তার প্রজনন দক্ষতা (Breeding Efficiency) যাচাই করা হয়। গর্ভধারন ও প্রসবকালে গাভীকে সঠিকভাবে যত্ন ও পরিচর্যা করতে হয়। এ সময় অবহেলা ও অবজ্ঞা করলে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া গাভীর প্রজনন ও গর্ভধারণ ক্ষমতা ও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • প্রসবকাল যতই অগ্রসর হয় ততই গাভীর বহিঃযৌনাঙ্গের চামড়া মসৃণ হয়ে ওঠে। লেজের দুপাশের লিগামেন্ট অবসন্ন হয়ে পড়ে ও ওলান ফুলে ওঠে। গাভীর মধ্যে অস্থির ভাব দেখা যায়। এ সময় গাভীকে নিকটস্থ পশু হাসপাতালে নিয়ে ভেটেরিনারি সার্জনের সাহায্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয়। গাভীকে রেচক খাবার যেমন- ভুষি, ও খৈল খেতে দিতে হবে।
  • প্রসবের প্রথম লক্ষণ দেখা দিলেই গাভীকে শান্ত রেখে পর্যবেক্ষণ করা উচিত যাতে প্রাকৃতিকভাবে এবস কাজটি নির্বিঘে্ন হতে পারে। যদি ২/৩ ঘন্টা পর প্রসব প্রক্রিয়া আর অগ্রসর না হয় তাহলে নিকটস্থ ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শ নিতে হবে। এ সময় জরায়ুতে বাছুরের অবস্থান নিরীক্ষণ করা দরকার। যদি সামনের পা দুটো ও মাথার অবস্থান সামনের দিকে না হয় তাহলে ভেটেরিনারি সার্জনের সহায়তা নেয়া অপরিহার্য।
  • বাছুর ভূমিষ্ট হলে ২/৩ দিন গাভীর সাথে ছেড়ে দেয়াই উত্তম। প্রতিটি পর্যায়ে লক্ষ্যে রাখতে হবে যাতে বাছুর ও গাভী কোনো দুর্বিপাকে না পড়ে।
  • বাছুর প্রসবের পর গাভীকে খাবার ও ঈষদুষ্ণ পরিস্কার পানি পরিবেশন করতে হবে। এরপর ২/৩ দিন রেচক খাবার পরিবেশন বাঞ্জনীয়।
  • গাভীর গর্ভফুল (placcnta) না পড়া পর্যন্ত সযত্ন দৃষ্টি রাখতে হবে।
  • বাছুরের নাভী নির্জীবাণু পন্থায় কাটা প্রয়োজন।
  • বাচ্চা প্রসরের পর গাভীর ওজন কমে যায়। বেশি খাবার পরিবেশন করে ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে তা পুষিয়ে দিতে হবে।
See also  গাভী পালন পদ্ধতি

ঘ) দুগ্ধ দোহনকালের পরিচর্যা

  • দুগ্ধ দোহন নিজেই একটি অতিসংবেদনশীল প্রক্রিয়া। দোহনের মূল লক্ষ্য হলো এমনভাবে দোহন করতে হবে যাতে ওলান থেকে সম্পূর্ণ দুধ পটনে বের করে আনা যায়।
  • ওলান থেকে দুধ ছেড়ে দেয়া (let down) একটি প্রতিবর্ত ক্রিয়া যা সম্পূর্ণ দোহনে অত্যাবশ্যক। সুুতরাং সকল প্রকার ভিতিপ্রদ ও নির্যাতনমূলক পদক্ষেপ থেকে গাভীকে মুক্ত রাখতে হবে।
  • দুধ দোহনের সময় দুুটো অত্যাবশ্যক কাজ সম্পদান করতে হবে, যথা- ১। অযথা গাভীকে উত্তেজিত করা থেকে বিরত থাকা এবং ২। দ্রুততার সাথে দোহনকাজ শেষ করা।
  • দুধ দোহনকালে গাভীকে সম্পূর্ণ শান্ত ও সুস্থির রাখতে হবে। এ সময় মশামাছি উৎপাত করলে গাভীর দোহন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে। গাভী পরিচর্যার আর একটি লক্ষন হচ্ছে গাভীকে পোকামাকড় ও মশামাছি থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা।
  • তাছাড়া গাভীর পেটে যাতে কৃমির ডিম প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য খাদ্য পরিবেশনে সদাসর্তক থাকতে হবে।

(২) দুধের গরুর খাবার তালিকা

জীবনধারণের জন্য একদিকে যেমন সুষম খাদ্যের প্রয়োজন, দুধ উৎপাদনের জন্য তেমনি অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন। তাই প্রয়োজনীয় উৎপাদন পেতে হলে গাভীকে সব সময় সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

সুষম খাদ্য না খাওয়ালে গাভীর দুধ উৎপাদন কমে যাবে, গাভী দুর্বল হয়ে পড়বে। এক সময় গাভী প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ধীরে ধীরে অনুর্বর ও বন্ধ্যা হয়ে যাবে।

অপর্যাপ্ত খাদ্য খাওয়ালে গাভীর উৎপাদন ক্ষমতা লোপ পায়। তাই দুধের গরুর খাবার তালিকা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা আবশ্যক। প্রতিটি গাভীকে নিম্নোক্ত নিয়ম অনুযায়ী দৈনিক সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে।

ক) দুধের গরুর দৈনিক সুষম খাদ্য তালিকা

  1. সবুজ কাঁচা ঘাস-১৫-২০ কেজি। 
  2. শুকনা খড়-৩-৫ কেজি। 
  3. দানাদার খাদ্য মিশ্রণ-২-৩ কেজি। 
  4. লবণ-৫৫-৬০ গ্রাম। 
  5. পানি-পর্যাপ্ত পরিমাণ

খ) দুধের গরুর দানাদার খাদ্য মিশ্রণ তৈরি

গাভীর ১০ কেজি ওজনের একটি দানাদার খাদ্য মিশ্রণ তালিকা নিম্নে দেয়া হল-

  1. চাউলের কুঁড়া – ২ কেজি।
  2. গমের ভুসি – ৫ কেজি।
  3. খেসারি ভাঙা – ১ কেজি ৮০০ গ্রাম।
  4. তিল বা বাদাম বা সরিষার খৈল – ১ কেজি।
  5. লবণ – ১০০ গ্রাম।
  6. খনিজ মিশ্রণ – ০.১ কেজি।

মোট = ১০ কেজি।

(৩) গাভীকে খাবার দেওয়ার পদ্ধতি

গাভীকে যে পরিমাণ খাদ্য পরিবেশন করতে হয় তা থাম্বরুল (Thumb rule) অনুযায়ী নিরুপণ করা যেতে পারে। যেমন-

  1. প্রতি ১.৫ লিটার দুধ উৎপাদনের জন্য গাভীকে খড় ও কাচা ঘাসের সাথে প্রতিদিন ০.৫ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
  2. শুধু খড় খাওয়ালে প্রতি ১.২৫ লিটার দুধ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন ০.৫ কেজি অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য প্রদান করতে হবে।
  3. প্রতি ১০ কেজি শারীরিক ওজনের জন্য একটি গাভীর দৈনিক ২-৩ কেজি শুকনা খাদ্য গ্রহনের দরকার হয়।
  4. শুকনা খড় খাওয়ানোর পরিবর্তে যদি খড় ছোট ছোট করে কেটে খুদের ভাত বা ভাতের মাড়ের সাথে গমের ভুষি, চাউলের গুড়া, তিলের খৈল, লবণ ও কিছু ঝোলাগুড় একত্রে মিশিয়ে খাওয়ানো যায় তাহলে খাবারের পুষ্টিমান অনেক বেড়ে যাবে। ফলে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে।
  5. শুকনা খড় খাওয়ানোর পরিবর্তে খড়কে ইউরিয়া দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করেও গাভীকে খাওয়ানো যায়। এতে একদিকে যেমন গাভীর স্বাস্থ্য ভাল থাকবে অন্যদিকে উৎপাদন ভাল হবে।
  6. গমের ভুসি, ঝোলাগুড়, ইউরিয়া, লবণ, ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ সহযোগ ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক তৈরি করে গাভীকে খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যায়।
  7. গাভীকে দৈনিক প্রচুর পরিমাণে কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে। কাঁচা ঘাস না খাওয়ালে দুধ উৎপাদন কম হবে। বর্তমানে দেশে উন্নত জাতের অনেক বিদেশী ঘাস বাংলাদেশে গোখাদ্য হিসেবে চাষ করা হয়। যেমন- নেপিয়ার, পারা, জার্মান, গিনি ইত্যাদি। এসব ঘাসের ফলন বেশি এবং পুষ্টিমানও বেশি হয়। 
See also  গাভী গরুর বাসস্থান

গাভীকে থাম্বরুল অনুসারে নিম্নরুপভাবে খাবার দেয়া যেতে পারে-

  1. গাভীকে প্রতিদিন তার ইচ্ছা অনুযায়ী মোটা আঁশযুক্ত খাবার খেতে দিতে হবে।
  2. একটি দুগ্ধবিহীন দেশী জাতের গাভীকে দৈনিক ১.৫-২ কেজি দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হবে।
  3. দুগ্ধবিহীন একটি উন্নত জাতের গাভীকে দৈনিক ৩-৪ কেজি দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হবে।
  4. প্রতি গাভী থেকে ১.৫ লিটার দুধ বেশি উৎপাদন করতে চাইলে গাভীকে অন্যান্য স্বাভাবিক খাদ্যের সাথে প্রতিদিন অতিরিক্ত ১/২ কেজি দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হবে।
  5. দানাদার খাদ্য দুভাগে ভাগ করে প্রতিদিন সকাল ও বিকালে দুবার খাওয়াতে হবে।

উপরোক্ত আলোচনাটির দ্বারা আমরা দুধের গরুর খাবার তালিকা ও পরিচর্যাসমূহ সম্পর্কে জানতে পারলাম।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দুভাবে গাভী পালন করা হয়, যথা- ১। চারনভূমিতে গরু চরানোর মাধ্যমে ও ২। গোশালায় বেঁধে রেখে খাদ্য পরিবেশন ও মলমূত্র নিষ্কাশনের মাধ্যমে। আমাদের বাংলাদেশে গোশালা বা গোয়াল ঘরে গাভী পালনই সমাদ্রিত। গাভীর বাসস্থান তৈরির মূলে রয়েছে নিরাপত্তা ও দুর্যোগদুর্বিপাক থেকে আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা।

[সূত্র: ওপেন স্কুল]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page