বাছুর কাকে বলে: গরুমহিষের শৈশবকালকে বাছুর বলে। সাধারণত জন্মের পর থেকে এক বছরের কিছু বেশি বয়সের গরুমহিষের বাচ্চাই বাছুর নামে পরিচিত।
এ আলোচনাটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- বাছুরের বাসস্থানের বৈশিষ্ট্যসমূহ বলতে ও লিখতে পারবেন। বাছুরের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ লিখতে পারবেন। গরুর বাছুরের যত্ন ও কনা বাছুরের পরিচর্যার কৌশলগুলো বর্ণনা করতে পারবেন। বাছুরের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানতে পারবেন। বয়সভিত্তিতে বাছুরের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করতে পারবেন। বাছুরের রোগ দমনের সাধারণ পদক্ষেপসমূহ বর্ণনা করতে পারবেন।
দুগ্ধ খামারের ভবিষ্যত নির্ভর করে বাছুরের সন্তোষজনক অবস্থার ওপর। কারণ, আজকের বাছুরই ভবিষ্যতের দুধ উৎপাদনশীল গাভী, উন্নতমানের প্রজনন উপযোগী ষাঁড় বা মাংস উৎপাদনকারী গরু। তাই গাবাদিপশু পালনে বাছুর পালন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
(১) গরুর বাছুরের যত্ন ও বাসস্থান
আমাদের দেশে যে সংখ্যক গবাদি পশু পালিত হয় তার মধ্যে শতকরা ২৪ ভাগের ও বেশি বাছুর। নবজাত বাছুরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় এরা অত্যন্ত রোগ সংবেদনশীল হয়। এমতাবস্থায় সামান্য যত্নের অভাবে বাছুর রোগে আক্রান্ত হতে পারে ও পরবর্তীতে এর মৃত্যুও ঘটতে পারে। তাই সুস্থ সবল বাছুর পেতে হলে একদিকে যেমন গভার্ বস্থায় গাভীর সুষ্ঠু যত্ন ও পর্যাপ্ত সুষম খাদ্যের প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন প্রসবকালিন গাভীর ও নবজাত বাছুরের সঠিক যত্ন।
বাছুর পালনের কলাকৌশল সঠিকভাবে অবলম্বন না করায় প্রতিবছর বহু সংখ্যক বাছুর মার যায় এবং দেশের পশুসম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে জনসাধারণের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। তাই বাছুর পালনে যত্নবান হওয়া উচিত।
সাধারণত জন্মের পর থেকে এক বছরের কিছু বেশি বয়সের গরুমহিষের বাচ্চা বা বাছুরের শারীরবৃত্ত ও শারীরিক গঠন বৈশিষ্ট্য সাপেক্ষে বাসস্থান তৈরি করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে বাছুরের বয়স, খাদ্যভ্যাস, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ আবহাওয়া ও রোগবালাই সংক্রমণ হওয়ার সম্ভব্যতাও বিবেচনা করতে হয়।
বাছুরের বর্ধিষ্ণু শারীরবৃত্তের দিকে লক্ষ্য রেখে এবং খাদ্য পরিবেশন যত্ন ও পরিচর্যার কথা বিবেচনা করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধের জন্য বাসস্থান তৈরি করা উচিত।
- আমাদের দেশের বাছুরের জন্মের ওজন গড়ে ১৫-২০ কেজি হয়। অবশ্য উন্নত সংকর জাতের বাছুরের জন্মের ওজন ২৫-৩০ কেজি হয়ে থাকে। জাত ভিন্ন হওয়ায় তাদের বাসস্থান এবং পরিচর্যাও ভিন্ন হবে।
- প্রতিটি বড় বাছুরের জন্য ১.৫২ মিটার ২.১৩ মিটার = ৩.২৪ বর্গমিটার অর্থাৎ ৫ ফুট ৭ ফুট = ৩৫ বগর্ ফুট জায়গার ভিত্তিতে বাসস্থান তৈরি করা যায়।
- এ বাসস্থানে প্রচুর আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের বৈশিষ্ট্য বিবেচনা রেখে বৃষ্টিপাত ও বর্ষাকালের কদর্মাক্ত অবস্থা পরিহারের লক্ষ্যে পশুর বাসস্থান স্থাপন বাঞ্জনীয়।
- এ বাসস্থান কাঁচা অথবা পাকা হতে পারে। এতে বাছুরের মলমূত্র নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- প্রতিটি ঘরে ছোট ছোট খোপ তৈরি করে প্রতি খোপে একটি করে বাছুর রেখে পালন করা যায়। সেক্ষেত্রে খোপগুলোর প্রতিটির পরিসর হবে ০.৯১ মিটার ১.২২ মিটার ১.০৭ মিটার অর্থ্যাৎ ৩ ফুট ৪ ফুট ৩.৫ ফুট। অন্যদিকে, একটি নির্দিষ্ট আলোবাতাস ব্যবস্থাসম্পন্ন ঘরে একসাথে সমবয়সী ৫-১০টি বাছুর পালন করা যায়। তবে উভয়ক্ষেত্রেই ঘরের সামনে বেষ্টনি ঘেরা খোলা জায়গা থাকা দরকার যাতে বাছুর ব্যায়াম ও খেলাধুলা করতে পারে।
- বাছুরের খোপে খড়বিচালি দিয়ে বিছানা তৈরি করতে হবে। মেঝে পাকা হলে ২.৫৪ সেমি বা এক ইঞ্চি পুরু বিছানার প্রয়োজন হয়। মেঝে কাঁচা হলে তা যেন কর্দমাক্ত ও স্যাঁতস্যাঁতে না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা স্যাঁতস্যাঁতে ও নোংরা পরিবেশে বাছুর ফুসফুস প্রদাহ রোগ ভুগে থাকে। এ রোগ বাছুরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়।
- ১.৫-২.০ মাস বয়সের বাছুরকে বড় বাছুরের বাসস্থানে স্থানান্তর করা উচিত যেখানে একসঙ্গে বাছুর প্রতিপালিত হয়। এক কথায় বাসস্থান হবে আলোকিত পরিষ্কার ও শুকনো।
(২) বকনা বাছুরের পরিচর্যা
বাছুরের পরিচর্যা বলতে এদের খাদ্য পরিবেশন, রোগবালই মুক্ত রাখা, দেখাশোনা করা ইত্যাদি বুঝায়। আমাদের দেশে বাছুর প্রতিপালনে আলাদা কোনো যত্ন ও সেবার রেওয়াজ নেই। কিন্তু এটি পশু পালন বিজ্ঞানের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বাছুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে দৈহিক পরিপক্কতা অর্জন করে সাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত এদের পালন করা হয়। এ সময়কালটা বাছুরের জন্মের দিন থেকে ১৮০ দিন পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে বাছুর পরিচর্যা কলাকৌশল বর্ণনা করা হয়েছে।
ক) বাছুরকে গাভীর দুধ পান করা শেখানো
বাছুরকে দুধ পান করানো শেখাতে হয়। জন্মের পরই বাছুর তার মায়ের বাট থেকে দুধ চুষে নিতে পারে না। বাছুরকে তাই বাট মুখে পুরে দুধ টানা শেখাতে হয়। পারিবারিক খামারে তো বটেই, বৃহদাকার দুগ্ধ উৎপাদন খামরেও বাছুরকে হাতে তুলে পান করাতে হয়। গাভীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা কম হলে তো কথাই নেই। সেক্ষেত্রে মা গাভী থেকে দোহনকৃত দুধের অতিরিক্ত দুধ পান করানোর জন্য প্রয়োজন হতে পারে।
বাছুরকে শৈশবে ৩৭.৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দুধ পান করানো হয়। এর দুটো পদ্ধতি রয়েছে, যেমন- এক বোতলে করে ও দুই বালতিতে করে। তবে বোতলে (nipple feeding) করে দুধ পান করানোর সুবিধা হলো এতে অপেক্ষাকৃত ছোট ঢোকে দুধ বাছুরের পাকস্থলীতে ঢুকে থাকে। এখানে উল্লেখ্য বাছুরের পাকস্থলীর প্রকোষ্ঠ চারটি। বোতল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কোনো বিকল্প নেই। বিশুদ্ধ পানি ও গরুর দুধ ১:২ অনুপাতে মিশিয়ে পাতলা করে পান করানো উত্তম।
খ) খামার পর্যায়ে বাছুর চিহ্নিতকরণ বা কানে ট্যাগ নম্বর লাগনো
বাছুর চিহিৃতকরণের জন্য নির্জীবাণু পন্থায় কানে ট্যাগ নম্বর (tag numbrs) লাগাতে হয়। এটা ছোট আকারের পারিবারিক খামারে কোনো প্রয়োজন না হলেও বড় খামারে খুবই প্রয়োজন।
পশুর জাত উন্নায়ন বা অন্য কোনো গবেষণা কাজে প্রতিটি গবাদিপশুর আলাদা তথ্য সংগ্রহ করা অত্যাবশ্যক। এজন্য বাছুরের মাতাপিতা অনুসারে চিহ্নিতকরণ খুবই প্রয়োজন। একটি রাবার বা প্লাস্টিকের পাতে নম্বর খদিত থাকে যা বাছুরের কানে একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে পরিয়ে দেয়া হয়।
গ) পরিমিত খাদ্য পরিবেশন, মলমূত্র ও বিছানা পরিষ্কার করা
বাছুর প্রতিপালনে দৈহিক পরিমিত খাদ্য পরিবেশনের কোনো বিকল্প নেই। বর্ধিষ্ণু বাছুরের চাহিদা অনুসারে জন্ম থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত খাদ্য তালিকা অনুসারে নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
তাছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে প্রতিপালনের জন্য বাছুরের শয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের ঘরটিতে মলমূত্র নিষ্কশনের যথাযথ ব্যবস্থা থাকতে হবে। কেননা মলমূত্র থেকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হতে হয় এবং এতে বাছুরের কৃমিসহ নানা ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়।
যে বিছানা বাছুরের ঘরে বা খোপে দেয়া হয় তাও মাঝে মধ্যে পরিষ্কার করে শুকনো রাখতে হয়। স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থায় এদের ফুসফুস প্রদাহ হয়ে থাকে। এতে স্কাউর রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
ঘ) বাছুর সময়মত খোপে ওঠানো ও নামানো
বাছুরের খোপে এদেরকে নিয়মিত ওঠানামা করাতে হয়। সারাদিন খোপে আবদ্ধ রাখা যেমন ঠিক নয় তেমনি দিনভর খোলা জায়গায় বিচরণ করতে দেয়াও উচিত নয়। এটা গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত মৌসুম নির্বিশেষে করা প্রয়োজন। বৃষ্টিতে ভেজা বা অতিরিক্ত ঠান্ডায় থাকলে বাছুরের ফুসফুস প্রদাহ রোগ হতে পারে।
ঙ) বাছুরের প্রাত্যহিক পর্যবেক্ষণ ও রোগচিকিৎসা
প্রাত্যহিক পর্যবেক্ষণ ও রোগব্যাধিতে নিয়মিত ওষুধ সেবন বাছুর পরিচর্যার অন্যতম করনীয় কাজ। তাছাড়া সময় সময় দৈহিক বৃদ্ধি বা অবনতি পরিমাপ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
জন্ম থেকে মাসিকভিত্তিতে দৈনিক ওজন পরিমাপ করা পশু পরিচর্যার এক নিয়মমাফিক কাজ। এ কাজটি গ্রামীণ পারিবারিক খামরে সম্ভব না হলেও বৃহদাকার গরুর খামারে অত্যাবশ্যক কাজ হিসেবেই বিবেচিত। দৈহিক বৃদ্ধি বা ওজন তথ্য বাছুরের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তের পরিচায়ক।
(৩) বাছুরের খাদ্য তালিকা
ক) বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাছুরের খাদ্য পরিবেশন
বাছুুরের বয়স | পরিবেশনযোগ্য খাদ্য উপাদান |
প্রথম ২ সপ্তাহ | সকাল ও বিকেলে মোট দুবার শালদুধ সরবরাহ করতে হবে। |
৩-১২ সপ্তাহ | দিনে দুবার দুধ পান করাতে হবে। তাছাড়া তৃতীয় সপ্তাহ থেকে কিছু কচি পাতা, ঘাসের ডগা এবং ৮ম মপ্তাহ থেকে সামান্য দানাদার খাদ্য দিতে হবে। |
১৩-১৬ সপ্তাহ | দিনে দুবার দুধ পান করাতে হবে। সেসাথে মাথাপিছু ৫০০ গ্রাম দানাদার ও ১.০ কেজি সবুজ ঘাস পরিবেশন করতে হবে। |
১৭-২০ সপ্তাহ | দুধ পান দিনে দুবার। সেসাথে মাথাপিছু ৭৫০ গ্রাম দানাদার খাদ্য ও ৩.০ কেজি সবুজ ঘাস পরিবেশন করতে হবে। |
২১-২৪ সপ্তাহ | দুধ পান দিনে দুবার। সেসাথে ১.০ কেজি দানাদার খাদ্য ও ৫.০-৭.০ কেজি সবুজ ঘাস দিতে হবে। |
২৫-৩৫ সপ্তাহ | দুধ পান বন্ধ করতে হবে। কিন্তু ১.০-১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য ৫.০-৭.০ কেজি সবুজ ঘাস ও ১.০-২.০ কেজি খড় খাওয়াতে হবে। |
৩৬-৫০ সপ্তাহ | ১.৫-২.০ কেজি দানাদার খাদ্য ১০.০-১২.০ কেজি সবুজ ঘাস ও ২.০-৩.০ কেজি খড় খাওয়াতে হবে। |
বাছুরের খাদ্য পরিবেশনে যে অনুক্রম দেখানো হয়েছে তাতে সবুজ ঘাস পাতার পাশাপাশি দানাদার খাদ্যের উল্লেখ আছে। নিচে অঅরও একটি বাছুরের খাদ্য তালিকা উপস্থাপন করা হলো, যাতে একটি বাছুরের জন্য দানাদার খাদ্য তৈরি করে দেখানো হয়েছে।
খ) বাছুরের দানাদার খাদ্যে তালিকা
খাদ্য উপাদান | পরিমাণ |
গমের ভূষি | ৫.০ কেজি |
ছোলা চূর্ন | ১.০ কেজি |
খেসারি চূর্ণ | ২.০ কেজি |
সরগম চূর্ণ | ৭০০ গ্রাম |
সরিষার খৈল | ১.০ কেজি |
হাড় চূর্ণ | ২০০ গ্রাম |
লবণ | ১০০ গ্রাম |
মোট | ১০.০ কেজি |
দানাদার খাদ্যে যে উপাদান যুক্ত হয়েছে তার দু-একটি উপাদান না পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ভাবে অন্য উপাদান যুক্ত করা চলে। যেমন সরগম এর পরিবর্তে চালের গুড়া ব্যবহার করা যায়।
বাছুরের খাদ্য তালিকা মিশ্রণ একত্রে একাধিক বাছুরের জন্য তৈরি করে স্বল্প সময়ের জন্য সংরক্ষণও করা চলে। এ থেকে বাছুর পিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য বাছুরের খোপে প্রদত্ত পাত্রে সকালবিকেল পরিবেশন করা যায়।
(৪) গরুর বাছুরের রোগ দমনে করণীয়
চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটি প্রবাদ আছে রোগব্যাধির চিকিৎসা অপেক্ষা প্রতিরোধই শ্রেয়। বাছুর উৎপাদনেও একই প্রবাদ প্রযোজ্য। বাছুর প্রতিপালনে দুটো বিষয় উল্লেখ্যযোগ্য যথা- ১। রোগব্যাধির প্রতি অপেক্ষাকৃত প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন বাছুর বাছাই করে প্রতিপালন করা ও ২। চিকিৎসার চেয়ে রোগব্যাধি দমনের প্রতি নজর দেয়া।
বাছুরের রোগ দমনের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করা উচিত। যথা-
- বাছুরের ঘরদোর, খাদ্য ও পানির পাত্র এবং অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র জীবাণুনাশক ওষুধ দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এদের গোবর ও চনা সঠিকভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
- বিভিন্ন বয়সের বাছুরকে আলাদা ঘরে বা খোপে পালন করতে হবে।
- সব সময় সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে। পঁচা বা বাসি খাবার সরবরাহ করা যাবেনা।
- কোনো বাছুরের মধ্যে অসুস্থতার লক্ষণ দেখা মাত্র তাকে আলাদা করে ফেলতে হবে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
- সংক্রামক রোগে মৃত বাছুরকে খামার থেকে দূরে মাটির নিচে গভীর গর্ত করে তাতে মাটি চাপা দিতে হবে এবং উপরিভাগে চুন বা ডি.ডি.টি. (DDT) ছড়িয়ে শোধন করতে হবে।
- সব বয়সের বাছুরকে নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে ও সংক্রামক রোগপ্রতিরোধের জন্য টিকা প্রদান করতে হবে।
বাছুরে রোগব্যাধির প্রকোপ বড় গরুর তুলনায় বেশি। সেজন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা অবলম্বন করার পরও কোনো না কোনো রোগব্যাধিতে এরা আক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া কিছু রোগ আছে যা শুধু বাছুরেরই হয়ে থাকে। বাছুরের রোগপ্রতিরোধ ও চিকিৎসার ব্যাপারে স্থানীয় ভেটেরিনারি সার্জনের সাথে পরামর্শ করা যেতে পারে। এছাড়া আমাদের এই কৃষি বিষয়ক ওয়েবসাইটটিতে শুধু বাছুরে হয় এমন কিছু রোগব্যাধি সম্পর্কে আলাদা আলাদাভঅবে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে, আপনি সেই পোষ্টগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে সার্চ দিলে সহজেই খুঁজে পাবেন।
উপরোক্ত আলোচানটিতে আমরা সংক্ষিপ্তভাবে বাছুরের খাদ্য তালিকা, গরুর বাছুরের যত্ন ও বাসস্থান, বকনা বাছুরের পরিচর্যা, এবং গরুর বাছুরের রোগ দমন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানলাম।
জন্মের পর থেকে এক বছরের কিছু বেশি বয়সের গরুমহিষের বাচ্চাই বাছুর। বাছুরের শারীরবৃত্ত ও শারীরিক গঠন বৈশিষ্ট্য, বয়স, খাদ্যভ্যাস, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, আবহাওয়া, রোগবালাই সংক্রমন হওয়ার সম্ভাব্যতা প্রভৃতি বিবেচনা করে বাসস্থান তৈরি করতে হয়। আমাদের দেশী গাভীর বাছুর ও উন্নত সংকর জাতের বাছুরে জন্মের ওজন যথাক্রমে ১৫-২০ ও ২৫-৩০ কেজি হয়। বাছুরের বাসস্থানে এদেরকে খোপে রেখে পালন করা যায়। একেকটি বাছুরের জন্য খোপের পরিসর হবে ০.৯১ মিটার ১.২২ মিটার ১.০৭ মিটার।
নিয়মিত খাদ্য পরিবেশন, রোগবালাই মুক্ত রাখা, দেখাশোনা করা ইত্যাদিকে বাছুরের পরিচর্যা বলে। বাছুর পরিচর্যার কলঅকৌশলগুলোর মধ্যে এদেরকে গাভীর দুধ পান করতে শেখানো, খামার পর্যায়ে বাছুর চিহ্নিতকরণ, পরিমিত কাদ্য পরিবেশন, মলমূত্র ও বিছানা পরিষ্কার করা, সময়মতো খোপে ওঠানো ও নামানো, প্রাত্যহিক পর্যবেক্ষণ ও রোগচিকিৎসা করা ইত্যাদি প্রধান।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।