ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমানোর জন্য ফ্রিজিং বা শীতলীকরন সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি। শীতলীকরন পদ্ধতিতে দুধের গুনগত মান বজায় থাকে।
বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই পদ্ধতিটি খুবই ব্যয়বহুল ও সংবেদনশীল। আবার কোন কোন দেশে এটি অসম্ভব পদ্ধতি। যেখানে ফ্রিজে দুধ সংরক্ষণ বা শীতলীকরন পদ্ধতি সম্ভবপর নয় সেখানে কিছু বিকল্প পদ্ধতির ব্যবহার করা খুবই জরুরি।
এ পাঠ শেষে আপনি- দুধ সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবগত হবেন। ফ্রিজ ছাড়া গরুর দুধ সংরক্ষণ পদ্ধতি বা ফ্রিজ ছাড়া দুধ সংরক্ষণের উপায় জানতে পারবেন।
(১) দুধ সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তা
সুস্থ সবল গাভীর ওলানের দুধে সামান্য কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে। দুধ সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণ করার মধ্যবর্তী সময়ে দুধে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই সব ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা নির্ভর করে দুধ দোহন পদ্ধতি ও দুধ পরিবহনের মানের উপরে। ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধির হার ও দুধের পচনের উপর দুধের তাপমাত্রার গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সাধারনত বলা যায় যে, যদি দুধ ঠান্ডা/শীতল না করা হয় ও দুধ দোহনের পরবর্তী ৫ ঘন্টার মধ্যেও সংরক্ষণ করা না হয়, তবে সেই দুধ আর প্রক্রিয়াজাত করার উপযোগী থাকে না।
বাংলাদেশের এমন অনেক এলাকা রযেছে যেখানে বিশুদ্ধ/টাটকা দুধ শীতলীকরন কষ্টদায়ক। দুধ দোহনের পর প্রক্রিয়াজাতকরন শিল্পে পৌছানোর মধ্যবর্তী সময়টা খুবই সংকটাপূর্ণ কারন এই সময়ের মধ্যে দুধের পচন শুরু হয় ও গুনগতমান অধিকতর মন্দ হতে থাকে।
বাংলাদেশে বেশিরভাগ দুধই উৎপাদন হয ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী/কৃষক দ্বারা এবং এই অল্প পরিমানের দুধ সংগ্রহ ও বিলি করা সময়মাপেক্ষ ব্যাপার এবং কঠিন। এখানে কৃষক দুধ একটি নির্দিষ্ট সংগ্রহ কেন্দ্রে জমা দেয় যেখানে দুধ পরিমাপও রেকর্ড গ্রহন করা হয় এবং মাঝে মধ্যে দুধ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এর গুনগতমান যাচাই করা হয়। এই সমস্ত দুধ পরবর্তীতে শীতলীকরন হয়। পরে এই সংগ্রহীকৃত শীতলীকৃত দুধ ট্রাকের মাধ্যমে দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে পাঠানো হয়। এই ভাবে দুধ সংগ্রহ থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে পৌছাতে সময় লাগে পাঁচ ঘন্টারও বেশি, ফলে দুধের গুনগতমানের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং প্রায়ই প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প এই সমস্ত দুধ প্রত্যাখান করে এবং এই সমস্ত দুধ ভোক্তাদের কাছেও গ্রহনযোগ্য হয় না।
(২) ফ্রিজ ছাড়া গরুর দুধ সংরক্ষণ পদ্ধতি বা ফ্রিজ ছাড়া দুধ সংরক্ষণের উপায় সমূহ
দুধ সংরক্ষণ পদ্ধতিগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- মাটির কলসির ব্যবহার: মাটির কলসিতে করে দুধ রাখালে দুধের তাপমাত্রা প্রকৃতির তাপমাত্রার তুলনায় তুলনামূলক ভাবে অনেক কম থাকে ফলে গুনগত মান ও অক্ষূূন্ন থাকে। মাটির কলসিতে করে দুধ রাখালে কয়েক ঘন্টা সংরক্ষণ করা যায়।
- টিউবয়েলের নিকট মাটি চাপা দিয়ে: কোন মুখবন্ধ পাত্রে দুধ নিয়ে সেটি যদি টিউবয়েলের নিকট ভেজা মাটি দিয়ে চাপা দেয়া হয় তবে দুুধের তাপমাত্রা অনেক কম থাকে ও দুধ প্রায় কয়েক ঘন্টা ভাল থাকে।
- কলাপাতা ও খেঁজুরের পাতার ব্যবহার: দুধ দোহনের পর কলাপাতা ও খেঁজুরের পাতা দিয়ে রাখালে পাতার সাদা সাদা চুনের মত পদার্থ দুধের অম্লত্ব কমায়। কারন এগুলো ক্ষারীয় পদার্থ ফলে দুুধের সংরক্ষনকাল স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়।
- ল্যাকটো পারঅক্সিডেজ পদ্ধতি: ল্যাকটো পারঅক্সিডেজ দুধের একটি এনজাইম যেটি স্বাভাবিক ভাবেই দুুধের মধ্যে বিদ্যমান থাকে। ল্যাকটো পারঅক্সিডেজ সক্রিয়করন পদ্ধতিটি থায়ো সায়ানেট (১৫ পিপি এম) ও হাইড্রোজেন পারঅক্সিডেজ (৮.৫ পিপিএম) দুধের মধ্যে যুক্ত করার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হযেছে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় দুুধের স্থায়ীত্বকাল বেড়ে সাত থেকে আট ঘন্টা হয়।
উপরোক্ত আলেঅচনার মাধ্যমে আমরা গরুর দুধ সংরক্ষণ পদ্ধতি এবং ফ্রিজ ছাড়া দুধ সংরক্ষণের উপায়সমূহ জানলাম।
দুধ প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি অন্যতম শ্রেষ্ঠ খাবার। দুধে ৩-৫ ননী বা চর্বি এবং ৮.৫% ননীমুক্ত অন্যান্য উপাদান থাকে। বিশুদ্ধ দুধ উৎপাদনের জন্য দুগ্ধবতী গাভীকে পর্যাপ্ত পরিমান পানি, সুষম খাদ্য এবং পরিচ্ছন্নতার প্রতি সজাগ থাকতে হবে।
দুধ সংগ্রহের পরবর্তী ৫ ঘন্টার মধ্যে সংরক্ষন না করা হলে দুধ নষ্ট হয়ে যায়। শীতলীকরন পদ্ধতিতে দুধের গুনগত মান বজায় থাকে। মাটির কলসি টিউবয়েলের নিকট মাটি চাপা দিয়ে কিংবা কলা পাতা ও খেজুর পাতা ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রামে কুব সহজেই দুধ শীতল রাখা যায়।
ল্যকটো পার অক্সিডেজ এনজাইম ব্যবহারের মাধ্যমেও দুধ সংরক্ষন করা যায়।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।