Skip to content

কৃষি খামার কি? কৃষি খামার কাকে বলে? খামার কত প্রকার? কৃষি খামারের প্রকারভেদ এবং খামারের কার্যাবলী, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, পরিকল্পনা

কৃষি খামার কি, কৃষি খামার কাকে বলে, খামার কত প্রকার, কৃষি খামারের প্রকারভেদ এবং খামারের

কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা বলে ভারত ও বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের খামার গড়ে উঠেছে; যেমন: ডেইরি খামার রয়েছে, পোলট্রি খামার, হাঁসের খামার, কোয়েল খামার, ঘুঘুর খামার, কুমিরের খামার, মৌমাছির খামার, মৎস্য খামার, কাঁকড়ার খামার, ঝিনুকের খামার, হরিণের খামার, প্রভৃতি রয়েছে।

এ আলোচনাটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- খামার অর্থ কি, খামার কাকে বলে?, কৃষি খামার কি, কৃষি খামার কাকে বলে, খামার কত প্রকার, কৃষি খামারের প্রকারভেদ, খামার করণ/ফার্মিং, খামারের কার্যাবলী, খামার ব্যবস্থাপনা, খামার পরিচালনা, খামার স্থাপনের পরিকল্পনা প্রভৃতি বিষয় ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পারবেন।

(১) খামার অর্থ কি? খামার কাকে বলে?

খামার অর্থ কি: খামার হচ্ছে কৃষি উৎপাদনের একটি ইউনিট। খামারে ফসল, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, মাছ সহ বিভিন্ন কৃষিজ উৎপাদন করা যায়।

খামার কাকে বলে: খামার হচ্ছে কৃষি উৎপাদনের একটি ইউনিট। খামার বলতে- এমন ভূখন্ড বা জমি যেখানে ব্যক্তি বা যৌথ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদন কাজ পরিচালিত হয়। যেমন: ফসল, গবাদি পশু, হাঁস-মুরগী, মাছসহ বিভিন্ন কৃষি উৎপাদন করার স্থান। খামারের জমি হতে পারে নিজস্ব মালিকানাধীন বা বর্গা বা বন্ধকী খামারে ব্যবহৃত শ্রমিক হতে পারে পারিবারিক শ্রমিক বা কেনা শ্রমিক।

খামারের অর্থের উৎস হতে পারে-১। পারিবারিক উৎস, ২। ব্যাংক, ৩। অন্য উৎস।

(২) কৃষি খামার কি? কৃষি খামার কাকে বলে?

কৃষি খামার কি: কৃষি খামার বলতে এমন একটি স্থাপনাকে বুঝানো হয় যেখানে কৃত্রিম ভাবে যেকোন উদ্ভিদ বা প্রাণীর প্রতিপালন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য সাধন করা হয়। সাধারণত: গবাদী পশু এবং কিছু বাণিজ্যিক উদ্ভিদ ও প্রাণী এই প্রক্রিয়ায় উৎপাদন ও বিপণন করা হয়।

কৃষি খামার কাকে বলে: সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে বিভিন্ন কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থাকে কৃষি খামার বলে। এসব খামার উৎপাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন: ফসল উৎপাদন করলে ফসল খামার, হাঁস-মুরগী ও গবাদি পশু উৎপাদন করলে হাঁস-মুরগী ও গবাদিপশু খামার বলে। কৃষি খামার হল কৃষিজ উৎপাদনের একটি প্রতিষ্ঠান।

একটি আদর্শ কৃষি খামারের বৈশিষ্ট্য:

আদর্শ খামার এমন হতে হবে যেখানে উৎপাদনের সুষ্ঠ প্রয়োগের ফলে একক আয়তনে সর্বাধিক ফলন পাওয়া যাবে এবং উৎপাদিত আয় হতে কৃষক ও তার পরিবার মোটামুটি সচ্ছল ও সন্তোষজনভাবে জীবিকা নির্বাহ করে। আদর্শ খামারের আয়তন বিভিন্ন হতে পারে। তবে বাংলাদেশের জন্য ৩-৪ একর জমি একটি আদর্শ  খামার।

একটি আদর্শ কৃষি খামারে নিম্নবর্ণিত বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন-

  1. কৃষি খামারের কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন থাকতে হবে।
  2. কৃষি খামারের পণ্য পরিবহন, উৎপাদনের উপকারণাদি ও বাজারজাতকরণ যাতে সহজে করা যায় সে জন্য বড় রাস্তার পাশে ও ল  ঘাটের নিকটে হতে হবে। 
  3. আদর্শ কৃষি খামারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকবে।
  4. খামার পণ্য পরিবহনের জন্য যানবাহন থাকবে। খামারের সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকবে। 
  5. অধিক ও নিরবচ্ছিন্নভাবে মুনাফা অর্জনের জন্য খামারের কার্যক্রম দক্ষভাবে পরিচালিত হবে।

(৩) খামার কত প্রকার? কৃষি খামারের প্রকারভেদ

কোন নির্দিষ্ট স্থানে সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার আওতায় উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণাদি ব্যবহার করে পণ্য সামগ্রী উৎপাদন খামার বলে। বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে খামার কত প্রকার অর্থ্যাৎ কৃষি খামারের প্রকারভেদ করা হয়েছে।

চিত্র- শস্য খামার
চিত্র- শস্য খামার
চিত্র- পোল্ট্রি খামার
চিত্র- পোল্ট্রি খামার
চিত্র- গবাদি পশু খামার
চিত্র- গবাদি পশু খামার

ক) কৃষির বিভিন্ন খাতের উপর ভিত্তি করে খামার ৬ প্রকার। যথা-

  1. ফসল খামার: খামারে একক বা মিশ্রভাবে একাধিক মাঠ বা উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল আবাদ করা হয় যা থেকে কাঙ্খিত ফসল বা বীজ পাওয়া যায়।
  2. পোল্ট্রি খামার: যখন খামারে কোন পাখি জাতীয় প্রাণি যেমন: হাঁস, মুরগী, কোয়েল, কবুতর ইত্যাদি মাংস বা ডিমের জন্য পালন করা হয় তখন তাকে পশু-পাখি খামার বলা হয়।
  3. গবাদি পশুর খামার: গৃহপালিত গবাদি পশুর মধ্যে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া অন্যতম।
  4. মৎস্য খামার: পরিকল্পিত ভাবে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ একক বা মিশ্র ভাবে চাষ করা হয় তাকে মৎস্য খামার করা যায়। খামারে শুধু মাছের পোনা উৎপাদন করা হলে তখন তাকে হ্যাচারী বলে।
  5. দুগ্ধ খামার: বসতবাড়ির উঁচু স্থানে পারিবারিক দুগ্ধ খামারের উন্নত জাতের গাভী পালন করা যায়।
  6. নার্সারী: বন নার্সারী বিভিন্ন ফুল, ফল ও বনজ গাছের চারা উৎপাদন করা হয়।
See also  কৃষি যান্ত্রিকীকরণ কি? বাংলাদেশের কৃষি যন্ত্রপাতি বা কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার

খ) আকার/আয়তনের দিক থেকে খামার ৩ প্রকার। যথা-

  1. পারিবারিক খামার (Subsistence farm): এই খামার থেকে উৎপাদিত পণ্য নিজে এবং তার পরিবার মোটামুটি সন্তোষজনকভাবে জীবন নির্বাহ করেত পারে। এতে মূলধন বিনিয়োগ কম হয় এবং ঝুঁকি সম্ভাবনা নেই।
  2. বাণিজ্যিক খামার (Commercial farm): এই খামারের মূল লক্ষ্য হলো মুনাফা অর্জন করা। বৃহৎ পরিসরে খামারের যখন নির্দিষ্ট কিছু পণ্য উৎপন্ন করা হয় যা বিক্রি বা রপ্তানী করে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়।

গ) পণ্যের উৎপাদন অনুসারে খামার ২ প্রকার। যথা-

  1. মিশ্র খামার (Mixed on Diversified Farm): একটি খামারে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করা হয়।
  2. বিশেষায়িত খামার: একটি মাত্র বা একই ধরনের পণ্য উৎপাদন করে। যেমন: চিংড়ির খামার, চা বাগান ইত্যাদি। 

ঘ) মালিকানা ভিত্তিতে খামার ৩ প্রকার। যথা-

  1. ব্যক্তি মালিকানাধীন খামার: একজন মালিকের তত্ত্বভবধানে খামারের ব্যবস্থাপনাসহ যাবতীয় কার্যাবলী পরিচালিত হয়। 
  2. যৌথ খামার: এলাকার কয়েকজন কৃষক একত্রিত হয়ে যৌথভাবে খামার পরিচালিত করে।
  3. রাষ্ট্রীয় খামার: এ ধরনের খামার পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় মালিকানায় পরিচালিত হয়।

(৪) খামার করণ/ফার্মিং

খামার করণ বলতে কী বুঝায়: খামারে ফসল, গবাদি পশু, মৎস্য প্রভৃতির যে কোনটি অথবা মিশ্রভাবে একাধিক উৎপাদনের কার্যক্রম পরিচালনাকে খামারকরণ বুঝায়।

খামারকরণ বা ফার্মিং কী বা কাকে বলে: খামার একজন বা একাধিক কৃষকের সুগঠিত উৎপাদনমুখী। ব্যবস্থাপনা যেখানে প্রতিটি পণ্যের অর্থনৈতিক উৎপাদন প্রক্রিয়া চলে যা প্রাকৃতিক ও আর্থসামাজিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই খামারকরণ বা ফার্মিং হল এক ধরনের উৎপাদন মুখী প্রতিষ্ঠান যেখানে ভূমি, কষক, মূলধন, সংগঠন ইত্যাদির উপযুক্ত ব্যবহরের মাধ্যমে খাদ্য ও অন্যান্য আবশ্যকীয় পণ্য দ্রব্য উৎপাদন করা হয়। 

খামার করণের মূল উদ্দেশ্য হল-

  1. পরিকল্পিতভাবে ফসল উৎপাদন।
  2. সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। 
  3. খামারের স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি।
  4. মানসম্পন্ন অধিক ফসল উৎপাদন।
  5. অধিক মুনাফা লাভ।

খামার হচ্ছে কৃষি উৎপাদনের একটি ইউনিট। খামারে ফসল, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, মাছ সহ বিভিন্ন কৃষিজ উৎপাদন করা যায়।

খামার বিভিন্ন রকম হতে পারে। ব্যাপকতার ভিত্তিতে: পারিবারিক খামার, বাণিজ্যিক খামার। পণ্য উৎপাদনের ভিত্তিতে: মিশ্র খামার, বিশেষায়িত খামার। মালিকানার ভিত্তিতে: ব্যক্তি মালিকানাধীন, যৌথ, রাষ্ট্রীয় খামার প্রভৃতি।

খামারকরণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যেেম উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে পর্যাপ্ত পরিচর্যার ফলে লাভজনক ও গুণগত পণ্য উৎপাদন।

(৫) খামারের কার্যাবলী

খামারের অধিক উৎপাদনশীল করতে নিমèবর্ণিত কার্য সম্পাদন করতে হয় যেমন- 

  1. টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব উপকরণ ব্যবহার করতে হবে।
  2. উপকরণ এর সহজ প্রাপ্যতা বিবেচনায় নিতে হবে। 
  3. যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা উন্নত হতে হবে।
  4. উৎপাদন উপকরণ যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। 
  5. সঠিক সময়ে উৎপাদন কার্য পরিচালনা করতে হবে।
  6. শ্রমিকের সহজলভ্যতা ও যোগান নিশ্চিত করতে হবে। 
  7. খামারকে লাভজনক করতে আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
  8. উৎপাদিত পণ্য যথাসময়ে উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাত করতে হবে।

(৬) খামার ব্যবস্থাপনা

খামার ব্যবস্থাপনা কী: খামার ব্যবস্থাপনা হল এমন একটি বিজ্ঞান যা ধারাবাহিকভাবে সর্বচ্চ মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে খামারে ফসল বা পণ্য সামগ্রী উৎপাদনের সাংগঠনিক ও ব্যবস্থাপনাগত দিক আলোচনা করে।

খামার ব্যবস্থাপনার সাথে লাভ লোকসানের সাথে সম্পর্কযুক্ত সিদ্ধান্তগুলোই বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। একটি খামার সাধারণত:জমি, শ্রম, মূলধন ও যন্ত্রপাতি নিয়ে গঠিত।

See also  কৃষি সমবায়ের উদ্দেশ্য কি? কৃষি সমবায়ের ভিত্তি কি? কৃষি সমবায়ের মূল শর্ত কি?

এ্যান্ডু বসের সংজ্ঞানুসারে- খামার ব্যবস্থাপনা হলো খামারের উৎপাদন সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কাজে ব্যবসায়িক ও বৈজ্ঞানিক নীতিমালার প্রয়োগ।

জি.এফ. ওয়ারেন এর মতে- খামার ব্যবস্থাপনা হচ্ছে এমন একটি বিজ্ঞান যা ধারাবাহিকভাবে সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে খামারের বিভিন্ন ফসল বা পণ্য সামগ্রী উৎপাদনের সাংগঠনিক ও ব্যবস্থাপনাগত দিক নিয়ে আলোচনা করে থাকে।

খামার ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য: খামার ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য হল বৈজ্ঞানিক উপায়ে জমি, শ্রম, পুঁজি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে উৎপাদন ও মুনাফা বৃদ্ধিকরণ।

খামার ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যগুলো হতে পারে-

  1. স্বল্প খরচে উৎপাদন বাড়ানো
  2. খরচের সাথে মুনাফা সর্বাধিক করা
  3. বিভিন্ন ধরনের উৎপাদন ঝুঁকি কমিয়ে আনা
  4. পারিবারিক সচ্ছলতার জন্য পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করা।
  5. প্রাকৃতিক উৎসের বা সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা।

(৭) খামার পরিচালনা

খামার পরিচালনা বলতে উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করা এবং খামারের বিভিন্ন কার্যাবলী সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্পন্ন করার জন্য উপাদানসমূহের সমন্বয় সাধন করাকে বুঝায়।

খামার পরিচালনার নীতিমালাগুলো নিম্নে বর্ণিত হলো-

  1. ক্রমহ্রাসমান আয় নীতি (Law of diminishing): উৎপাদনের সকল উপাদান এর পরিমান অপরিবর্তিত রেখে শুধু কেবল উপাদানের পরিমান বাড়ানো হয়। প্রথমে উপাদান বৃদ্ধির সাথে সাথে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু একটি নির্দিষ্ট বৃদ্ধির পর প্রথমে প্রান্তিক উৎপাদন এবং পরে গড় উৎপাদন হ্রাস পেতে থাকবে। এটাই ক্রমহ্রাসমান আয় নীতি। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যাবহার। জমিতে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন কোন নির্দিষ্ট জমিতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে ফলন বৃদ্ধি পাবে। একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার ফসলের উৎপাদন বৃ দ্ধি করা গেলেও পরে আর ফলন বৃদ্ধি পায় না।
  2. ব্যয় নীতি (Expenditure Principle): খামারের উৎপাদনের লাভ লোকসান নির্ধারনে এ নীতি ব্যবহার করা হয় উৎপাদনে দুই ধরনের খরচ হয়। স্থির খরচ যেমন কর্মচারীর বেতন, খামার নির্মান ব্যয়, জমির খাজনা। অস্থায়ী বা পরিবর্তনশীল খরচ উৎপাদনের সাথে উঠানামা করে। মোট উৎপাদন খরচ যদি উৎপাদন আয়ের চেয়ে কম হয়। তবে খামারে আরো মূলধন বিনিয়োগ করা যাবে ততক্ষন মূলধন ব্যবহার করা যাবে যতক্ষন পর্যন্ত মোট উৎপাদন আয় ও পরিবর্তন ব্যয় সমান না হয়।
  3. প্রতিস্থাপন নীতি (Principle of substitution): প্রতিস্থাপন নীতি দ্বারা কোন ফসল লাভজনক তা নির্ধারণ করা যায়। এ নীতি ব্যবহার করে কম

লাভজনক ফসলের উৎপাদন বন্ধ রেখে অন্য লাভজনক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। এ নীতি ২টি বিষয়ের উপর নির্ভর করে-

  1. প্রতিস্থাপন অনুপাত = (প্রতিস্থাপিত ফসলের ফলন ÷ চাষ কৃত ফসলের ফলন)
  2. মূল্য অনুপাত = (চাষকৃত ফসলের একক পরিমানের মূল্য ÷ প্রতিস্থাপিত ফসলের একক পরিমানের মূল্য)

উদাহরণ হিসাবে: আউশ ধানের বাজারদর কমে যাওয়ায় খামারী যদি সে জমিতে পাট লাগানোর ইচ্ছে করেন, এক্ষেত্রে আউশ ধান প্রতিস্থাপিত ফসল এবং আলু হলো চাষকৃত ফসল। যদি প্রতিস্থাপন অনুপাত মূল্য অনুপাতের চেয়ে ছোট হয় তবে ফসল প্রতিস্থাপন করতে হবে। অর্থাৎ আউশ ধানের বদলে আলু চাষ করতে হবে। আর প্রতিস্থাপন অনুপাত মূল্য অনুপাতের চেয়ে বড় হয় তবে ফসল প্রতিস্থাপন করা যাবে না। তখন আলু লাগানো যাবে না।

খামারকে অধিক উৎপাদনশীল করতে সহজলভ্য, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উপকরণ এর ব্যবহার সঠিক সময়ে উৎপাদন কাজ পরিচালনা উৎপাদিত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ করতে হবে। খামার ব্যবস্থাপনা হল খামারের উৎপাদন সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কাজে ব্যবসায়িক ও বৈজ্ঞানিক নীতিমালার প্রয়োগ। সীমিত উপকরণসমূহ যেমনজমি, শ্রম, পুঁজি ও যন্ত্রপাতি এসবের যথাযথ ব্যবহার করে মোট উৎপাদন বা মুনাফা বৃদ্ধি করা যায়।

(৮) খামার স্থাপনের পরিকল্পনা

নিচে খামার স্থাপনের বিবেচ্য বিষয়াদি, খামার পরিকল্পনার ধাপ সমূহ, মাঠ ও উদ্যান ফসলের খামার স্থাপনের পরিকল্পনা প্রভৃতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হলো।

ক) খামার পরিকল্পনা

খামার পরিকল্পনা হচ্ছে একটি পরিবর্তনশীল, ক্রিয়া যার মাধ্যমে কৃষি পণ্যের মধ্যে কোনটির উৎপাদন লাভজনক সে সম্পর্কে  সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন করা। খামার পরিকল্পনার অর্থ  হচ্ছে কৃষকের সম্ভাব্য বিকল্পগুলোর থেকে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে লাভজনক ফসল, পণ্য বা উপকরণ বেছে নেয়া ও বাস্তবতা প্রয়োগ করা।

See also  বাংলাদেশে শিল্পে ব্যবহৃত ৪টি কৃষিজ দ্রব্যাদির পরিচিতি, বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব ও এদের ব্যবহার (আম, নারিকেল, বাঁশ ও বেত)

খ) খামার পরিকল্পনার ধাপসমূহ

  1. খামারের সহজ পরিকল্পনা প্রণয়ন। যেমন: ফসল নির্বাচন, জমি নির্বাচন, উপকরণ ইত্যাদি।
  2. ফসল ও কৃষি পন্য উৎপাদনের সকল উন্নত প্রযুক্তি ও পদ্ধতিসমূহ প্রয়োগ।
  3. একটি পূর্ণাঙ্গ বাজেট। অর্থ্যাৎ খামারের সকল ফসল ও পণ্য দ্রব্যের সম্ভাব্য আয় ব্যয় নিরূপণ করা।

গ) খামার স্থাপন

খামার স্থাপনের জন্য যেসব বিষয় বিবেচনা নেয়া প্রয়োজন সেগুলো হলোক) খামার মালিক বা পরিচালকের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যসমূহ যেমন- 

  1. শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা, বয়স, স্বাস্থ্য, রুচি ও চাহিদা।
  2. ভূতাত্ত্বিক বিষয়সমুহ, যেমন- মাটির ধরন, আবহাওয়া ও জলবায়ু, ভূমির উচ্চতা।
  3. অর্থনৈতিক বিষয়সমূহ, যেমন- উন্নত প্রযুক্তির প্রাপ্যতা, উপকরণ সরবরাহ ও দান, ঋন প্রাপ্যতা, শ্রমিক সহজলভ্যতা, জমির মূল্য উৎপাদিত পন্যের পরিবহন, বাজারজাতকরন ও দাম।

ঘ) মাঠ ও উদ্যান ফসলের খামার স্থাপনের পরিকল্পনা

সীমিত ব্যয়ে স্বল্প শ্রমে অধিক মুনাফা ও লাভজনক খামারে পরিণত করার জন্য একটি খামার স্থাপন পরিকল্পনা প্রয়োজন।

মাঠ ও উদ্যান ফসলের খামার স্থাপনের পরিকল্পনার জন্য যেসব বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে সেগুলো হল-

i) ভূতাত্ত্বিক বিষয়সমূ

  1. খামারের অবস্থান: সাধারণত শহরে ও বন্দরের আশেপাশে গড়ে উঠে। খামারের চারপাশে রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, পানি উৎস, সেচ ও নিস্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  2. মাটির ধরন: উর্বর সুনিস্কাশিত মাটি ফসল ও উদ্যান খামার স্থাপনের জন্য উপযোগী।
  3. আবহাওয়া ও জলবায়ু: আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর নির্ভর করে একেক অঞ্চলের একেক ধরনের কৃষি খামার গড়ে উঠছে।
  4. ভূমির উচ্চতা: উঁচু জমিতে যেখানে বন্যার পানি উঠে না যেখানে উদ্যান ফসলে খামার ও নার্সারী স্থাপনের জন্য উপযোগী।

ii) অর্থনৈতিক বিষয়সমূহ

  1. উন্নত প্রযুক্তির প্রাপ্যতা: কৃষিজ দ্রব্য উৎপাদনের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির প্রাপ্যতার উপর খামার স্থাপন নির্ভর করে বিভিন্ন ফসলের উন্নত বীজ, কৃষি যন্ত্রপাতির প্রাপ্যতা সহজলভ্য হতে হবে।
  2. উপকরণ সরবরাহ ও দাম: কৃষি খামার স্থাপনের জন্য ন্যায্যমূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
  3. ঋন ব্যবস্থা: খামার ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় কৃষি ঋনের ভূমিকা অপরিসীম। সহজশর্তে ঋণের সুবিধা পেলে খামার স্থাপনে আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
  4. জমির মূল্য: জমির মূল্য কম এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো সেখানে খামার গড়ে তোলা উচিত কারণ খামারের জন্য অনেক বেশি জমি প্রয়োজন।
  5. কৃষি পন্যের পরিবহন, বিপনন ও মূল্য: উৎপাদিত কৃষি পণ্য সহজেই পচে যায়। পণ্য সামগ্রী সঠিক সময়ে পরিবহন ও বিপনন করা যায় যে ব্যবস্থা থাকতে হবে। পরিবেশে খামার স্থাপনের আগে উদ্যোক্তারা উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর পরিবহন, বিপনন ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।

উপরোক্ত আলোচনাটির মাধ্যমে আমরা খামার অর্থ কি, খামার কাকে বলে?, কৃষি খামার কি, কৃষি খামার কাকে বলে, খামার কত প্রকার, কৃষি খামারের প্রকারভেদ, খামার করণ/ফার্মিং, খামারের কার্যাবলী, খামার ব্যবস্থাপনা, খামার পরিচালনা, খামার স্থাপনের পরিকল্পনা প্রভৃতি বিষয় জেনেছি।

উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উৎপাদনের সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হওয়ায় নতুন নতুন খামার স্থাপন করতে অনেকেই এগিয়ে আসছে। খামার স্থাপনে যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হয় সেগুলো হল এ খামারের অবস্থান, মাটির ধরন, আবহাওয়া ও জলবায়ু, ভূমির উচ্চত, উন্নত প্রযুক্তির প্রাপ্যতা, উপকরণ সরবরাহ ও দাম, খনন ব্যবস্থা, শ্রম, জমির মূল্য, পণ্যের পরিবহন, বিপণন ও দাম।

শস্য খামারের পাশাপাশি আমাদের দেশে গরুর খামার, ছাগলের খামার, হাঁস-মুরগির করার বিষয়টি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

পশু-পাখি পালন ও চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts