কোথায় কি গাছ লাগাবেন বা গাছের স্থান নির্বাচনের বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকা দরকার। স্থানোপযোগী বৃক্ষ র্বিাচনে ব্যর্থ হলে ঐ বৃক্ষথেকে উপযোগিতা পাওয়া সম্ভব নয় একটি বৃক্ষ রোপণ করে তা থেকে উপযোগতা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।
জনগণ গাছ লাগানোর জন্য যে সকল স্থান নির্বাচন করে তার প্রকৃতি, মাটির বৈশিষ্ট্য ও আর্থ-সামাজিক পরিবেশের কারণে বৃক্ষ প্রজাতি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এ পাঠ শেষে আপনি- কোথায় কি গাছ লাগাবেন বা গাছের স্থান নির্বাচনের বিষয়ে সবিস্তারে জানতে পারবেন।
নিম্নে গাছের স্থান নির্বাচন বা কোথায় কি গাছ লাগাবেন, তার তালিকা প্রদান করা হলো-
ক) বসত বাড়ির আশে পাশে কি গাছ লাগাবেন: আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, জাম, বেল, নিম সুপারি, নারিকেল, আমড়া, কামরাঙ্গা, ডালিম, কুল, লেবু, লিচু, সজিনা, তেজপাতা, শরিফা, আতা ইত্যাদি। বাড়ীর সম্মুুখে পাতাবাহার ও অন্যান্য ফুলের গাছ ও সব্জীর বাগান থাকবে। বাড়ীর উত্তম পশ্চিমে উচু বড় বৃক্ষ এবং দক্ষিণে-পূর্বের নীচু ও মাধ্যম উচ্চতার বৃক্ষ লাগাতে হবে যাতে বাড়িতে প্রচুর আলো বাতাস পাওয়া যায়।
খ) কৃষি জমির ধারে ও আইলে কি গাছ লাগাবেন: কৃষি জমির বাউন্ডারিতে জীবন্ত বেড়ার প্রজাতি যেমন- অড়হর, ডোলকমলি, ফণিমণসা ইত্যাদি। কৃষি জমির আইলে শিকড় কম বিস্তারকারী কিন্তু গভীরমূলী, ডাল পালা ছাটাইযোগ্য বৃক্ষ যেমন- বাবলা, আকাশমনি, সাদা কড়ই, কালোকড়ই, মিনজিরি, ইপিল ইপিল, ঘোড়ানিম ইত্যাদি।
গ) পুকুর পাড়ে কি গাছ লাগাবেন: পাড়ের মাটি শক্ত করে ধরে রাখতে পারে আবার পুকুরে রোদ প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি না করে এমন বৃক্ষ প্রজাতি নিবার্ চন করা ভালো। যেমন: নারিকেল, সুপারি, তাল, লিচু, ডালিম, আম, খেজুর ইত্যাদি। পুকুরের উত্তর-পশ্চিম কোনায় বাঁশের ঝাড় সৃষ্টি করা যায়।
ঘ) রাস্তা ও সড়কের ধারে কি গাছ লাগাবেন: উঁচু সুদৃশ্য বৃক্ষ প্রজাতিসমূহের চারা যেমন- মেহগনি, শিশু, আকাশমনি ইউক্যালিপটাস, জারুল, রেইনটি ্র, সেগুন, শীল কড়ই, আম, জাম, কাঁঠাল, নিম, হরিতকী, অর্জুন, তেলসুর, পলাশ, কদম ইত্যাদি।
ঙ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনার স্থানে কি গাছ লাগাবেন: প্রতিষ্ঠান সমূহের আঙিনা ও আশেপাশে শোভাবর্ধনকারী ও ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষের চারা রোপণ করতে হয়। যেমন-কৃষ্ণচূড়া, দোদরা, ইউক্যালিপটাস, জারুল, নিম, আম, কাঁঠাল, লিচু, বকুল, কাঠবাদাম, সেগুন ইত্যাদি।
চ) নদীর ধার ও বাঁধের পাশে কি গাছ লাগাবেন: বেশি শিকড় বিস্তার করে, শক্ত ও মজবুত, পানি সহিষ্ণু বৃক্ষ প্রজাতি যেমন: হিজল, ছাতিম, পিটালি, তাল খেজুর, বট, মান্দার, জিয়লগাজী, পিটালী ইত্যাদি।
ছ) গ্রামের হাট বাজার কি গাছ লাগাবেন: ছায়া বিস্তার করে আবার পক্ষীকূলের খাদ্য ও আবাস উপযোগী বৃক্ষ প্রজাতি যেমন: বট, অশ্বথ, রেইনট্রি, তেঁতুল, মেহগনি, আম, জাম, কাঠাল ইত্যাদি।
জ) উচুঁ অনাবাদি পতিত জমিতে কি গাছ লাগাবেন: ফলজ ও বনজ বৃক্ষ যেমন: আম, জাম, কাঁঠাল, আমলকি, বহেরা অর্জুন, নিম, মেহগনি, সেগুন, শীলকড়ই, আকাশমনি, মহুয়া, নাগেশ্বর ইত্যাদি।
ঝ) উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী তৈরীর উপযোগী কি গাছ লাগাবেন: লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এবং ঝড় ঝাপটা প্রতিরোধ সক্ষম বৃক্ষ প্রজাতি যেমন- তাল, নারিকেল, খেজুর, সুপারি, সোনালু, ঝাউ, আকশমনি, জারুল, গাব, গজর্ ন, তেতুল, অর্জুন, শিরিষ, শীলকড়ই, চম্পাফুল ইত্যাদি।
ঞ) স্যাঁতস্যাঁতে নিচু জমিতে কি গাছ লাগাবেন: জলাবদ্ধতা সহনশীল বৃক্ষ প্রজাতি যেমন- হিজল, কদম, পিটালি, বাঁশ, বেত, মূর্ত া, মান্দার, জারুল, অশোক, শিমুল, ছাতিম, পইনাল, চালতা, পিতরাজ, কাঞ্চন, শেওড়া ইত্যাদি।
ত) পাহাড়ি এলাকার জন্য কি গাছ লাগাবেন: গর্জন, গামার, সেগুন, শীলকড়ই, চাম্পাফুল, চাপালিশ, কাঁঠাল, জলপাই, আকাশমনি ইত্যাদি।
থ) বাড়ির ছাদে কি গাছ লাগাবেন: বাসা বাড়ির ছাদ বিশেষ করে শহর অঞ্চলের বাড়ির ছাদে গাছ লাগানোর একটি প্রবণতা উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ির ছাদে শাক-সব্জীর চারাই প্রধানত গুরুত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি বৃক্ষ জাতীয় গাছপালা লাগাতে আগ্রহী হলে ফলজ, ঔষধি জাতীয় বৃক্ষ লাগানোই শ্রেয়। এজন্য উপযোগি বৃক্ষ যেমন: আম, সফেদা, লেবু, ডালিম, আমড়া, করমচা, আমলকি, কামরাঙ্গা, জামরুল, শরিফা ইত্যাদি।
উপরোক্ত পাঠ আমরা কোথায় কি গাছ লাগাবেন বা গাছের স্থান নির্বাচনের বিষয়ে অবগত হলাম।
বৃক্ষরোপণে সাধারণ মানুষের আগ্রহ সৃষ্টির জন্য ১৯৯০ সাল থেকে বৃক্ষরোপণে ‘জাতীয় পুরস্কার’ ব্যবস্থাও চালু হয়েছে।
দেশের বনভূমি সংকুচিত হওয়ার প্রেক্ষিতে যুবজাগরণ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সরকার ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম জাতীয় পর্যায়ে বৃক্ষমেলা প্রবর্তন ও তিন মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযান চালু করে।
বৃক্ষরোপণকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করার লক্ষে ২০০১-০২ সাল থেকে প্রতিবছর জাতীয় পর্যায়সহ বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বৃক্ষ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে কৃষি ও বৃক্ষ মেলা কৃষকদের মাঝে নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি হস্তান্তরের একটি শক্তিশালী মাধ্যম।
এছাড়াও সাধারণত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগেই প্রতিবছর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আয়োজিত বৃক্ষ মেলা বাংলাদেশের শহর ও গ্রামে বসবাসকারী মানুষদের মাঝে বৃক্ষ রোপণের ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে সফলতা লাভ করতে হলে সঠিক প্রজাতির বৃক্ষ নিবার্ চন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব স্থানে সব প্রজাতির বৃক্ষের চারা রোপণ করা যায় না। ভূমির প্রকৃতি, মাটির বৈশিষ্ট, আর্থ-সামাাজিক পরিবেশ ইত্যাদির উপর বিবেচনা করে বৃক্ষের চারা রোপণ করলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।