Skip to content

মাঠ ফসল কি/কাকে বলে? মাঠ ফসলের বৈশিষ্ট্য, মাঠ ফসলের শ্রেণীবিভাগ ও মাঠ ফসলের গুরুত্ব

মাঠ ফসল কি, কাকে বলে, মাঠ ফসলের বৈশিষ্ট্য, মাঠ ফসলের শ্রেণীবিভাগ ও মাঠ ফসলের গুরুত্ব

যে সমস্ত উদ্ভিদ মাঠে পরিচর্যার মাধ্যমে উৎপাদন করা হয় এবং উৎপাদিত মূল দ্রব্য অথবা উপজাত দ্রব্যের আর্থিক মূল্য আছে তাদেরকে ফসল বলা হয়। যেমন, ধান, গম, সবজি ইত্যাদি। মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে যে সকল গাছপালার চাষাবাদ করে তাকেই আমরা ফসল বলতে পারি। এই ফসল বা শস্য সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা ও সুষ্ঠুভাবে জ্ঞানার্জন আবশ্যক।

(১) মাঠ ফসল কি/কাকে বলে?

মাঠ ফসল কি/কাকে বলে: মাঠ ফসল বলতে অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্বলিত ফসলকে বোঝায় সেগুলো বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষ করা হয়। মাঠ ফসলকে কৃষিতাত্ত্বিক (Agronomic Crop) ফসলও বলা হয়। .

মাঠ ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে একই জমিতে একই ফসল চাষ করা হয়। যেমন-ধান, গম, পাট, সরিষা, ছোলা, ভুট্টা, মসুর, খেসারী, চীনা ও কাউন ইত্যাদি। মাঠ ফসলের জন্য জমিতে একইভাবে প্রস্তুত করা হয় এবং এর বীজ একসাথে ছিটিয়ে বা লাইনে বপন বা রোপন করা হয়। সাধারণত একই জমিতে বছরে এক বা দুইবার মাঠ ফসল উৎপাদন করা হয়। বিভিন্ন আন্তঃপরিচর্যা যেমন-পানি সেচ, আগাছা দমন, পানি নিস্কাশন, সার ও বালাই নাশক ইত্যাদি এক সাথে করা হয়।

মাঠ ফসল বড় খামারে জন্মে, কখনও কখনও শত শত বা এমনকি হাজার হাজার একর জুড়ে। এগুলি প্রায়শই ভারী যন্ত্রপাতি এবং ব্যয়বহুল ইনপুট যেমন সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করে জন্মায়। ভুট্টা, সয়াবিন, গম, চাল এবং তুলা সবচেয়ে সাধারণ ক্ষেত্র ফসল।

(২) মাঠ ফসলের বৈশিষ্ট্য

মাঠ ফসলের বৈশিষ্ট্য হলো-

  1. সাধারণত একসাথে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চাষ করা হয়। 
  2. প্রতিটি গাছ/চারার আলাদা যত্ন নিতে হয় না।
  3. মাঠ ফসলের জমিতে সাধারণত বেড়া দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
  4. মাঠ ফসলের বীজ একসাথে ছিটিয়ে বা সারিতে রোপন বা বপন করা হয়। 
  5. সাধারণত সমস্ত ফসল একসাথে কর্তন সংগ্রহ করা হয়।
See also  ফুল, ফল ও মসলা জাতীয় ফসলের পরিচিতি, শ্রেণীবিন্যাস ও গুরুত্ব

(৩) মাঠ ফসলের শ্রেণীবিভাগ

ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে মাঠ ফসলের শ্রেণীবিভাগ নিম্নলিখিত ১০ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

  1. দানা জাতীয় ফসল (Cereal grain crops): গ্রামিণ (Gramineae) পরিবারভুক্ত যেসব দানা জাতীয় ফসল প্রধানত কার্বোহাইড্রেট বা শ্বেতসার খাদ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাদেরকে দানা জাতীয় ফসল বলে। যেমন ধান, গম, ভুট্টা, চীনা, জোয়ার, সরগাম ইত্যাদি।
  2. ডাল জাতীয় ফসল (Pulse Crops): লিগুমিনোসি পরিবারের অন্তর্গত যে সব দানা ফসল ডালের জন্য উৎপাদন করা হয় তাদের ডাল ফসল বলে। যেমন মুগ, মসুর, ছোলা, মাসকালাই এবং মটর ইত্যাদি। ডাল জাতীয় ফসল আমিষের অন্যতম উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  3. তেলবীজ ফসল (Oilseed crop): যে সব ফসল তেল উৎপাদনের জন্য চাষাবাদ করা হয় তাদেরকে তেলবীজ ফসল বলে। যেমন-সরিষা, সয়াবিন, তিল, তিসি ইত্যাদি। তেলবীজ ফসল স্নেহজাতীয় উপাদানের প্রধান উৎস।
  4. চিনি ফসল (Sugar Crop): যে সকল ফসল চিনি উৎপাদনের জন্য চাষ করা হয় তাদেরকে চিনি ফসল বলা হয়। যেমনআখ, সুগার বিট ইত্যাদি।
  5. আঁশ জাতীয় ফসল (Fiber Crop): যে সব ফসল আঁশ আহরনের জন্য উৎপাদিত হয় তাদেরকে আঁশ জাতীয় ফসল বলে। যেমন- পাট, কেনাফ, মেস্তা, তুলা ইত্যাদি।
  6. পশু খাদ্য ফসল (Fodder Crops): যে সব ফসল পশু খাদ্যের উৎস হিসেবে চাষ করা হয় তাদেরকে পশু খাদ্য ফসল বলে। যেমন- নেপিয়ার ঘাস, দুর্বা ঘাস, ক্লোভার ইত্যাদি।
  7. পানীয় ফসল (Beverage Crops): পানীয় দ্রব্য উৎপাদনের জন্য যেসব ফসল চাষ করা হয় তাদেরকে পানীয় ফসল বলা হয়্ যেমন চা, কফি, কোকো ইত্যাদি।
  8. নেশা জাতীয় ফসল (Narcrotic Crops): নেশাজাতীয় দ্রব্য উৎপাদনের জন্য যেসব ফসল চাষাবাদ করা হয় তাদেরকে নেশাজাতীয় ফসল বলা হয়। যেমন-তামাক, গাঁজা ইত্যাদি।
  9. সবুজ সার ফসল (Green manuring Crop): যে সকল ফসল সবুজ সার উৎপাদনের জন্য চাষ করা হয় তাদেরকে সবুজ সার ফসল বলে। যেমন ধৈঞ্চা, ইপিল ইপিল, কাউন ইত্যাদি।
  10. শিল্প ফসল (Industrial Crop): শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহের জন্য যেসব ফসল চাষ করা হয় তাদেরকে শিল্প ফসল বলে। যেমন-পাট, আখ, রাবার, তুলা ইত্যাদি।
See also  ডাল ফসল কি/কাকে বলে? ডাল ফসল কোন মাটিতে ভালো হয়? মসুর ও মুগ ডাল চাষ পদ্ধতি

(৪) মাঠ ফসলের গুরুত্ব

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাঠ ফসলের গুরুত্ব সর্বাধিক। মাঠ ফসলের গুরুত্ব হলো-

  • বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য শস্য ধান হলো মাঠ ফসল। চাষযোগ্য জমির অধিকাংশটি ব্যবহৃত হয় মাঠ ফসল উৎপাদনের জন্য এবং ধান সবচেয়ে বেশি জমিতে চাষ করা হয়। এছাড়াও গম, অন্যান্য ডাল জাতীয় ফসল, তেলবীজ ফসল ও চাষ করা হয়।
  • দানাজাতীয় ফসলের ৮০-৮৫% আসে ধান থেকে এবং ৬-৮% আসে গম থেকে। ধান ও গম শর্করা জাতীয় খাদ্যের প্রধান উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • ডাল জাতীয় ফসল যেমন মসুর, মুগ, খেসারী ইত্যাদি উদ্ভিদজাত আমিষের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তৈল বীজ ফসল স্নেহজাতীয় খাদ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং এ সকল উদ্ভিদজাত স্নেহ বা চর্বির পুষ্টিমান প্রাণিজ তেল থেকেও বেশি।
  • এছাড়াও পশু পাখি, হাঁস মুরগী ও মাছের খাদ্যের অন্যতম উৎস হিসেবে ও মাঠ ফসলের অবদান রয়েছে।
  • মাঠ ফসল যেমন, পাট ও পাটজাত দ্রব্য বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে বিবেচিত এবং এগুলো রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts