এ আর্টিকেলটি পড়লে আপনি- এ্যাজোলা কি? তা জানতে পারবেন; জৈব সার এ্যাজোলা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করেতে পারবেন; এবং জৈব সার হিসেবে এ্যাজোলা ব্যবহারের উপকারিতা ও এ্যাজোলা উৎপাদনের সিমাবদ্ধতা সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।
(১) এ্যাজোলা কি?
এ্যাজোলা কি: এ্যাজোলা হচ্ছে ভাসমান জলজ পানা। যা পুকুর, ডোবা, নালা, ধানের জমিতে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এ্যাজোলার দৈহিক ওজন প্রতি ৫ দিনে দ্বিগুন হতে পারে। এ্যাজেলা প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতি হেক্টর জমিতে ২০০-৫০০ কেজি নাইট্রোজেন যোগ করা যেতে পারে। বোরো ধানের জমিতে অতি সহজ ও সফলভাবে এ্যাজোলা চাষ করা যায়। এ্যাজোলা মাটির উর্বরতা ও গুনাগুনের উন্নয়ন ঘটায়। এ্যাজোলা ব্যবহার করলে সালফার ও জিংকের ঘাটতিও দূর হয়।
এ্যাজোলার পাতার গহ্বরে অ্যানাবিনা এ্যাজোলি (Anabaena asollae) নামক নীলাভ সবুজ শেওলার একটি প্রজাতি মিথোজীবীরূপে বাস করে যা বায়ুমন্ডল থেকে মুক্ত নাইট্রোজেন সংযোজন করে এ্যাজোলার পাতার গহ্বরে জমা করে। এ এ্যাজোলা মাটিতে চাষ দিয়ে মেশালে মাটিতে নাইট্রোজেন যোগ হয়।
এ্যাজোলার কাজ/ব্যবহার: এ্যাজোলা উন্নতমানের জৈব সার যা শস্যের ফলন বৃদ্ধিতে নাইট্রোজেনের উৎস এবং ইউরিয়ার বিকল্প হিসেবে কাজ করে। এ্যাজোলার একটি পুরু স্তর প্রতি হেক্টর জমিতে ৩০-৪০ কেজি নাইট্রোজেন সরবরাহে সক্ষম। রোপা আমন ধানে এ্যাজোলা ব্যবহার করে ২০-২৫ ভাগ ফলন বাড়ানো যায়। পরপর ২/৩ বার এ্যাজোলা উৎপাদন করে জমিতে মেশাতে পারলে ইউরিয়া ছাড়াই ফসলের ভালো ফলন পাওয়া যায়।
(২) জৈব সার এ্যাজোলা চাষ পদ্ধতি
অতি ঠান্ডা কিংবা অতি গরম আবহাওয়ায় অ্যজোলা জন্মাতে পারে না। বাংলাদেশে বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এর চাষ করার উপযুক্ত সময়। যে জমিতে ধান চাষ করা হবে এমন জমি এ্যাজোলা চাষের জন্য নির্বাচন করা প্রয়োজন।
জৈব সার অ্যাজোলার চাষ পদ্ধতি নিম্নরূপ-
- প্রথমে ৫ বা ৬ সেন্টিমিটার পানি দাঁড়ানো একখন্ড জমি নির্বাচন করে ভালভাবে চাষ বা মই দিয়ে সমান ৮টি প্লটে ভাগ করে নিতে হয়।
- উক্ত জমির দুইকোণার দুইটি প্লটে প্রতি বর্গমিটার জমিতে ৫০০-৮০০ গ্রাম হিসেবে তাজা এ্যাজোলা ছেড়ে দিতে হয়।
- অ্যাজোলা ছাড়ার আগে প্রতি বর্গমিটার জমিতে ২.০ গ্রাম কার্বোফোরান-৫ জি প্রয়োগ করতে হয়।
- এ্যাজোলা ছাড়ার পর জমির পানি পরিষ্কার হলে প্রতি বর্গমিটার জমিতে ০.৮-১.৬ গ্রাম টিএসপি সার পানিতে গুলে এ্যাজোলার উপর সরাসরি প্রয়োগ করতে হয়।
- এ্যাজোলা যথেষ্ট ঘন হলে পাশের প্লটে এ্যাজোলা ছেড়ে অনুমোদিত পরিমাণ ও পদ্ধতিতে কার্বোফোরান ও টিএসপি প্রয়োগ করতে হয়।
- এভাবে এক মাসের মধ্যে সমস্ত জমিটি এ্যাজোলায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
(৩) জৈব সার হিসেবে এ্যাজোলা ব্যবহারের উপকারিতা ও সিমাবদ্ধতা
জৈব সার এ্যাজোলা ব্যবহারের উপকারিতাসমূহ নিম্নরূপ। যথা-
- এ্যাজোলা সার মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে নাইট্রোজেন যোগ করে। বিশেষ করে ধান ক্ষেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে নাইট্রোজেন স য়ন করে।
- এ্যাজোলা ধানের সাথে একত্রেই জন্মানো যায়; কিন্তু তা ধানের বৃদ্ধিতে কোন ব্যাঘাত ঘটায় না।
- এ্যাজোলা অধিক পানিতে জন্মাতে পারে।
- এ্যাজোলা আগাছা দমন করে।
- উঁচু জমির ফসলে এ্যাজোলা কম্পোষ্টের উপাদান যোগান দেয়। যে সব ফসল জলবদ্ধ অবস্থায় জন্মাতে পারে না। সে সব জমিতে এ্যাজোলা কম্পোষ্ট হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
- প্লাবিত এলাকায়, যেখানে সবুজ সার শস্য জন্মানো যায় না, সেখানে এ্যাজোলা জন্মানো যায়।
- এ্যাজোলা মাটির জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
- এ্যাজোলা ব্যবহার করলে প্রতি হেক্টর জমিতে ৩০-৪০ কেজি নাইট্রোজেন কম লাগে।
- এ্যাজোলা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
এ্যাজোলা উৎপাদনের সীমাবদ্ধতাসমূহ নিম্নরূপ। যথা-
- জমিতে অবশ্যই পানি আবদ্ধ অবস্থায় থাকতে হবে।
- উচ্চ তাপমাত্রায় এ্যাজোলার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
- এ্যাজোলাতে কীট-পতঙ্গের আক্রমণ অধিক।
- বছরের সব মৌসুমে এ্যাজোলা জন্মানো খুব কঠিন।
- শামুক এ্যাজোলা খেয়ে ফেলতে পারে।
- ফসফরাস প্রয়োগ ব্যতীত এ্যাজোলা উৎপাদন কঠিন।
- কম্পোষ্ট সার হিসাবে এ্যাজোলাকে কোন ক্ষেতে প্রয়োগ করতে গেলে পরিবহন করা ঝামেলাপূর্ণ হয়।
প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলেচনার মাধ্যমে আমরা এ্যাজোলা কি? জৈব সার এ্যাজোলা চাষ পদ্ধতি এবং এ্যাজোলা ব্যবহারের উপকারিতা ও উৎপাদনের সিমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতে পারলাম।
এ্যাজোলা সার মাটিতে মেশালে নাইট্রোজেন যোগ হয়। এ্যাজোলার পাতার গহ্ববরে Anabaena নামক নীলাভ সবুজ শেওলা মিথোজীবীরূপে বাস করে যা বায়ুমন্ডল থেকে মুক্ত নাইট্রোজেন সংযোজন করে এ্যাজোলার পাতার গহ্ববরে জমা করে।
আর্টিকেলটি ভাল লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।