Skip to content

 

টবে গোলাপ ফুলের চাষ পদ্ধতি

টবে গোলাপ ফুলের চাষ পদ্ধতি

আমাদের দেশে ফুলের রানি খ্যাত গোলাপ অতি সুপরিচিত। আধুনিক মানুষের কাছে এই ফুল ভালোবাসা ও সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে সমাদৃত।

শহরে কিংবা গ্রামে বাড়ির ছাদে বা আশেপাশে শখ করে অনেকেই টবে ফুল চাষ করেন। সেই ক্ষেত্রে বেশির ভাগেরই পছন্দ গোলাপ। আপনি যদি টবে গোলাপ চাষ করতে চান তাহলে আপনাকে টবে গোলাপ ফুলের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে নিতে হবে।

টবে গোলাপ কি করে চাষ করতে হয়, টবে গোলাপ ফুলের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সবকিছু জানবো। শিখুন কিভাবে সঠিক টব, মাটি, বেছে নিতে হয় এবং কিভাবে গোলাপ গাছের পরিচর্যা করতে হয়। আশাকরি পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে।

নিম্নে টবে গোলাপ ফুলের চাষ পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-

নিম্নে টবে গোলাপ ফুলের চাষ পদ্ধতি তুলে ধরা হলো

(১) গোলাপ ফুলের টবের স্থান

  • খোলা-মেলা আলো বাতাসপূর্ণ এমন স্থানে টব রাখতে হবে যাতে সকালের সূর্য কিরণ পায় এবং অন্ততঃ ৬-৮ ঘন্টা রোদ পায়।
  • বিকেলের রোদ (বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে) না লাগানোই ভাল, কেননা এতে ফুলের রং ফ্যাকাসে হয়ে যায়। গোলাপ গাছটিতে যাতে চারিদিক হতেই আলো পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। তা না হলে গাছটি কেবল আলোর দিক দিয়েই বাড়বে। এজন্য টবসহ গাছটি মাঝে মাঝে ঘুরিয়ে নিতে হয়।
  • গ্রীষ্মের প্রখর রোদ থেকে টবের গোলাপ গাছকে রক্ষা করার জন্য পর্যায়ক্রমে রোদ ও ছায়ায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টব রাখলে গাছ ভাল থাকবে। ফুলও বেশি দিন ধরে পাওয়া যাবে।

(২) টবে গোলাপ ফুলের চাষের মাটি তৈরি

  • এঁটেল মাটি গোলাপ চাষের জন্য ভাল নয়। টবের জন্য সার মাটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে মাটি বেশ ফাঁপা থাকে এবং পানি না দাঁড়ায়।
  • ১ ভাগ দো-আঁশ মাটি, ৩ ভাগ গোবর সার বা কম্পোষ্ট, ১ ভাগ পাতা পচা সার, আধ ভাগ বালি (নদীর সাদা বালি হলে ভাল হয়) দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে; তাতে এক মুঠো সরিষার খৈল ও এক চামচ চুন মিশিয়ে ১টি ২০ সেঃমিঃ (৮ ইঞ্চি) টবে একমাস রেখে দিতে হবে।
  • এই একমাস টবেপানি দিয়ে মাটি উল্টে পাল্টে দিতে হয়। এতে মাটির মিশ্রণ ভাল হবে।
  • অনেকে মাটির মিশ্রণে ব্যবহৃত চা পাতা ব্যবহার করেও ভাল ফল পেয়েছেন।
  • টবে নিচের কয়েক সেঃমিঃ পরিমাণ অংশে ইট বা মাটির হাড়ি পাতিলের ভাংগা টুকরা এমন ভাবে বিছিয়ে দিতে হয় যাতে টবের মাটি এগুলোর উপর থাকে। এতে বাড়তি পানি নিকাশের সুবিধা হবে।

(৩) গোলাপ গাছের টবের আকার

  • টবের আকার নির্ভর করে যে গোলাপের চাষ করা হবে তার জাতের উপর। ছোট জাতের জন্য ২০ সেঃমিঃ (৮ ইঞ্চি) টব ভাল, বড় জাতের জন্য ৩০ সেঃমিঃ (১২ ইঞ্চি) বা আরো বড় টব ব্যবহার করতে হয়।
  • তবে প্রথম বছর যে আকারের টবে গাছ বসানো হবে পরের বছর বড়- আকারের টবে গাছ স্থানান্তর করলে বড় আকারের বেশী ফুল পাওয়া যায়।
See also  গোলাপ ফুলের বৈশিষ্ট্য, উপকারিতা ও অপকারিতা

(৪) টবে চাষের জন্য গোলাপ ফুলের জাত

টবে গোলাপ লাগানোর জন্য, সঠিক প্রজাতি বেছে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব গোলাপই টবে ভালো ফলন দেয় না। টবে গোলাপ চাষে সফলতার জন্য, ছোট প্রজাতির গাছ  বেছে নিন যেগুলি টবের জন্য বিশেষভাবে তৈরী করা হয়েছে।

ফ্রিজিয়ান গোলাপ: ফ্রিজিয়ান গোলাপ হল একটি জনপ্রিয় জাত যা তার সুগন্ধ এবং দীর্ঘস্থায়ী ফুলের জন্য পরিচিত। এই গোলাপগুলি সাধারণত ৩ থেকে ৪ ফুট উঁচু হয় এবং টবে  ভালভাবে বৃদ্ধি পায়।

চাইনিজ গোলাপ: চাইনিজ গোলাপ একটি ছোট, ঝোপঝাড়ের জাত যা তার দীর্ঘস্থায়ী ফুলের জন্য পরিচিত। এই গোলাপগুলি সাধারণত ৩ থেকে ৩ ফুট উঁচু হয় এবং টবে  ভালভাবে বৃদ্ধি পায়।

ইন্ডিয়ান গোলাপ: ইন্ডিয়ান গোলাপ হল একটি ছোট, ঝোপঝাড়ের জাত যা তার সুগন্ধ এবং দীর্ঘস্থায়ী ফুলের জন্য পরিচিত। এই গোলাপগুলি সাধারণত ২ থেকে ৩ ফুট উঁচু হয় এবং টবে  ভালভাবে বৃদ্ধি পায়।

রোজা ক্লেমিনটিনা: রোজা ক্লেমিনটিনা একটি ছোট, ঝুলন্ত জাত যা তার সুগন্ধ এবং দীর্ঘস্থায়ী ফুলের জন্য পরিচিত। এই গোলাপগুলি সাধারণত ২ থেকে ৩ ফুট লম্বা হয় এবং টবে  ভালভাবে বৃদ্ধি পায়।

রোজা গ্র্যানডিফ্লোরা: রোজা গ্র্যানডিফ্লোরা তুলনামূলকভাবে বড় হলেও এটিকে টবে টবে  ভালভাবেই চাষ করা যায় পায়। গাছগুলি সাধারণত ৫ থেকে ৬ ফুট উঁচু হয় এবং এরা সুগন্ধির জন্য বিখ্যাত।

গোলাপ চারা কনোর সময় তা টবে চাষের জন্য উপযুক্ত কিনা তা যাচাই করে নিবেন।

(৫) টবে গোলাপ গাছের চারা বসানোর সময়

বছরের যে কোন সময়ই টবে গোলাপের চারা বসানো যায়। তবে বাংলাদেশে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস চারা লাগানোর উত্তম সময়। এসময় চারা লাগালে বেশী দিন ধরে ফুল পাওয়া যায়, গাছের পরিচর্যা করতে সুবিধা হয, রোগ পোকার আক্রমণও কম থাকে।

(৬) গোলাপ ফুলের চারা সংগ্রহ

  • চারা সংগ্রহের সময় সুস্থ-সুন্দর চারা সংগ্রহ করা উচিত।
  • চারা সংগ্রহের সময় এর গোড়ার মাটির গোল্লাটি অবিকল আছে কিনা তা ভাল করে দেখে নিতে হবে।
  • মাটির গোল্লাসহ চারার গোড়ার শিকড় বেরিয়ে থাকা চারা গাছ না নেয়াই ভাল।
  • বিশ্বস্থ এবং পরিচিত নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করা উচিত।
  • চারা সংগ্রহের ব্যাপারে অভিজ্ঞ লোকের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।

(৭) টবে গোলাপের চারা বসানো

  • চারাগাছ বা কলমচারা মাটির গোল্লাসহ পলিথিন ব্যাগে অথবা ছোট মাটির টবে কিনতে পাওয়া যায়। চারাটি যদি টবের হয়, তাহলে টব থেকে পুরো মাটিসহ চারাটি এমনভাবে নিতে হবে যাতে ভেংগে না যায় বা শিকড়ের কোন ক্ষতি না হয়।
  • ভেজা মাটির গোল্লাসহ চারা সংগ্রহ করলে তা একটু শুকিয়ে নিতে হয়।
  • চারা বসাবার আগেই গাছের অপ্রয়োজনীয় পুরোনো বা মরা ডাল পালা হালকা ভাবে ছেঁটে দিতে হবে।
  • এরপর চারাটি টবের মাঝখানে সোজা করে বসিয়ে টবের ওপরে কিছু কম্পোষ্ট সার দিয়ে গাছের গোড়ারমাটি হালকা চাপ দিয়ে বসিয়ে দিতে হবে।
  • চারা এমনভাবে বসাতে হবে যাতে কুঁড়ি বের হবার গিট/পর্বটি মাটির ওপরেই থাকে।

(৮) টবে গোলাপ ফুলের সেচ পদ্ধতি

  • টবে বসানোর পর অন্তত ২/৩ বার পানি সেচ দিতে হবে। চারা অবস্থায় গাছ যাতে প্রখর রোদ বা বৃষ্টির ঝাপ্টা থেকে রক্ষা পায় সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার।
  • প্রথম অবস্থায় ৩/৪ ঘন্টা এবং ধীরে ধীরে বাড়াতে বাড়াতে ৭/৮ ঘন্টা রোদ পাওয়ার ব্যবস্থা করলে গোলাপ ভাল হবে।
  • পানি সেচের সময়লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় পানি দাঁড়িয়ে না যায়।
  • কচি পাতা ও কুঁড়ি ছাড়ার সময় একটু বেশী পানি দরকার। এ সময় সকাল সন্ধ্যা সেচ দেয়া উচিত। ঝাঁঝরি দিয়ে ডাল-পালাসহ সমস্ত গাছটিই পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে।
See also  গোলাপ গাছের পরিচর্যা

(৯) গোলাপ ফুলের টবে সার প্রয়োগ

  • টব বসাবার পর গাছ ধরে গেলে একমাস পর থেকে ১৫ দিন বা এক মাস পর পর সার দিতে হয়।
  • শীতের ঠিক পরেই অর্থাৎ মার্চের শেষে বা এপ্রিলের প্রথম দিকে টবের উপরের ৮/১০ সেঃমিঃ মাটির স্তর তুলে দিয়ে খালি জায়গায় পচা গোবর সার ও নতুন ফাঁপা মাটি দিয়ে ভরে দিতে হয়।
  • এর পর খড় বা পাতা দিয়ে ঢেকে গ্রীষ্মের প্রখর রোদ থেকে গাছের শিকড়কে রক্ষা করতে হয়।
  • শীতকালে গাছ ছাটার পর, প্রতি টবে ৩ মুঠা গুঁড়া গোবর সার ও ১ মুঠা স্টিমড্ হাড়ের গুঁড়া বা স্টেরামিল প্রয়োগ করিতে হইবে। এরপর পুরো শীতকাল ধরে ১ মাস অন্তর অন্তর ১ মুঠা করে স্টিমড্ বোন মিল বা স্টেরামিল প্রয়োগ করতে হবে।
  • গোলাপের ভাল ফুল উৎপাদনের জন্য পাতার সার ও ফলিয়ার স্প্রে জনপ্রিয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েকটি রাসায়নিক সার মিশিয়ে এই সার প্রস্তুত করতে হয়।
  • শীতকালে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সকাল ৮টার মধ্যে ফলিয়ার স্প্রে করতে হয়। দুই প্রকারের পাতা সার গাছে ব্যবহার করা হয়, ১টি গাছের স্বাস্থ্য ও ফুল ভাল করার জন্য অপরটি ট্রেস এলিমেন্টের জোগান দেয়ার জন্য।
  • গাছের স্বাস্থ্য ও ফুল ভাল করার জন্য ইউরিয়া, ডাই-অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ডাই-পটাশিয়াম ফসফেট প্রতিটি ১০ গ্রাম করে ১০ লিটার পানিতে গুলে স্প্রে দ্রবণ তৈরি করতে হবে।
  • গাছের ট্রেস এলিমেন্টে ভালো করার জন্য ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ২০ গ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ সালফেট ১৫ গ্রাম, ফেরাস সালফেট ১০ গ্রাম, বোরাক্স ৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে প্রতি লিটার পানিতে উল্লেখিত মিশ্রণটির ২ গ্রাম করে গুলিয়ে স্প্রে করতে হবে।
  • উভয় প্রকার পাতার সারের স্প্রে এর সাথেই কীটনাশক বা বালাইনাশক মিশিয়ে স্প্রে করা যায় কিন্তু দুটি সার এক সাথে মিশিয়ে স্প্রে করা যাবে না।
  • পাতার সার টবের গোলাপের জন্য অপরিহার্য এবং জমির গোলাপের জন্য উপকারী। স্প্রে করার সময় যেন পাতার দু’দিকেই ভালভাবে লাগে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
  • টবের গাছে সারা বছরই তরল সার প্রয়োগ করতে হবে। সঠিক মাত্রা বা প্রয়োগ বিধি না জেনে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করাই ভাল। কেননা, মাত্রায় বা ব্যবহার-বিধিতে একটু ব্যতিক্রম হলে গাছের ক্ষতির আশংকা থাকে।
  • রাসায়নিক তরল সারের পরিবর্তে গোবর ও সরষের খৈল ৪/৫ দিন পানিতে পচিয়ে তরল করে সপ্তাহে দু’দিন করে ব্যবহার করা যায়।
  • গাছের নতুন ডাল-পালা বাড়াতেও ফুলের আকার বড় করতে এ ধরনের তরল সার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • তরল সারের না থাকলে ছোট মাছপঁচা পানি গাছের গোড়ায় দেয়া যায়।
  • দুর্বল গাছে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হিসারে ইউরিয়া মিশিয়ে সকাল বিকাল পাতায় স্প্রে করলে গাছ তাজা হয়।

(১০) গোলাপ ফুলের টবে চুন-পানি প্রয়োগ

  • প্রতি লিটার পানিতে ১ চামচ গুড়ো চুন পরিস্কার পািনতে ভাল করে গুলে পাতলা ন্যাকড়ায় ছেঁকে প্রতি ৩ মাস পর পর দিতে হয়।
  • চুন-পানি দেবার ১৫ দিনের মধ্যে অন্য কোন সার না দিয়ে শুধু পানি দিতে হয়।

(১১) গোলাপ গাছ ছাঁটাই

  • মৃত ও রোগাগ্রস্থ-ডাল অপসারনের জন্য, গাছের উপযুক্ত আকৃতি প্রদানের জন্য, প্রতিটি ডালে ফুল আসবার জন্য এবং প্রয়োজনীয় রোদ্র পাবার জন্য নিয়মিত গাছ ছাটাইয়ের প্রয়োজন হয়।
  • গোলাপ প্রচুর শাখা বিস্তারকারী গুল্ম জাতীয় গাছ। গাছের ফুল দেয়া শেষ হলেই গাছ ছেঁটে দিতে হবে। নিয়মিতগাছ ছাঁটাই করলে বেশী ও বড় আকারের ফুল পাওয়া যায়।
  • বর্ষার পর অক্টোবর-নভেম্বর মাস ছাঁটাইয়ের জন্য ভাল সময়। সাধারনত ২০-২৫ সেঃমিঃ (৮-১০ ইঞ্চি) বড় রেখে ডাল ছেঁটে দিতে হয়।
  • ডাল এমনভাবে কাটতে হবে যাতে থেঁতলে বা ছিঁড়ে না যায়। এ জন্য ধারালো ছুরি ব্যবহার করতে হয়। সাদা, হলুদ, হালকা হলুদ ও দো-রঙা জাতের গোলাপ গাছ খুব হালকা ছাঁট আর লাল জাতের গোলাপ গাছে শক্ত ছাঁট দিতে হয়।
  • গাছ ছাঁটাইয়ের পর ডাইব্যাক রোগের আক্রমণ হতে পারে। সুতরাং গাছ ছাঁটাইয়ের আগে ও পরে কীটনাশক ও ছত্রাক নাশক দুইই  প্রয়োগ করা দরকার।
See also  গোলাপ ও বেলি ফুল চাষ পদ্ধতি

(১২) গোলাপ ফুলের রোগ-পোকা দমন

  • শুঁয়ো পোকা বা অনিষ্টকারী অন্য যে কোন পোকা দেখা মাত্র ধরে মেরে ফেলা উচিত। লাল মাকড়সার আক্রমণ ও ডাইব্যাক রোগই বেশ মারাত্মক।
  • সেচের সময় টবে জল জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করলে লোহার শিক দিয়ে টবের মাটি ছিদ্র করে পানি বের হবার পথ করে দিতে হবে। এ কাজটা একটু সাবধানে করা দরকার যাতে শিকড়ের কোন ক্ষতিনা হয়।
  • পানি দেবার আগের দিন প্রতিবারই টবের ধারের কাছের মাটি বেশী করে এবং মাঝখানের মাটি কম করে খুঁচিয়ে দিতে হয়।

(১৩) টবের গোলাপ গাছের গ্রীষ্মকালীন পরিচর্যা

  • টব ছাদে বা পাকা স্থানে রাখলে পুরু খড় বিছিয়ে তার উপর ইট বা কাঠের টুকরা রেখে সেগুলোর ওপর টব রাখা উচিত।
  • গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড তাপের সময় পানি না দিয়ে রাতের দিকে যখন তাপমাত্রা কমতে থাকে (রাত ৮ টার পর) ছাদের টবে তখন জল দেয়াই ভাল। এসময় পানির তাপমাত্রা আবহাওয়ার সঙ্গে মোটামুটি সামঞ্জস্য পূর্ণ থাকে।

(১৪) বর্ষাকালে টবে গোলাপ গাছের পরিচর্যা

  • টবের নিচের খড় কুটো, ইট এসব সরিয়ে টবগুলো কেবল ছাদ বা পাকা স্থানেই রাখতে হবে এবং ঝড় থেকে টব ও গাছকে রক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে।
  • টবের মাটি মাঝখানের দিকে উচিয়ে কোণাকৃতি করে দিলে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করতে পারবে না। অতিরিক্ত মাটি বর্ষা শেষে সরিয়ে ফেলতে হয়।

(১৫) টবের গোলাপ গাছ প্রদর্শনীর জন্য করণীয়

  • প্রদর্শনীর জন্য বর্ষাকালে উন্নত জাতের গোলাপ গাছ নির্বাচন করে টবে রোপণ করতে হবে। নিয়মিত সেচ ও সার প্রয়োগের দ্বারা গাছটিকে এমন করে তুলতে হবে যেন গাছে প্রচুর ও সুন্দর পাতা জন্মায় এবং প্রস্ফুটিত ফুল বেশ বড় আকারের হয়।
  • প্রদর্শনীর সময় থেকে অন্ততঃ আড়াই মাস আগে গাছটিকে বিবেচনারসহিত ছাঁটাই করা উচিত।
  • নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি গাছ ছাঁটাই করলে ফেব্রুয়ারী মাসে গাছে ফুল ফোটে। মাঝে মাঝে কচি ডালগুলো এমনভাবে ছেঁটে দিতে হবে যেন গাছটি বেশ ঝোপালো হয়।
  • গাছের প্রতিটি শাখায় দু’টো কুঁড়ি রেখে বাকি কুঁড়িগুলো ছিড়ে ফেলে দিতে হবে। যাতে বড় ফুল ফোটে সেদিকে যত্ন রেখে পরিচর্যার কাজ করতে হয়।
  • যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কুঁড়ি জন্মায়,তাহলে কুঁড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে।
  • ফুলের ঔজ্বল্য বড়াতে হলে ৪ লিটার পানিতে ২৫ গ্রাম আয়রন সালফেট গুলে ফুলে প্রয়োগ করতে হয়।
  • প্রদর্শনী আরম্ভ হবার অন্তত ১ সপ্তাহ পূর্বে ছায়াযুক্ত স্থানে টব রাখলে ভাল হয়। এতে দুপুরের প্রখর রোদ্রে ফুলের পাপড়ি নষ্ট হয় না।

প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা টবে গোলাপ ফুলের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারলাম।

গোলাপ ফুল ভালবাসেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। গোলাপের রঙ, গন্ধ, এবং সৌন্দর্য যে কারো মন কেড়ে নেয়। গোলাপ শব্দ শুনলেই মনে লাল রঙের ভালোবাসার এক ফুলের চিত্র ফুটে ওঠে।

অনেকেই মনে করেন যে গোলাপ লাগানোর জন্য অনেক জায়গা দরকার। কিন্তু বাস্তবে তা সত্য নয়। আপনি যদি আপনার বাসা-বাড়ির আঙ্গিনায়, ছাদে বা ব্যালকনিতে কিছুটা জায়গা ম্যানেজ পারেন তাহলেই আপনি টবে গোলাপ ফুলের চাষ করতে পারবেন।

[সূত্র: কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস); বাগান বন্ধু]

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট কৃষি

পশু-পাখি পালন ও চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts