নিম্নে ক্ষুরা রোগের লক্ষণ ও ক্ষুরা রোগ সতর্কতা ও করণীয় সমূহ তুলে ধরা হলো-
(১) ক্ষুরা রোগের লক্ষণ
১। ক্ষুরারোগ একটি ছোঁয়াচে সংক্রামকরোগ।
২। ক্ষুরা রোগ অতি তীব্র প্রকৃতির সংক্রামক ভাইরাস জনিত রোগ। এ রোগে আক্রান্ত পশুর মুখ ও পায়ে ঘা হবার ফলে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না এবং খুঁড়িয়ে হাটে।
৩। এ রোগে মৃত্যুরহার কম হলেও উৎপাদনমারাতুক ক্ষতিথস্থহয় ৷
৪। এ রোগেআক্রান্ত ছাগীর দুধ উৎপাদন কমেযায়।
৫। গর্ভবতী ছাগীর গর্ভপাত হয়।
৬। শরীরে কাঁপুনি দিয়েজবর আসে।
৭। মুখ হতেলালা ঝরে, মুখের ভিতরেরপর্দায়, জিহবায়, দাঁতের মাড়িতে, ক্ষুরের ফাঁকে।
৮। এমনকিওলানে ফোস্কা পড়ে।
৯। মুখঘায়ের কারণে ছাগল খেতে পারেনা, ফলে দূর্বল হয়েপড়ে।
১০। ক্ষুরে ঘা হওয়ায়খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটে।
১১। আক্রান্তক্ষতে মাছি ডিম পাড়লেপোকা হতে পারে।
১২। বাচ্চা ছাগলে এ রোগ হলেহার্ট আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
১৩। ক্ষুরের ফোসকা ফেটে ঘা হয়, পা ফুলে ব্যথা হয়। ঘা বেশি হওয়ায় চলা ফেরা করতে কষ্ট হয়।
১৪। মাছি ও জীবাণুতে ঘা বিষিয়ে উঠে। ফলে পশু পা ছুড়তে থাকে যেন পায়ে কিছু লেগে আছে।
১৫। রোগের পরিমাণ বেশি হলে ক্ষুরা বা জিহ্বা খসে পড়তে পারে।
১৬। গাভীর ওলানে ফোসকা হতে পারে, ফলে ওলান ফুলে উঠে এবং দুধ কমে যায়।
১৭। বাছুরের এ রোগ হলে বাছুর প্রায়ই মারা যায়।
১৮। পশুর শ্বাসকষ্ট, রক্ত শূন্যতা এবং পরিবেশগত উচ্চ তাপমাত্রায় অসহিষ্ণুতা দেখা যায়।
(২) ক্ষুরা রোগ সতর্কতা ও করণীয় কি
১। আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে পরিষ্কার শুষ্ক জায়গায় রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই কাদা বা পানিতে রাখা যাবে না।
২। এ রোগ মারাত্মক ছোঁয়াচে। তাই আক্রান্ত পশুকে অন্যত্র নেয়া এবং বাইরের কোনো পশুকে এ এলাকায় আনা উচিৎ নয়।
৩। আক্রান্ত এলাকার এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার সকল সুস্থ পশুকে অবিলম্বে টিকা দিতে হবে।
৪। আক্রান্ত পশুকে নরম ও তরল খাবার যেমন- ভাতের ফ্যান বা জাউভাত খেতে দিতে হবে।
৫। যিনি আক্রান্ত পশুর সেবাযত্ন করবেন তার ব্যবহৃত কাপড়-চোপড়, হাত-পা এবং ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিস অবশ্যই জীবাণু নাশক ওষুধ দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এ জন্য ১ লিঃ পানিতে ৪ চা চামচ আইওসান মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬। মৃত পশুকে মাটির নিচে পুঁতে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৭। পশুর ঘর সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। দৈনিক ২% আইওসান দ্রবণ দিয়ে বা অন্য কোনো সুবিধাজনক জীবাণুনাশক দ্রব্য মিশ্রিত পানি দ্বারা ধুয়ে দিতে হবে।
৮। সঙ্গনিরোধ বা কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
৯। ক্ষুরা রোগ চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থাই বেশি কার্যকর, তাই ক্ষুরা রোগ প্রতিরোধের জন্য কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা জোরদারকরণসহ গবাদিপশুকে প্রতি ৬ মাস অন্তর এ রোগের টিকা দিয়ে নিতে হবে। তাহলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে আমাদের দেশের গবাদিপশুকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
১০। কুসুমগরম পানিতে ফিটকিরি বা পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট গুলেমুখের ও পায়ের ঘাভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
১১। ছাগলের ঘর ২% আয়োসানবা অন্যান্য ডিসইনফেকট্যান্টদ্বারা পরিস্কার করতে হবে|
১২। রোগাক্রান্তছাগলের মল মুত্র, বিছানাও ব্যবহৃত উচ্ছিষ্ট খাদ্যদ্রব্যমাটিতে পুতে বা পুড়িয়েফেলতে হবে।
১৩। মৃতছাগলকেগর্তকরেমাটিতেপুতেফেলতেহবে|
১৪। কোন অবস্থাতেইমৃত ছাগলের চামড়া ছাড়ানো যাবে না এবংপথে ঘাটে ফেলা যাবেনা।
পশু-পাখি পালন ও চাষাবাদ সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।