পদ্মা সেতু/PADMA BRIDGE বাংলাদেশের অত্যন্ত গর্বজ্বল স্থাপত্য যার সরকারি নাম হলো- পদ্মা বহুমুখী সেতু। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিমি (৩.৮২ মাইল)। এটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু, স্প্যান সংখ্যা ও মোট দৈর্ঘ্য উভয়ের দিক থেকে গঙ্গা নদীর উপর নির্মিত দীর্ঘতম সেতু এবং ১২০ মিটার (৩৯০ ফুট) গভীরতাযুক্ত বিশ্বের গভীরতম পাইলের সেতু।
পদ্মা নদীর উপর নির্মিত এই সড়ক ও রেল সেতুটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু যা ২৫ জুন ২০২২ ইং তারিখে উদ্বোধন করা।
পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান যে কোন পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানসমূূূূূূূূূূহ তুলে ধরার চেষ্টা করব।
পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান সরকারি ও বেসরকারি যেকোন চাকরির পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, চাকরি পরীক্ষাসহ সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় থাকে পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানের ওপর নানা প্রশ্ন। এসব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আমাদের এ আয়োজন।
নিম্নে পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান A to Z সকল প্রশ্ন ও সকল তথ্য তুলে ধরা হলো-
(১) পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান ২০টি বুলেট পয়েন্ট
পদ্মা সেতু এখন বাংলাদেশের হট টপিক। এর মাধ্যমে প্রায় ২৯ টি জেলার সাথে সড়কপথে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষায় পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন থাকে। তাই নিচের ২০ বুলেট পয়েন্টগুলো জেনে রাখতে হবে।
- পদ্মা সেতু বিশ্বের দীর্ঘতম ট্রাস (Truss) সেতু।
- দৈর্ঘ্যঃ ৬.১৫ কি.মি এবং ভায়াডাক্টঃ ৩.১৮ কি.মি।
- মোট পিলার সংখ্যাঃ ৪২টি।
- ভূমিকম্পন সহনশীলঃ ৯ মাত্রা।
- সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান বসানো হয়ঃ ১০ ডিসেম্বর ২০২০ সালে।
- রেল সংযোগ লাইনঃ ১টি (মিটারগেজ + ব্রডগেজ)।
- সড়ক সেতুতে লেন সংখ্যাঃ ৪টি ।
- নদী শাসনঃ ১২ কি.মি ।
- মোট ব্যয়ঃ ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। (ব্যাখ্যাঃ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দশ মাস পর ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল প্রকল্পটি সংশোধন করার ফলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৩০ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ১৮২৫ কোটি টাকা ব্যয় সংকোচন করে। ফলে এখন পদ্মা সেতুর চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।)
- মুন্সিগঞ্জ-শরীয়তপুর-মাদারীপুর ৩টি জেলার উপর নির্মিত দেশের বৃহত্তম সেতু।
- মাওয়া (মুন্সিগঞ্জ) সাথে জাজিরা (শরীয়তপুর) বাংলাদেশের উত্তর- ৎদক্ষিণ প্রান্তকে যুক্ত করবে।
- সংযোগ করেছেঃ দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলাকে।
- আয়ুষ্কালঃ ১০০ বছর।
- পরিচালনা করছেঃ সেতু বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ।
- তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেঃ ৪ জুলাই, ২০০১ সালে।
- পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেনঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ জুন, ২০২২ সালে।
- বিশ্বে বৃহত্তম সড়ক সেতুর তালিকায় পদ্মা সেতুঃ ২৫তম।
- পদ্মা সেতু দক্ষিণ এশিয়ায়ঃ ৬ষ্ঠ।
- পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-যশোর রেলপথের দৈর্ঘ্য হবেঃ ১৬৯ কি.মি ।
- সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানঃ চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন।
- নদী শাসনঃ সিনো হাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড।
(২) পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান সম্বলিত ৫০টি বাক্য
পদ্মা সেতু হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু। সম্প্রতি সময়ে এটি পৃথিবীর বিভিন্ন রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছে যা বাংলাদেশের জন্য গর্বের একটা ব্যাপার। তাই পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন গুলো চাকরির পরীক্ষা সহ বিভিন্ন পরীক্ষায় আসতে পারে। সুতরাং পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান সম্বলিত নিচের ৫০টি লাইন স্মরণে রাখা উচিত।
- পদ্মা সেতুর অফিশিয়াল নাম “পদ্মা বহুমুখী সেতু।” (The Padma Multipurpose Bridge)।
- পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম “পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প।” (The Padma Multipurpose Bridge Project)।
- বিশ্ব ব্যাংকের সাথে ঋণচুক্তি হয় ২৮ এপ্রিল ২০১১ সালে (১২০ কোটি মার্কিন ডলার)।
- বিশ্বব্যাংক চুক্তি বাতিল করে ৩০ জুন ২০১২ সালে।
- পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর। (চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৭ জুন ২০১৪)।
- ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
- পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম।
- পদ্মা সেতু সংযোগকারী স্থান মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় এবং শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্ত। (পদ্মা সেতুর অবস্থান ০৩ টি জেলায়-মুন্সিগঞ্জ মাদারীপুর শরীয়তপুর)
- পদ্মা সেতু সংযোগ স্থাপন করবে ২৯ টি জেলার সাথে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমের ২১ জেলার সাথে।
- পদ্মা সেতু নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড এর আওতাধীন চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।
- পদ্মা সেতুতে থাকবে গ্যাস-বিদ্যুৎ অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ পরিবহন সুবিধা।
- পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক ১৪ কিলোমিটার।
- পদ্মাসেতু প্রকল্পে নদীশাসন হয়েছে দুই পাড়ে ১২ কিলোমিটার।
- পদ্মা সেতুর নদী শাসনের কাজ পায় চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন।
- পদ্মা সেতুর নকশা করেন= AECOM ( Architecture, Engineering, Consulting, Operation and Maintenance)
- পদ্মা সেতুর পাইল সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেয় কাউই (COWI)
- পদ্মা সেতুর তদারকির দায়িত্বে রয়েছে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
- পদ্মা সেতু দ্বিতলবিশিষ্ট, কংক্রিট এবং স্টিলের তৈরি ( যা বিশ্বে প্রথম)
- পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার (২০২০০ ফুট)
- পদ্মা সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৯.৩০ কিলোমিটার ( ৩.১৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক)
- পদ্মা সেতুর প্রস্থ ১৮.১০ মিটার (৫৯.৪ ফুট, ৭২ ফুটের চার লেনের সড়ক)
- পিলার ৪২ টি। (প্রতিটি পিলারের জন্য পাইলিং ৬ টি, তবে মাটি জটিলতার কারণে ২২ টি পিলারের পাইলিং হয়েছে ০৭টি করে, মোট পাইলিং ২৮৬ টি, পাইলিং এর গভীরতা ৩৮৩ ফুট।)
- স্প্যান ৪১ টি। (প্রতিটি ১৫০ মিটার)
- প্রতিটি স্প্যানের ওজন ৩২০০ টন। স্প্যান বহনকারী জাহাজ তিয়ান-ই। (ধারণক্ষমতা ৩৬০০ টন)
- প্রথম স্প্যান বসানো হয় ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর (৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের উপর)
- ৪১ তম অর্থাৎ শেষ স্প্যান বসানো হয় ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর (বিশ্ব মানবাধিকার দিবস); ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের উপর দুপুর ১২.০২ মিনিটে।
- ৪১ টি স্প্যান বসাতে সময় লাগে ৩ বছর ২ মাস ১০ দশ দিন।
- পদ্মা সেতুতে রেল লাইন স্থাপন হবে নিচতলায় অর্থাৎ স্প্যানের মধ্য দিয়ে। ( মিটারগেজ ও ব্রডগেজ একই সময় যেকোনো একটি ট্রেন চলাচল করতে পারবে)
- পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট ৩.১৮ কিলোমিটার।
- পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট পিলার ৮১ টি।
- ভূমিকম্প সহনশীল মাত্রা ৯ রিখটার স্কেল।
- পদ্মা সেতুর স্থানাঙ্ক ২৩.৪৪৬০ ডিগ্রী (উত্তর), ৯০.২৬২৩ ডিগ্রি (পূর্ব)।
- পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা ৬০ ফুট ( ১৮ মিটার)
- পদ্মা সেতুর কাছাকাছি সামরিক সেনানিবাস= পদ্মা সেনানিবাস।
- পদ্মা সেতুর কাছাকাছি থানা (২টি)= পদ্মা সেতু উত্তর, পদ্মা সেতু দক্ষিণ।
- দীর্ঘতম সড়ক সেতু পদ্মা সেতু ( পূর্বে ছিল যমুনা সেতু ৪.৮ কিলোমিটার, পিলার ৫০ টি, স্প্যান ৪৯ টি)।
- পদ্মা সেতু হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু।
- পদ্মা সেতু, নদীর উপর নির্মিত বিশ্বের প্রথম দীর্ঘতম সেতু।
- বৃহতম সড়ক সেতুর তালিকায় ২৫ তম (এশিয়ায় ২য়)
- পদ্মা সেতুর শেপ হবে “S” আকৃতির।
- পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ করেছে প্রায় ৪ হাজার মানুষ।
- পদ্মা সেতুর প্রয়োজনে ৯১৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
- পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। (ব্যাখ্যাঃ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দশ মাস পর ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল প্রকল্পটি সংশোধন করার ফলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৩০ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ১৮২৫ কোটি টাকা ব্যয় সংকোচন করে। ফলে এখন পদ্মা সেতুর চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।)
- টোল আদায় করে ব্যয় উঠাতে সময় লাগবে ৩৫ বছর।
- আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১০০ বছর।
- পদ্মাসেতুর ফলে জিডিপি বৃদ্ধি পাবে ১.২৩ শতাংশ।
- পদ্মা সেতু রক্ষণাবেক্ষণ করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (BBA=The Bangladesh Bridge Authority)।
- পদ্মা সেতুর ওয়েবসাইট এড্রেস হলো- www.padmabridge.gov.bd।
- পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে এই গুজব উঠে জুলাই, ২০১৯।
- সেতু উদ্বোধন তারিখ ইংরেজি: ২৫শে জুন ২০২২ খিরষ্টাব্দ; বাংলা তারিখ: ১১ আষাঢ়, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ এবং আরবি তারিখ: ২৫ জিলকদ, ১৪৪৩ হিজরি।
(৩) পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান ৮০টি প্রশ্ন ও উত্তর
বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু। কিন্তু পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হওয়ার পরপরই সেই রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে জায়গা দখল করে নেয় এই পদ্মা সেতু। শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং বিশ্বের বিভিন্ন রেকর্ড অর্জন করার মধ্য দিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে পদ্মা সেতু।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের জন্য এই পদ্মা সেতু আশীর্বাদ হিসেবে বানানো হয়েছে। পূর্বে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদেরকে যাতায়াত করতে হতো লঞ্চে করে। যা ছিল অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ একটা পথ। কিন্তু পদ্মা সেতুর স্থাপনের মধ্য দিয়ে সেই কষ্ট লাঘব করে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টার পথ এখন ছয় মিনিটে পাড়ি দেওয়া সম্ভব হবে।
তাই চাকরির পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, চাকরি পরীক্ষাসহ সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় থাকে পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানের ওপর নানা প্রশ্ন। এসব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আমাদের এ আয়োজন। ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে সব চাকরি জীবি মানুষের জন্য নিচের প্রশ্নগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য কত?
উত্তর: বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। কিন্তু রাস্তাসহ দুই পাশের দৈর্ঘ্য একত্রিত করলে এর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় প্রায় ৯ কিলোমিটার. পদ্মা ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা নদীর অববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে ৪১ টি স্প্যান বসানো হয়েছে যাদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ৬.১৫০ মিটার এবং ১৮.১০ মিটার।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু কোন জেলায় অবস্থিত?
উত্তর: বাংলাদেশের তিনটি জেলাকে একসাথে সংযুক্ত করেছে এই পদ্মা সেতু। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এর সাথে শরীয়তপুর এবং মাদারীপুর জেলা যুক্ত হয়ে দক্ষিণ পশ্চিম অংশে সাথে উত্তর পূর্ব অংশের যাতায়াতের ব্যবস্থা সুগম করা হয়েছে। সেতুর নিচের অংশে রয়েছে রেলপথ এবং ওপরের অংশেও মূল সেতু।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু বিশ্বের কততম সেতু?
উত্তর: বিশ্বের বিভিন্ন সেতুর মধ্যে আমাদের দেশের পদ্মা সেতুর অবস্থান ১২২ তম। তবে এটি নির্মিত হয়েছে পৃথিবীর দ্বিতীয় খরস্রোতা নদীর ওপর দিয়ে।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর খরচ কত?
উত্তর: বাংলাদেশের অন্যতম যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে। যা তৈরি করতে ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এই টাকা সরকারের বরাদ্দ ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ঋণের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। যা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের ঋণচুক্তি অনুযায়ী আগামী ৩৫ বছরে সুদ সহ ৩৬ হাজার কোটি টাকায় দাড়াবে।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য কত কি.মি.?
উত্তর: ৬.১৫ কিলোমিটার।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর কোন কোন পিলারের উপর প্রথম স্প্যানটি বসানো হয়েছে?
উত্তর: ৩৭ ও ৩৮ নং পিলার।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা বহুমূখী সেতুর স্প্যান সংখ্যা কত?
উত্তর: ৪১টি।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম কি?
উত্তর: পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু নির্মাণের আনুষ্ঠানিক চুক্তি কখন হয়?
উত্তর: বাংলাদেশ সরকার এবং চিনা চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির সাথে ১৭ই জুন, ২০১৪ইং সালে চুক্তি হয়।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর ধরন কি?
উত্তর: পদ্মা সেতুর ধরন দ্বিতল বিশিষ্ট কংক্রিট এবং স্টিল দিয়ে নির্মিত সেতু।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু বিশ্বের কততম সেতু?
উত্তর: পদ্মা সেতু বিশ্বে ১২২তম সেতু।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর কত কিলোমিটার?
উত্তর: পদ্মা সেতুর ৬.১৫ কিলোমিটার।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য কত?
উত্তর: পদ্মা সেতুর দৈঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু উদ্বোধন?
উত্তর: সেতুটি ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয়।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ?
উত্তর: পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ ২৫ জুন ২০২২ সাল।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর খরচ কত?
উত্তর: পদ্মা সেতু ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। (ব্যাখ্যাঃ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দশ মাস পর ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল প্রকল্পটি সংশোধন করার ফলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৩০ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ১৮২৫ কোটি টাকা ব্যয় সংকোচন করে। ফলে এখন পদ্মা সেতুর চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।)
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর পিলার কয়টি?
উত্তর: পদ্মা সেতুর পিলার রয়েছে ৪২টি।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত?
উত্তর: দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১৮.১০ মিটার।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু কোন জেলায় অবস্থিত?
উত্তর: মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরিয়তপুরের জাজিরা পয়েন্ট দিয়ে পদ্মা নদীর দুই প্রান্তকে যুক্ত করেছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। তাই বলা যায় পদ্মা সেতু মুন্সিগঞ্জের ও শরিয়তপুর জেলায় অবস্থিত।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর প্রস্থ কত?
উত্তর: প্রস্থ ১৮.১০ মিটার।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর দুই প্রান্ত কোন দুটি জেলায় অবস্থিত?
উত্তর: মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা কত?
উত্তর: পদ্মা সেতু ১২৮ মিটার (৪২০ ফুট) গভীরতাযুক্ত বিশ্বের গভীরতম পাইলের সেতু।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু কবে উদ্বোধন করা হয়?
উত্তর: পদ্মা সেতু ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয়।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরিয়তপুরের জাজিরা পয়েন্ট দিয়ে পদ্মা নদীর দুই প্রান্তকে যুক্ত করেছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। তাই বলা যায় পদ্মা সেতু মুন্সিগঞ্জের ও শরিয়তপুর জেলায় অবস্থিত।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের জেলার নাম কি?
উত্তর: মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়ন করেছে?
উত্তর: আমেরিকার মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম (AECOM)।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর উচ্চতা কত?
উত্তর: পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা ৬০ ফুট।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর স্প্যান কয়টি?
উত্তর: সেতুটিতে ৪১টি স্প্যান রয়েছে।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর ভূমিকম্প সহনীয় মাত্রা কত?
উত্তর: ভূমিকম্পন সহনশীল ৯ মাত্রা।
প্রশ্ন ➤ মাটির কত মিটার গভীরে গিয়ে পাইল বসানো হয়েছে পদ্মা সেতুতে?
উত্তর: পদ্মা সেতু ১২৮ মিটার (৪২০ ফুট) গভীরতাযুক্ত বিশ্বের গভীরতম পাইলের সেতু।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু কত কিলোমিটার লম্বা?
উত্তর: পদ্মা সেতু লম্বা ৬.১৫ কিলোমিটার।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুতে কোন ধরনের রেল লাইনের সংস্থান আছে?
উত্তর: ডুয়েল গেজ লাইন।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর কাজ কবে শুরু হয়?
উত্তর: ২৬ নভেম্বর ২০১৪।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর কাজ শেষ কবে হয়?
উত্তর: ২৩শে জুন ২০২২।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু কয়টি জেলাকে সংযুক্ত করবে?
উত্তর: পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলাকে সংযোগ করেছে।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু এশিয়ার কততম সেতু?
উত্তর: পদ্মা সেতু দক্ষিণ এশিয়ায় ৬ষ্ঠ।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর পিলার ও স্প্যান সংখ্যা?
উত্তর: ৪১টি স্প্যান ও ৪২টি পিলার।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করেছে কোন দেশ?
উত্তর: পদ্মা সেতু বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে করেছে। পদ্মা সেতু করতে অন্য কোন দেশের কাছ থেকে টাকা নেয়নি।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর ১ম স্প্যান বসানোর দিন সেতু দৃশ্যমান হয় কোন তারিখে?
উত্তর: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুতে কোন ধরনের রেল লাইনের সংস্থান আছে?
উত্তর: ডুয়েল গেজ লাইন।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু ঢাকার সাথে কতটি জেলাকে সংযুক্ত করবে?
পদ্মা সেতু ঢাকার সাথে ১৯টি জেলাকে সংযুক্ত করবে।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর আয়ুষ্কাল কত বছর?
উত্তর: পদ্মা সেতুর আয়ুষ্কাল কত বছর ১০০ বছর।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু কোন বিভাগে অবস্থিত?
উত্তর: ঢাকা বিভাগে অবস্থিত।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু কোন দুটি জেলাকে সংযুক্ত করেছে?
উত্তর: মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুতে কাজ করা প্রথম বাঙালী মহিলা প্রকৌশলীর নাম কি?
উত্তর: ইশরাত জাহান ইশি।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম কী?
উত্তর: চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিঃ
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর মোট পাইলিং সংখ্যা কত?
উত্তর: ২৬৪ টি।
প্রশ্ন ➤ পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা কত?
উত্তর: ৬০ ফুট।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর প্রকল্পের জনবল কত?
উত্তর: পদ্মা সেতুর প্রকল্পের জনবল প্রায় ৪ হাজার।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট পিলার কয়টি?
উত্তর: ৮১ টি।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা কত ফুট?
উত্তর: ৩৮৩ ফুট।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর প্রতিটি পিলারের জন্য পাইলিং কয়টি করে করা হয়েছে?
উত্তর: ৬টি।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু রক্ষণাবেক্ষেণের দায়িত্ব কার?
উত্তর: ২০২২ সালের এপ্রিলে সেতু বিভাগের অধীনে, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি লিমিটেডকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু তৈরিতে কত কিলোমিটার এলাকা নদীশাসনের আওতায় আনা হয়েছে?
উত্তর: দুই পারে প্রায় ১২ কিলোমিটার।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর কয় লেন বিশিষ্ট?
উত্তর: পদ্মা সেতুর ৪ লেন বিশিষ্ট।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন করা হয় কোথায়?
উত্তর: দ্বিতলবিশিষ্ট পদ্মা সেতুর উপর তলায় যানবাহন নিচ তলায় রেললাইন স্থাপন করা হয়।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর কি দিয়ে নির্মিত হয়েছে?
উত্তর: পদ্মা সেতু দ্বিতলবিশিষ্ট যা কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে নির্মিত হয়েছে।
প্রশ্ন ➤ বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু কোনটি?
উত্তর: বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতুর নাম পদ্মা সেতু’।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর বিশেষ নকশা করা হয় কোথায়?
উত্তর: পদ্মা সেতুর বিশেষ নকশা করা হয় হংকংয়ে।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য কত সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা হয়?
উত্তর: পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য ১১ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা হয়।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভাপতি কে?
উত্তর: পদ্মা সেতু প্যানেলের সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু নির্মাণে কত দেশের উপকরণ ব্যবহার করা হয়?
উত্তর: পদ্মা সেতু নির্মাণে ৬০ টি দেশের কোন না কোন উপকরণ ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু কতটি দেশের মেধা ও শ্রম দিয়ে নির্মিত হয়েছে?
উত্তর: পদ্মা সেতু ২০ টি দেশের মানুষের মেধা ও শ্রম কদিয়ে নির্মিত হয়েছে।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর অবস্থান কোন জেলায়?
উত্তর: পদ্মা সেতুর অবস্থান ০৩ টি জেলায় মুন্সিগঞ্জ মাদারীপুর ও শরীয়তপুর।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু মূল প্রকল্পের নাম কী?
উত্তর: পদ্মা সেতু মূল প্রকল্পের নাম হল পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য কত কিলোমিটার বা কত ফুট বা কত মাইল?
উত্তর: পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য হল ৬.১৫ কিমি বা ২০,১৮০ ফুট বা ৩.৮২ মাইল।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর প্রস্থ কত মিটার বা কত ফুট?
উত্তর:পদ্মা সেতুর প্রস্থ হল ১৮.১০ মিটার বা ৫৯.৬৫ ফুট।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট কত কিলোমিটার?
উত্তর: ৩.১৮ কিলোমিটর।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক কত কিলোমিটার?
উত্তর: দুই প্রান্তে মোট ১৪ কিলোমিটার।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট পিলার কয়টি?
উত্তর: ৮১ টি
প্রশ্ন ➤ মাটির কত মিটার গভীর গিয়ে পাইল বসানো হয়েছে পদ্মা সেতুতে?
উত্তর: মাটির ১২০-১২৭ মিটার গভীর গিয়ে পাইল বসানো হয়েছে পদ্মা সেতুতে।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদী শাসন হয়েছে কত কিলোমিটার?
উত্তর: পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদী শাসন হয়েছে দুই পাড়ে ১২ কিলোমিটার।
প্রশ্ন ➤ পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা কত?
উত্তর: পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা ৬০ ফুট।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা কত?
উত্তর: ৩৮৩ ফুট।
প্রশ্ন ➤ প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং কয়টি?
উত্তর: প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং রয়েছে ৬ টি করে। তবে ১২ টি পিলারের জন্য ৭ টি করে রয়েছে।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর মোট পাইলিং সংখ্যা কত?
উত্তর: পদ্মা সেতুর মোট পাইলিং সংখ্যা হলো ২৬৪টি।
পদ্মা সেতুর মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি। প্রতিটি পিলারের জন্য পাইলিং রয়েছে ৬টি করে। তবে মাটি জটিলতার কারণে ১২টি পিলারের পাইলিং হয়েছে ৭টি করে।
৪২ x ৬ = ২৫২ + ১২ = ২৬৪।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় কবে?
উত্তর: পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২৬ নভেম্বর, ২০১৪ সালে।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয় কবে?
উত্তর: পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয় ২৩ জুন ২০২২ সালে।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর পিলারের সংখ্যা কয়েকটি?
উত্তর:পদ্মা সেতুর পিলারের সংখ্যা ৪২ টি।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর পিলার ও স্প্যান সংখ্যা কয়টি?
উত্তর: পদ্মা সেতুর পিলারের সংখ্যা ৪২ টি ও স্প্যান এর সংখ্যা ৪১ টি। [প্রতিটি স্প্যান লম্বায় ১৫০.১২ মিটার বা ৪৯২.৫ ফুট এবং চওড়ায় ২২.৫ মিটার বা ৭৪ ফুট]
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর এক পিলার থেকে আরেকটি পিলারের দূরত্ব কত?
উত্তর: পদ্মা সেতুর এক পিলার থেকে আরেকটি পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার।
প্রশ্ন ➤ কবে পদ্মা সেতুর পিলারের উপর প্রথম স্প্যান বসানো হয়?
উত্তর: ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর পিলারের উপর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর এই স্প্যান বসানো হয়।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর কোন কোন পিলারের উপর প্রথম স্প্যানটি বসানো হয়েছে?
উত্তর: পদ্মা সেতুর ৩৭ ও ৩৮ নং পিলারের উপর প্রথম স্প্যানটি বসানো হয়।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যান কত তারিখে বসানে হয়?
উত্তর: ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা ০২ মিনিটে পদ্মা সেতুর ১২ এবং ১৩ নম্বর পিয়ারের উপর সর্বশেষ ৪১তম স্প্যানটি বসানো হয়।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর লেন কয়টি?
উত্তর: পদ্মা সেতু ৭২ ফুটের চার (৪টি) লেনের সড়ক।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন হবে কোথায়?
উত্তর: পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন হবে নীচ তলায়।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর রেল লাইনের দৈর্ঘ্য কত?
উত্তর: পদ্মা সেতুর রেল লাইনের দৈর্ঘ্য ১৭৩ কিলোমিটার।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় কত?
উত্তর: পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। (ব্যাখ্যাঃ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দশ মাস পর ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল প্রকল্পটি সংশোধন করার ফলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৩০ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ১৮২৫ কোটি টাকা ব্যয় সংকোচন করে। ফলে এখন পদ্মা সেতুর চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।)
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতুর আয়ুষ্কাল কত?
উত্তর: পদ্মা সেতুর আয়ুষ্কাল ১০০ বছর।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম কী?
উত্তর: পদ্মা সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম হল চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিঃ।
প্রশ্ন ➤ কবে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হয়?
উত্তর: পদ্মা সেতু ২৫ জুন ২০২২ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারা উদ্বোধন করা হয়।
প্রশ্ন ➤ পদ্মা সেতু পার হতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কত টাকা টোল দিয়েছেন?
উত্তর: প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরে ১৮টি গাড়ি ছিল। পদ্মা সেতুতে ১৬ হাজার ৪০০ টাকা টোল দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে নিজের গাড়ির জন্য ৭৫০ টাকা টোল দিয়েছেন তিনি।
(৪) পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান ১০টি বর্ণনামূলক প্রশ্ন/অনুচ্ছেদ
এই পর্যায়ে আমার পদ্মা সেতুর পরিচয়, উদ্বোধন, অর্থায়ন, নকশা প্রণয়ন, সেতু নির্মাণকারী, ব্যয়, বাজেট, অর্থনৈতিক গুরুত্ব, তথ্য সারণি, শুরু থেকে শেষ অবধি ইতিহাস বিস্তারিত জানব।
প্রতিযোগিতামূলক চাকুরির বাজারে এগিয়ে থাকতে হলে ছাত্র থেকে শুরু করে সব চাকরি প্রার্থী সকল মানুষের জন্য পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান জানা থাকা জরুরি। তাই আশা করি প্রতিটা অনুচ্ছেন মনোযোগের সাথ পড়বেন/অধ্যয়ন করবেন।
যদিও একই তথ্য একাধিক বার আপনার চোখে পড়ছে, একাধিকবার পড়ছেন, এটাই কৌশল। একটা বিষয় বার বার যখন পড়বেন তা মাথা ভালোভাবে বসে যাবে, সহজে আর ভুলে যাবেন না। তাই একই কথা বা বাক্য একাধিক বার আসছে বিরক্ত প্রকাশ করবেন না।
চলুন পড়া শুরু করি-
ক) পদ্মা সেতু (padma setu) কি?
পদ্মা সেতু (padma setu) কি: পদ্মা সেতু বা পদ্মা বহুমুখী সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হয়েছে। সেতুটি ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয়। এই দিন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে টোল প্রদান করে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুতে আরোহণ করেন এবং এর মাধ্যমে সেতুটি উন্মুক্ত করা হয়।
পদ্মা সেতুটি বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নিজের অর্থে তৈরি করেছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত। দুই স্তর বিশিষ্ট ইস্পাত ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে।
পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় তৈরি সেতুটি ৪১টি স্প্যান নিয়ে গঠিত, প্রতিটি স্প্যান লম্বায় ১৫০.১২ মিটার (৪৯২.৫ ফুট) এবং চওড়ায় ২২.৫ মিটার (৭৪ ফুট)। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিমি (৩.৮২ মাইল)। এটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু, স্প্যান সংখ্যা ও মোট দৈর্ঘ্য উভয়ের দিক থেকে গঙ্গা নদীর উপর নির্মিত দীর্ঘতম সেতু এবং ১২৮ মিটার (৪২০ ফুট) গভীরতাযুক্ত বিশ্বের গভীরতম পাইলের সেতু।
খ) পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ: ২০২২ সালের ২৫ জুন সেতুটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন ও পরের দিন থেকে এটি সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান ও জঙ্গী হেলিকপ্টার অ্যারোবেটিক ডিসপ্লে ও ফ্লাইপাস প্রদর্শন করে। সেতুটির উদ্বোধন উপলক্ষে পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, চীন, রাশিয়া, ডেনমার্কসহ পৃথিবীর অনেক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রদূত অভিনন্দন বার্তা পাঠায়। এছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধিও বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানান।
উদ্বোধনের পর জনসাধারণের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দেয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। উন্মুক্ত করে দেওয়ার প্রথম দিনই গতিসীমা অমান্য করে মোটরবাইক চালাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন মৃত্যুবরণ করে। ফলশ্রুতিতে সেতুতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাসদস্যরা টহল কার্যক্রম জোরদার করেন এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত সেতুতে অভিযান পরিচালনায় নামে, পাশাপাশি সেতুতে যানবাহন থামানো, পার্কিং, পায়ে হেঁটে পার হওয়া ও মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়।
গ) পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করেন কে?
পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে অর্থায়ন: পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে ২০০৮ সালের ১০ জুলাই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে চুক্তি সই হয়। এর আওতায় ১ কোটি ১১ লাখ ৭৯ হাজার এসডিআর (স্পেশাল ড্রইং রাইটস) বা প্রায় ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেয় সংস্থাটি। এ ঋণে সুদের হার ছিল ছয় শতাংশ। ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ছিল ৫ বছর।
পরে পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়ন ব্যয় বেড়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ৩ মে এডিবির সঙ্গে আরও ৬২ লাখ ৭৪ হাজার এসডিআর বা প্রায় ৭০ কোটি টাকার পৃথক আরেকটি ঋণ চুক্তি সই হয়। এ ঋণের শর্তও ছিল একই। তবে এসডিআরের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ঋণের কিস্তি ২০২৮ সালের ৩০ জুন ও দ্বিতীয় ঋণের কিস্তি ২০২৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পরিশোধ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন: পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করেছে- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়।
পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হওয়া ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকার পুরোটা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)-কে ঋণ হিসেবে দিয়েছে বাংলাদেশের মন্ত্রণালয় (যার মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে)। অর্থ বিভাগের সাথে ঋণ চুক্তি অনুযায়ী ১ শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে ঋণের টাকা ফেরত দেবে সেতু কর্তৃপক্ষ। ফলে ২০৫৭ সাল পর্যন্ত বিবিএকে টানতে হবে ঋণের বোঝা। আর এ ঋণ শোধের জন্য সেতুটির টোলের হারও ধরা হয়েছে বেশি। এ ঋণ পরিশোধে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট চুক্তি সই করে সেতু কর্তৃপক্ষ ও অর্থ বিভাগ।
ঘ) পদ্মা সেতুর ডিজাইনার/নকশা প্রণয়নকারী কে?
পদ্মা সেতুর ডিজাইনার/নকশা প্রণয়নকারী কে: পদ্মা সেতু ডিজাইনার হলো- এইসিওএম এবং নির্মাণকারী হলো- চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।
পদ্মা বহুমুখী সেতুর সম্পূর্ণ নকশা এইসিওএম এর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরামর্শকদের নিয়ে গঠিত একটি দল তৈরি হয়। বাংলাদেশের প্রথম বৃহৎ সেতু প্রকল্প যমুনা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল তৈরি করা হয়। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে ১১ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। এ প্যানেল সেতুর নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রকল্প কর্মকর্তা, নকশা পরামর্শক ও উন্নয়ন সহযোগীদের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্রদান করে।
পদ্মা সেতুর ভৌত কাজকে মূলত পাঁচটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়। যথা- মূল সেতু, নদী শাসন, জাজিরা সংযোগকারী সড়ক ও টোল প্লাজা।
মাওয়া সংযোগকারী সড়ক, টোল প্লাজা ইত্যাদি এবং মাওয়া ও জাজিরা সার্ভিস এলাকা। প্রকল্পে নিয়োজিত নকশা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘মনসেল-এইকম’ যৌথ কাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রাক-যোগ্যতা দরের নথি প্রস্তুত, টেন্ডার আহ্বানের পর টেন্ডার নথি মূল্যায়ন, টেন্ডার কমিটিকে সহায়তাসহ এ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল নকশা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ তদারক করত। যৌথ কাজের বিভিন্ন প্যাকেজের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি।
ঙ) পদ্মা সেতু কে/কোন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে?
পদ্মা সেতু কে/কোন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে: ‘চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড’ পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে।
চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন নদী শাসনের কাজ করে।
বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেডকে দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণের চুক্তি দেওয়া হয়। অক্টোবর ২০১৭ সালে মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
সেতু বিভাগের অধীনে, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের জন্য ২০২২ সালের এপ্রিল মাস থেকে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি লিমিটেডকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
পদ্মা সেতু নির্মাণে ২০১০ সালে প্রথম দরপত্র আহবান করা হলে সেখানে প্রাক-যোগ্যত অর্জনের জন্য ৪০টি কোম্পানি অংশ নেয়। বিশ্বব্যাংক, জাইকা ও এডিবির তত্বাবধানে এদের মধ্যে ৫টি কোম্পানিকে বাছাই করা হয়। পরে বিশ্বব্যাংকের আপত্তির কারণে একটি কোম্পানি বাদ পড়ে যায়। আর্থিক প্রস্তাব আহ্বান করলে শুধুমাত্র চীনের এই চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি আর্থিক প্রস্তাব জমা দেয়। কোম্পানিটি চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান।
২০১৪ সালের ১৭ জুন পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চীনের কোম্পানিটি পদ্মাসেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায়।
চ) পদ্মা সেতুর মোট ব্যয়/বাজেট কত?
পদ্মা সেতুর মোট ব্যয়/বাজেট কত: পদ্মা সেতুর মোট/ব্যয় বাজেট ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। (ব্যাখ্যাঃ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দশ মাস পর ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল প্রকল্পটি সংশোধন করার ফলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৩০ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ১৮২৫ কোটি টাকা ব্যয় সংকোচন করে। ফলে এখন পদ্মা সেতুর চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।)
- ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া-জাজিরা প্রান্তে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ম সাধারণ নির্বাচনের পর পরবর্তী সরকারের পরামর্শক কমিটি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পয়েন্ট, দোহার-চরভদ্রাসন পয়েন্ট, মাওয়া-জাজিরা পয়েন্ট এবং চাঁদপুর-ভেদরগঞ্জ পয়েন্টে প্রাক-বাস্তবায়নযোগ্যতার সমীক্ষা করায়।
- ২০০৫ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য প্রাথমিক প্রাক্কলন ধরা হয়েছিল ১২,০০০ কোটি টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় পৃথিবীর অন্যান্য তুলনীয় সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের নিরিখে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সর্বমোট নির্মাণ ব্যয় ১০,০০০ কোটি টাকায় সীমিত রাখার পরামর্শ প্রদান করেন।
- পদ্মা সেতু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ২০০৭ সালে। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
- ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম সংশোধন করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পটি, সে সময় রেলপথ যুক্ত হয়। ওই সময় দু’তলা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।
- সবগুলো প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগের পর সেতুটির নির্মাণব্যয় আরও বেড়ে যায়। এতে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফা প্রকল্প সংশোধন করা হয়। এতে নির্মাণব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
- এদিকে নদী শাসনের জন্য ড্রেজিংকৃত স্পয়েল ফেলার জন্য পরে অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ করতে হয়। এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধির জন্য ২০১৮ সালের ২১ জুন বিশেষ সংশোধন করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পটি। সে সময় ব্যয় আরও বেড়ে হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। মূলত ড্রেজিং স্পয়েল ফেলার জন্য চর অধিগ্রহণে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছিল। পরে সে চর নদীভাঙনেই আবার তলিয়ে যায়।
- পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রায় ১০ মাস পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল তৃতীয় দফা সংশোধন করা হয় প্রকল্পটি। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
- অতপর ৩০ আগস্ট ২০২৪ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ১৮২৫ কোটি টাকা ব্যয় সংকোচন করার ফলে পদ্মাসেতুর খরচ ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা থেকে কমে এখন চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
পদ্মা সেতুর এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি।
পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হওয়া ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকার পুরোটা সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। অর্থ বিভাগের সাথে ঋণ চুক্তি অনুযায়ী ১ শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে ঋণের টাকা ফেরত দেবে সেতু কর্তৃপক্ষ।
মার্কিন ডলারের হিসাবে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সড়ক-রেল সেতুর নির্মাণ ব্যয় এগারো বছরে ১.৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩.৫৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
চীনের ৬.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ উফেনসাং ইয়াংজি সড়ক-রেল সেতু ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চালু করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে তুলনীয় এই সেতুর নির্মাণে ৪ বছর লেগেছে এবং ব্যয় হয়েছে ১.০৫ বিলিয়ন ডলার, যা পদ্মা সেতুর এক-তৃতীয়াংশের চেয়েও কম!
ছ) পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব
পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব: পদ্মা বহুমুখী সেতুর মাওয়া-জাজিরা পয়েন্ট দিয়ে নির্দিষ্ট পথের মাধ্যমে বাংলাদেশের কেন্দ্রের সাথে দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সরাসরি সংযোগ তৈরি হয়। এই সেতুটি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখবে।
- প্রকল্পটির ফলে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪৪,০০০ বর্গ কি.মি. (১৭,০০০ বর্গ মাইল) বা বাংলাদেশের মোট এলাকার ২৯% অঞ্চলজুড়ে ৩ কোটিরও অধিক জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে। ফলে প্রকল্পটি দেশের পরিবহন নেটওয়ার্ক এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।
- সেতুটিতে ভবিষ্যতে রেল, গ্যাস, বৈদ্যুতিক লাইন এবং ফাইবার অপটিক কেবল সম্প্রসারণের ব্যবস্থা রয়েছে। এই সেতুটি নির্মানের ফলে বাংলাদেশের জিডিপি ১.২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
- পদ্মা সেতু নির্মাণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণের পর আগস্ট-২০২৪ এ এসে- পদ্মা সেতুর চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২২ সালে এই সেতু দিয়ে বাংলাদেশের ২৩ জেলায় প্রতিদিন ২১,৩০০টি যানবাহন চলাচল করবে, যা ২০২৫ সাল নাগাদ বেড়ে দাঁড়াবে ৪১,৬০০। এদের সবার থেকে টোল বাবদ যে আয় হবে, তা দিয়ে সেতুর ব্যয় উঠে আসতে ২৫ জুন ২০২২ থেকে সাড়ে ৯ বছর সময় লাগবে।
- বিশ্বব্যাংকের বরাতে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা জানায়, ২৫ জুন ২০২২ থেকে আগামী ৩১ বছরে যোগাযোগ খাতে পদ্মা সেতু থেকে আয় হবে ১৮.৫ বিলিয়ন ডলার (নির্মাণ খরচের ৫.৫ গুণ)। এছাড়া সামাজিক অগ্রগতি ও অর্থনীতিতে ২৫ বিলিয়ন ডলার যোগ করবে।
- দুই পারে নদী শাসনের মাধ্যমে যে জমি রক্ষা হয়েছে তার মূল্য প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
- সেতুর মাধ্যমে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ইন্টারনেট লাইন গিয়ে সাশ্রয় করবে ২,৪০০ কোটি টাকা।
- ফেরি চলাচল না হওয়ায় খরচ সাশ্রয় হবে ৩,৬০০ কোটি টাকা।
চুক্তি অনুযায়ী সেতু কর্তৃপক্ষকে ২৫ জুন ২০২২ থেকে শুরু করে আগামী ৩৫ বছরে সুদ সহ ৩৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টোল থেকে আদায়কৃত অর্থের অধিকাংশ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হবে এবং বাকি অর্থ দিয়ে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
জ) পদ্মা ব্রিজ ডিটেলস (padma setu details) তথ্য সারণি
নিচের সাণিতে পদ্মা ব্রিজ ডিটেলস তুলে ধরা হলো-
পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম: | পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। |
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য: | ৬.১৫ কিলোমিট। |
পদ্মা সেতুর প্রস্থ: | ৭২ ফুট। |
পদ্মা সেতুর উচ্চতা: | ৬০ ফুট (পানির স্তর থেকে)। |
পদ্মা সেতুর স্প্যান সংখ্যা: | ৪১ লেন। |
পদ্মা সেতুর পাইলিং সংখ্যা: | ২৬৪টি। |
পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা: | ৪২টি। |
পদ্মা সেতুর রেল লাইনের অবস্থান: | পদ্মা সেতুর রেল লাইনের অবস্থান নিচতলায়। |
পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট: | ৩.১৮ কিলোমিট। |
পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক: | দুই প্রান্তে প্রায় ১৪ কিলোমিটার। |
পদ্মা সেতুর প্রকল্প নদী শাসন: | দুই পারে প্রায় ১২ কিলোমিটার। |
পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যয়: | পদ্মা সেতুর প্রকল্পে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণের পর আগস্ট-২০২৪ এ এসে- পদ্মা সেতুর চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। |
পদ্মা সেতুর প্রকল্পের জনবল: | প্রায় ৪ হাজার। |
পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট পিলার: | ৮১ টি। |
পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা: | ৬০ ফুট। |
পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা: | ৩৮৩ ফুট। |
পদ্মা সেতুর প্রতিটি পিলারের জন্য পাইলিং: | ৬ টি। |
পদ্মা সেতুর মোট পাইলিং সংখ্যা: | ২৬৪ টি। |
পদ্মা সেতুতে যা যা থাকবে: | বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং অপটিক্যাল ফাইবার লাইন। |
পদ্মা সেতুর ধরন: | দ্বিতল বিশিষ্ট কংক্রিট এবং স্টিল দ্বারা নির্মিত এই সেতু। |
পদ্মা সেতুর পিলার কয়টি: | ৪২ টি। |
পদ্মা সেতুর প্রকল্পের চুক্তিবদ্ধ কম্পানি: | চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড। |
পদ্মা সেতুর নকশা: | এইসিওএমের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পরামর্শকদের নিয়ে একটি দল গঠন করা হয়। আর তারাই হচ্ছে পদ্মা সেতুর নকশা পরামর্শদাতা। |
পদ্মা সেতুর প্যানেলের সভাপতির নাম: | অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। |
পদ্মা সেতুর স্প্যান বিশেষজ্ঞ দল সদস্য সংখ্যা: | ১১ জন। |
পদ্মা সেতুর কাজ: | মূল সেতু, নদী শাসন, জাজিরা সংযোগকারী সড়ক, টোল প্লাজা. |
পদ্মা সেতু নির্মাণের আনুষ্ঠানিক চুক্তি: | ১৭ই জুন, ২০১৪ইং সালে বাংলাদেশ সরকার এবং চিনা চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। |
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু: | ২৬ নভেম্বর, ২০১৪ সালে। |
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন: | ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। |
পদ্মা সেতুতে পিলারের ওপর প্রথম স্প্যান বসে: | সাল ২০১৭ এর ৩০ সেপ্টেম্বর। |
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ: | ২৩ জুন ২০২২ সালে। |
পদ্মা সেতুর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান: | চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। |
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন: | প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (২৫ জুন ২০২২)। |
ঝ) পদ্মা সেতুর কাজ কবে শুরু ও শেষ হয়?
২০১৪ সালের ১৭ জুন পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চীনের এই কোম্পানিটি পদ্মাসেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায়।
নিচে পদ্মা সেতুর কাজ কবে শুরু ও শেষ হয় তা ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হলো-
২০১৪
- সাল ২০১৪ এর ২৬ শে নভেম্বর থেকে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
২০১৫
- ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১৭
- সাল ২০১৭ এর ৩০ সেপ্টেম্বর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পদ্মা সেতুতে পিলারের ওপর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে এই স্প্যান বসানো হয়।
- ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান।
- ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হয়।
- ২৯ জুন সেতুর পঞ্চম স্প্যান বসানো হয়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায়।
২০১৮
- জানুয়ারি মাসে জাজিরা প্রান্তের তীরের দিকের ষষ্ঠ শেষ স্প্যান বসে।
- ২৮ জানুয়ারি পদ্মা সেতুর ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের ওপর দ্বিতীয় স্প্যান ৭বি সুপার স্ট্রাকচার বসানো হয়। প্রথম স্প্যান বসানোর প্রায় চার মাস পর জাজিরার নাওডোবা প্রান্তে তিন হাজার ১৫০ টন ধারণ ক্ষমতার এ স্প্যান বসানো হয়।
- মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর বসে সপ্তম স্প্যান।
২০১৯
- ২০ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩৬ ও ৩৫ নম্বর পিলারের ওপর অষ্টম স্প্যান বসানো হয়।
- ২২ মার্চ সেতুর ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর বসে নবম স্প্যানটি।
- ১০ এপ্রিল মাওয়া প্রান্তে ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের ওপর দশম স্প্যান।
- ২৩ এপ্রিল শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর ১১তম স্প্যান বসে।
- ১৭ মে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের মাঝামাঝি স্থানে ২০ ও ২১ নম্বর পিলারের ওপর ১২তম স্প্যান বসানো হয়।
- ২৫ মে ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারের ওপর ১৩তম স্প্যান ৩বি বসানো হয়।
- ২৯ জুন ১৪তম স্প্যান বসানো হয়।
- ২২ অক্টোবর জাজিরা প্রান্তে ২৪ ও ২৫ নম্বর পিলারের ওপর পদ্মা সেতুর ১৫তম স্প্যান বসানো হয়।
- ২৭ নভেম্বর মাওয়া প্রান্তে ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারের ওপর ১৬তম স্পানটি বসানো হয়।
- ২০১৯ সালেল ৫ ডিসেম্বর পিলার ২২ ও ২৩–এর ওপর মূল সেতুর ১৭তম স্প্যানটি বসানো হয়।
- ১১ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ১৮তম স্প্যান বসানো হয়।
- ১৮ ডিসেম্বর বসানো হয় ১৯তম স্প্যান।
- ৩১ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ১৮ ও ১৯ নম্বর পিলারের উপরে বসানো হয় পদ্মা সেতুর ২০তম স্প্যান। ধূসর রঙের ‘৩-এফ’ নম্বরের স্প্যানটি খুঁটির উপরে বসানো হয়।
২০২০
- ১৪ জানুয়ারি পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় ২১তম স্প্যান।
- ২৩ জানুয়ারি মাওয়া প্রান্তের ৫ ও ৬ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় ২২তম স্প্যান।
- ২ ফেব্রুয়ারি বসেছে ২৩তম স্প্যান।
- ১১ ফেব্রুয়ারি বসেছে ২৪তম স্প্যান।
- ২১ ফেব্রুয়ারি ২৫তম স্প্যান বসানো হয়।
- ১০ মার্চ পদ্মা সেতুর ২৬তম স্প্যান বসানো হয়। শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ২৮ ও ২৯ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় এই স্প্যান।
- ২০ এপ্রিল ২৭তম স্প্যানটি পিলার-২৭ ও ২৮-এর ওপর বসানো হয়।
- ১১ এপ্রিল জাজিরা প্রান্তে বসানো হয় ২৮তম স্প্যান।
- ৪ মে মাওয়া প্রান্তে সেতুর ১৯ ও ২০তম পিলারের ওপর ‘৪এ’ আইডি নম্বরে সেতুর ২৯তম স্প্যান বসানো হয়।
- ৩০ মে জাজিরা প্রান্তে সেতুর ২৬ ও ২৭ নম্বর পিলারের (খুঁটি) ওপর বসানো হয় ৩০তম স্প্যান।
- ১০ জুন পদ্মা সেতুর ৩১তম স্প্যান বসানো হয়। সেতুর ২৫ ও ২৬ নম্বর পিয়ারে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৫-এ স্প্যান বসানো হয়।
- ১১ অক্টোবর পদ্মা সেতুর ৩২তম স্প্যানটি বসানো হয়। পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে প্রথম দিন বসানো সম্ভব না হলেও প্রকৌশলীদের প্রচেষ্টায় দ্বিতীয় দিনে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যানটি বসানো হয়। বন্যা ও পদ্মা নদীর তীব্র স্রোতের কারণে স্প্যানটি বসানো হয় চার মাস পর।
- ২০ অক্টোবর বসানো হয় সেতুর ৩৩তম স্প্যান।
- ২৫ অক্টোবর ৩৪তম স্প্যান বসানো হয় সেতুর মাওয়া প্রান্তে ৭ ও ৮ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান ২-এ।
- ৩১ অক্টোবর ৩৫তম স্প্যান বসানো হয় মাওয়া প্রান্তে ৮ ও ৯ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান ২-বিতে।
- ৬ নভেম্বর পদ্মা সেতুর ৩৬তম স্প্যান বসানো হয় সেতুর মাওয়া প্রান্তের ২ ও ৩ নম্বর পিলারের ওপর।
- ১৩ নভেম্বর ৩৭তম স্প্যান ‘২-সি’ মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ৯ ও ১০নং পিলারের ওপর বসানো হয়।
- ২১ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ১ ও ২ নম্বর খুঁটির ওপর ৩৮তম স্প্যানটি সফলভাবে বসানো হয়।
- ২৭ নভেম্বর ৩৯ তম স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়। স্প্যানটি মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ১০ ও ১১ নম্বর পিলারের ওপর ‘২-ডি’ স্প্যানটি বসানো হয়।
- ৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ৪০তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় সেতুর ছয় হাজার মিটার।
- ১০ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ১২ ও ১৩ তম পিলারে ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পুরো পদ্মা সেতু।
২০২১
- ২৩ আগস্ট সর্বশেষ সড়ক স্ল্যাব বসানো হয়।
২০২২
- ৪ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ধাপে ধাপে সেতুর ৪১৫ বাতির পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ১৪ জুন একযোগে সবগুলো বাতি জ্বালানো হয়।
- সাল ২০২২ এর ২৫ জুন প্রধারমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটি উদ্বোধন করেন।
ঞ) পদ্মা সেতুর ইতিহাস
১৯৭১ সালে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী জাপান থেকে আগত জরিপ বিশেষজ্ঞদের একটি দল পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) নিকট ঢাকা–ফরিদপুর সড়ক নির্মাণের জন্য একটি সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন জমা দেয়। সড়কটি নির্মাণের অংশ হিসেবে তারা পদ্মা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের পরামর্শ দেন।বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিলেও তার মৃত্যুর কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি।
১৯৯৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকার রাজধানী ঢাকা ও দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-খুলনা মহাসড়কে পদ্মা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য ৩,৬৪৩.৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাব করে। ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮.১০ মিটার চওড়া উক্ত সেতুটিকে দেশের সম্ভাব্য দীর্ঘতম সেতু হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল। প্রস্তাবে ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে ২০০৪ সালের জুনে শেষ করার কথা জানানো হয়। নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত টাকার ২৬৯৩.৫০ কোটি টাকা বিদেশী উৎস থেকে এবং ৭৫০ কোটি টাকা জাতীয় উৎস থেকে জোগান দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরে ১৯৯৯ সালের মে মাসে উক্ত সেতু প্রকল্পের জন্য প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই পরীক্ষা শুরু হয়।
২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া-জাজিরা প্রান্তে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ম সাধারণ নির্বাচনের পর পরবর্তী সরকারের পরামর্শক কমিটি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পয়েন্ট, দোহার-চরভদ্রাসন পয়েন্ট, মাওয়া-জাজিরা পয়েন্ট এবং চাঁদপুর-ভেদরগঞ্জ পয়েন্টে প্রাক-বাস্তবায়নযোগ্যতার সমীক্ষা করায়। ২০০৪ সালে জাইকা (জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা) নিয়োজিত পরামর্শক নিপ্পন কোয়েই পদ্মা সেতু নির্মাণকল্পে বিস্তারিত সমীক্ষা পরিচালনার পর আগের নির্ধারিত মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টেই সেতু নির্মাণের পরামর্শ দেয়।
২০০৫ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য প্রাথমিক প্রাক্কলন ধরা হয়েছিল ১২,০০০ কোটি টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় পৃথিবীর অন্যান্য তুলনীয় সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের নিরিখে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সর্বমোট নির্মাণ ব্যয় ১০,০০০ কোটি টাকায় সীমিত রাখার পরামর্শ প্রদান করেন।
২০০৬-২০০৭ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ সেতু নির্মাণের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তা পাবার জন্য আলোচনা শুরু করে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর ২০০৭ সালের ২০ অগাস্ট তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার একনেকের বৈঠকে ১০,১৬১ কোটি টাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। তখন ২০১৫ সালের মধ্যে সেতুটি নির্মাণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এই জন্য সেই বছর পদ্মা সেতুর বিশদ নকশা প্রণয়নে দরপত্রও আহ্বান করা হয়।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়। নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। তখন ২০১১ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করার কথা জানানো হয়। এই জন্য ২০০৯ সালে নকশা প্রণয়নের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয় ও ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা ও ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক অর্থ যোগান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। ২০০৯ সালের ২৮ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের সাথে বাংলাদেশ ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বাসেক) ২০১০ সালের এপ্রিলে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণে প্রকল্পের জন্য প্রাকযোগ্যতা দরপত্র আহ্বান করে। প্রথম পরিকল্পনা অনুসারে ২০১১ সালের শুরুর দিকে সেতুর নির্মাণ কাজ আরম্ভ হওয়ার কথা ছিল এবং ২০১৩ সালের মধ্যে প্রধান কাজগুলো শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরিকল্পনা অনুসারে প্রকল্পটি তিনটি জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করবেঃ মুন্সীগঞ্জ (মাওয়া পয়েন্ট/উত্তর পাড়), শরীয়তপুর এবং মাদারীপুর (জঞ্জিরা/দক্ষিণ পাড়)। এটির জন্য প্রয়োজনীয় এবং অধিগ্রহণকৃত মোট জমির পরিমাণ ৯১৮ হেক্টর।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্প পাস করলেও আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ও ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। তখন এর ব্যয় ধরা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। পরে পদ্মা সেতুর ব্যয় আরও আট হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়। ফলে তখন পদ্মা সেতুর ব্যয় দাঁড়ায় সর্বমোট ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
২০১১ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাংকের সাথে বাংলাদেশের ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি হয়। একই বছরের ১৮ মে জাইকার সঙ্গে সরকারের ৪১ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং ৬ জুন এডিবির সঙ্গে ৬১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঋণচুক্তি হয়। ২০১১ সালের ১০ অক্টোবরে দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমানের নামও দুর্নীতির অভিযোগের সাথে যুক্ত হয়। ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে বদলি করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয় ও ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম সংশোধন করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পটি, সে সময় রেলপথ যুক্ত হয়। ওই সময় দু’তলা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।
২০১২ সালের ২৯ জুন সেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দরপত্রে অংশ নেওয়া এসএনসি-লাভালিনের সঙ্গে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তিটি বাতিল করে। পরে অন্য দাতা সংস্থাগুলোও তার প্রতিশ্রুত ঋণচুক্তি বাতিল করে। ২০১২ সালের ৪ জুলাই জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার কথা বলেন এবং ৮ জুলাই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ পরিকল্পনা সংসদে পেশ করেন। ২০১২ সালের ৯ জুলাই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা। বিশ্বব্যাংকের শর্তের কারণে ২৩ জুলাই তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় ও ২৪ জুলাই সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে ওএসডি করা হয়। সরকারের অনুরোধে ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক প্রকল্পে পুনরায় সম্পৃক্ত হতে রাজি হলেও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থায়ন করতে অসম্মতি জানায়। ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান আসামি করে সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ২৬ ডিসেম্বর রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় দুদক। গ্রেপ্তার করা হয় আরও দুজনকে। ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করে সরকার। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্ত হন তিনি।
২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ আর নেওয়া হবে না – সরকার এমন সিদ্ধান্তের কথা জানায়। ২০১৩ সালের ২৬ জুন আবার দরপত্র আহ্বান করা হয়।
২০১৪ সালের ১৭ জুন পদ্মা বহুমুখী সেতুটি নির্মাণে চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে সেতু বিভাগ। ২০১৪ সালে ১৭ সেপ্টেম্বর দুদক জানায় পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। ২৬ অক্টোবর পদ্মা সেতু দুর্নীতির মামলার অবসান হয়। ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর মূল পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সবগুলো প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগের পর সেতুটির নির্মাণব্যয় আরও বেড়ে যায়। এতে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফা প্রকল্প সংশোধন করা হয়। এতে নির্মাণব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
এদিকে নদী শাসনের জন্য ড্রেজিংকৃত স্পয়েল ফেলার জন্য পরে অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ করতে হয়। এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধির জন্য ২০১৮ সালের ২১ জুন বিশেষ সংশোধন করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পটি। সে সময় ব্যয় আরও বেড়ে হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। মূলত ড্রেজিং স্পয়েল ফেলার জন্য চর অধিগ্রহণে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছিল। পরে সে চর নদীভাঙনেই আবার তলিয়ে যায়।
সেতুটি নির্মান শেষে ২০২২ সালের ২৫ জুন চলাচলের জন্য উদ্বোধন করা হয়। এই দিন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে টোল প্রদান করে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুতে আরোহণ করেন এবং এর মাধ্যমে সেতুটি উন্মুক্ত করা হয়। পদ্মা সেতু উদ্বাবনের পরও বাকি ধারা অনুষাঙ্গিক কাজগুলো চলাতে থাকে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রায় ১০ মাস পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল তৃতীয় দফা সংশোধন করা হয় প্রকল্পটি। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
অতপর ৩০ আগস্ট ২০২৪ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ১৮২৫ কোটি টাকা ব্যয় সংকোচন করার ফলে পদ্মাসেতুর খরচ ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা থেকে কমে এখন চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
এই ছিল বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর বিস্তারিত ইতিহাস।
প্রিয় পাঠক বন্ধু, এই ছিল পদ্মা সেতু সম্পর্কে বিস্তারিত সাধারন কিছু ধারনা। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন এবং পদ্মা সেতু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
পদ্মা সেতু যার পুরো নাম পদ্মা বহুমুখী সেতু। দেশের বৃহত্তম এই সেতুটি বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ ও মাদারীপুর এবং শরীয়তপুর এই তিন জেলার মধ্যে অবস্থিত।মাদারীপুরের শিবচর; মুন্সীগঞ্জের মাওয়া; এবং শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকায় পদ্মা ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা নদীর অববাহিকায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে । দেশের সবচেয়ে বড় সেতুটি নির্মাণে কাজ করছেন প্রায় চার হাজার মানুষ।
সেতুটি ২০২২ সালের ২৫ জুন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এই সেতুর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এর সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে বলে দাবি বিশ্লেষকদের।
দ্বিতল বিশিষ্ট ইস্পাত এবং কংক্রিট দিয়ে তৈরি, সেতুটির উপরে একটি চার লেনের রাস্তা এবং নীচে একটি একক রেলপথ রয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ এই সেতু নির্মাণ কাজের জন্য ৯১৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মুক্ত থাকুুক, দেশে ও দশের কল্যোণে কাজে আসুক, এই কামনায় আজকের মত এখানেই শেষে করছি। শিক্ষা সম্পর্কিত যেকোন বিষয়ে তথ্য পেতে আমাদের inbangla.net/sikkha ওয়েবসাইট নিয়েমিত ভিজিট করার ও আমাদের পাশে থাকার আবেদন রইলো। শেষ অবধি সাথে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
শিক্ষা বা লেখাপড়া সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট শিক্ষা’ (inbangla.net/sikkha) এর সাথেই থাকুন।