Skip to content

 

লিঙ্গ কাকে বলে? লিঙ্গ কত প্রকার ও কি কি?

লিঙ্গ কাকে বলে, লিঙ্গ কত প্রকার ও কি কি

আলোচ্য বিষয়:

বাংলা ব্যাকরণের একটি অন্যতম আলোচ্য বিষয় হচ্ছে লিঙ্গ। ইংরেজিতে একে Gender বলা হয়। লিঙ্গ শব্দের অর্থ হচ্ছে চিহ্ন বা লক্ষণ। এর ধারণা থেকে বুঝা যায় কোনটি পুরুষ, কোনটি স্ত্রী, কোনটি স্ত্রী-পুরুষ উভয় ও কোনটি অপ্রাণীবাচক। তাহলে আর দেরি না করে চলুন লিঙ্গ কাকে বলে? লিঙ্গ কত প্রকার ও কি কি? এসব নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেই।

(১) লিঙ্গ কাকে বলে?

পুরুষ, স্ত্রী, জড় পদার্থ ও উভয় সম্প্রদায়ভুক্ত জাতি বোঝাতে যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে লিঙ্গ বলে। যেমন: মানুষ, বাবা, মা, গাড়ি, টেবিল, মাতা, কন্যা, পিতা, কাকা, ভাই ইত্যাদি।

আবার বলা যায়, শব্দের যে চিহ্ন দ্বারা স্ত্রী, পুরুষ বা অন্য কিছু বুঝা যায়, তাকে লিঙ্গ বলে। যেমন: ছেলে, পিতা, মেয়ে, পাখি, সাথী, শিশু, সন্তান, পুত্র, ফুল, বই ইত্যাদি।

(২) লিঙ্গ কত প্রকার ও কি কি?

লিঙ্গ চার (৪) প্রকার। এগুলো হলো–

  1. পুংলিঙ্গ
  2. স্ত্রীলিঙ্গ
  3. উভয়লিঙ্গ
  4. ক্লীবলিঙ্গ

ক) পুংলিঙ্গ কাকে বলে?

যে শব্দ দ্বারা পুরুষ জাতি বুঝায়, তাকে পুংলিঙ্গ বলা হয়। যেমন: পিতা, শিক্ষক, বালক, রাজা, দাদা, বন্ধু, ভিখারি, নদ,বাবা, ভাই, কাকা,পুত্র ইত্যাদি।

খ) স্ত্রীলিঙ্গ কাকে বলে?

যে শব্দ দ্বারা স্ত্রী জাতি বুঝায়, তাকে স্ত্রীলিঙ্গ বলে। যেমন: মা, কন্যা,বোন, মাতা, ভাবী, মেয়ে, দাদী, রানী, সখী, স্ত্রী, জেলেনী ইত্যাদি।

গ) উভয়লিঙ্গ কাকে বলে?

যে শব্দ দ্বারা স্ত্রী-পুরুষ উভয়কেই বুঝায়, তাকে উভয়লিঙ্গ বলে। যেমন: মানুষ, সন্তান, পাখি, শিশু, গরু,মন্ত্রী, সাথী ইত্যাদি।

ঘ) ক্লীবলিঙ্গ কাকে বলে?

যে শব্দ দ্বারা পুরুষ কিংবা স্ত্রী কোনটাই বুঝায় না, তাকে ক্লীবলিঙ্গ বলে। আবার বলা যায়, যে শব্দ দ্বারা পুরুষ ও স্ত্রী কিছুই না বুঝিয়ে অচেতন পদার্থ বুঝায় তাই ক্লীবলিঙ্গ। যেমন: ঘর, কলম, বই, ফুল, টুপি, দালান, জামা,টেবিল ইত্যাদি।

(৩) বাংলায় পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ

সব ভাষারই লিঙ্গভেদে শব্দভেদ আছে, বাংলা ভাষায়ও আছে। বাংলা ভাষায় বহু বিশেষ্য পদ রয়েছে যাদের কোনটিতে পুরুষ ও কোনটিতে স্ত্রী বোঝায়।

ক) পুরুষবাচক শব্দ কাকে বলে?

যে শব্দ পুরুষ বা ছেলে বোঝায়, তাকে পুরুষবাচক শব্দ বলে। এক কথায় বলা যায়, যে শব্দে পুরুষ বোঝায়, তাকে পুরুষবাচক শব্দ বলে। যেমন: বাপ, ভাই, ছেলে,কাকা, পুত্র, চাচা ইত্যাদি।

খ) স্ত্রীবাচক শব্দ কাকে বলে?

যে শব্দ নারী বা স্ত্রী বা মেয়ে বোঝায়, তাকে স্ত্রীবাচক শব্দ বলে। এক কথায় বলা যায়, যে শব্দে স্ত্রী বোঝায় তাকে স্ত্রীবাচক শব্দ বলা হয়। যেমন: মা, বোন, মেয়ে, কন্যা, মাতা ইত্যাদি।

উল্লেখ্য যে বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের লিঙ্গভেদ আছে। তৎসম বা সংস্কৃত ভাষায় পুরুষবাচক বিশেষ্য পদের সঙ্গে পুরুষবাচক বিশেষণ পদ আর স্ত্রীবাচক বিশেষ্য শব্দের সাথে স্ত্রীবাচক বিশেষণ পদ ব্যবহৃত হয়। যেমন: বিদ্বান লোক এবং বিদুষী নারী। এখানে লোক পুরুষবাচক বিশেষ্য আর নারী স্ত্রীবাচক বিশেষ্য। বিদ্বান পুরুষবাচক বিশেষণ আর বিদুষী স্ত্রীবাচক বিশেষণ।

কিন্তু বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে সংস্কৃত ব্যাকরণে এ নিয়ম মানা হয় না। বাংলা ভাষায় বিশেষণ পদের লিঙ্গভেদ করা হয় না। অর্থাৎ, বাংলা ভাষায় কেবল বিশেষ্য পদের লিঙ্গভেদ হয়। যেমন: সংস্কৃত ভাষায় ‘সুন্দর বালক ও সুন্দরী বালিকা’। কিন্তু বাংলা ভাষায় ‘সুন্দর বালক ও সুন্দর বালিকা’।

(৩) বাংলায় পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ কত প্রকার ও কি কি?

বাংলা পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দগুলোকে সাধারণত ২টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

  1. পতি ও পত্নীবাচক অর্থে
  2. সাধারণ পুরুষ ও মেয়ে বা স্ত্রী জাতীয় অর্থে

ক) পতি ও পত্নীবাচক অর্থে

পুংলিঙ্গস্ত্রীলিঙ্গপুংলিঙ্গস্ত্রীলিঙ্গ
আব্বাআম্মাচাচাচাচী
কাকাকাকীদাদাদাদী
নানানানীনন্দাইননদ
জেঠাজেঠীদেওরজা
ভাইভাবী / বৌদিবাবামা
মামামামীফুপাফুপী

খ) সাধারণ পুরুষ ও মেয়ে বা স্ত্রী জাতীয় অর্থে

পুংলিঙ্গস্ত্রীলিঙ্গপুংলিঙ্গস্ত্রীলিঙ্গ
খোকাখুকীপাগলপাগলী
বামনবামনীভেড়াভেড়ী
মোরগমুরগীবালকবালিকা
দেওরননদ

(৪) বাংলা স্ত্রী প্রত্যয়

পুরুষবাচক শব্দের সাথে কতগুলো প্রত্যয় যোগ করে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করা হয়। এগুলো হলো ঈ, নি, নী, আনী, ইনী, ন ইত্যাদি।

১। ঈ প্রত্যয়: বেঙ্গমা–বেঙ্গমী, ভাগনা/ভাগনে–ভাগনী।

২। নী প্রত্যয়: কামার–কামারনী, জেলে–জেলেনী, কুমার–কুমারনী, ধোপা–ধোপানী, মজুর–মজুরনী ইত্যাদি।

৩। পুরুষবাচক শব্দের শেষে ঈ থাকলে স্ত্রীবাচক শব্দে নী হয় এবং আগের ঈ ই হয়। যেমন: ভিখারি–ভিখারিনী, অভিসারী–অভিসারিণী।

৪। আনী প্রত্যয়: ঠাকুর–ঠাকুরানী, নাপিত–নাপিতানী, মেথর–মেথরানী, চাকর–চাকরানী ইত্যাদি।

৫। ইনী প্রত্যয়: কাঙাল–কাঙালিনী, গোয়ালা–গোয়ালিনী, বাঘ–বাঘিনী ইত্যাদি

৬। উন প্রত্যয়: ঠাকুর–ঠাকুরুন/ঠাকুরানী।

৭। আইন প্রত্যয়ঃ ঠাকুর–ঠাকুরাইন।

৮। বাংলায় কতগুলো তৎসম স্ত্রীবাচক শব্দের পরে আবার স্ত্রীবাচক প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন: অভাগা–অভাগী/অভাগিনী, ননদাই–ননদিনী/ননদী।

৯। কতগুলো শব্দের আগে নর, মদ্দা ইত্যাদি পুরুষবাচক শব্দ এবং স্ত্রী , মাদী, মাদা ইত্যাদি স্ত্রী লবাচক শব্দ যোগ করে পুরুষবাচক ও স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করা হয়। যেমন:

পুংলিঙ্গস্ত্রীলিঙ্গ
নর/মদ্দা/হুলো বিড়ালমেনি বিড়াল
মদ্দা হাঁসমাদী হাঁস
পুরুষ লোকমেয়ে লোক/স্ত্রী লোক
পুরুষ কয়েদিমেয়ে/স্ত্রী কয়েদি
এঁড়ে বাছুরবকনা বাছুর

১০। কতগুলো পুরুষবাচক শব্দের আগে স্ত্রীবাচক শব্দ প্রয়োগ করে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। যেমন:

  • কবি – মহিলা কবি
  • সভ্য – মহিলা সভ্য
  • শিল্পী – মহিলা/নারী শিল্পী
  • কর্মী – মহিলা কর্মী
  • পুলিশ – মহিলা পুলিশ

১১। কতগুলো শব্দের শেষে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করা হয়। যেমন:

  • বোন-পো – বোন-ঝি
  • ঠাকুর-পো – ঠাকুর-ঝি
  • গয়লা – গয়লা-বউ
  • জেলে – জেলে-বউ

১২। অনেক সময় আলাদা আলাদা শব্দে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক বোঝায়। যেমন:

  • বাবা – মা
  • ভাই – বোন
  • ছেলে – মেয়ে
  • কর্তা – গিন্নি
  • জামাই – মেয়ে
  • শুক – সারী
  • খানসামা – আয়া
  • কুলি – কামিন
  • বাদশা – বেগম

১৩। নিত্য বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দঃ এগুলোর পুরুষবাচক শব্দ নেই। সতীন, সৎমা, এয়ো, দাই, সধবা ইত্যাদি।

(৫) সংস্কৃত স্ত্রী প্রত্যয়

তৎসম পুরুষবাচক শব্দের পরে আ, ঈ, আনী, নী, ইকা ইত্যাদি প্রত্যয়যোগে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়।

১। যোগে

সাধারণ অর্থে, যেমন:

  • মৃত – মৃতা
  • বিবাহিত – বিবাহিতা
  • মাননীয় – মাননীয়া
  • প্রিয় – প্রিয়া
  • চপল – চপলা
  • কনিষ্ঠ – কনিষ্ঠা

জাতি বা শ্রেণীবাচক অর্থে, যেমন:

  • অজ – অজা
  • কোকিল – কোকিলা
  • শিষ্য – শিষ্যা
  • শূদ্র – শূদ্রা
  • ক্ষত্রিয় – ক্ষত্রিয়া

২। ঈ প্রত্যয় যোগে

সাধারণ অর্থে, যেমন:

  • নিশাচর – নিশাচরী
  • ভয়ংকর – ভয়ংকরী
  • রজক – রজকী
  • ষোড়শ – ষোড়শী
  • কিশোর – কিশোরী

জাতি বা শ্রেণীবাচক অর্থে, যেমন:

  • সিংহ – সিংহী
  • ব্রাহ্মণ – ব্রাহ্মণী
  • মানব – মানবী
  • কুমার – কুমারী
  • ময়ূর – ময়ূরী

৩। ইকা প্রত্যয় যোগে

যেসব শব্দের শেষে অক রয়েছে সেসব শব্দে অক এর স্থলে ইকা হয়। যেমন:

  • বালক – বালিকা
  • অধ্যাপক – অধ্যাপিকা
  • গায়ক – গায়িকা
  • লেখক – লেখিকা

[ব্যতিক্রমঃ গণক–গণকী, নর্তক–নর্তকী, চাতক–চাতকী, রজক–রজকী]

ক্ষুদ্রার্থে ইকা যোগ হয়। যেমন:

  • নাটক – নাটিকা
  • মালা – মালিকা
  • গীত – গীতিকা
  • পুস্তক – পুস্তিকা

৪। আনী যোগ করে

  • শূদ্র – শূদ্রা
  • মাতুল – মাতুলানী
  • আচার্য – আচার্যানী

[ব্যতিক্রমঃ ‘আনী’ প্রত্যয়যোগে কোন কোন সময় অর্থের পার্থক্য ঘটে। যেমন:

  • অরন্য – অরণ্যানী (বৃহৎ অরণ্য)
  • হিম – হিমানী (জমানো বরফ)
  • বন – বনানী (বৃহৎ বন)]

ঙ) ঈনী, নী যোগে

  • মায়াবী – মায়াবিনী
  • কুহক – কুহকিনী
  • যোগী – যোগিনী
  • মেধাবী – মেধাবিনী
  • দুঃখী – দুঃখিনী

(৫) বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রীবাচক শব্দ

ক) যেসব পুরুষবাচক শব্দের শেষে তা রয়েছে স্ত্রীবাচক বোঝাতে সেসব শব্দে স্ত্রী হয়। যেমন:

  • নেতা – নেত্রী
  • কর্তা – কর্ত্রী
  • শ্রোতা – শ্রোত্রী
  • ধাতা – ধাত্রী

খ) পুরুষবাচক শব্দের শেষে অত্, বান্, মান্, ঈয়ান থাকলে অতী, মতি, ঈয়সী হয়। যেমন:

  • সৎ – সতী
  • মহৎ – মহতী
  • গুণবান – গুণবতী
  • রূপবান – রূপবতী
  • বুদ্ধিমান – বুদ্ধিমতী
  • গরীয়ান – গরিয়সী

গ) কোন কোন পুরুষবাচক শব্দ থেকে বিশেষ নিয়মে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। যেমন:

  • সম্রাট – সম্রাজ্ঞী
  • নর – নারী
  • দেবর – জা
  • শিক্ষক – শিক্ষয়িত্রী
  • সভাপতি – সভানেত্রী
  • বন্ধু – বান্ধবী

(৬) বিদেশি স্ত্রীবাচক শব্দ

  • খান – খানম
  • মরদ – জেনানা
  • মালেক – মালেকা
  • মুহতারিম – মুহতারিমা
  • সুলতান – সুলতানা

(৭) নিত্য স্ত্রীবাচক তৎসম শব্দ

সতীন, অর্ধাঙ্গিনী, কুলটা, বিধবা, অসূর্যস্পশ্যা, অরক্ষণীয়া, সপত্নী ইত্যাদি।

(৮) নিত্য পুরুষবাচক শব্দ

কবিরাজ, যোদ্ধা, ঢাকী, কৃতদার, অকৃতদার, পুরোহিত, কেরানী, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সরকার, পীর, দরবেশ, মওলানা, সেনাপতি, দলপতি, বিচারপতি, জ্বীন, জামাতা ইত্যাদি।

(৯) নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ

সতীন, সপত্নী, সধবা, সৎমা, ডাইনি, অর্ধাঙ্গিনী, বাইজী, কুলটা, এয়ো, দাই, বিধবা, অসূর্যম্পশ্যা, অরক্ষণীয়া, কলঙ্কিনী, পেত্নী, শাঁকচুন্নি, অপ্সরা, পরী ইত্যাদি।

(১০) উভয় লিঙ্গবাচক শব্দ

শিশু, সন্তান, পাখি, জন, শিক্ষিত, গুরু ইত্যাদি।

তো আজ এখানেই থাকলো। আশা করি লিঙ্গ কাকে বলে ও লিঙ্গের প্রকারভেদ, পুরুষ ও স্ত্রী জাতীয় শব্দ সম্পর্কে অল্প কিছু হলেও ধারণা দিতে পেরেছি। আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।

শিক্ষা বা লেখাপড়া সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট শিক্ষা’ (inbangla.net/sikkha) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট শিক্ষা

লেখাপড়া/শিক্ষা সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts