Skip to content

 

আদর্শ সন্তান গঠনে মা বাবার ভূমিকা কতটুকু গরুত্বপূর্ণ?

আদর্শ সন্তান গঠনে মা বাবার ভূমিকা কতটুকু গরুত্বপূর্ণ

নিম্নে সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়তে পিতা-মাতার ভূমিকা কতটুকু গরুত্বপূর্ণ, এ বিষয়ে একটি বিস্তর আলোচনা তুলে ধরা হলো-

সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়তে পিতা-মাতার ভূমিকা কতটুকু গরুত্বপূর্ণ

শিশুরা জাতির ভবিষ্যত।

এই কথাটি আক্ষরিকভাবে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে সেই বহু আগে থেকেই। বাস্তবেও তাই। আজকের যে শিশু সে আগামী দিনের দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ।

আমরা যারা বর্তমানে এই সমাজ, জাতি ও দেশকে পরিচালনা করছি, একদিন এইসব স্থানগুলো ছেড়ে দিতে হবে আজকের শিশুর পরিণত বয়সে। এই কারণে ভবিষ্যতের দিনগুলোর কথা বিবেচনা করে শিশুকে গড়ে তুলতে হবে সত্যিকারের একজন সফল মানুষ হিসেবে।

অভিভাবক থেকে শুরু করে শিক্ষক এবং সমাজের সচেতন মানুষদের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে, আজকের শিশুকে আগামী দিনের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করা।

শিশু যে প্রবৃত্তি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাঞ্ছিত এবং অবাঞ্ছিত উভয় কার্যের ভেতর দিয়ে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।

আগে লোকে প্রবৃত্তিক শিক্ষার ভেতর দিয়ে সন্তানকে সুসংস্কৃত করে তোলার কৌশল জানত না। তারা দমননীতির আশ্রয় নিত। শাস্তি দিয়ে এবং ভয় দেখিয়ে শিশুর গুণগুলোর বিকাশের চেষ্টা করা হতো।

আমরা এখন জানি যে, দমন প্রণালী একান্ত ভ্রান্ত, এটা কখনও সফল হয় না, তাছাড়া এটা মানসিক বিফলতা সৃষ্টি করে। প্রবৃত্তিকে বাঞ্ছিত পথে চালিত করার জন্যে নতুন পন্থা অবলম্বন করতে হয়।

অভ্যাস এবং কৌশল যেন– শিশুর প্রবৃত্তিগুলোর আত্মপ্রকাশের পথ। পথের গতি যেদিকে, প্রবৃত্তিও পানির স্রোতের মত সেদিকে প্রবাহিত হয়।

শিশুকে উপযুক্ত অভ্যাস এবং উপযুক্ত কৌশল আয়ত্ত করিয়ে তার প্রবৃত্তিকে বাঞ্ছিত কাজে উদ্দীপ্ত করা যায়। শিশুর লোভ দমনের কোন প্রয়োজন হয় না। কাজেই জোর-জবরদস্তিরও কোন আবশ্যকতা নেই।

নিষেধ করে শিশুকে কোন কাজ থেকে নিবৃত্তি করায় তার মনে যে নৈরাশ্যের সৃষ্টি তা উৎপাদনের কোন কারণ ঘটে না। সকল কাজেই শিশু স্বতঃপ্রবৃত্ততা ও স্বাধীনতা বোধ করে।

শিশুর শিক্ষা সম্বন্ধে যে প্রণালী লিখিত হয়েছে সকল ক্ষেত্রেই যে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে এমন কথা নেই। অদৃষ্টপূর্ব এমন কারণ ঘটতে পারে যার ফলে হয়তো প্রাচীন প্রণালী প্রয়োগ করার আবশ্যকতা দেখা দেবে।

কিন্তু শিশু মনোবিদ্যা যতই পরীক্ষিত হয়ে বৈজ্ঞানিক সত্যরুপে প্রতিপন্ন হতে থাকবে এবং প্রাথমিক স্কুলের অভিজ্ঞতা যতই সঞ্চিত হতে থাকবে– শিশুর চরিত্রগঠনে নতুন প্রণালী ততই যথার্থভাবে প্রয়োগ করা সহজ হয়ে আসবে।

See also  সন্তানকে অতিরিক্ত শাসন করা যাবে নাঃ সন্তানকে খেলতে সুযোগ দেওয়া দরকার

শিশু যে রকম প্রবৃত্তি ও প্রতিবর্তী নিয়ে জন্মগ্রহণ করে পরিবেশের প্রভাবে তা থেকে নানারূপ অভ্যাস গড়ে তোলা যায় এবং এভাবে তাদের চরিত্রের বৈচিত্র্য সম্পাদন করাও সম্ভব।

অতি শিশুকালই এইরকম শিক্ষার প্রকৃষ্ট সময়; কাজেই এই বয়সে আমাদেরকে বিশেষ যত্তের সাথে শিশুর চরিত্রগঠনের কাজে ব্রতী হতে হবে। যারা বর্তমান জগতের অন্যায় অনাচার জিইয়ে রাখতে চায় তারাই বলবে মানুষের প্রকৃতিকে বদলানো সম্ভব নয়।

তারা যদি বলে যে, শিশুর বয়স ছয় বছর হওয়ার পর তার স্বভাব বদলানো সম্ভব নয় তবে তাদের কথায় কোন সত্যতা আছে বলে আমার মনে হয়না।

অনেকে বলে যে, শিশু যে প্রবৃত্তি ও প্রতিবর্তী নিয়ে জন্মে তার পরিবর্তন সাধন অসম্ভব– এই কথাতেও আমি একমত নই।

যদিও সুপ্রজনন দ্বারা এক্ষেত্রে সুফল লাভের আশা করা বাতুলতা। কিন্তু তারা যখন বলে যে, বর্তমান যুগের সাধারণ মানুষ যেরকম জীবন ও যেরকম অভ্যাসে অত্যন্ত হয়েছে তা থেকে অন্য ধরনের আচরণে অভ্যস্ত মানুষ গড়ে তোলা অসম্ভব, তখন তারা আধুনিক মনোবিজ্ঞানকেই উপেক্ষা করছে।

দুটো শিশু যদি একইরকম চরিত্র অর্থাৎ প্রবৃত্তি ও প্রতিবর্তী এবং অন্যান্য শক্তি নিয়ে জন্মগহণ করে, ভিন্ন রকম পরিবেশ লালিত-পালিত করে তাদেরকে সম্পূর্ণ আলাদা মানসিকতাসম্পন্ন এবং ভিন্নরকম অভ্যাসে অভ্যন্ত বয়ষ্ক ব্যক্তিতে পরিণত করা যায়। বাল্যকালীন শিক্ষার কর্তব্য হলো শিশুর প্রবৃত্তিগুলোকে এমনভাবে শিক্ষা দিয়ে বিকশিত করা– যার ফলে শিশুর চরিত্রের প্রয়োজনীয় গুনগুলো সুসামঞ্জস্যভাবে বর্ধিত হতে পারে।

এরকম শিক্ষার ফলে শিশুর মনোভাব ধ্বংসশীল না হয়ে হবে সজনশ গোপনস্বভাব না হয়ে সে হবে স্নেহশীল, সে হবে সাহসী, সরল এবং বুদ্দিমান। বেশিরভাগ শিশুর ক্ষেত্রেই এরকম শিক্ষা দেয়া সম্ভব৷

যেখানে শিশুর উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা আছে সেখানেই প্রকৃতই এরকম ফল পাওয়া যাচ্ছে।

যদি শিশুশিক্ষা সম্পর্কিত আধুনিক জ্ঞান এবং পরীক্ষিত প্রণালী প্রয়োগ করা যায় তবে এক পুরুষকালের মধ্যেই আমরা এমন মানব-সমাজ গড়ে তুলতে পারি যা হবে প্রায়, সম্পূর্ণ রোগমুক্ত, বিদ্বেষমুক্ত এবং মূর্খতামুক্ত। জ্ঞান মানুষকে ধ্বংসকারী প্রবৃত্তি ও আবেগ থেকে রক্ষা করে। জ্ঞান বিনা আমাদের আশার জগৎ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।

See also  সন্তান-এর চরিত্র ও অভ্যাস গঠনে মা বাবার ভূমিকা গ্রহণ এবং সহায়তা করা উচিত

আমাদের নির্জ্ঞান মনের গোপন স্তরে কুসংস্কারের ভয় লুকিয়ে থাকে কিন্তু সকল ছেলেমেয়ে যদি নির্ভিক স্বাধীনতার মধ্যে শিক্ষালাভের সুযোগ পায় তবে এক পুরুষকালের মধ্যেই তারা আমাদের অপেক্ষা ব্যাপকতর এবং এক নতুন উদ্দীপনাযুক্ত সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করতে পারবে।

আমরা দেখতে পাব না, কিন্তু আমরা যে মুক্ত নর-নারী নতুন শিক্ষাব্যবস্থার ভেতর দিয়ে গড়ে তুলব– তারাই তাদের সৃষ্ট এই নতুন জগৎ দেখতে পাবে।

আমরা যদি শিশুদেরকে ভয় ও দমন থেকে মুক্ত রাখতে পারি, আমরা যদি তাদেরকে বিদ্রোহী ও প্রতিহত প্রবৃত্তিগুলোর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারি– তবে আমরা তাদের কাছে জ্ঞানের রাজ্য সম্পূর্ণ অবারিত করে দিতে পারব। বিজ্ঞতার সাথে শিক্ষা দিলে তখন শিক্ষাগ্রহণ কার্য শাস্তির মত মনে না হনে শিশুর কাছে আনন্দদায়ক হয়ে দীড়াবে।

শিশুকে এখন যে পরিমাণ শিক্ষনীয় বিষয় শেখানো হয় তা অপেক্ষা বেশি শেখানো প্রয়োজন হবে না।

শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণের ব্যাপারে মনোভাবের পরিবর্তন সাধনই বিশেষ প্রয়োজন।

শিক্ষা বিষয়টিকে ছাত্র যেন স্থাধীনতার মধ্যে দিয়ে নতুন বিষয় আবিষ্কারের জন্য.আনন্দপ্রদ অভিযান বলে মনে করে। শিক্ষাক্ষেত্রে এরকম ভাবধারা প্রবর্তিত হলে বুদ্ধিমান ছাত্রগণ নিজেদের চেষ্টায় তাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে চেষ্টা করবে এই বিষয়ে তাদেরকে সাহায্য করার জন্য সবরকম সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।

অনেকেই বলে থাকেন, শিশুদের প্রতি অত্যাধিক স্ত্রেহ প্রয়োগ শিশুর ভবিষ্যতে উপযুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার অন্তরায়। .

কিন্তু সেই সাথে একথাও সত্য যে, একটি শিশুকে উপযুক্ত স্নেহ এবং ভালবাসা প্রয়োগের মধ্যে দিয়েই শিশুকে সচেতন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। জ্ঞান বিদ্যমান আছে, কিন্তু প্রীতির অভাবের কথা চিন্তা করলে বাস্তবিক অর্থেই নিরাশ হতে হয়।

প্রায় সকল নৈতিক নেতাই এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয়। এ সত্ত্বেও শিশুদের প্রতি আমাদের যে স্বাভাবিক প্রীতিবোধ আছে তা ক্রমশ প্রসার লাভ করছে।

সাধারণ নর-নারীর অন্তরে শিশুর প্রতি যে মমতা ও সহানুভূতির প্রকাশ দেখা যায় কয়েক যুগের নিষ্ঠুরতা তা আবৃত করে রেখেছে।

উগ্র জাতীয়তাবোধের উত্তাপে মানবতাবোধ শুকিয়ে যায়। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল, যার ফলে বাংলাদেশের অনেক শিশুই পরবতীতে সুস্থ মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে অপরিসীম বাধার সম্মুখীন হয়েছিল।

See also  সন্তানের মন থেকে ভয় দূর করার উপায় বা শিশুর ভয় দূর করার পদ্ধতিঃ কিভাবে শিশুর মনের ভয় দূর করা যায়?

সবচেয়ে আগে আমাদের স্বাভাবিক মমত্ববোধকে মুক্তি দিতে হবে। যদি কোন নীতির ফলে শিশুদের উপর অত্যাচার বা দুর্ভোগ প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয়– তবে আমাদের কাছে প্রিয় যতই হোক না কেন, সেই নীতি বর্জন করতে হবে। প্রায় সকল ক্ষেত্রে দেখা যায়, নিষ্ঠুর নীতির মনস্তাত্তিক ভিত্তি হল ভীতি।

এজন্যেই বাল্যকালে শিশুর কোমল মন থেকে ভয় দূর করার প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আমাদের মনের অন্ধকার গুহায় যে ভয় লুকিয়ে আছে তাকে নির্মূল করতে হবে। ধর্মশিক্ষা একটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিশুদের জন্যে। কিন্তু তাই বলে ধর্মীন্ধ কুসংস্কারযুক্ত যে অন্ধকার মানসিকতা– সেটা শিশুদের কোমল মনে কখনই প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না।

আধুনিক শিক্ষাধারা যে পরিপূর্ণ জগতের সম্ভাবনা আমাদের সামনে উপস্থাপিত করেছে– সেটা লাভ করতে হলে কিছুটা ব্যক্তিগত বিপদকে আহ্বান করতে হলেও তার জন্যে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।

একজন শিশুকে যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে তৈরি করার জন্যে আমাদের প্রাণপণ চেষ্টা করা উচিত।

আমরা যারা বড়, অর্থাৎ যাদের উপর একটি শিশুকে সুস্থ মানসিকতা সম্পন্ন সুনাগরিক করে গোড়া তোলার গুরুদায়িত্ব অর্পিত আছে– তারা চিন্তা করে দেখুন, এর ফল কিরকম সুদূরপ্রসারী হতে পারে। আমরা একটু চেষ্টা আর ইচ্ছা করলে এক পুরুষকালের মধ্যেই পৃথিবীতে একটি সুস্থ মানসিকতাসম্পন্ন মানব-মানবী পরিবেষ্ঠিত সচেতন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি।

শিশুর মধ্যে ভবিষ্যতের একজন বয়ষ্ক ব্যক্তির যে সম্ভাবনা নিহিত রয়েছে এটা মনে করে ছোট্ট শিশুর প্রতিও শ্রদ্ধাযুস্ত আচরণ করুন।

আপনার বর্তমান সুবিধার কাছে কিংবা শিশুকে অত্যধিক আদর করে যে আনন্দ পান তার কাছে শিশুর ভবিষ্যৎ বলি দেবেন না। এ দুটোই সমান ক্ষতিকর। এখানেও তেমনই শিশুর শিক্ষাদান ব্যাপারে ঠিক পথে চলতে হলে স্নেহ ও জ্ঞানের মিলন প্রয়োজনীয়।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট সংসার

সম্পর্ক, পরিবার ও সংসার সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts