Skip to content

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কত সালে হয়? কেন হয়েছিল? কাদের মধ্যে হয়েছিল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি, কেন, কিভাবে

(১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কত সালে হয়?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কত সালে হয়: বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসের সংঘটিত সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৩৯ সালের শুরু হওয়া এই ভয়াবহ যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্রের মত ভয়ংকরতম অস্ত্রের ব্যবহার বিশ্ববাসী প্রথম এবং শেষবারের মতো প্রত্যক্ষ করেছিল।

মিত্র শক্তি ও অক্ষ শক্তির মধ্যকার আক্রমণ প্রতি আক্রমণ এবং ভয়ংকর সব অস্ত্রের ব্যবহারে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়ে উঠেছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিপুল পরিমাণ সামরিক বেসামরিক সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি, প্রায় ৭ কোটির মত মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এই মহাসমরে প্রায় ৩০টি দেশের ১০ কোটিরও বেশি সামরিক সদস্য অংশগ্রহণ করে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করার ২১ বছরের মাথায় বিশ্ববামী আনেকটি মাহযুদ্ধের মুখোমুখি হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল আরো ভয়াবহ ও বিধ্বংসী।

এখানে আমরা ইতিহাসের সংঘটিত সবচেয়ে ভয়াবহ অধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে।

(২) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল: মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি তৈরি করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মিত্রশক্তি কর্তৃক জার্মানি সহ পরাজিত দেশগুলোর উপর ভার্সাই চুক্তির মত বিভিন্ন শর্ত জোরপূর্বক ভাবে আরোপ করা হয়। সে সময় পরাজিত জার্মানি ও কেন্দ্রীয় শক্তির দেশগুলোর পক্ষে এসব অপমানজনক ও জোর জবরদস্তি মূলক সন্ধির শর্ত মেনে নেওয়া ছাড়া উপায়ও ছিল না। সে সব অসম্মানজনক চুক্তিগুলোই মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধানতম কারণ হিসেবে বিবেচিত।

জার্মানির নাৎসি নেতা হিটলার প্রথম থেকেই এইসব অন্যায় দাবির বিরোধিতা করেছিলেন, পরবর্তীতে তারই নেতৃত্বে জার্মানি প্রতিশোধ স্প্রীহায় উনম্মত্ত হয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি রচনা করেন।

ততকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনের চেষ্টাতে জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হলেও মার্কিন সিনেট তার অনুমোদন দেয় নি, ফলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের হাতে জাতিপুঞ্জের দায়িত্ব থাকলেও মার্কি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়ত ইউুনয়নের মত মত বৃহৎ রাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে তারা উত্তেজনা প্রশমন কিংবা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ব্যর্থ হয়।

প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অধিকাংশ উপনিবেশ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়, তখন জার্মানি ইতালি ও জাপানের কোন উপনিবেশ ছিল না, তাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য এই দেশগুলি উপনিবেশ দখলের চেষ্টা শুরু করলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, আর এই উত্তেজনা সৃষ্টিই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে অনেকাংশে ত্বরান্বিত করে।

অন্যদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন ফ্রান্সের মধ্যকার মতবিরোধ কেউ অনেক বিশ্লেষক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করেন।

এছাড়াও ইতালির ফ্যাসিবাদ ও জাপানের সমরবাদ নীতিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে অনেকাংশেই প্রভাবিত করে। এইসব দেশের শাসকগোষ্ঠী প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের নেশায় মেতে ওঠেন, এরি ধারাবাহিকতায় জাপান চীনের মানচুরিয়া, নানকিংপিকিং-সহ বহু শহর দখল করে নেয়। ইতালি ১৯৩৪ সালে আবিসিনিয়া দখল করে। জার্মানিও নতুন করে সাম্রাজ্য বিস্তারের দিকে মনোযোগী হয়ে ওঠে। অন্যদিকে রাশিয়াও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো দখলের মাধ্যমে ভূমধ্যসাগরে প্রবেশের পথ খুঁজছিল। বড় শক্তি দেশগুলোর সাম্রাজ্যবাদী ও দখলদারিত্ব মতভাব দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের অন্যতম কারণ।

সাম্রাজ্য বিস্তারের দিকে মনোযোগী জার্মানি ও ইটালিকে বাধা দেওয়ার পরিবর্তে, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স উল্টো তাদের প্রতি তোষণ নীতি গ্রহণ করে। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণ নীতি নেতা হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানিকে শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করে। বেপরোয়া জার্মানি রাইন ভুখন্ড, অস্ট্রেলিয়া, চেকোস্লোভিয়া প্রভৃতি দেশগুলো আক্রমণ করে দখলে নিতে থাকে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা মঞ্চ তৈরি করে।

সাংগঠনিক ত্রুটি, নেতৃত্বের দুর্বলতা সহ বিভিন্ন কারণে বিশ্ব শান্তি রক্ষা কিংবা সাম্রাজ্যবাদ বিস্তার বন্ধ করার ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জ কার্যকর কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করতে পারেনি, এর ফলশ্রুতিতে জার্মানি, ইতালি ও জাপান আক্রমণাত্মক ও দখলদারিত্ব মনোভাব প্রকাশ করতে শুরু করে, যা বিশ্বকে আরেকটি ভয়াবহ যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়।

১৯৩৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইটালির মধ্যস্থতায় জার্মানির মিউনিখ শহরে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা, মিউনিখ চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তি অনুসারে চেকোস্লোভিয়ার ছুদাতেন অঞ্চল জার্মানিকে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তার বিনিময়ে হিটলার চেকোস্লোভাকিয়ার বাকি অংশে আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু মিউনিখ চুক্তির মাত্র ৭ মাস পর, ১৯৩৯ সালের ১৫ মার্চ হিটলার চেকোস্লোভাকিয়া আক্রমণের মাধ্যমে দখল করে নেয়।

রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি কিংবা পোল্যান্ডের ডানজিক বন্দরের দাবি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আরেকটি পটভূমি তৈরি করেছিল।

আসন্ন পোল্যান্ড আক্রমণের সম্ভাবনায় ব্রিটেন, ফ্রান্স ও পোল্যান্ড এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার মাধ্যমে পরস্পরকে সরাসরি সামরিক সহায়তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করে, এ সময় জার্মানির প্রতি তোষণ নীতি ত্যাগ করে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স ১৯৩৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।

(৩) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল: বিশ্বের পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো বিপরীত দুটি সামরিক জোটে বিভক্ত হয়ে এই যুদ্ধে যোগদান করে। মিত্রশক্তি নামক সামরিক জোটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কানাডার মত বিভিন্ন পরাশক্তিধর দেশগুলো অংশগ্রহণ করে। অন্যদিকে জার্মানি, জাপান, রোমানিয়ার মত দেশগুলো অক্ষশক্তি গঠন করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে জার্মানি ইউরোপের অধিকাংশ এলাকা নিজেদের দখলে নেয়, অন্যদিকে জার্মানির মিত্রদেশ জাপান প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মার্কিন ও ইউরোপীয় উপনিবেশ সমূহ আক্রমণ করে, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে বেশিরভাগ অঞ্চল জয় করতে সক্ষম হয়।

১৯৪১ সালের ডিসেম্বর জাপান হাওয়াই দ্বীপুঞ্জে মার্কিন নৌকাটি হাওয়াই আক্রমণ করে, এই হামলার প্রেক্ষিতে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধ জরিয়ে পরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই মহাযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ অক্ষশক্তির জয়রথ থামিয়ে পরাজয়কে ত্বরান্বিত করে।

অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নে হিটলারের ভুল রণকৌশল এর কারণে জার্মানি ১৯৪৩ সালে স্টালিনরা যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়, পরবর্তীতে ১৯৪৪ সালের ৬ জুন বৃটেন, কানাডা ও মার্কিন যৌথ বাহিনীর আক্রমণের মধ্য দিয়ে জার্মানির দখলকৃত ফ্রান্সকে পুনরায় স্বাধীন করা হয়।

১৯৪৫ সালের ৮ মে জার্মানি চূড়ান্তভাবে মিত্রশক্তির কাছে পরাজিত হয়, অন্য দিকে পার্ল-হারবার আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে। এই পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের ফলে দুটি অঞ্চল পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে প্রায় চার লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের পর ১৯২৪ সালের ১৪ আগস্ট ধ্বংসপ্রাপ্ত জাপান মিত্রশক্তির কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান হয়।

বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব ছিল অত্যন্ত বিস্তৃত ও সুদূর প্রসারী এই যুদ্ধের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া বিশ্ব পরাশক্তির মর্যাদা লাভ করে, তখন ব্রিটেন ফ্রান্স ইতালি প্রভৃতি ইউরোপীয় দেশগুলোর স্থান হয় দ্বিতীয় সারিতে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ গঠন করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে দ্বিমেরু কেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার উদ্ভব হয়, যা পরবর্তীতে কিউবার মিসাইল সংকট, কোরিয়ার সংকট কিংবা ভিয়েতনাম যুদ্ধের পটভূমি সৃষ্টিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হবার পর জার্মান ও যুক্তরাষ্ট্র এক অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে খুঁজতে থাকে এটম বোমা বা পারমানবিক বোমা তৈরির কৌশল। আমেরিকানরা তখনও খুব শঙ্কিত ছিল এই ভেবে যে জার্মানরা হয়তো যে কোন মুহূর্তে পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার করে ফেলতে পারে। পরবর্তীতে আমেরিকানরাই প্রথম পারমাণবিক বোমা তৈরি করে পৃথিবীর যুদ্ধের ইতিহাস কি বদলে দেয়।

[সূত্র: Kikenokivabe YouTube]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net

Quality information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page