নিম্নে মনের শক্তি বাড়াতে অটো সাজেশান পদ্ধতিটি তুলে ধরা হলো-
মনের শক্তি বাড়াতে অটো সাজেশান পদ্ধতি ধারণা দেন ডাঃ ম্যাক্সওয়েল মাল্টজ, যিনি আমেরিকার একজন বিখ্যাত চিকিৎসক। তিনি ‘সাইকো সারবেনেটিক্স’ তথা আত্ম-উন্নয়নের মনস্তত্ত্বের ওর একজন বিশেষজ্ঞ।
ডাঃ মাল্টজ তাঁর বিখ্যাত ‘Psycho cybernetic’ বইতে তিনি বলেছেন,
‘আত্মবিশ্বাস বাড়াতে গেলে প্রত্যেক লোককে তার নিজের সম্পর্কে কল্পিত ভাবমূর্তি তৈরি করতে হবে। তুমি নিজের যা সেটা তো আছো। সেই ‘আমিটাকে নিয়ে যদি সন্তুষ্ট থাকো তাহলে মিটেই গেল।
কিন্তু তুমি কী হতে চাও, কোথায় পৌছতে চাও, নিজের কেমন ভাবমূর্তি তৈরি করতে চাও সেটা একজন দক্ষ শিল্পীর মত কল্পনা করে নিতে হবে। তারপর নিজেকে সেই কল্পিত আদর্শ ভাবমূর্তির স্তরে নিয়ে যেতে হবে।’
ডাঃ মাল্টজ আরও বলছেন,
‘No matter what the situation is, you can prepare for it before and by means of inagining yourself and your prospect face to face while he is raising objections and creating problems and you are handling them properly.’
এই অটো সাজেশন পদ্ধতি সম্পর্কে একটি গল্প চালু আছে।
একবার একজন স্কুল ছাত্রী ডাঃ মাল্টজের কাছে চিঠি লিখেছিল। সেই চিঠিটা নিম্নরূপ,
‘আমি ১৭ বছরের একটি মেয়ে। আমি হাই স্কুলের ছাত্রী। কিন্তু বয়সের তুলনায় আমার বয়স কম দেখায়। আমি বেঁটে এবং কালো। মোটেই ভাল দেখতে নই। আমার স্বাস্থ্যও ভাল নয়। এ নিয়ে আমি খুব অবসাদে ভুগি। আমার লোকের কাছে মুখ দেখাতে লজ্জা হয়। আমার বড় আপার চেহারা ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যখন নিজেকে তুলনা করি তখন আমার সমস্যা আরও বেড়ে যায়। আমার বাবা ও মা দুজনেই আমাকে ভালবাসেন কিন্তু নিজের ওপর নিজেরই করুণা হয়। আমাকে দয়া করে সাহায্য করুন।’
ডাঃ মাল্টজ উক্ত চিঠিটিকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছিলেন। তারপর মেয়েটার ঠিকানায় উত্তর পাঠিয়েছিলেন। উত্তরটি নিম্নরূপ,
‘কেউ ইচ্ছা করলে তার হাইট, ফিগার এবং গায়ের রঙ পালটাতে পারে না। এ নিয়ে তার করার কিছু নেই। তবে চেষ্টা করলে যে কেউ তার স্বাস্থ্য অনেকটাই ভাল করতে পারে। মনোভাবও বদলাতে পারে। এটা নির্ভর করে তার কী ধরনের ব্যক্তিত্ব তার ওপর। তুমি কোন একজন হোমিওপ্যাথ অথবা কবিরাজের সঙ্গে পরামর্শ করো। তিনি তোমার ব্যক্তিত্ব বিচার করে সেইমত ওষুধ দেবেন।
স্বাস্থ্যের যত্ন নাও। স্বাস্থ্য যত ভাল হবে ততই মন ভাল হবে। নিয়মিত ব্যায়াম ও যোগাসন করো; তাতে শরীরের যথেষ্ট উন্নতি হবে। পুষ্টিকর খাবার খাও। দেহের ভেতর যেন টক্সিন কম ঢোকে। মনে রেখো, দেহ ও মন পরস্পরকে ভীষণ প্রভাবিত করে যা আমাদের ধারণার বাইরে। তাছাড়া তোমার ব্যক্তিত্বের উন্নতি করো। এনিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে যে মানুষ যেমন ভাবে তেমনই হয়। এই (মনের) ব্যায়াম নিয়মিত করে দেখো।
এটা করতে হলে তোমাকে যা করতে হবে সেটা হলো-
একটা চেয়ারে বা সোফায় খুব রিলাক্সড হয়ে বসো।
কয়েকবার জোরে জোরে নিঃশ্বাস নাও।
২৫ থেকে এক পর্যন্ত কাউন্ট ডাউন করতে থাকো।
খুব ধীরে ধীরে এবং হালকাভাবে।
এবার নিজের মনে বার বার বল-
আমার স্বাস্থ্য খুব ভাল। আমার আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। প্রত্যেকটি কাজে আমি সফল হচ্ছি। আমাকে সবাই ভালবাসে। পড়াশোনায় আমি যথেষ্ঠ ভাল। আমি আরও পড়বো। আমার ছাত্রজীবনের সময়গুলোকে আমি বৃথা নষ্ট করবো না।
শপথ বাক্যের মতো এই কথাগুলো ছাড়াও তুমি আরও যা যা মনে করো বলতে পারো। যখন তোমার মনে এই বিশ্বাসগুলি গেঁথে যাবে তখন তোমার মন তাতে সাড়া দেবে। তখন দেখবে তোমার নিজেকে সম্পূর্ণ অন্য মানুষ বলে মনে হচ্ছে।’
এটাই হচ্ছে অটো সাজেশান পদ্ধতি।
কেউ পরীক্ষায় খুব ভাল রেজাল্ট করতে পারছেন না। কেউ চুপচাপ; বেশী কথা বলতে পারেন না। অথচ সদালাপী না হলে চাকরি বাকরি, প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু যোগাড় করা মুশকিল। এগুলি সব ব্যক্তিত্বের গোলমাল (Personality disorder)। যে কোন ব্যক্তিত্ব-বৈকল্য নির্মূল করে নতুন ব্যক্তিত্ব তৈরি করা যায়।