নিম্নে বাবা-মায়ের যে ১০টি অভ্যাস সন্তানের ভবিষ্যত ধ্বংস করে তা তুলে ধরা হলো-
বাবা-মায়ের সবচেয়ে বড় সম্পদ তাদের সন্তান। একজন সফল মানুষকে অনেকাংশে তার বাবা-মাই গড়ে তোলে। কিন্তু তাদের কিছু অভ্যাস হয়তো একজন সম্ভবনাময় সন্তানের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
সন্তানের প্রতি বাবা মায়ের কিছু ক্ষতিকর অভ্যাস রয়েছে, যার ফলে একজন সম্ভাবনাময় সন্তান তার ভবিষ্যৎ জীবনে ব্যর্থ হতে পারে।
১। তুলনা করা
আপনি হয়তো আপনার সন্তানকে তার অন্য ভাইবোন বা বন্ধুদের সাথে তুলনা করে থাকেন। এরজন্য হয়তো তাকে তিরস্কারও করেন যে, অমুক এই অর্জন করেছে, অমুক এই ফলাফল করেছে, আর তুমি কি করেছো? আপনার এমন তুলনার ফলে পরবর্তীতে আপনার সন্তানের মধ্যে বিষন্নতা এবং আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেবে। তখন সে কোন কাজ করার জন্য উৎসাহ পাবে না। আপনি বরং আপনার শিশুর নিজস্ব বিশেষ যোগ্যতা ও গুণাবলীর দিকে নজর দিন এবং তা উন্নয়নের জন্য সাহায্য করুন। পাশাপাশি আপনার শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে তার কাজে তাকে উৎসাহ প্রদান করুন।
২। সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া
অনেকসময় আপনি আপনার শিশুর উপর আপনার নিজস্ব কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। তাদের ভবিষ্যতের সাথে জড়িত এমন কিছু বিষয় আপনি চাপিয়ে দেন যাতে তাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই কিন্তু আপনি তাদেরকে তা পছন্দ করে দেন। হয়তো আপনি সেরূপ হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু বাস্তবতার কারনে আপনি সেই অবস্থানে যেতে সক্ষম হননি। আপনার এরূপ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার কারনে আপনার শিশু কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে এবং সে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়তে পারে। আপনার শিশুকে তার নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মত যোগ্য করে তুলুন এবং বয়স হলে তাকে তার নিজের সিদ্ধান্ত নিতে দিন।
৩। প্রযুক্তির আসক্তি
আপনি নিজে আপনার শিশুকে ঘন্টাখানিকের বেশি কম্পিউটারে বসতে নিষেধ করেন, কিন্তু নিজে কয়েক মিনিট পর পর আপনার স্মার্টফোনটি চেক করেন। এতে আপনার শিশু বরং আপনাকে অমান্য করতে শিখবে এবং আপনার কথাকে সবসময় অমান্য করার সুযোগ খুঁজবে। আপনি বরং আপনার শিশুকে সময় দিন এবং তাদেরকে নিয়ে ইনডোর ও আউটডোরে বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করুন।
৪। মনোযোগ না দেওয়া
অনেকসময় আপনার শিশু আপনার কাছে তাদের অনুভূতি, তাদের নতুন অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করতে চায়। কিন্তু আপনি হয়তো অধিকাংশ সময়েই তাদের কথায় মনোযোগ দেননা বরং তাদের তিরস্কার করেন। এরফলে তাদের সাথে আপনার দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং তারা নিজেদের মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে অসামাজিক জীবে পরিণত হয়। তাদের মানসিক বিকাশের জন্য তাদের অপ্রয়োজনীয় কথাও আপনি মনোযোগের সাথে শুনুন। তাদের কথার মাঝেই হয়তো তারা গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুত্বহীন বিষয় বাছাই করতে শিখবে।
৫। অভিযোগ
আপনি হয়তো সবসময় পরিবারের জন্য এবং আপনার সন্তানদের জন্য আপনার পরিশ্রম ও কষ্টের জন্য অভিযোগ করতে থাকেন। এরফলে আপনার সন্তান চিন্তা করতে পারে, আপনি হয়তো তাদের ছাড়া অনেক ভালো থাকতে পারেন তারা আপনার জন্য একেকটি বোঝা। এতে করে তারা সর্বদা হীনমন্যতায় ভুগবে এবং তারা নিজেরা নিজেদেরকে অপ্রয়োজনীয় মনে করবে। যা অনেকসময় তাদেরকে আত্মহত্যার মত হীনকর কাজের দিকে ধাবিত করতে পারে। অধিক অভিযোগ করা বন্ধ করুন এবং আপনার সন্তানদের সমাধানের বাইরের সমস্যা নিয়ে তাদের সামনে আলাপ করা থেকে বিরত থাকুন।
৬। কাজের বোঝা চাপানো
পিতা-মাতা হিসেবে আমাদের একটি সাধারন অভ্যাস আমাদের শিশুদের উপর অধিক কাজের বোঝা চাপানো। তাদের সম্পূর্ণ সময় তাদেরকে পড়াশোনা সহ অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের কাজে আমরা ব্যস্ত রাখি। এতে করে আমাদের সন্তানরা সর্বদা ক্লান্তি ও চাপ অনুভব করবে। আমাদের উচিত, দৈনন্দিন জীবনে তাদের নিজেদের জন্য কিছু অবসর সময় নির্ধারন করা যাতে করে তারা ক্লান্ত হয়ে না পড়ে।
৭। স্বনির্ভরতার পথে বাধা
আপনি হয়তো আপনার সন্তানের ঘর সবসময় পরিষ্কার করে দেন। এমনকি তারা নিজেরা তা করার মত সক্ষম হওয়া স্বত্ত্বেও তাদের ঘর আপনিই পরিষ্কার করে দেন। ফলে আপনার সন্তানের নিজ জীবন নির্বাহের জন্য তার নিজস্ব যোগ্যতার বিকাশ হয় না। জীবিকা নির্বাহের জন্য তাদের নিজ যোগ্যতার বিকাশে আপনি তাদেরকে কিছু পারিবারিক কাজের দায়িত্ব দিতে পারেন। এতে করে তারা নিজেদেরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভাবতে শিখবে এবং নিজেদের ম্যধকার যোগ্যতার বিকাশ ঘটাবে।
৮। অধিক শাস্তি
আপনার শিশুর সামান্য অপরাধের জন্যও আপনি হয়তো তাদেরকে অধিক শাস্তি দেন। এতে করে তারা জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং সবসময় ভুল করার চিন্তায় তারা কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকে। শাস্তিকে বরং সর্বশেষ উপায় হিসেবে রাখুন এবং আপনার সন্তানকে যত্নের সাথে তার ভুল সম্পর্কে অবহিত করুন। এতে করে সে তার ভুল সংশোধন করে সঠিকভাবে কোন কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
৯। বার বার একই কথা বলা
‘এটা করবে না’, ‘এখন হোমওয়ার্ক কর’- এই ধরনের কথা বারবার বললে সন্তানের কাছে তেমন একটা দাম থাকবে না। বরং কথা না শুনলে ২৪ ঘণ্টার জন্য টিভি দেখা বন্ধ বা গ্যাজেট ব্যবহার করা যাবে না এই ধরনের বিষয় করলে সন্তান একসময় কথা শুনলে আর না শুনলে কী হতে পারে সেটার বিষয়ে ধারণা পাবে। ফলে ধীরে হলেও তার মধ্যে পরিবর্তন আসবে।
১০। বেশি ছাড় দেওয়া বা একদমই শাসন না করা:
অনেকে বাচ্চাদের রাগ বা শাসন করতে নারাজ। তাদের কথা হল, এখন কিছুই বলার দরকার নেই, বড় হলে সব এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। এটা মারাত্মক ভুল। বাচ্চাদের স্বভাব-চরিত্র যা গড়ার পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে গঠন হয়ে যায়। এরপর ভালো-মন্দ যেটাই হয় তা মজবুত ও পাকাপোক্ত হতে থাকে, যা পরবর্তীতে সংশোধন করা কঠিন হয়ে পড়ে। সুতরাং বাচ্চা বুঝুক আর না বুঝুক ছোটবেলা থেকেই বুঝাতে থাকবে। এক সময় সে বুঝবে এবং উত্তম চরিত্র নিয়ে বড় হবে।