আমারা যখন পড়তে বসি প্রথমে তো আমাদের এনার্জি লেভেল ভীষণ হাই থাকে তখন আমরা ভাবি প্রত্যেকদিন ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা করে পড়বই একদিন এই অর্ধেক সিলেবাস শেষ করে দেবো আর তিন দিনে তো পুরো বই।
এইভাবে পড়তে বসার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরেই আমাদের এনার্জি লেভেল হান্ডেট পার্সেন্ট থেকে সোজা টেন পার্সেন্ট এ নেমে যায় ও পড়াশোনায় মনোযোগ থাকেনা।
আমরা ভাবি আজকে থাক খুব ঘুম পাচ্ছে, একটু পাবজি খেলেনিই, আরে ফেসবুকে কতজন আবার আমার পোষ্টে লাইক করলো একটু চেক করে নেই তো, হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিওটা কি সুন্দর সবাইকে সেন্ড করি, ব্যাস এসব কারণেই পড়া শেষ।
তাই আজ আমরা ৫টি পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার উপায় সম্ডরেক আলোচনা কনব। আপনাদের জন্য নিয়ে আসছে এমন কিছু টেকনিক যা এপ্লাই করলে পড়াশোনা টা আপনার কাছে একটি মজার খেলার মতন হতে শুরু করবে। আপনি আপনার স্টাডিতে কনসেনট্রেট করতে পারবেন এবং অবশ্যই এক্সাম এ ভালো রেজাল্ট আসবেই তাই আপনার প্রবলেম যদি এটাই হয়ে থাকে তাহলোে পড়াশোনায় মনোযোগ আনার জন্য আপনাকে রিকোমেন্ড করব পোষ্টটি একদম শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য।
পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার উপায় (০১)
মোবাইল বা ল্যাপটপ দূরে রাখুন
পড়াশোনায় মনোযোগ আনার জন্য যখন আমরা পড়তে বসবো তখন আমাদের প্রথম কাজ হলোো মোবাইলকে চোখের সামনে থেকে দূরে সরিয়ে রাখা আর যদি পসিবল হয় তাহলোে সুইচটা অফ করে রাখুন। তারপর একটা রাইট রুটিন ফলো করে পড়া শুরু করুন।
আর শুরুর প্রথম দিনে পড়ার সময়টাকে অবশ্য একটু কম রাখুন। যেমন ধরুন কুড়ি মিনিট পড়ার পর কুড়ি মিনিট ব্রেক নিন তারপর আবার কুড়ি মিনিট পড়ুন পর আবার পনের মিনিটের ব্রেক, এইভাবে।
এই প্রথম দিনে তিন থেকে চার ঘণ্টা পড়াশোনা করুন যার মধ্যে দুই ঘন্টা আপনার পড়া হবে বাকি সময়টা ব্রেক। তারপরের দিন এই ব্রেক টাইমটাকে আর একটু কমিয়ে দিন।
আসলে আমি এটাই বলতে চাইছি যে আমরা বড় লক্ষ্য অর্জনের টার্গেট অবশ্যই নেব কিন্তু শুরুটা করবো ছোট থেকে অর্থাৎ থিঙ্ক বিগ স্টার্ট স্মল।
আর এভাবেই চলতে থাকলে আমাদের পড়ার প্রতি একটা অভ্যাস তৈরি হয়ে যাবে। আর তার ফলেই আমরা বেশি সময় একটানা পড়তেও পারবো।
পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার উপায় (০২)
পিক কনসান্ট্রেশন টাইম বের করুন
যে আমরা কখন পড়বো আমাদের সবার শরীর ও মস্তিষ্ক পুরোপুরি আলাদা হয়, তাই এক্ষেত্রে আমাদের নিজেকেই বুঝে নিতে হবে যে কখন পড়তে বসলে আমার পড়াতে মন বসবে?
কেউ হয়তো সকালে পড়তে পছন্দ করি, কেউ আবার সন্ধ্যাবেলায়, কেউ আবার গভীর রাতে, তাই আপনাদেরকে নিজেই বুঝে নিতে হবে যে আপনার ঠিক কনসান্ট্রেশন টাইমটা কখন?
আপনারা যখন পড়তে বসার কোন টাইম টেবিল তৈরি করবেন তখন আপনাদের কে পিক কনসান্ট্রেশন টাইমটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার উপায় (০৩)
বিছানা ত্যাগ করুন
ঠিকই শুনেছেন বিছানায় বসে পড়াশোনা করাটা একদমই উচিত নয়।
কারণ এই বিছানায় বসে পড়লে ধীরে ধীরে আমাদের শুয়ে পড়তে ইচ্ছা করে। আর কিছু সময় যাওয়ার পর ক্রমশ আমাদের চোখে ঘুম চলে আসতে থাকে। এই কারণে বিছানায় বসে পড়াশোনা করার থেকে টেবিল-চেয়ারে বসে পড়া অনেক বেশি ইফেক্টিভ।
আবার এই পড়তে বসার পর আমরা সাধারণত কি কি করে থাকি? যেমন ধরুন যখন আমরা পড়তে বসি, তার কিছুক্ষণ পরেই আমাদের মনে পড়ে আরে আমি তো কলম নিয়ে বসিনি, যাই কলমটা নিয়ে আসি, দূর স্কেলটা যে কোথায় গেল কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিনা. নোট বুকটা কোথায় রাখলাম, গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে, একটু জল খেয়ে নিই, আর ঠিক এইভাবেই রুটিন এর বাইরে বারবার টেবিল ছেড়ে উঠে পড়লে পড়ার প্রতি আমাদের কন্সেন্ট্রেশন তো নষ্ট হবেই।
তাই পড়াশোনায় মনোযোগ আনার জন্য বা মনোযোগ ঠিক রাখার জন্য যখন পড়তে বসবেন তখন সব রকম পড়াশোনার সামগ্রিক দেখে নিয়ে তার পর পড়তে বসুন এবার আপনাকে পড়ার টেবিলে উঠতে না হয় ও পড়ার প্রতি আপনার কন্সেন্ট্রেশন ব্যাহত না হয়।
পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার উপায় (০৪)
দুশ্চিন্তা দূরে রাখুন
ইস পরীক্ষার আর মাত্র 7 দিন বাকি! কোন সিলেবাসই তো আমার কমপ্লিট করা হয়নি! এই বছর এ আমি নির্ঘাত ফেল করব! কিভাবে যে আমি পাড়ার লোকের সামনে মুখ দেখাবো! বন্ধুরা তো সবাই পড়াশোনা কত ভালো, আর আমিতো কিছুই জানিনা!
পড়তে বসে আপনার মাথায় যদি এসব কথা গুলি ঘুরতে থাকে, তাহলোে এই ব্যাপারগুলোকে মাথা থেকে একদম সরিয়ে ফেলুন।
পড়ার টেবিলে নিজের মন ও মাথাকে সব সময় ফ্রেশ রাখুন, পড়ার টেবিলে বসে এই ধরনের চিন্তাগুলি আপনার পড়ার সময়টাকে নষ্ট করে দেয়। তাই এই সময়টা নষ্ট না করে যদি সময়টাকে নিজের পড়াশোনায় মনোযোগ আনার কাজে লাগান তাহলোে লাভটা আপনারই হবে।
পড়ায় কন্সেন্ট্রেশন না থাকার একটা অন্যতম কারণ হলোো আমাদের আশেপাশের পরিবেশ।
পড়াশোনায় পাশের বাড়ির হাজবেন্ড ওয়াইফের ঝগড়া, গভীর রাতে পাড়ার কুকুর গুলোর চিৎকার, পাশের রুমে টিভি চলছে, হোস্টেলের রুমমেট তার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ফোনে গল্প করছে, ইত্যাদি। যার একটা ভালো সলিউশান হলোো হোয়াইট নয়েজ।
এটি এমন একটি সাউন্ড যেটা বিভিন্ন রকমের আওয়াজ এর বদলে একটি নির্দিষ্ট আওয়াজের উপরই আপনার ফোকাস রাখতে সাহায্য করবে। আপনার কন্সেন্ট্রেশন বাড়াতে হেল্প করবে।
তাই এরকম পরিস্থিতিতে আপনি হোয়াইট নয়েজ সাউন্ড ডাউনলোড করে নিন কানে হেডফোন লাগান এবং স্টাডি করুন ইউটিউবে সার্চ করলেও অনেক ধরনের হোয়াইট নয়েজ সাউন্ড আপনারা পেয়ে যাবেন।
পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার উপায় (০৫)
গেমোফিকেশন টেকনিক প্রয়োগ করুন
তো এখন আমি আপনাদেরকে এমন একটি টেকনিক বলব আপনাদের পড়ার প্রতি ইন্টারেস্ট কে আরো অনেকগুণ বেশি বৃদ্ধি করবে এবং এটি কার্যকর একটি টেকনিক যার নাম হলোো গেমোফিকেশন।
অর্থ্যাৎ স্টাডিকে গেমে কনভার্ট করা শুনেই ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে তাই না?
এই টেকনিকটিকে আপনাকে স্টাডিকে গেমের মেই আলাদা আলাদা লেভেলের ভাগ করে নিতে হবে তারপর সেগুলোকেই কমপ্লিট করতে হবে।
যেমন ধরুন আপনি ঠিক করলেন যে আজকের দুটি চ্যাপ্টার কমপ্লিট করবেন এটা হলো আপনার গেম এর ফার্স্ট লেভেল। আগামীকাল আরও তিনটি চ্যাপটার কমপ্লিট করবেন এটা হলো সেকেন্ড লেভেল। এভাবে আপনি আপনার সিলেবাসটিকে সহজেই কমপ্লিট করতে পারবেন।
আবার ধরুন আপনি তিনশ পৃষ্ঠার একটি বই পড়ছেন আর আজকে আপনি বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠার সম্পন্ন করলেন তারপর আপনি শেষ করা পৃষ্ঠাটিতে টিক চিহ্ন দিলেন, একইভাবে আপনার লক্ষ্য হবে পুরো বইটিতে প্রত্যক পাতায় টিক চিহ্নযেুক্ত করা এবং পুরো বইয়ে টিক চিহ্ন কমপ্লিট করতে আপনার পুরো বইই পড়তে হচ্ছে। এটাই হলোো গেমিফিকেশন টেকনিক।
আপনি ইচ্ছা করলে আপনার সিলেবাস থেকে বিভিন্ন লেভেলে ভাগ করে নিতে পারেন কিন্তু এখন আপনার মনে হতে পারে যে এটাতো ইন্টারেস্ট কিভাবে আসবে?
তাহলোে একবার ভেবে দেখুন আমরা যখন কোন নতুন গেম ডাউনলোড করে তখন তার সম্পর্কে আমাদের তেমন কোন ধারনায় থাকে না, তাই সেই কারণেই প্রথম অবস্থায় তেমন ইন্টারেস্ট লাগে না।
কিন্তু যখন আমরা গেমটিকে ধীরে ধীরে খেলতে এসে করি তখন আমাদের ওই গেম টার উপর ইন্টারেস্ট বাড়তে শুরু করে এবং গেমটা খেলতে ও আমাদের ভালো লাগে।
এই স্টাডি টেকনিকটাও একই ধরনের তাই প্রথমে ইন্টারেস্ট নাও লাগতে পারে কিন্তু যখন আপনি দেখবেন যে এই টেকনিকের কারনেই আপনি আপনার পুরো সিলেবাস টা কমপ্লিট করে ফেলেছেন তখন এই টেকনিকটার প্রভাব আপনি অবশ্যই বুঝতে পারবেন।
তখন আপনার মনটা খুশিতে ভরে উঠবে আর আমরা গেম খেলি মনকে খুশি করার জন্যই। এই ভাবে খেলার ছলে যদি আপনি আপনার সিলেবাস টা কমপ্লিট করতে থাকেন, তখন পড়াটা কেউ আপনার অনেক বেশি সহজ মনে হতে থাকবে।
আর যখন আপনার কোন লেভেল কমপ্লিট হবে তখন নিজেকে রিওয়ার্ড দিতে পারেন, যেমন ধরুন আপনার আজকের লেভেলটা হলো প্রথম দুই পৃষ্ঠা কমপ্লিট করা আর এই পড়াটা কমপ্লিট হলোে আপনি নিজেকে কোন বেস্ট রিওয়ার্ড দিন। যেমন আপনি যদি চকলেট খেতে ভালোবাসেন তাহলোে আপনার একেকটির লেভেল কমপ্লিট হওয়ার পর নিজেকে চকলেট দিন অথবা মোবাইলে গেম খেলাটা রিওয়ার্ড হিসাবে নিতে পারেন তো যাই হোক সেটা আপনার সম্পূর্ণ পার্সোনাল পছন্দের ব্যাপার।
তাই রিওয়ার্ড দিন আর নেক্সট লেভেল কমপ্লিট করার দিকে এগিয়ে যান তো এভাবেই আপনার পড়ার পর ইন্টারেস্ট আসতে থাকবে আর ইন্টারেস্ট আসার সাথে সাথেই কন্সেন্ট্রেশন লেভেলও বৃদ্ধি পাবে।
প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপর্কে আলেচনার মাধ্যমে ৫টি পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে পারলাম। আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে তাদেরকেও পড়াশোনায় মনোযোগ আনার জন্য ও লাইফের সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করুন। সম্পূর্ণ পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার সময় অনেক অনেক ভালো কাটুক।