Skip to content

মুগের ডালের জাত

মুগের ডালের জাত

বাংলাদেশের সুস্বাদু ডাল ফসলের মধ্যে মুগ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সব জেলাতেই মুগ চাষ হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে বিশেষ করে বরিশাল, ঝালকাঠী, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলায় আমন ধান কাটার পর বিলম্ব রবি মৌসুমে ব্যাপক ভিত্তিতে মুগ ডালের চাষ হয়ে থাকে।

দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের জেলাসমূহে (যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর) এবং উত্তরাঞ্চলের জেলাসমূহের মধ্যে নাটোর, পাবনা ও রাজশাহীতে সরিষা বা অন্যান্য রবিশস্য কাটার পর বপনপূর্ব সেচ দিয়ে ব্যাপক ভিত্তিতে উচ্চ ফলনশীল বারি মুগ-৬ জাতের চাষ হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডাল গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃক মুগ ডালের বেশ কয়েকটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।

নিম্নে মুগের ডালের জাতসমূহের পরিচিত ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো-

(১) বারি মুগ-২ (কান্তি)

জার্মপ্লাজম সংগ্রহের আওতায় সংগৃহীত জার্মপ্লাজম থেকে বারি মুগ-২ বা কান্তি জাতটি বাছাই করা হয়। ১৯৮৭ সালে এ জাতটি কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদন লাভ করে।

বারি মুগ-২ (কান্তি)
বারি মুগ-২ (কান্তি)
  • গাছের উচ্চতা ৪০-৪৫ সেমি।
  • বীজের রং সবুজ। বীজের ত্বক মসৃণ। হাজার বীজের ওজন ৩০-৩২ গ্রাম।
  • বারি মুগের কান্তি জাত দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ এবং রবি মৌসুমে চাষ করা যায়।
  • রান্না হওয়ার সময়কাল ১৫-১৮ মিনিট।
  • আমিষের পরিমাণ ২০-২৪%।
  • জীবনকাল ৬৫-৭০ দিন।
  • ফলন হেক্টরপ্রতি ৯০০-১১০০ কেজি।
  • জাতটি পাতায় দাগ ও হলুদ মোজাইক রোগ সহনশীল।

(২) বারি মুগ-৩ (প্রগতি)

বারি মুগ-৩ বা প্রগতি জাতটি সংকরায়ণের মাধ্যমে উদ্ভাবিত। এ জাতটি ১৯৯৬ সালে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন করা হয়।

See also  ডাল ফসল কি/কাকে বলে? ডাল ফসল কোন মাটিতে ভালো হয়? মসুর ও মুগ ডাল চাষ পদ্ধতি
বারি মুগ-৩
বারি মুগ-৩
  • গাছের উচ্চতা ৫০-৫৫ সেমি।
  • বীজ কিছুটা অমসৃণ এবং সোনালী ও বাদামী বর্ণের। হাজার বীজের ওজন ২৮-২৯ গ্রাম।
  • রান্না হওয়ার সময়কাল ১৪-১৭ মিনিট।
  • জাতটি দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ ও বিলম্ব রবি মৌসুমে আবাদ করা যায়।
  • আমিষের পরিমাণ ১৯-২১%।
  • জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন।
  • ফলন হেক্টরপ্রতি ১০০০-১১০০ কেজি।
  • জাতটি পাতায় দাগ ও হলুদ মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।

(৩) বারি মুগ-৪ (রূপসা)

বারি মুগ-৪ বা রূপসা সংকরায়ণের মাধ্যমে উদ্ভাবিত। এ জাতটি সারা দেশে চাষাবাদের জন্য ১৯৯৬ সালে অনুমোদন লাভ করে। এ জাত দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ ও বিলম্ব রবি মৌসুমে বপন করা যায়। জাতটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।

বারি মুগ-৪
বারি মুগ-৪
  • গাছের উচ্চতা ৫০-৫৫ সেমি।
  • বীজ মসৃণ ও রং সবুজ। হাজার বীজের ওজন ২৮-৩২ গ্রাম।
  • ডাল রান্না হওয়ার সময়কাল ১৫-২০ মিনিট।
  • বারি মুগ-৪ আমিষের পরিমাণ ২১-২৪%।
  • জীবনকাল ৬৫-৭০ দিন।
  • ফলন হেক্টরপ্রতি ১২০০-১৪০০ কেজি।
  • জাতটি পাতায় দাগ ও হলুদ মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।

(৪) বারি মুগ-৫ (তাইওয়ানী)

বারি মুগ-৫ (তাইওয়ানী) জাতটি ১৯৯৭ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে অনুমোদন লাভ করে।

বারি মুগ-৫
বারি মুগ-৫
  • গাছের পাতা, ফল ও বীজ আকারে বেশ বড়।
  • বীজের রং গাঢ় সবুজ। হাজার বীজের ওজন ৪০-৪২ গ্রাম।
  • জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল যে শতকরা ৭০-৮০ ভাগ ফল এক সাথে পাকে।
  • ডাল রান্না হওয়ার সময়কাল ১৭-২০ মিনিট।
  • আমিষের পরিমাণ ২০-২২%।
  • জাতটির জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন।
  • ফলন হেক্টরপ্রতি ১২০০-১৫০০ কেজি।
  • জাতটি পাতায় দাগ ও হলুদ মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।

(৫) বারি মুগ-৬

বাংলাদেশের গম কাটার পর থেকে রোপা আমন ধান রোপণের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় অধিকাংশ জমিই পতিত থাকে। এ সমস্ত জমিকে কাজে লাগানোর জন্য উপযোগী মুগের জাত উদ্ভাবনের লক্ষে ১৯৯৮ সালে AVRDC থেকে মুগডালের অনেকগুলো জাত/লাইন সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে এই লাইনগুলো প্রাথমিক, অগ্রগামী, অঞ্চলভিত্তিক ও বহুস্থানিক পরীক্ষা করা হয়। ২০০৩ সালে ‘বারিমুগ-৬’ জাতটি জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন পায়।

See also  মুগ ডালের চাষ পদ্ধতি
বারি মুগ-৬
বারি মুগ-৬
  • গাছের উচ্চতা ৪০-৪৫ সেমি।
  • একই সময়ে প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ ফল/ শুটি পরিপক্ক হয়।
  • পাতা ও বীজের রং গাঢ় সবুজ এবং পাতা চওড়া। ফুল আসার পরে দৈহিক বৃদ্ধি কম।
  • দানার আকার বড়। প্রতি ১০০ বীজের ওজন ৫.১-৫.২ গ্রাম।
  • গম কাটার পর এপ্রিলের ১ম সপ্তাহ পর্যন্ত বপন করা যায়। এ ছাড়া খরিফ-২ ও বিলম্ব রবি মৌসুমেও বপন করা যায়।
  • হলুদ মোজাইক ভাইরাস এবং পাতায় দাগ রোগ সহনশীল।
  • জীবনকাল ৫৮-৬০ দিন। হেক্টরপ্রতি ফলন ১৫০০-১৬০০ কেজি।

(৬) বারি মুগ-৭

ডাল গবেষণা কেন্দ্রের সংগৃহীত জার্মপ্লাজম/ক্রসিং ম্যাটেরিয়াল হতে (BMX-97024-13) লাইনসহ অনেকগুলো জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে ২০১২ সাল হতে মূল্যায়ন করা হয়।

খরিফ-১ মৌসুমে গম ও আমন ধানের মধ্যবর্তী পতিত জমিকে চাষাবাদের আওতায় এনে ডাল ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে লাইনগুলো ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলে মূল্যায়ন করা হয়। এছাড়াও, খরিফ-২ ও বিলম্ব রবি মৌসুমেও মূল্যায়ন করা হয়।

দীর্ঘদিন পরীক্ষার পর লাইনটি (BMX-97024-13) উচ্চফলনশীল ও রোগ সহনশীল হওয়ায় একটি সম্ভাবনাময় লাইন হিসেবে নির্বাচিত হয় এবং জাত হিসেবে মুক্তায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়। পরবর্তীতে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৫ সালে এই লাইনটি বারি মুগ-৭ হিসেবে অবমুক্ত হয়।

বারি মুগ-৭ এর ফসল ও বারি মুগ-৭ এর দানা
বারি মুগ-৭ এর ফসল ও বারি মুগ-৭ এর দানা
  • গাছের উচ্চতা ৫৫-৬০ সে.মি.।
  • প্রতি গাছে পডের সংখ্য ২৫-৩০ টি।
  • বীজের রং সবুজ ও দানার আকার বড়। প্রতি ১০০০ বীজের ওজন ৪৯-৫১ গ্রাম।
  • পাতায় দাগ ও হলুদ মোজাইক রোগ সহনশীল।
  • সবগুলো ফল প্রায় এক সাথে পাকে।
  • জীবনকাল ৬০-৬২ দিন।
  • ফলন ১৭০০-১৯০০ কেজি/হেক্টর।

(৭) বারি মুগ-৮

প্রস্তাবিত লাইনটি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত জার্মপ্লাজম হতে সংগ্রহ করে ২০১২ সাল হতে মূল্যায়ন করা হয়। খরিফ-১ মৌসুমে গম ও আমন ধানের মধ্যবর্তী পতিত জমিকে চাষাবাদের আওতায় এনে ডাল ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে অনেকগুলো স্বল্পজীবনকালীন লাইন ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলে মূল্যায়ন করা হয়।

See also  ডাল ফসল কি/কাকে বলে? ডাল ফসল কোন মাটিতে ভালো হয়? মসুর ও মুগ ডাল চাষ পদ্ধতি

দীর্ঘদিন পরীক্ষার পর লাইনটি (LM-101) উচ্চফলনশীল ও রোগ সহনশীল হওয়ায় একটি সম্ভাবনাময় লাইন হিসেবে নির্বাচিত হয় এবং জাত হিসেবে মুক্তায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়। পরবর্তীতে এ লাইনটি জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৫ সালে বারি মুগ-৮ হিসেবে অবমুক্ত হয়।

বারি মুগ-৮ এর ফসল ও বারি মুগ-৮ এর দানা
বারি মুগ-৮ এর ফসল ও বারি মুগ-৮ এর দানা
  • গাছের উচ্চতা ৫৫-৬০ সে.মি.।
  • বীজের রং সোনালী ও দানার আকার ছোট।
  • প্রতি ১০০০ বীজের ওজন ৩০-৩২ গ্রাম।
  • সারকোম্পারা ও হলুদ মোজাইক রোগ সহনশীল, সবগুলো ফল প্রায় এক সাথে পাকে।
  • জীবন কাল ৬০-৬২ দিন।
  • দেরিতে বপনযোগ্য।
  • ফলন ১৬০০-১৭০০ কেজি/হেক্টর।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts