নিম্নে ১৩টি ছাত্র ছাত্রীদের জন্য উপদেশ উপস্থাপন ধরা হলো। আশা করি উক্ত উপদেশসমূহ ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায় বা কিভাবে একজন ভালো ছাত্র হওয়া যায়? অর্থ্যাৎ একজন আদর্শ ছাত্র বা ভালো ছাত্র হওয়ার কৌশল হিসেবে ভূমিকা রাখবে-
সত্যি কথা বলতে কী উপদেশ দিয়ে যদি সবক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যেত তাহলে পুরো পৃথিবীটা উপদেশের উপরই নির্ভর করতো।
যেমন আমি তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি অথচ তোমরা সেই উপদেশ মেনে চলছো না-তাহলে বৃথা উপদেশ দিয়ে কী হবে।
তোমাদের মনে রাখতে হবে ভাল উপদেশ কিন্তু পালনীয় আদেশের চেয়েও অনেক বড়। সুতরাং ভাল ছাত্র বা ছাত্রী হওয়ার জন্য যেসব বিষয়গুলো তোমাদের মেনে চলা উচিত সেগুলো নিচে বর্ণিত হলো।
▣ ১। বাড়িতে পড়ার জন্যে একটা আলাদা রুটিন অনুযায়ী পড়াশোনা করবে। এতে করে তোমার মধ্যে একটা নিয়মানুবর্তিতা বা দায়িত্ববোধ জেগে উঠবে। যেটা পরবর্তী জীবনে তোমার জন্য দারুন ফলদায়ক হবে।
▣ ২। শ্রেণীকক্ষে সর্বদা মনোযোগি থাকবে। শ্রেণীশিক্ষকের প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে। মনে রাখবে তোমার সামনে যে শিক্ষকটি দাঁড়িয়ে তোমাকে পড়ার বিষয়গুলো বোঝাচ্ছেন- তিনি তোমার চেয়ে অনেক বেশি জানেন। কারণ, এটাই তাদের সারা বছরের কাজ। একই কাজ তাঁরা বছরের পর বছর ধরে করে আসছেন।
সুতরাং এই বিষয়ে তাঁরা বিশেষভাবে অজ্ঞ। সুতরাং শ্রেণী শিক্ষকদের প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ রাখতে হবে তোমাকে। কোন বিষয় তোমার বোধগম্য না হলে প্রয়োজনে ক্লাশের পরেও তাঁর সাথে যোগাযোগ করে সেগুলোকে বুঝে নিতে সমস্যা নেই। পৃথিবীর এমন কোন শিক্ষক বা শিক্ষিকা নেই— যিনি তাঁর ছাত্র বা ছাত্রীদের এই বিষয়ে সহযোগিতা না করেন।
▣ ৩। বন্ধু বা বান্ধবী নির্বাচনে কখনও ভুল করবে না। মনে রাখবে বন্ধু বা বান্ধবীদের সাথে তোমাকে দিনের বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করতে হবে। একটি ভাল বন্ধুই পারে তোমাকে সঠিক পথে চলার অনুপ্রেরণা যোগাতে একজন ভাল বন্ধুর সাথে তুমি পড়াশোনা সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে পার!
▣ ৪। ছাত্রজীবন হলো নিজেকে গড়ার জীবন! এই জীবনে তুমি নিজেকে যেভাবে তৈরি করবে- পরবর্তী জীবনে সেই ফল পাবে সুতরাং নিজেকে তৈরি করার ক্ষেত্রে কোন অন্যায় কাজের সাথে নিজেকে জড়াবে না।
▣ ৫। সবসময় বখাটে ছেলেদের সঙ্গ ত্যাগ করে চলবে। মেয়েঘটিত কোন বাজে ব্যাপারের সাথে নিজেকে জড়িয়ে আত্মাসত্ চরিত্রকে কলুষিত করবে না।
▣ ৬। নিজের চরিত্র ঠিক রাখার চেষ্টা করতে হবে তোমার নিজেকেই; এটা কেউ করে দিতে পারে না। মনে রাখবে ছাত্রজীবনের সবচাইতে মুল্যবান সম্পদ হলো তার চরিত্র। তুমি যদি চরিত্রবান হও— তাহলে দেখতে পাবে সমাজ ও সংসারে তোমার মূল্য কতো!
▣ ৭। ছাত্রজীবনে যদি তোমার স্খলন ঘটে তবে তার জের টানতে হবে তোমাকে সারাজীবন। তুমি যদি ছাত্রজীবনেই অসৎ পথের দিকে ধাবিত হও— তাহলে পরবর্তী জীবনে পেশার ক্ষেত্রেও তোমাকে সেই অসৎ পথ হাতছানি দিয়ে ডাকবে। এতে করে শুধু তোমার একার ক্ষতি হবে না। পাশাপাশি তোমার পারিবারিক জীবন সহ দেশের ও জাতির জীবনও ধ্বংসের মুখোমুখি হবে!
▣ ৮। আজকালকার সিনেমা থিয়েটার বা নাটকগুলো খুব একটা মানসম্মত নয়। সুতরাং এগুলোর দিকে কখনও নিজেকে ঝুঁকতে দেবে না। যদি একান্তই দেখতে হয়, তাহলে ভাল করে জেনে বা শুনে সেই সিনেমা দেখবে। কখনও খারাপ সিনেমা দেখবে না। নিজের আত্মার উন্নতির পথে এই ধরনের খারাপ সিনেমা খুবই ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
▣ ৯। নিজের ভেতরকার লুক্কায়িত প্রতিভা বা মেধাকে জাগ্রত করার কাজে সর্বদাই নিয়োজিত থাকবে। কারণ, তোমার মধ্যেই লুকিয়ে আছে জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তোমার পরিবার সহ দেশ ও জাতি তোমার দিকেইতাকিয়ে আছে।
▣ ১০৷ প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে বন্ধুদের কোন ধরনের প্ররোচনায় কখনও ধূমপান করবে না! ধূমপান শুধু তোমার স্বাস্থ্যের জন্যে হানিকারক পদার্থই নয়। বরং তোমার চারপাশের পরিবেশের জন্যেও মারাত্মক ক্ষতিকর। ধূমপানের অভ্যাস হয়ে গেলে পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষতিকর নেশার বস্তুর দিকে তোমার মনোযোগ চলে যেতে পারে। এতে করে তোমার ছাত্রজীবনের ইতি ঘটবে ওখানেই।
সুতরাং ধূমপান করে এমন কারুর সাথে তোমার বন্ধুত্ব গড়াও ঠিক নয়। এই ধরনের বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ করবে। এমনকি তোমাদের বাড়িতে বড়রা কেউ ধূমপান করলে তার কুফল সম্পর্কে তাদের সাথে আলোচনা করে তাদেরকেও ধূমপান ত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে তোমাকে।
▣ ১১। ছাত্র রাজনীতি ইদানিং অনেক ছাত্রের কাছেই একটা ফ্যাশনের মতো হয়ে গেছে। রাজনীতি একসময় এই দেশের জন্যে একটা মহান ব্রত হিসেবে কাজ করতো!
এখন আর সেই দিন নেই! অনেক নেতা আছেন যারা ছাত্রদের রাজনীতি করিয়ে ফায়দা লোটার ধান্দা করেন। এইসব রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কখনই যুক্ত হবে না। নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে চাইলে কেউই তোমাকে ভ্রান্ত রাজনীতির সাথে যুক্ত করতে পারবে না। ছাত্রজীবনে রাজনীতি করলে দেশ সেবা করা যায়— এটা একটা ভুল ধারণা।
একটা কথা মনে রাখবে, তুমি যদি ছাত্রজীবনে রাজনীতির সাথে যুক্ত না হয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হও— তাহলে একদিন তুমি এই দেশ পরিচালনার মতো যোগ্য হয়ে উঠতে পারবে।
তুমি যোগ্য ডাক্তার হতে পারবে, ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে, ম্যাজিস্ট্রেট হতে পারবে, অর্থনীতিবিদ হতে পারবে। এগুলোর মাধ্যমে সততার সাথে তুমি দেশ পরিচালনা করতে পারবে। তোমার দেশপ্রেম তখনই তুমি জাগ্রত করতে পারবে। দেশের সেবা করতে পারবে। ছাত্রজীবন শুধু পড়ার সময়! এইসময় তুমি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা কর, তাহলেই ভবিষ্যতে দেশ সেবা করার মতো যোগ্যতা তুমি অর্জন করতে পারবে।
▣ ১২। কখনও অপরিণত প্রেম বা ভালোবাসার হাতছানিতে সাড়া দেবে না! ছাত্রজীবনে প্রেম বা ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হলে তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হয়ে পড়ে। আমি এমন অনেক ভাল ছাত্র বা ছাত্রী দেখেছি প্রেমে পড়ে যারা এই ধরনের প্রেম বা ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে নিজেদের উজ্জজ্ঞল আলোকে উদভাসিত পথ থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে।
▣ ১৩। পরীক্ষার আগের রাতে কখনও বাড়তি টেনশনের বোঝা মস্তিষ্কে চাপাবে না। মনে রাখবে পরীক্ষার আগের রাত শুধু পড়াশোনার রাত নয ৷ এই রাতে তুমি, অতীতে যা পড়েছো, তার রিভিশন দেবে। এই রাতে তুমি যদি আবিষ্কার করো, একটি বিষয় তুমি এখনও পর্যন্ত ছুঁয়েই দেখনি, অথচ সেটা পরীক্ষায় আসতে পারে তাহলে সেই বিষয়টা নিয়ে অযথা হা হুতাশ করবে না।
কোনক্রমেই পরীক্ষার আগের রাতটি যেন তোমার কাছে হতাশায় ভরা রাত না হয়। উক্ত অপঠিত বিষয়টি কয়েকবার স্বাভাবিক বা ঠান্ডা মাথায় পড়ে যাও। তারপর দেখবে পরীক্ষার খাতায় তুমি উক্ত বিষয় নিয়ে বেশ লিখতে পারছ। এটা এররকম মন্দের ভাল। তুমি যদি আগে থেকে গৃহরুটিন মেইনটেইন করে পড়তে— তাহলে এই ঘটনাটি ঘটতো না।