নিম্নে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার উপায়, স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করার উপায়, স্মরণশক্তি বৃদ্ধি ও মেধা বিকাশ, মানুষের স্মৃতিশক্তি উন্নত করার উপায় ইত্যাদির সম্পর্কিত বিষয়ে একটি সুন্দর আলোচনা তুলে ধরা হলো, আশা করি আলোচনাটি আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনেক উপকারে আসবে।
কোনকিছু শুনে বা দেখে হুবহু সেই জিনিসের বর্ণনা দেয়ার অপর নাম হচ্ছে স্মরণশক্তি বা স্মৃতিশক্তি। তবে এই শক্তি কিন্তু খুব সাধারণ কোন শক্তি নয়।
যে মানুষের এই শক্তি বেশি, পৃথিবীতে সে তত বেশি জ্ঞান সঞ্চয় করতে পেরেছে। পরবর্তীতে তার এই স্মৃতিলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়েছে অন্যান্য গঠনমূলক কাজে।
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে স্মরণশক্তি তার পড়াশোনার জন্যে একটি অন্যতম প্রধান শক্তি। ছাত্ৰনং অধ্যয়নং তপঃ কথাটি সত্য প্রমাণের জন্যে স্মরণশক্তির প্রাবল্য একান্তভাবে দরকার। যে ছাত্রের স্মরণশক্তি বেশি, সেই ছাত্র অনায়াসে তার সকল পাঠ নিজের করায়ত্ত করতে পারে সহজে।
এই যে বেশি বা কম স্মরণশক্তি, এটা কিন্তু শুধু সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত নয়।
জন্মের সময় প্রায় প্রতিটি মানুষই প্রায় একরকমের ক্ষমতা বা শক্তি নিয়ে জন্মায়। পরবর্তী জীবনে সেই ক্ষমতাগুলো অনেকের মধ্যে থাকে আবার অনেকের মধ্যে থাকে না। যাদের থাকে, তারাই জয়ী হয়, আর যাদের থাকে না— পরাজিতের খাতায় তাদের নাম লেখা হয়।
এটা ঘটে সম্পূর্ণ অভ্যেসগত কারণে। স্মৃতিশক্তিও এর ব্যতিক্রম নয়।
মানুষের মস্তিষ্ক এক অসাধারণ রহস্যের আধার। কারণ এই মস্তিষ্কের অভ্যন্তরেই রয়েছে তার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার অনন্য শক্তি। মানুষের স্মরণশক্তির প্রধান উপাদান হলো ব্রেন।
এই ব্রেনের অবস্থান তার মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে। এই ব্রেন একদিকে যেমন মানুষের স্মরণশক্তির আধার, অপরদিকে মানুষের যাবতীয় মনো-দৈহিক কার্যক্রম পরিচালনা করে এই ব্রেন।
তোমার ভেতরেও এর ব্যতিক্রম নেই। শুনলে অবাক হবে, পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিশালী কম্পিউটারের চেয়েও লক্ষ লক্ষ গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ব্রেন রয়েছে তোমার মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে।
তুমি নিজেও এই অযুত শক্তির আধার বহন করে চলেছো।
তোমার মত অবিকল একইরকম আরেকজনকে যেমন পৃথিবীতে পাওয়া যাবে না, ঠিক তেমনি তোমার ব্রেনের মতো আর কেউ একইরকম পদার্থ নিয়ে জন্মায়নি। এই হিসেবে তুমি সৃষ্টির আরেক শক্তিশালী অনন্য সৃষ্টি তাই না!
ব্রেন যে উপাদান দিয়ে তৈরি, তার মধ্যে অন্যতম হলো কর্টেক্স নামের একটি কোষীয় উপাদান।
বিজ্ঞানীরা হিসাব করে বের করেছেন, নিউরণ নামের প্রায় চৌদ্দশত কোটি জীবকোষের সমন্বয়ে কর্টেক্স গঠিত হয়ে থাকে। এই নিউরণ দিয়ে গঠিত কর্টেক্স ছাড়া মানুষ চলতে পারে না।
মানুষের বেড়ে ওঠা, জীবনধারণ করা থেকে শুরু করে মানুষকে পরিচালনা করার পেছনে রয়েছে এই কর্টেক্সের গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
মানুষকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্যে এই কর্টেক্সের আবার রয়েছে কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন কেন্দ্র।
আগেই বলেছি মানুষের মস্তিষ্ক হচ্ছে অসীম রহস্যের আধার। এই কারণে আজ অবধি বিজ্ঞানীরা কর্টেক্সের কয়েকটি মাত্র কেন্দ্র আবিষ্কার করতে পেরেছেন। এই সংখ্যাটি এখনও ৩০০ ছাড়াতে পারেনি।
আজ তোমরা ছাত্র-ছাত্রী। লক্ষ্য করেছো নিশ্চয়, তোমাদের আশেপাশের যেসব বন্ধু বা বান্ধবীরা রয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেরই এই শক্তি অর্থাৎ স্মরণশক্তি কমবেশি রয়েছে।
কেউ হয়তো বেশি শক্তির অধিকারী, আবার কেউ কম।
কেউ হয়তো চট করে কোন কিছু মুখস্ত করে ফেলতে পারে, আবার কেউ সহজে কোনকিছু মুখস্ত করতে পারে না।
অবশ্য শুধু তোমাদের ভেতরই যে এই বিষয়টি রয়েছে তাই নয়।
বিশ্বের অন্যান্য মহামনীষীদের জীবনী ঘাঁটলে আমরা দেখতে পাই তাদের মধ্যে অনেকেই স্মৃতিশক্তিতে দুর্বল ছিলেন। যেমন আইনস্টাইন নামের বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী।
তিনি পড়াশোনা শুরুই করেছিলেন নয় বছর বয়স থেকে।
কারণ কি ছিল জানো, কারণ তিনি নাকি ছোটবেলায় স্মৃতিশক্তিতে অত্যন্ত দুর্বল ছিলেন।
এই যে পারা বা না পারা, এটা কিন্তু কোন রোগ নয়। স্মরণশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে নিজের ওপর আস্থার অভাব বা আত্মবিশ্বাসের অভাব।
আমি আগেই বলেছি, মস্তিষ্ক শুধু তোমার স্মরণশক্তির আধারই নয়, সেই সাথে সাথে সে তোমার মনোদৈহিক বিষয়গুলোরও পরিচালক। সুতরাং কারও স্মৃতিশক্তি কম বা কারও বেশি এই বিষয়গুলো খুব একটা চিন্তার বিষয় নয়।
চাইলে যে কেউ এই অমিত শক্তিকে নিজের মধ্যে পূর্ণভাবে জাগ্রত করতে পারে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পড়া মুখস্ত করে যারা তাড়াতাড়ি ভুলে যায় তাদের সকলের মধ্যেই এক ধরনের হতাশা লক্ষ্য করা যায়। তারা মনে করে তাদের দ্বারা আসলে পড়াশোনা হবে না।
একথা সত্যি যে, ছাত্রজীবনে উন্নতির প্রধান সোপান হল উপযুক্ত স্মৃতিশক্তি বা স্মরণশক্তি।
কিন্তু তাই বলে কোন মানুষের মধ্যেই এই উপাদানের কমতি নেই। তোমার মধ্যে তো নয়ই।
তুমি যদি তোমার নিজের দেহের দিকে দৃষ্টি দাও বা তোমার শারীরিক গঠন সম্পর্কে জানতে চাও, তাহলে দেখবে তোমার পুরো শরীরটা পৃথিবীর সবচাইতে আধুনিক চলমান যন্ত্রের মতো।
তোমার শরীরে রয়েছে পাঁচশোর বেশি মাংসপেশী, পঞ্চাশ ট্রিলিয়ন দেহকোষ বা সেল, দুইশোর বেশি হাড়।
এছাড়াও তোমার শরীরের রক্ত সংবহনের জন্যে রয়েছে শিরা ও ধমনী দিয়ে গঠিত প্রায় ষাট মাইলেরও বেশি দীর্ঘ এক চমৎকার পাইপ লাইন। তুমি হয়তো নিজেও জানো না, তোমার মস্তিষ্কের পরিচালনায় হার্ট নামের একটি বস্তু তোমার বুকের মধ্যে থেকে ধুক ধুক করে বিরামহীনভাবে প্রতিদিন দেড়হাজার গ্যালনেরও বেশি রক্ত সরবরাহ করছে তোমার সারা শরীরে।
আর এতেই তুমি থাকতে পারছ সচল আর সুস্থ্য।
এই বিষয়টির অবতারণা করলাম এই জন্য যে, তোমার মস্তিষ্ক শুধু তোমার স্মরণশক্তিরই আধার নয়, বরং তোমার সমস্ত শরীরটাই দেখেশুনে নিরাপদে রাখার এক গুরুদায়িত্ব রয়েছে তার কাঁধে।
যেসব ছাত্র-ছাত্রী নিজেদের স্মরণশক্তির অভাবগ্রস্তে ভোগে, তারা কখনই ভাল ফলাফল অর্জন করতে পারে না। অথচ অনেকক্ষেত্রেই দেখা গেছে, একটি অতি সাধারণ মাত্রার ছাত্র বা ছাত্রী শুধুমাত্র একনিষ্ঠ চেষ্টায় অনায়াসে পরীক্ষায় ভাল ফল লাভ করে সবাইকে চমকে দিয়েছে।
এর প্রধান কারণ কি জানো, এর প্রধান কারণ হলো, আগ্রহ, মনোযোগ, অভিজ্ঞতা আর অভ্যাসকে এক সাথে গেঁথে এগিয়ে যেতে পেরেছে সে। এই কাজটি সে হয়তো করেছে নিজের অজান্তেই কিংবা কারো গাইডলাইন অনুসরণ করে।
কিন্তু বিশ্বাস করো, এটাই আসলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধির একটা গোপন কৌশল।
কোন কিছু মনে রাখার জন্যে কোন প্রতিভাবানই বিশেষ কোন গোপন কৌশল অবলম্বন করে না। সেটার দরকারও নেই।
তোমার ক্লাসের সবচাইতে ভাল ছাত্র বা ছাত্রীর দিকে লক্ষ্য করে দেখ। সে কি তোমার চাইতে বেশি পড়াশোনা করে? কিংবা পড়াশোনায় অন্য কোন কৌশল অবলম্বন করে?
ভাল করে খোঁজ নিয়ে দেখ, এগুলোর কোনটাই নয়। তোমার চাইতে বেশি পড়াশোনা না করেও সে ভাল রেজাল্ট করে। বা অন্য কোন কৌশলও সে অবলম্বন করে না। এর পেছনে কারণ কী?
এর পেছনে প্রধান কারণ হলো তার নিজের প্রতি আস্থা। তার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আর সেই সাথে যোগ হয় গভীর আগ্রহ, মনযোগ আর নিয়মতান্ত্রিক অভ্যাস। এগুলো একসাথে হলে পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করা বা ভাল ছাত্র হওয়া কঠিন কোন বিষয় নয়।
কোন ছাত্র বা ছাত্রী যখন কোন কিছু গভীর মনযোগ দিয়ে অধ্যয়ন করে তখন তার মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের কর্টেক্স নামক উপাদানের কেন্দ্রে বৈদ্যুতিক কম্পনের মাধ্যমে অসংখ্য রেখার সৃষ্টি করে।
কোন কিছু বারবার পঠিত হলে মএই রেখাগুলো অনবরত কাঁপতে থাকে আর নতুন নতুন রেখার সৃষ্টি হয়।
যখনই পড়ার সময় মনযোগের পরিমাণ বা একাগ্রতার ‘পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তখন এই রেখার নতুন করে যেন জন্ম শুরু হয়। একসময় এই রেখাগুলোতে অংকিত হয়ে যায় গভীর মনযোগে পঠিত বিষয় বা বারবার পঠিত বিষয়গুলো।
আর তখনই সেই ছাত্র বা ছাত্রী পরবর্তীতে এই পঠিত বিষয়গুলো হুবহু আবৃত্তি করতে পারে।
এই পদ্ধতিতেই মস্তিষ্কের নিউরনগুলো কর্টেক্সের তাড়নায় অবিরাম ধারায় কাজ করে চলেছে। প্রতিটি মানুষের মস্তিষ্কেই এই একই ঘটনা ঘটে থাকে।
সুতরাং এবার নিশ্চয় পরিষ্কার বুঝতে পেরেছো, কোন মানুষের মধ্যে স্মরণশক্তি কম বা বেশি, এই কারণের সাথে ব্রেনের অভ্যন্তরের বস্তুগুলোর আসলে তেমন কোন হাত নেই।
একটা কথা মনে রাখবে, একসাথে অনেকগুলো পড়া তুমি কিছুতেই মনে রাখতে পারবে না। স্মরণশক্তির সাথে খাদ্যগ্রহণের একটা মিল আছে। তুমি যেমন অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ করতে পার না বা তোমার শরীর তাতে সায় দেয় না। তেমনি অতিরিক্ত কোন বিষয়বস্তু তোমার স্মৃতিশক্তি গ্রহণ করে না। বর্জন করে। অর্থাৎ অতিরিক্ত পড়াশোনাও তোমার স্মরণশক্তিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আনতে পারে।
অনেকসময়ই শোনা যায় পড়তে পড়তে ঐ ছেলে বা মেয়েটা অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেছে।
বিষয়টি সাময়িক হলেও কিন্তু ফেলে দেবার নয়।
এখানে কারণ হিসেবে যা ঘটেছে তা হলো, ঐ ছেলে বা মেয়ে তার মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের স্মরণশক্তির প্রধান উপাদান কর্টেক্সের উপর চাপিয়ে দিয়েছে বিশাল বোঝা। এই বোঝার ভারেই কর্টেক্স হয়ে পড়েছে অস্বাভাবিক।
সে আর নতুন কিছু গ্রহণ করতে অপারগ হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অস্বাভাবিক আচরণ।
তাই বলে এটা ভেব না আমি তোমাদেরকে অতিরিক্ত পড়াশোনা করতে নিষেধ করছি। এটা কিন্তু নয়। তুমি অবশ্যই তোমার পড়াশোনার বিষয়গুলো পড়বে। কিন্তু তাই বলে সারাদিন কিংবা সারারাত বই মুখে গুঁজে পড়ে থাকলে তো চলবে না।
যা কিছু পড়বে, গভীর মনযোগের সাথে পড়বে।
এতে করে তোমাকে বেশি সময় ধরে পড়তে হবে না। একবার শুরু করে দেখ। অচিরেই তুমি ফল পাবে। তবে অবশ্যই তোমাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। অতিরিক্ত পড়াশোনা না করেও তুমি ফল পাবে তোমার আশানুরূপ।
পড়া মনে না রাখতে পারার অনেক অভিযোগ শোনা যায় বিভিন্ন ধরনের ছাত্র-ছাত্রীর মুখে। অনেককেই বলতে শুনেছি, যা পড়ছি কিছুই মনে থাকছে না। আবার অনেকে বলে, ধ্যুৎ আমার দ্বারা পড়াশোনা হবে না। কোনকিছুই আমার মনে থাকছে না।
এদের ক্ষেত্রে যার অভাব রয়েছে, তা হলো, এরা সঠিক নিয়ম মেনে পড়াশোনা মুখস্ত করছে না। নিশ্চয় এদের পাঠ্য বিষয়গুলো অগোছালোভাবে এরা তাদের মস্তিষ্কে ঢোকাতে চেষ্টা করছে। ফলশ্রুতিতে এরা হয়ে পড়ছে হতাশ।
কিন্তু তারা বুঝতে পারছে না সবসময় মুখস্ত বিদ্যায় কাজ হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্য কৌশল অবলম্বন করতে হয়।
এই কৌশলটা হলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে পঠিত বিষয়টুকুকে সাজিয়ে নেয়া।
অনেক সময় বিশেষ করে ইতিহাস পাঠের সময় আমার নিজের ক্ষেত্রেও দেখেছি, তথ্য ঘটনা বা সময়কাল মনে রাখা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে। এইসব ক্ষেত্রে আমি নিজেই একটা উপায় উদ্ভাবন করে নিয়েছি। সেটা হলো, পুরো ঘটনাটাকে গভীর মনোযোগের সাথে মালার মতো গেঁথে ফেলা।
এলোমেলো বা বিশৃঙ্খল বিষয়গুলোকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সাজিয়ে নিয়ে তারপর অধ্যয়ন করা। এইক্ষেত্রে পড়ার আগে বিষয়টা একবার লিখে তারপর পড়লে বিশেষ উপকার হয়। তার প্রমাণ তো আমি নিজেই।
সেটাকে পাঠ করলে অতি সহজেই সেই বিষয়টা তোমার মস্তিষ্কের কর্টেক্স বা নিউরণ অনায়াসে গ্রহণ করবে। কারণ, লিখতে গেলেই উক্ত বিষয়ের অসামঞ্জস্যগুলো তোমার চোখে পড়বে সহজেই। সেই সাথে সাথে বিষয়টা তোমার নিজের করায়ত্ব হয়ে যাবে।
একটা কথা সবসময় তোমাকে মনে রাখতে হবে, স্মরণ বা স্মৃতি মানে হচ্ছে, তোমার মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে সেটাকে ঠিকমতো সাজিয়ে রাখা। তুমি নিজেই যদি তোমার পঠিত বিষয়গুলোকে এলোমেলোভাবে মস্তিষ্কে পাঠাও, তাহলে বেচারা মস্তিষ্কের আর দোষ কি।
সে তো আর জিনিসগুলোকে এলোমেলোভাবে সাজিয়ে নিতে পারে না। তখন সে এগুলোকে বর্জন করার জন্যে ব্যস্ত হয়ে ওঠে।
কিন্তু তুমি যদি উক্ত বিষয়গুলোকে গুছিয়ে দিতে পারতে, তাহলে কিন্তু এমনটি ঘটতো না। অনায়াসেই তোমার মস্তিষ্ক এইসব গোছানো বিষয়গুলো ধারণ করতে পারতো। দীর্ঘদিন তোমার মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের কর্টেক্সের কেন্দ্রের আন্দোলিত রেখায় তা অংকিত হয়ে থাকত। অর্থাৎ তোমার মনে থাকতো বিষয়টা দীর্ঘদিন ধরে।
এই ক্ষেত্রে তোমার সাজানোটা যত সুন্দর হবে, বিষয়টা তত ভালভাবে তোমার মস্তিষ্কের করায়ত্ব হবে।
তবে এইসাথে তোমাকে মনে রাখতে হবে প্রতিটি বিষয়ের সাজানোর কৌশলও কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন।
একই নিয়মে সব বিষয় তুমি সাজাতে পারবে না। তাহলে বিষয়টা বুমেরাং হয়ে যাবে।
ইতিহাসের বিষয়গুলোকে তুমি যেভাবে সাজাবে, অংকের বিষয়গুলোকে সেভাবে সাজাতে পারবে না।
আবার ভূগোলের বিষয়গুলোকে তুমি যেভাবে সাজাবে, রসায়নের বিষয়গুলোকে সেভাবে সাজালে ফল পাবে না। তুমি যদি কোন কবিতা টানা মুখস্ত করার অভ্যাস গড়ে তোল নিজের মধ্যে তাহলে তোমার মস্তিষ্ক কবিতা মুখস্ত করার মতো করেই তার নিউরণে আন্দোলন তুলবে।
সুতরাং তোমার পঠিত বিষয়গুলোকে তোমার মতো করে অর্থাৎ যেভাবে তুমি সহজে বুঝতে পার, সেভাবে সাজিয়ে নিয়ে খাতায় লিখে ফেল, তারপর সেটা মুখস্ত করাব জন্যে মস্তিষ্ককে নির্দেশ দাও অর্থাৎ পাঠ করতে শুরু করো মনযোগের সাথে। তাহলেই তুমি সফল হবে, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি।
স্মরণশক্তি বাড়ার ক্ষেত্রে নিচে কয়েকটি কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো-
আমি আশা করছি, উক্ত কৌশলগুলো নিশ্চয় তোমার উপকারে লাগবে। এগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়, তারপর সেই অনুযায়ী নিজের ওপর প্রয়োগ করে দেখ। আমার আশা, নিশ্চয় তোমার উপকার হবে।
▣ ১। কোন কিছু পড়ার আগে বিশেষ করে যদি সেটা ভিন্ন ভাষার হয় তাহলে সেটার অর্থ বুঝে নাও প্রথমে। তারপর সেটা পড়ো। যেমন তোমাকে যদি কোন ইংরেজি রচনা বা প্যারাগ্রাফ মুখস্ত করতে হয়, তাহলে এই ক্ষেত্রে যদি তুমি ঐ রচনা বা প্যারাগ্রাফের অর্থ আগে থেকে পড়ে নাও, তবে তোমার মস্তিষ্ক বা স্মৃতিকোষগুলো আগে থেকেই বিষয়টা অনুধাবন করার জন্যে প্রস্তুত হয়ে থাকে। এর ফলে পরবর্তীতে অর্থ জানা বিষয়গুলো পাঠ করলে সেটা স্থায়ীভাবে তোমার স্মৃতিতে দাগ কাটতে পারবে অনায়াসে।
সবচেয়ে বড়ো কথা আমরা যেহেতু বাঙালি, সুতরাং বাংলাভাষার বিষয়গুলো সহজেই আমাদের মনে থাকে। সুতরাং তুমি যদি উক্ত বিষয়টির অর্থসহ পড়তে থাক, তাহলে নিশ্চয় উক্ত বিষয়ের বাংলা অর্থটি তোমার স্মৃতিতে স্থায়ী দাগ কাটতে বাধ্য হবে। আর বিষয়টাও তোমার মনে থাকবে দীর্ঘদিন ধরে।
▣ ২। কোন বিষয় সহজে মুখস্ত করার উপায় হচ্ছে, বিষয়টা আগে একবার পড়ে নেয়া। তারপর সেটাকে দেখে দেখে টানা খাতায় লিখে ফেলা। এতে করে বিষয়টা একটা গোছানো অবস্থায় তোমার মনে ধরা দেবে।
পরবর্তীতে যখনই তুমি সেটা পড়বে, বেশ কম সময়ে তোমার স্মৃতিতে সেটা সহজে ধরা দেবে। এতে তুমি দুই ধরনের উপকার পাবে। একদিকে তোমার লেখার অভ্যেস গড়ে উঠবে সুন্দরভাবে।
অপরদিকে লেখা বিষয়গুলো পরবর্তীতে সহজেই তোমার স্মৃতিকেন্দ্র অনুধাবন করতে পারবে। সবচেয়ে বড়ো কথা উক্ত পাঠ্য বিষয়ে যদি কোন অসামঞ্জস্য থাকে, তাহলে সেটা এই সুযোগে গোছানো হয়ে যাবে। আর তোমার স্মৃতিকেন্দ্র সেই গোছানো বিষয়গুলোকে অত্যন্ত সহজে গ্রহণ করতে পারবে।
▣ ৩। যদি পাঠ্যবিষয়টাকে প্রথমে খাতায় লিখে তারপর পড়াটাকে তোমার কাছে বাহুল্য বলে মনে হয়, তাহলে একটি কাজ করতে পার, সেটা হলো, বিষয়টিকে বারবার পড়ো। অন্তত একটি মাঝারি সাইজের প্যারাগ্রাফ মুখস্ত করার জন্যে তোমাকে অন্তত টানা দশবার সেটাকে পড়ে যেতে হবে।
তারপর একটি একটি করে বাক্য পড়ে যাও। এতে করে যদিও তোমার সময় বেশি লাগবে তবুও তোমার উপকার লাগতে পারে। তবে প্রথমে লিখে তারপর পড়লে বিষয়টা সবচাইতে উপকার হবে। কারণ এতে করে তোমার লেখার গতিও বাড়বে।
▣ ৪। অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে দেখা যায় কোন বিষয় কানে শুনলেই সেটা তাদের সহজে স্মৃতিকোঠায় ধরে রাখতে পারে। এতে অবাক হবার কিছু নেই। তুমি নিশ্চয় জানো, সেই ছোটবেলায় তোমার বাবা-মা কিংবা আত্মীয়-স্বজন যে গল্পগুলো তোমাকে বলতেন, এখনও নিশ্চয় সেগুলো তোমার মনে আছে। এর অর্থ হচ্ছে মস্তিষ্ককে বেশি না খাটিয়ে অন্যের মাধ্যমে কোন কিছু মনে রাখা।
এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। তোমার বেলাতেও এটি ফল দিতে পারে।
এইক্ষেত্রে এই কৌশলটি তুমি নিজেও হরয়োগ করতে পার। তবে এইক্ষেত্রে ক্লাশে তোমাকে অধিক মনোযোগী হতে হবে। অর্থাৎ ক্লাশে শিক্ষকরা নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর যখন লেকচার প্রদান করেন, তোমাকে গভীর মনোযোগের সাথে সেটা শুনতে হবে।
তবে এমন কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো শুধু শুনে মনে রাখা কঠিন বিষয় হয়ে পড়ে। যেমন জ্যামিতিক কিছু সূত্র, কিংবা বিজ্ঞানের কিছু নিয়ম বা সূত্র। এগুলো প্রথমে শুন, তারপর সেগুলোকে অধ্যয়নের মাধ্যমেই তোমাকে মনে রাখতে হবে।
▣ ৫। অংক কষতে গেলে অনেককেই দেখা যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা অংকগুলোও কঠিন হয়ে যায় তাদের কাছে। এর অন্যতম কারণ হলো, সেই কাজটিতে বোর হয়ে যাওয়া। এইক্ষেত্রে তোমার করণীয় হচ্ছে, কাজটিতে কিছুক্ষণ বিরতি দেয়া। অংক কষতে গেলে বারবার ভুল হলে সেটায় বিরতি দিয়ে অন্য কিছু নিয়ে অধ্যয়ন করা।
এক বসায় তুমি যদি চিন্তা করো তিরিশটা অংক কষে ফেলবে, তাহলে তোমার সেটা ভুল হবে। কারণ, আগেই বলেছি, শিক্ষাগ্রহণ হলো খাদ্যগ্রহণের নামান্তর মাত্র। শিক্ষা তোমার মস্তিষ্ক ধারণ করে আর খাদ্য ধারণ করে তোমার দেহ। সুতরাং কোন ক্ষেত্রেই যাতে মস্তিষ্কে একবারে বেশি বোঝা চাপানো না হয় সেইদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সবসময় মনে রাখবে অংক জাতীয় বিষয়গুলো কখনও মুখস্ত করার বিষয়ের আওতাভূক্ত নয়। এগুলো শুধু চর্চার বিষয়। সঠিক নিয়ম মেনে এগুলো অভ্যাস করলে অতি সহজেই সেগুলো তোমাদের মস্তিষ্কের আওতায় এসে যাবে।
অনেক সময় দেখা যায় টানা পড়ার মধ্যেও অনেকের মন চলে যায় পড়া থেকে দূরে। বিশেষ করে ভূগোল বা ইতিহাস বিষয়ক কোন বিষয় হলেই এটা ঘটতে দেখা যায়। এটা ছাত্রজীবনের সবচাইতে মারাত্মক অবস্থা। কারণ তোমার মস্তিষ্ক একসাথে দুটো বিষয় কখনও গ্রহণ করবে না।
যে কাজটা তুমি করছো, শুধু সেদিকেই তোমার ধ্যান রাখতে হবে। এর অন্যথা হলে চলবে না। তার মানে যখন তুমি পড়বে, পড়াটা যেন গভীর মনোযোগের সাথে হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে তোমাকে।
অন্যদিকে তোমার মনোযোগ যেতেই পারে। সেটাতে খুব একটা দোষের কিছু নেই। কিন্তু তাই বলে পড়ার সময় শুধু পড়াতেই তোমার যাতে মনোযোগ থাকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে।
পড়ায় নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগে ভাটা পড়লে, প্রয়োজনে পড়ার টেবিল থেকে উঠে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখ, কিংবা চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাক। দেখবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমার ভেতর থেকে এই উচাটন ভাব চলে গেছে। তখন আবার পড়তে বসো। এতে করে আশাকরি তুমি ভাল ফল পাবে।
▣ ৬। কোন বিষয় কিছুতেই মুখস্ত হতে না চাইলে কখনও জোর করে মুখস্ত করতে চেষ্টা করবে না। কারণ আগেই বলেছি, ব্রেনকে জোর করে কিছু করানো যায় না। এতে হিতে বিপরীত হয়ে যায়। এতে করে তোমার পুরো পরিশ্রমটাই পানিতে চলে যেতে পারে।
এইক্ষেত্রে তুমি যে কাজটি করতে পার সেটা হলো, এই বিষয়টিকে অন্য কাউকে দিয়ে পাঠ করাও। সেটা তোমার বড় ভাই কিংবা বোন হতে পারে। অথবা, তোমার নিকটজন কেউ। সে যখন বিষয়টা পড়তে থাকবে, তখন তুমি গভীর মনোযোগ দিয়ে বিষয়টা অনুধাবন করার চেষ্টা কর। এতে করে তোমার স্মৃতিকোঠায় বিষয়টা একবার হালকা ভাবে গেঁথে যাবে। অনেকক্ষেত্রে এই কৌশলে বিষয়টা মুখস্তও হয়ে যায় ভালভাবে।
▣ ৭। তুমি ছাত্র, সুতরাং একটা কথা মনে রাখতে হবে তোমার প্রধান কাজ হচ্ছে পড়াশোনা। সুতরাং যখনই তুমি অবসর পাবে, তখনই পূর্বের পঠিত বিষয়গুলো নিয়ে মনের ভেতর নাড়াচাড়া করতে থাক। এতে করে পুর্বের পঠিত বিষয়গুলো তোমার স্মৃতিকোঠায় আরও গভীরভাবে দাগ কাটতে বাধ্য হবে।
বিশেষ করে রাতে ঘুমোতে যাবার আগে, বিছানায় শুয়ে শুয়েও তুমি এই কাজটি করতে পার। এটাও স্মরণশক্তি বাড়ানোর একটা ভাল কৌশল।
এই কৌশলে বিছানায় শুয়ে তুমি সারাদিনে স্কুলে বা বাড়িতে কি কি বিষয় পড়েছো, সেগুলো আরেকবার রিভিশন দিতে পারবে।
অথবা আগামীকাল ক্লাসে কি কি বিষয় পড়ানো হবে সেই বিষয় নিয়ে ভাবলে পরবর্তী দিন ক্লাসে শিক্ষকের পড়ানো শুনেই তোমার বিষয়টা অনুধাবন করতে সুবিধা হবে। এছাড়া, পরবর্তীতে উক্ত বিষয়গুলো মনোযোগ দিয়ে কয়েকবার পড়লেই তোমার মুখস্ত হয়ে যাবে।
▣ ৮। অনেকেই আছে যারা ইংরেজিতে দুর্বল! সহজ জানা শব্দও উচ্চারণ করতে পারে না। ছোটবেলা থেকেই যদি এদের এই অবস্থা হয় তাহলে বড়ো হয়েও এরা এই আন্তর্জাতিক ভাষাটিকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে না। পরিণতিতে ইংরেজি ভাষাটিই পরবর্তীতে তাদের জন্যে অভিশাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তোমাদের মধ্যে যাদের এই অবস্থা হয়েছে এরা এক কাজ করতে পার। আজকাল অনেকের বাড়িতেই টেলিভিশন আছে। আমাদের দেশে টেলিভিশনে পঠিত বাংলা খবর এবং ইংরেজি খবরের মধ্যে একটা গভীর তাৎপর্য আছে। সেটা হলো, উভয় খবরের বিষয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এক থাকে। এমনকি বাংলায় যেটা উচ্চারণ করা হলো, সেটারই ইংরেজি অনুবাদ ইংরেজি খবরে প্রচারিত হয়।
এই ক্ষেত্রে তোমরা বাংলা খবরটা মনোযোগের সাথে দেখবে, তারপর ইংরেজি খবরের সময় সেই বাংলা খবরের বিষয়গুলো খবর পাঠকের পাঠ করার সময় মিলিয়ে দেখতে চেষ্টা করবে।
প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হবে। কিছুদিন অভ্যাস করে দেখবে, যদি তোমার এই বিষয়ে গভীর মনোযোগ থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই ভাল ফল পাবে।
এতে করে একদিকে শুধু তোমার স্মৃতিতে ইংরেজি শব্দ উচ্চারণের শক্তিই বাড়বে তা নয়, অপরদিকে বাংলা শব্দ বা বাক্যকে ইংরেজি অনুবাদের ক্ষমতাও তোমার মধ্যে বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাভাষায় একটা কথা প্রচলিত আছে, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।
তোমার যদি শরীর বা স্বাস্থ্য ভাল থাকে, তাহলে দেখবে সবকিছুতেই তোমার উৎসাহ আছে। আর যদি শরীর বা স্বাস্থ্য ভাল না থাকে তাহলে কোনকিছুতেই তুমি উৎসাহ পাবে না। আর এতে তোমার ভাল ফলাফল লাভের আশাও তুমি করতে পার না।
পড়তে বসে যদি তোমার মাথা ব্যাথা করে কিংবা পেট ব্যাথা করে তাহলে সেই পড়ায় তোমার মনোযোগ থাকবে না। এমনকি তখন মজার কোন বইও তোমার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবে না।
তোমার শরীর সুস্থ থাকলে অতি কঠিন কোন বিষয়ও পড়তে তোমার ভাল লাগবে। সেই বিষয়ে মন বসবে। একাগ্রতা আসবে। আর তাহলেই ভাল রেজাল্ট করা তোমার জন্যে কঠিন কিছু হবে না।
আমাদের মানবদেহ এক জটিল রহস্যের বেড়াজালে ঘেরা। এ হচ্ছে এক জটিল বিষয়ে আচ্ছাদিত এক অত্যাধুনিক মেশিনের মতো। এই রহস্য একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন।
আমরা মানুষ সবটুকু না বুঝলেও এটা বুঝি-কোন যন্ত্র চালাতে হলে যেমন শক্তি প্রয়োজন, ঠিক তেমনি মানুষের দেহকে চালানোর জন্যেও প্রয়োজন শক্তির। মানুষের দেহে এই শক্তি আসে পরিমিত আহার গ্রহণের মাধ্যমে!
এই আহার বা খাবার তার শরীরে প্রবেশ করে সমস্ত শরীরে এক শক্তির বিকাশ ঘটায়! সেই শক্তিতে মানুষের চলাফেরা, কাজকর্ম, শোনা, বলা বা দেখার ক্ষমতা অর্জন করে।
ছাত্রজীবনে নিজের শরীরটাকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখা একান্ত কর্তব্য। কারণ বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, পড়ালেখা করা ছাত্র-ছাত্রীদের প্রচুর শক্তি পড়াশোনার জন্যে খরচ হয়ে যায়।.
সুতরাং প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর বাড়তি কিছু শক্তির দরকার হয়ে পড়ে। এই বাড়তি শক্তি আসবে কোথা থেকে?
এই বাড়তি শক্তি আনতে হবে তার খাদ্যগ্রহণ প্রনালী এবং পরিমিত মাত্রার শরীরচর্চা থেকে।
একটা কথা তো সবার জানা, কোন চালু যন্ত্রও যদি ঠিকমতো তেল পানি দিয়ে পরিচর্যা করে সচল না রাখা যায় তাহলে সেটা কয়েকদিনের মধ্যেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
সুতরাং মানুষের দূের এক যন্ত্র বিশেষ। এতেও একদিকে যেমন খাদ্য প্রদানের দরকার আছে। অপরদিকে একে সচল আর সুস্থ রাখতে পরিমিত মাত্রার ব্যায়ামেরও দরকার।
তবে একথাও ঠিক, একজন ছাত্র বা ছাত্রীর শরীর যদি অসুস্থ থাকে তাহলে তার মধ্যে যত বাড়তি শক্তির যোগান দেয়া যাক না কেন তাকে পড়ালেখার জন্যে উপযুক্ত বলা যাবে না।
এই কারণে প্রথমে তাকে সুস্থ করতে হবে। সুস্থ থাকতে হবে। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক গতি বজায় রাখার জন্যে তাকে সবল থাকতে হবে। নাহলে তার দ্বারা ভাল ফলাফল আশা করা যায় না।
শরীরটাকে সুস্থ-সবল বা সত্যিকার অর্থে সচল রাখতে হলে খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি পরিমিত মাত্রার ব্যায়ামের একান্ত প্রয়োজন। এই কারণে অনেক ভাল ছাত্র বা ছাত্রী পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যায়ামকেও প্রতিদিনের কাজের একটা অংশ হিসেবে ধরে নিয়েছে।