Skip to content

সন্তানের মন থেকে অকারণ লজ্জা দূর করা কেন জরুরি?

সন্তানের মন থেকে অকারণ লজ্জা দূর করা কেন জরুরি

নিম্নে সন্তানের মন থেকে অকারণ লজ্জা দূর করা কেন জরুরি, বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-

সন্তানের মন থেকে অকারণ লজ্জা দূর করা কেন জরুরি, বিষয়টি নিয়ে একটি আলোচনা

লজ্জা মানুষের একটা অতিরিক্ত গুণ হলেও অকারণ লজ্জা বড়ই বিব্রতকর। এটা একধরনের ভীরুতাযুক্ত অস্বস্তিকর অনুভূতিও বটে। আপনার সন্তানের মধ্যে লজ্জা থাকতে হবে, তবে সেই লজ্জা যদি অকারণ অনুভূতিসম্পন্ন হয়, তবে তাকে দূর করতে হবে আগে।

তৃতীয় বিশ্ব তথা আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত সমাজের শিশুদের মধ্যে এই লজ্জা অহরহ দেখা যায়। তারা সহজে কোন নতুন কিছুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। ফলশ্রুতিতে তাদের মনে একধরনের দ্বিধার কারণে একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুণীন হয় তারা। এই ধরনের লজ্জা বা অস্বস্তি উৎপত্তির কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, অপরিচিত লোকের সংস্পর্শে না আসা অথবা বিভিন্ন সামাজিক বাধ্যবাধকতা ।

আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজে একধরণের কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবেশ সদা বিদ্যমান। এই কুসংস্কারকে আমরা চেষ্টা করেও জয় করতে পারি না। এই কুসংস্কারগুলো আমাদের শিশুমনে গভীরভাবে গ্রোথিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই শিশুরা যখন পরিণত বয়ঙ্ক মানুষ হিসেবে সমাজের দায়ভার গ্রহণ করে– তখন তাদের মধ্যেকার সেই অস্বস্তিকর লজ্জা তাকে নতুন কিছু গ্রহণ করতে বাধা প্রদান করে থাকে।

আপনার সন্তানের উপযুক্ত শিক্ষার ক্ষেত্রে এই অকারণ লজ্জা একটা বড়ো আকারের বাধাও বলা যেতে পারে। এই লজ্জা দূর করার সবচেয়ে সহজ সময় হচ্ছে শিশুকাল। তবে শিশুকালে যদি এই লজ্জা দূর করা সম্ভব না হয়ে থাকে, তাহলে বড়ো অর্থাৎ চার থেকে পীচ বছর বয়স থেকে সন্তানের মনের মধ্যেকার অকারণ লজ্জা দূর করতে হবে। এই লজ্জা দূর করার উপায় হিসেবে আমি নিশ্নে কয়েকটি বিশেষ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো।

সুবিধা হলেই শিশুদেরকে প্রথম বছরের পর হতেই অপরিচিত লোক দেখতে এবং তাদের সানিধ্যে আসতে দেয়া উচিত। আদব-কায়দা সম্বন্ধে বলা চলে, নুন্যতম যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু শেখানো দরকার । প্রথম অবস্থায় শিশু অন্যের কাছে অসহনীয়রূপে বিরক্তিকর না হলেই হলো। শিশুদেরকে অপরিচিত আগন্তকের সামনে ঘরের মধ্যে শান্তভাবে বসিয়ে না রেখে বরং কিছুক্ষণ নিজের ইচ্ছামত থাকতে দিয়ে পরে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া উচিত।

প্রথম দুই বছর শিশুর ছবি, কাদামাটি, যন্ত্রপাতি অথবা অন্য কোন খেলার সরজ্জাম নিয়ে দিনের মধ্যে কিছু সময় নিজের ইচ্ছামত কাটাতে অভ্যাস করানো ভাল। শিশুকে শান্ত হয়ে থাকতে বললে তার এমন কারণ থাকা চাই যা সে বুঝতে পারে। খেলার মত প্রীতিকর অভ্যাসের ভেতর দিয়েই ভদ্র আচরণ শেখানো উচিত। নীরস উপদেশ বা তত্ব হিসেবে প্রয়োগ করলে এতে বিশেষ সুফল পাওয়া যাবে না।

যখনই শিশুর বোঝার ক্ষমতা হবে, সে অনুভব করবে যে তার পিতামাতারও অধিকার আছে। সে অন্যকে কাজে স্বাধীনতা দেবে, নিজেও যথাসাধ্য ভোগ করতে চেষ্টা করবে।

See also  আদর্শ সন্তান গঠনে মা বাবার ভূমিকা কতটুকু গরুত্বপূর্ণ?

শিশুরা সহজেই ন্যায়বিচার উপলব্ধি করতে পারে । অন্যের কাছ থেকে তারা যেরূপ আচরণ পাবে– ঠিক সেইরূপ আচরণ তারা প্রকাশ করতে প্রস্তত থাকবে ।

পদে পদে শিশুদের কখনই দোষ ধরবেন না, অথবা সবসময় ভদ্র আচরণ করতে শিশুকে উপদেশ দেবেন না। এতে করে শিশুর আনন্দময় জীবনে দুঃখ অনুভূত হতে পারে।

আমার বয়স যখন ছয় তখন আত্নীয় সম্পর্কিত অনেক বয়ঙ্ক ব্যক্তি আমার নানা আচরণে দুঃখ প্রকাশ করতো। আমাকে বিভিন্ন ধরনের উপদেশ দিত এবং সেই সাথে কঠিন শাসন করত। তখন আমার মনে হতো এটাই বোধহয় মানুষের সবচাইতে শাস্তির কাজ। আমার জন্যে সেটাই সবচেয়ে উপযোগী ।

বর্তমানে অনেকেই অবশ্য শিশুকে সুকঠিন শাসনের বেড়াজালে আবদ্ধ রাখতে পছন্দ করেন না। এটা খুবই ভাল লক্ষণ।

আমি আগেই বলেছি, শিশু হচ্ছে স্বাধীন মানসিকতাসম্পন্ন একজন মানুষ। তার মধ্যে সবসময় এই ধারণা প্রতিভাত হয় যে, সে যা করবে সেটাই ঠিক। আমি বলছি না, শিশুর সব কাজে বাধা দেবেন না।

আমি বলতে চাইছি শিশুর কাজে বাধা প্রদান না করে তাকে সেই কাজের কুফল সম্পর্কে বোঝানোটাই আসল কাজ। নতুবা তার মনে একধরনের অস্বস্তিকর লজ্জা প্রবেশ করবে। আর সেই লজ্জা কালক্রমে তার মনের মধ্যে এমনভাবে গ্রোথিত হয়ে যায় যে তার ব্যক্তিগত জীবনেও তার প্রভাব পড়ে।

শিশুরা স্বাভাবিকভাবে আশাবাদী। তাদের মন আগামীদিনের স্বপ্ন দেখে, ভবিষ্যতের আশায় উৎসাহিত হয়। এটা শিশুকে কাজে অনুপ্রেরণা দেয়। শিশুর দৃষ্টি যদি পেছন দিকে ফিরিয়ে দেয়া যায়, বলা হয় যে ভবিষ্যৎ অতীতের চেয়ে বেশি দুঃখপূর্ণ তবে তার জীবনের উৎসকেই নিজীব ও দুর্বল করে ফেলা হয়। অথচ শৈশবকাল সুখের সময় এই ধরনের কথা বলে হৃদয়হীন ভাবপ্রবন ব্যক্তিরা শিশুদের জীবন বিষাদময় করে তুলতেন। সৌভাগ্যক্রমে তাদের কথা শিশুদের জীবনে বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।

আমার বয়স যখন আট বছর তখন প্রায় সময়েই আমার মনে হতো বয়ষ্ক ব্যক্তিদের পড়াশুনার চাপ নেই, তারা যা ইচ্ছা তা করতে পারেন। যা ইচ্ছা তা খেতে পারেন। তীরা নিশ্চয় খুব সুখী। একদিন আমিও বড়ো হবো, তখন তাদের মতো করে নিজের জীবনকে পরিচালিত করবো। আমার মধ্যেকার এই বিশ্বাস ও আশাবোধটুকু ছিল একটি সুস্থ মানসিকতার শিশুর মনোভাব। এটা ছিল আমার কাছে একটা স্বাস্থ্যপ্রদ প্রেরণা।

অনেক শিশু সন্তানের মধ্যেই দেখা যায় একধরনের অন্তঃমুখী স্বভাব। এটাও একধরনের অকারণ লজ্জার বহিঃপ্রকাশ। এই ধরনের আচরণের ফলে সে সহজে কারুর সাথে মিশতে পারে না। যেমন তার ক্লাসের ছেলে বা মেয়ের সাথে উপযুক্ত ব্যবহার করতে পারে না। ফলে তার বন্ধুসংখ্যা সীমিত হয়ে যায়। নিজের পড়াশোনার বিষয়েও সে কারুর সাথে আলাপ করতে পারে না। এই ক্ষেত্রে সন্তানের মধ্যেকার এই অন্তঃমূ্থী আচরণকে সহজ ও স্বাভাবিক করতে আপনাকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

See also  সন্তানের মন থেকে ভয় দূর করার উপায় বা শিশুর ভয় দূর করার পদ্ধতিঃ কিভাবে শিশুর মনের ভয় দূর করা যায়?

সন্তান যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করবে তখন তার সহপাঠিদের সাথে কেমন আচরণ করছে সেদিকে খোঁজখবর নেবেন। এমন হতে পারে নিজের অন্তঃমূ্খী আচরণের কারণে সে কারুর সাথে কথা বলে না। নিজের মতো করে ক্লাসে বসে থাকে। এতে করে তার মধ্যে উদ্যমের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তার মন বিষাদাচ্ছন্ন হয়ে পড়তে পারে। নিজের অন্তমুঁখী স্বভাবের কারণে সে ইচ্ছে করলেও নিজের বন্ধু বা বান্ধবীর সংখ্যা বাড়াতে পারে না। ক্লাশের পড়াশোনা তার কাছে নিরানন্দ বিষয় হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এটা কোন সুস্থ বাবা-মায়ের কাম্য হতে পারে না।

এইসব শিশু সন্তানের ক্ষেত্রে বাবা-মাকে হতে হবে বন্ধুভাবাপন্ন। সন্তানের সব বিষয়ে খোজখবর নিয়ে সেগুলোকে হালকাভাবে তার সাথে আলোচনার মাধ্যমে এই অন্তঃমূু্থী আচরণ দূর করা সম্ভব। প্রয়োজনে শিশু সন্তানের সাথে ক্লাশের বন্ধু বা বান্ধবীর ভূমিকায় নিজেকে উপস্থাপন করে বিষয়ের গভীরতা হালকা করতে হবে।

আবার শিশুর মধ্যে অতি বহির্মুখী স্বভাবও কাম্য নয়।

অনেক পরিবারের বাবা-মা নিজেদেরকে শিশুদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখেন।

এটা খুবই খারাপ লক্ষণ। এতে করে দেখা গেছে অনেক শিশুর কাছে বাড়ির পরিবেশ নিরানন্দ আর বিষাদাচ্ছন্ন মনে হওয়ায় তারা ক্রমশঃ বহির্মুখী হয়ে পড়েছে। এমনকি তার পরবর্তী জীবনে বিষয়টা এমন ভাবে গ্রথিত হয়ে পড়ে যে বাড়িতে থাকতে তার ভাল লাগে না। সবসময় বাইরে থাকতে পছন্দ করতে শুরু করে সে। ক্রমে তার এই স্বভাবটি আরও প্রকট হতে দেখা দেয়– যখন সে অন্যান্য বাজে বা বখাটে ছেলে বা মেয়ের সাথে মিশতে শুরু করে।

তাদের জীবনযাপন প্রণালীকে অনুকরণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সুতরাং এইসব ক্ষেত্রে বাবা-মাকে অবশ্যই শিশু সন্তানের কাছে সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, সন্তান হচ্ছে বাবা-মায়ের মধ্যেকার মধুর সম্পর্কের ফসল। সেই সন্তানকে শুধু জন্ম দেওয়াই শেষ কথা নয়। উপযুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িতৃও সমর্থ বাবা-মায়ের।

মেয়েদের ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে, লজ্জা নারীর ভূষণ। কথাটা সবক্ষেত্রে সঠিক নয়। লজ্জা মেয়েদের থাকতে হবে। তবে অতিরিক্ত লজ্জা তার শিক্ষার ক্ষেত্রে একটা বাধার কারণ হয়ে দীড়াতে পারে। তবে একেবারে নির্লজ্জ হবারও কোন দরকার নেই। কারণ, নির্লজ্জ মেয়েদেরকে সমাজে বা সংসারে খুবই বাজে দৃষ্টিতে দেখা হয়, সেটার স্বাভাভিক।

See also  স্ত্রীর কারণে সংসারে অশান্তি কেন হয়? স্ত্রী হিসেবে দাম্পত্য জীবন সুখী করার উপায়

প্রকৃতিগতভাবে মেয়েরা শারীরিক দিক দিয়ে ছেলেদের থেকে পৃথক হয়ে থাকে। একটি দশ বারো বছর বয়সী ছেলে যেমন খালি গায়ে অথবা ছোট একটি নেংটি পরে অনেকের সামনে উপস্থিত হতে পারে– একটি এ বয়সী একটা মেয়ে সেটা কখনই পারে না। কারণ প্রকৃতিগতভাবে তার শারীরিক যে পার্থক্য সেটা অনায়াসে সবার চোখে ধরা পড়ে। এই কারণে মেয়েদের মধ্যে একটা সহজাত লজ্জার প্রয়োজন আছে। সে নিজের শরীরকে পরপুরুষ কিংবা অন্য সবার দৃষ্টির অগোচরে রাখবে। .

আমাদের দেশে অনেক মুসলিম পরিবারের মেয়ে বোরখা পরে। এটা বেশ ভাল লক্ষণ। এতে করে মেয়েদের নিজেদের ওপর একটা গভীর আস্থা জন্মায়। একটা বিষয় নিশ্চয় স্থীকার্য যে, একটা বোরখা পরা মেয়ের প্রতি আমাদের সমাজের সাধারণ লোকের যে আচরণ– একটা অতি আধুনিক পোশাক অর্থাৎ নিজের শরীরের বিশেষ বিশেষ অংশকে প্রকটভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় এমন পোশাক পরা মেয়েদের সাথে আচরণের বেশ পার্থক্য রয়েছে। সেটাই স্বাভাবিক।

মেয়েদের কৈশোর জীবন থেকে শুরু করে পরবর্তী সারাজীবন তাদের শরীরের বিশেষ বিশেষ অংশগুলোকে মানুষের দৃষ্টির বাইরে রাখা প্রতিটি মেয়েদের কর্তব্য। এটাকে কেউ অন্তঃমুঁখী আচরণ বলতে পারবে না।

মধ্যপ্রাচ্যে অর্থাৎ ইসলামী দেশগুলোতে দেখা গেছে মেয়েরা বোরখা পরেও অনায়াসে অসংখ্য পুরুষবেষ্ঠিত সমাজে বিচরণ করছে। তারা স্কুল- কলেজে যাচ্ছে, ভাল রেজাল্ট করছে, এমনকি অনেক যোগ্য পুরুষের পরিচালক হিসেবে অফিসে চাকরি করছে। তারা বোরখা পরে নিজেদেরকে মানুষের চোখের আড়ালে রাখছে ঠিকই কিন্তু তাদের মধ্যে কোন অন্তঃর্মখী স্বভাব নেই। এই কারণে তারা অনায়াসে নিজের যোগ্যতম স্থানটি অধিকার করে নিতে পারছে। আমাদের দেশেও অনেক মেয়ে এখন বোরখা পরে অফিস আদালতে যাচ্ছে। তারাও পুরুষবেষ্ঠিত সমাজে নিজেদের স্থান করে নিতে পেরেছে এবং পারছে। এরা লজ্জাবতী নয় আবার নির্লজ্জও নয়। সুতরাং আপনার সন্তানের মধ্যে এই ধরনের বোধ জাগ্রত করুন।

আপনি যদি শিক্ষক হয়ে থাকেন তবে আপনার রয়েছে এক গুরুদায়িত্ব। আপনার প্রধান কর্তব্য হচ্ছে, আপনার ছাত্র বা ছাত্রী যাতে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য সচেষ্ট হওয়া। সুতরাং ছাত্র বা ছাত্রীকে ঠিক সেভাবেই গড়ে উঠতে সাহায্য করতে হবে।

Leave a Reply

nv-author-image

শাহরিয়ার হোসেন

আমি পেশায় একজন শিক্ষক। লেখালেখি আমার নেশা। তাই আমি প্রতিনিয়ত আমার এই ব্যক্তিগত ব্লগে নতুন কিছু লেখার চেষ্টা করি। আমার শিক্ষা, বিশ্বাস, দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিজ্ঞতা লেখার মাধ্যমে অন্যদের সাথে শেয়ার করি।View Author posts