Skip to content

আকাইদ কি? আকাইদ বলতে কি বুঝায়?

আকাইদ কি, আকাইদ বলতে কি বুঝায়

আলোচ্য বিষয়:

(১) আকিদা শব্দের বহুবচন কি?

আকাইদ শব্দটি আরবি। এটি বহুবচন, এর এক বচন হলো আকিদা।

(২) আকাইদ অর্থ কি?

আকাইদ অর্থ বিশ্বাস, মতাদর্শ, ধর্মমত।

(৩) আকাইদ কি?

ইসলামের যে মৌলিক বিষয়সমূহ রয়েছে এর ওপরে বিশ্বাস স্থাপন করাই হলো আকাইদ বলে। যেমন: আল্লাহ, তার রাসুল আম্বিয়ায়ে কেরাম, ফেরেশতা, আসমানী কিতাব, পরকাল, তকদির ইত্যাদির ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ইত্যাদি।

একজন মুসলিমকে মৌলিক সাতটি বিষয়ে ইমান আনতে হয়-যা আমরা ‘ইমান মুফাসসাল’ নামক কালেমার মাধ্যমে স্বীকৃতি দেই।

(৪) আকাইদ বলতে কি বুঝায়?

শরিয়তের দৃষ্টিতে আকাইদ বলতে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনকে বোঝায়।

ইসলামি আকিদার মূল কথা হলো বিশ্বাস, কর্ম, চিন্তা ও চেতনায় মহান আল্লাহকে সর্বশক্তিমান মেনে নেওয়া এবং শিরক থেকে মুক্ত থাকা।

আকাইদ এর মৌলিক বিষয়সমূহ হলো-

  • এক – আল্লাহর প্রতি ইমান
  • দুই – মালাইকা বা ফেরেশতাগণের প্রতি ইমান 
  • তিন – আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি ইমান 
  • চার – নবি-রাসুলগণের প্রতি ইমান 
  • পাঁচ – আখিরাতের প্রতি ইমান 
  • ছয় – তাকদির (ভাগ্য বা নিয়তি) এর ভালো-মন্দের প্রতি ইমান 
  • সাত – মৃত্যুর পর পুনর্জীবনের প্রতি ইমান

এ ছাড়াও ইসলামি আকিদাহ-এর আরও অনেক ক্ষেত্র বা বিষয় আছে যা আমার পরবর্তীতে আলোচনা করব ইংশাআল্লাহ।

প্রিয় পাঠক, আকাইদ-এর এ মৌলিক সাতটি বিষয়ের মধ্যে এখনে আমরা আল্লাহর প্রতি ইমান, মালাইকা বা ফেরেশতাগণের প্রতি ইমান এবং আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি ইমান—এই তিনটি বিষয় নিয়ে একটু বিশদ আলোচনা করব। তাহলে শুরু করা যাক।

আগে আমরা আল্লাহ তা’আলার পরিচয় ও তাঁর গুণাবলি সম্পর্কে কিছু জানব। মূলত আল্লাহ তা’আলার পরিচয়, তাঁর গুণাবলি এত ব্যাপক যে তার যথার্থ বর্ণনা তুলে ধরার ভাষা ও সামর্থ্য মানুষের নেই।

মহান আল্লাহ বলেন,

“বলুন: আমার পালনকর্তার কথা লেখার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয়, তবে আমার পালনকর্তার কথা শেষ হওয়ার আগেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে। সাহায্যার্থে অনুরূপ আরেকটি সমুদ্র এনে দিলেও।”

(সূরা আল-কাহফ, আয়াত ১০৯)

আর আল্লাহর পরিচয় তাঁর অসংখ্য সৃষ্টি এবং তাঁর দেওয়া অগণিত নিয়ামতের মাঝেই নিহিত। তাই আমরা তাঁর সৃষ্টিরাজি ও নিয়ামত নিয়ে যত বেশি গভীর চিন্তা-ভাবনা ও জ্ঞান অর্জন করব তত বেশি তাঁর পরিচয় ও গুণাবলি সম্পর্কে জানতে পারব।

(৫) আল্লাহ তা’আলার প্রতি ইমান

ক) আল্লাহর পরিচয়

আল্লাহ জগতসমূহের সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালকের সত্তাবাচক নাম। সর্বোচ্চ সম্মান, প্রশংসা ও ইবাদাত পাওয়ার যিনি একমাত্র অধিকারী, তারই নাম আল্লাহ।

আল্লাহ নামের কোনো প্রতিশব্দ, অনুবাদ, সমর্থক শব্দ কিংবা প্রতিনিধিত্বমূলক কোনো শব্দ বা নাম নেই।

ব্যাকরণে আল্লাহ শব্দটি বিশেষ্যপদ। এর কোনো বচন পরিবর্তন নেই, লিঙ্গান্তর নেই। কোনো ভাষায় এর অনুবাদ করাও সম্ভব নয়। পৃথিবীর সকল ভাষাতে এ শব্দটি অভিন্নরূপে ব্যবহৃত।

আল্লাহ শব্দটি কোনো ধাতু থেকে উদ্ভুত নয়। আল্লাহ সর্বদা একবচন, একক, অবিভাজ্য, অদ্বিতীয় এবং অতুলনীয়। আল্লাহ বলতে একমাত্র আল্লাহ তা’আলাকে বোঝায়। এর অন্য কোনো বিকল্প শব্দ নেই।

আরবি ভাষায় আল্লাহ নামকে ‘ইসমে জাত’ বলা হয়। তবে তাঁর অনেক সুন্দর সুন্দর গুণবাচক নাম আছে। আমরা সে সকল নাম ধরেও তাঁকে ডাকতে পারি।

মহান আল্লাহ একক সত্তা। আমরা তাঁর কোনো শরিক নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। তিনি সকল কিছুর উপর সর্বশক্তিমান। তিনি অসীম জ্ঞান ও বিচক্ষণতার অধিকারী। তাঁর সদৃশ কিছুই নেই। তাঁর তুলনা স্বয়ং তিনি নিজেই। আল-কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহর পরিচয়, গুণাবলি ও তাঁর ক্ষমতার বিবরণ বিদ্যমান।

সূরা আল-ইখলাস-এ অতি সংক্ষিপ্তভাবে তাঁর পরিচয় এসেছে এভাবে,

“বলুন, তিনি আল্লাহ এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।”

(সূরা আল-ইখলাস, আয়াত ১-৪)

আল্লাহ ঐ মহান সত্তার নাম, যিনি এ মহা বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ও নিয়ন্ত্রণকারী। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তী স্থানে যা কিছু আছে, তার মালিক তিনিই। তিনি সকল জীবের সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক। তিনিই একমাত্র উপাস্য।

মহান আল্লাহ নিজেই বলেন,

“আমিই আল্লাহ। আমি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। অতএব, তুমি আমার ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণে সালাত কায়েম করো।”

(সূরা ত্বা হা, আয়াত ১৪)

আল্লাহ এমন এক সত্তা যিনি সকল দোষত্রুটি থেকে মুক্ত, আর সকল সৌন্দর্য ও পরিপূর্ণতার আধার। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদর্শী। তিনিই রিযিকদাতা। তিনিই হেদায়াতকারী, বিধানদাতা ও নির্দেশদাতা।

সব শক্তি, মাহাত্ম্য ও সর্বময় কর্তৃত্ব তাঁরই। তিনি সকল শক্তির উৎস ও অধিকারী। তিনি অপরিসীম রহমতের অধিকারী। তিনিই হাকিম বা মহাবিজ্ঞানী। তিনি পরাক্রমশালী, নিরাপত্তা ও শান্তিদাতা। তিনিই অতীব সূক্ষ্মদর্শী, পরম ধৈর্যশীল ও মহান।

এ বিশ্বে যা কিছু আছে সবই একদিন বিলীন হয়ে যাবে কিন্তু তাঁর সত্তা অক্ষয় ও অবিনশ্বর। তিনি অনন্ত ও অসীম। তিনিই ইবাদাত পাওয়ার একমাত্র যোগ্য।

খ) আল্লাহর প্রতি ইমান আনা

ইমানের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান বিষয় হলো, আল্লাহর ওপর ইমান বা বিশ্বাস। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি ছিলেন, তিনি আছেন ও তিনি থাকবেন।

তিনি আমাদের রব, মালিক ও সৃষ্টিকর্তা। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কোনো কিছুই ঘটে না। তিনিই ক্ষমা করার অধিকারী। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।

তিনি চিরঞ্জীব, তিনি অনন্ত। তিনি পরম সুন্দর ও পরম পবিত্র। তাঁকে ক্লান্তি, তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। তিনি কোনো কিছুর উপর নির্ভরশীল নন। সবকিছুই তাঁর উপর নির্ভরশীল।

কোনো কিছুই তাঁর মতো নয়। এ পৃথিবীতে চর্ম চোখে তাঁকে দেখা সম্ভব নয়।

আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে, সবকিছুই তাঁর। প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানের বাইরে কোনো কিছুই নাই। তিনি যাকে যতটুকু ইচ্ছে জ্ঞান দান করেন।

তিনিই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্ব তাঁরই। তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সকল বিষয় পরিচালনা করেন। তাঁর কুরসি আকাশ ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টন করে আছে। সকল কিছুই তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন।

See also  আকাইদ শব্দের অর্থ কি? আকাইদ কাকে বলে?

তিনিই জীবন দেন এবং তিনিই মৃত্যু দেন। আর তাঁরই কাছে সকলকে ফিরে যেতে হবে। তিনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান। যখন তিনি কোনো কিছু করার ইচ্ছা করেন, তখন শুধু বলেন ‘কুন’ (হও) আর অমনি তা হয়ে যায়।

আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা। তিনি আকাশমণ্ডলীর রব, পৃথিবীর রব ও সকল সৃষ্টির রব। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকল শ্রেষ্ঠত্ব, গৌরব ও মহিমা তাঁরই জন্য। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়, সর্বোচ্চ ও সুমহান।

আল্লাহর ওপর ইমান আনার অর্থ হলো, তাঁর অস্তিত্বের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। কোনো সন্দেহ সংশয় ছাড়া এ বিশ্বাস স্থাপন করা যে, তিনি একমাত্র প্রতিপালক (রব), তিনি একমাত্র উপাস্য (মা‘বুদ)। তাঁর অনেক সুন্দর নাম ও সিফাত বা গুণ রয়েছে।

আল্লাহর ওপর ইমান আনার গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় বিষয় নিম্নরূপ।

গ) আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি ইমান আনা

ইসলামি শরিয়তের অসংখ্য দলিল আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করে। মানুষের বিবেক-বুদ্ধিও দ্বিধাহীনভাবে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ সাব্যস্ত করে। প্রতিটি সৃষ্টিই স্বপ্রণোদিতভাবে তার স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসী।

কোনো সৃষ্টিই নিজে নিজেকে অস্তিত্ব দান করতে পারে না। আপনাআপনি কোনো কিছু হয়ে যাওয়া অবাস্তব। অবশ্যই একজন অস্তিত্বদানকারী আছেন। আর তিনি হলেন আল্লাহ।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“তারা কি স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? ”

(সূরা আত-তূর, আয়াত ৩৫)

ঘ) আল্লাহর কর্তৃত্বে বিশ্বাস স্থাপন

এ বিশ্বাসে অটল থাকতে হবে যে, আল্লাহ তা’আলাই একমাত্র রব, একমাত্র প্রতিপালক। এ মহাবিশ্ব পরিচালনায় তাঁর আর কোনো অংশীদার বা সহযোগী নেই।

রব বলা হয় তাঁকেই যিনি সৃষ্টি করেন, পরিচালনা করেন এবং মালিকানা যার জন্য। আল্লাহ ছাড়া আর কোনো স্রষ্টা নেই। আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মালিক নেই। তিনি ছাড়া আর কোনো বিশ্ব পরিচালকও নেই।

তিনিই আল্লাহ যিনি আসমান ও জমিন হতে বান্দার জন্য রিজিক প্রদান করেন। অদৃশ্যের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহরই আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না কেবল যাকে যতটুকু জ্ঞান দেওয়া হয়, সে ততটুকুই জানে।

ঙ) আল্লাহই একমাত্র উপাস্য হওয়ায় বিশ্বাস স্থাপন

মনে-প্রাণে এ কথা বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহই একমাত্র সত্য উপাস্য। তিনি ছাড়া আর কেউ ইবাদাত পাওয়ার উপযুক্ত নয়। উপাসনা প্রাপ্তিতে আর কেউ তাঁর অংশীদার নয়।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই তিনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই, ফেরেশতাগণ এবং জ্ঞানীগণও; (একই সাক্ষ্য দেন) তিনি (আল্লাহ) ন্যায় ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ বা উপাস্য নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”

(সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮)

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল নবি-রাসুলের দাওয়াতের মূল বিষয় ছিল একটিই—‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য উপাস্য নেই অথবা কেউ উপাসনার যোগ্য নেই।’

চ) আল্লাহর সুন্দর নাম ও সিফাতসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপন

আল্লাহ তা’আলার ওপর ইমানের আরও দাবি হচ্ছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর নিজের জন্য তাঁর কিতাবে বা তাঁর রাসুলের সুন্নতে সুন্নাহ্’য় যে সমস্ত উপযুক্ত সুন্দর নাম ও সিফাত সাব্যস্ত করেছেন, সেগুলোকে নিঃসংকোচে মেনে নেওয়া। তাই আমরা আল্লাহর জন্য কেবলমাত্র সেই সব নাম ও সিফাত বা গুণ সাব্যস্ত করব, যা তিনি এবং তাঁর রাসুল (সা.) সাব্যস্ত করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহর যে সমস্ত সিফাত বা গুণ বর্ণিত হয়েছে, আমরা তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

আল্লাহ তা’আলার পরিচয় বর্ণনা করে শেষ করা সম্ভব নয়। তিনি সকল গুণের আধার। এমন কোনো উত্তম গুণ নেই যা তাঁর মাঝে নেই। তিনি যেমন অসীম তেমনি তাঁর গুণাবলিও অসীম। তাঁর প্রতিটি গুণের মহিমাজ্ঞাপক পৃথক পৃথক নাম রয়েছে। এগুলো তাঁর গুণবাচক নাম। আল কুরআনে এগুলোকে ‘আল-আসমাউল হুসনা’ বা সুন্দরতম নামসমূহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ বলেন,

“আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। কাজেই তোমরা তাঁকে সে নাম ধরেই ডাকো।”

(সূরা আল- আ’রাফ, আয়াত ১৮০)

আমরা আল্লাহর নামের মহিমা, পবিত্রতা ও প্রশংসাজ্ঞাপক নিরানব্বইটি আসমাউল হুসনা বা গুণবাচক নামের কথা জানি। আসলে আল্লাহর গুণবাচক নামের কোনো শেষ নেই। তবে তাঁর এ নিরানব্বইটি নাম বেশি প্রসিদ্ধ। আল-কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তাঁর এসব পবিত্র নামের উল্লেখ রয়েছে। এসব নাম থেকে আমরা তাঁর পরিচয় ও গুণাবলি সম্পর্কে জানতে পারি।

নিচে কয়েকটি গুণবাচক নাম সম্পর্কে কিছুটা বিস্তারিত জানব। তাহলে শুরু করা যাক-

i) আল্লাহু খালিকুন

খালিকুন অর্থ সৃষ্টিকর্তা। আল্লাহ সমস্ত মাখলুকের সৃষ্টিকর্তা। এ জন্য তিনি আল খালিক নাম ধারণ করেন। এ নামটি খালকুন ধাতু হতে উদ্ভুত, যার অর্থ উৎপাদন করা, তৈরি করা, সৃষ্টি করা।

খালিক তিনি, যিনি কোনো পূর্ব নমুনা ব্যতিরেকে যখন ইচ্ছা সৃষ্টি করতে পারেন। এ অর্থেই আল্লাহ খালিক। আল্লাহর গুণাবলির মধ্যে সৃষ্টিগুণ থাকা এক বিশেষ রহস্য। তিনিই অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব দেন বা সৃষ্টি করেন। এ ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই।

আমাদের জীবনসহ আমরা আমাদের চারিদিকে তাকালে যেসব সৃষ্টি দেখতে পাই এগুলো তাঁর খালিক নামের মহিমার ফসল। আল্লাহর সকল সৃষ্টি অতি সুন্দর ও সুনিপুণ। তাঁর সৃষ্টিতে কোনো খুঁত বা ত্রুটি নেই। তাঁর সৃষ্টিজীবের মধ্যে মানুষকে তিনি সুন্দরতম অবয়বে সৃষ্টি করেছেন।

মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে আল্লাহ বলেন,

“যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দরভাবে সৃজন করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।”

(সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত ৭)

জীবের সৃষ্টি উপাদান ও মহান আল্লাহর সৃষ্টির সক্ষমতা প্রসঙ্গে আল-কুরআনে আরও বলা হয়েছে,

“আল্লাহ প্রত্যেক জীবকে পানি হতে সৃষ্টি করেছেন। তাদের কতক পেটে ভর দিয়ে চলে, কতক দুই পায়ে ভর দিয়ে চলে এবং কতক চার পায়ে ভর দিয়ে চলে; আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম। ”

(সূরা আন-নূর, আয়াত ৪৫)

আমরা মহান আল্লাহর খালিক নামের এসব তাৎপর্য উপলব্ধি করে তাঁকে এ নামে ডাকব এবং বিশ্বাস রাখব যে, কেবল আল্লাহই খালিক। তিনি যখন যা ইচ্ছা সৃষ্টি করতে পারেন। জীবনের ন্যায় মৃত্যুরও স্রষ্টা তিনিই।

ii) আল্লাহু মালিকুন

মহান আল্লাহর আরেকটি সুন্দর নাম আল-মালিক। মালিক অর্থ অধিপতি, স্বত্বাধিকারী, সর্বাধিকারী, রাজাধিরাজ, বাদশাহ ইত্যাদি। এটি আল্লাহর এমন একটি গুণবাচক নাম যার মাঝে আসমাউল হুসনার অন্যান্য অনেক নামের মাহাত্ম্য বিদ্যমান।

এই যে বিশাল পৃথিবী, যেখানে আছে নদীনালা, সাগর, মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত। আরও আছে জানা- অজানা ছোট-বড় অসংখ্য জীবজন্তু,পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ, গাছ-গাছালি, ফুল, ফল, ফসল এবং আরও কত কী। আমাদের মাথার ওপর অনন্ত আকাশে আছে চন্দ্র, সূর্য, অগণিত গ্রহ-উপগ্রহ ও নক্ষত্র। আকারে এ নক্ষত্রগুলো আবার পৃথিবীর চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ বড়। আরও আছে আমাদের অজানা কত রহস্য জগত। বিশাল সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা, পরিচালক ও একচ্ছত্র মালিক একমাত্র আল্লাহ। সব কিছু তাঁর নির্দেশে পরিচালিত হয়।

মহান আল্লাহ বলেন,

“নভোমণ্ডল ও ভুমণ্ডল এবং এতোদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে, সবকিছুর উপর আল্লাহ তা’আলার আধিপত্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। আর আল্লাহ সবকিছুর উপর মহাশক্তিমান।”

(সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত ১৭)

তিনিই আদেশদাতা ও নিষেধকারী। তিনিই আমাদের এবং সকল জীবের জীবনের মালিক। তিনিই মৃত্যু, কিয়ামত, আখিরাত, বিচার দিবস, জান্নাত ও জাহান্নামের মালিক। সব কিছু তাঁর কাছেই আত্মসমর্পন করে। এককথায়, তিনিই সব কিছুর মালিক।

See also  আকাইদ শব্দের অর্থ কি? আকাইদ কাকে বলে?

আল্লাহু মালিকুন-এ কথার তাৎপর্য উপলব্ধি করে আমরা আল্লাহকে এ নামে ডাকব। তাহলে আল্লাহর ওপর আমাদের ইমান আরো দৃঢ় হবে। সকল সম্পদ ও ক্ষমতার মালিক যেহেতু মহান আল্লাহ, তাই দুনিয়াতে আমরা এসব নিয়ে কখনোই বড়াই করব না। বরং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব।

iii) আল্লাহু গাফুরুন

গাফুরুন শব্দের অর্থ হলো ক্ষমাশীল, অত্যন্ত ক্ষমাকারী, পরম ক্ষমাশীল ইত্যাদি। তাই ‘আল্লাহু গাফুরুন’ কথাটির অর্থ হলো, আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল। আল-গাফুর আল্লাহ তা’আলার একটি পবিত্র নাম। এ নামের বরকতে তিনি পাপীর পাপ মোচন করে দেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“যিনি পাপ ক্ষমাকারী, তওবা কবুলকারী এবং কঠোর শাস্তিদাতা ও শক্তিশালী।”

(সূরা মু’মিন, আয়াত ৩)

নিঃসন্দেহে আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল। সব কিছুর মালিক হিসেবে তিনি আমাদের গুনাহসমূহ মাফ করারও মালিক। তিনি ছাড়া আমাদের গুনাহ মাফ করার আর কেউ নেই। পাপীর ক্ষমা চাওয়ার কারণে আল্লাহ তা’আলা তাদের পাপসমূহ এমনভাবে ক্ষমা করে দেন যে তা আমলনামা থেকে মুছে যায়। গাফুর অর্থ মোচনকারী।

মহান আল্লাহ বলেন,

“হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো অত্যন্ত ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু।”

(সূরা আয-যুমার, আয়াত ৫৩)

মহান আল্লাহ এমন মহা ক্ষমাশীল যে, বান্দার পাপরাশি যত বেশিই হোক না কেন, বা তা যত বড়ই হোক না কেন, তাঁর ক্ষমার সামনে তা অতি সামান্যই।

মানুষ যদি ভুলবশত কোনো অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করে ফেলে, কিংবা পাপ করে নিজেদের প্রতি যুলুম করে বসে, তবে যদি সাথে সাথে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে তিনি তাদের ক্ষমা করে দেন।

এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“তোমাদের প্রতিপালক দয়া করাকে তার নিজের কর্তব্য বলে লিখে নিয়েছেন। তোমাদের মধ্যে কেউ অজ্ঞতাবশত যদি কোনো মন্দ কাজ করে, অতঃপর তওবা করে এবং সৎ হয়ে যায়, তবে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ”

(সূরা আল- আন‘আম, আয়াত ৫৪)

আমরা আল্লাহর আল-গাফুর নামের ওয়াছিলা দিয়ে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইব। আমাদের প্রিয়নবি (সা.)-যাঁর কোনো গুনাহ ছিল না, তদুপরি তিনি আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাইতেন। ক্ষমা প্রার্থনাকারী ও তাওবাকারীদের আল্লাহ ভালোবাসেন এবং পাপ না থাকলে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।

iv) আল্লাহু খাবিরুন

খাবিরুন অর্থ সর্বজ্ঞাত, সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত ইত্যাদি। আল্লাহু খাবিরুন অর্থ আল্লাহ সম্যক অবহিত বা সৰ্বজ্ঞাত। আল-খাবির মহান আল্লাহ তা’আলার একটি নাম। এ নামটি আল-আলীম, আস-সামী‘উ, আল বাসীর, আল কাদীর ইত্যাদি নামের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আল্লাহ সব কিছুর খবর রাখেন।

মহান আল্লাহ বলেন,

“নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সমস্ত খবর রাখেন।”

(সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত ১৩)

মহান আল্লাহ সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। তিনি সবকিছু জানেন। তাঁর জ্ঞানে সব কিছু বেষ্টন করে রাখা। তাঁর জ্ঞান থেকে কোনো স্থান, কাল-কোনো কিছুই বাদ পড়ে না।

আসমান জমিন এবং এতোদুভয়ের মাঝে যেখানে যা কিছুই ঘটে না কেন, কিছুই তাঁর অজ্ঞাতে ঘটে না। তাঁর জ্ঞান সর্বব্যাপী। এমনকি সরিষার কণা পরিমাণও যদি কোনো বস্তু পাথরের ভেতর বা আকাশে কিংবা ভূগর্ভে থাকে, তবে তিনি তারও খবর রাখেন।

তিনি সবকিছু দেখেন ও শোনেন। দৃশ্য ও অদৃশ্য, প্রকাশ্য ও গোপনীয়, স্পষ্ট ও অস্পষ্ট সব কিছুই জানেন। ছোট-বড় কোনো কিছুই তাঁর দৃষ্টির বাইরে থাকে না এবং তিনি কোনো কিছুই ভুলে যান না। সব কিছু সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন।

আমরা সব সময় মনে রাখব যে, আল্লাহ তা’আলা আমাদের ভালো-মন্দ সকল কাজকর্ম সম্পর্কে সম্যক অবগত। তাই আল্লাহকে ভয় করে আমরা সকল প্রকার অন্যায় ও পাপকাজ থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখব এবং ভালো কাজসমূহ করব।

সর্বোপরি, আল্লাহ তা‘আলা যেমন মহান, তাঁর নামগুলোও তেমনি মহান, অতি পবিত্র ও গৌরবান্বিত। আমরা তাঁকে আল্লাহ, রহমান কিংবা তাঁর অন্যান্য গুণবাচক নামেও ডাকব।

(৬) মালাইকা বা ফেরশতাগণের প্রতি ইমান

ক) মালাইকা বা ফেরেশতাগণের পরিচয়

‘মালাইকা’ শব্দটি আরবি। এটি বহুবচন। এর একবচন মালাক। বাংলা ভাষায় এর অর্থ হিসেবে ফেরেশতা কথাটি ব্যবহৃত হয়; এটি মূলত ফার্সি ভাষার শব্দ।

  • ফেরেশতাগণ আল্লাহর আজ্ঞাবহ জ্যোতির্ময় সত্তা।
  • তাঁরা আল্লাহর বার্তাবাহক।
  • তাঁরা আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম এক বিস্ময়কর সৃষ্টি।
  • তাঁরা নিষ্পাপ ও পূত-পবিত্র।
  • তাঁরা সর্বদা আল্লাহর তাসবিহ ও ইবাদাতে মগ্ন থাকেন।
  • তাঁরা আমাদের প্রিয়নবির প্রতিও দরুদ ও সালাম পাঠ করতে থাকেন।
  • তাঁরা মহান আল্লাহর মহাসাম্রাজ্যের কর্মীবাহিনী।
  • তাঁরা নূরের তৈরি।
  • তাঁদের মধ্যে স্ত্রী-পুরুষ ভেদ নেই।
  • তাঁদের পানাহার, নিদ্রা ও বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না।
  • তাঁদের সংখ্যা অগণিত।
  • একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ তাঁদের প্রকৃত সংখ্যা জানেন না।
  • তাঁদের কোনো নিজস্ব মত ও কর্মসূচি নেই।
  • মানব চোখের অন্তরালে তাঁরা অবস্থান করেন।
  • তাঁরা সর্বদা আল্লাহর আদেশ পালনে নিয়োজিত আছেন।
  • আল্লাহর আদেশের বাইরে তাঁরা কিছুই করতে পারেন না।
  • মহান আল্লাহ যাকে যে কাজে নিয়োজিত করেন, তিনি সে কাজেই নিয়োজিত থাকেন।
  • কাজের ক্ষেত্রে তাঁরা ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হন না।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয় তাই করে।

(সূরা আত-তাহরিম, আয়াত ৬)

খ) ফেরেশতাগণের গঠন ও আকৃতি

আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাগণকে বিশেষ আকৃতিতে নূরের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ তা’আলা যখন যে রূপ ধারণ করতে বলেন তাঁরা তখন সেই রূপই ধারণ করেন।

কুরআন মাজিদে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমান ও যমিনের স্রষ্টা এবং ফেরেশতাগণকে করেছেন বার্তাবাহক। তারা দুই দুই, তিন তিন ও চার চার পাখাবিশিষ্ট।”

(সূরা আল-ফাতির, আয়াত ১)

গ) প্রধান চার ফেরেশতা

ফেরেশতাগণের মধ্যে চারজন প্রধান ফেরেশতা আছেন। তাঁরা মহান আল্লাহর আদেশে বিশেষ বিশেষ কাজে নিয়োজিত আছেন।

ফেরেশতা চারজন হলেন-

i) জিবরাঈল (আঃ)

তাঁকে সকল ফেরেশতাগণের সরদার বলা হয়। তাঁর প্রধান দায়িত্ব হলো আল্লাহ তা’আলার বাণীসমূহ নবি-রাসুলগণের নিকট পৌঁছে দেওয়া। তিনিই পবিত্র বাণী নিয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে মহানবির (সা.)- এর কাছে আসতেন। এ ছাড়া তিনি অন্যান্য কর্তব্যরত ফেরেশতাগণের নিকট বিভিন্ন সময়ে আল্লাহর দেওয়া নির্দেশ পৌঁছিয়ে দেন।

ii) মিকাঈল (আঃ)

তাঁর দায়িত্ব হচ্ছে বৃষ্টি বর্ষণ, উদ্ভিদ উৎপাদন ও সকল জীবের জীবিকা বণ্টন। এ ছাড়া বজ্রপাত ঘটানোর কাজও মিকাঈল (আঃ)-এর দায়িত্বে।

See also  আকাইদ শব্দের অর্থ কি? আকাইদ কাকে বলে?

iii) ইসরাফিল (আঃ)

তাঁর দায়িত্ব মহান আল্লাহর নির্দেশক্রমে কিয়ামতের দিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া। ইসরাফিল (আঃ)-এর শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিয়ামত সংঘটিত হবে।

iv) আজরাঈল (আঃ)

যিনি মালাকুল মওত নামেও পরিচিত। মহান আল্লাহ পাকের আদেশে প্রাণিকুলের জান কবজের কাজে তিনি নিয়োজিত।

এ ছাড়াও কিছু ফেরেশতা মানুষের আমলনামা সংরক্ষণ করেন। তাঁদের বলা হয় কিরামান কাতিবিন।

কিছু ফেরেশতা মানুষকে জাগ্রত অবস্থায়, নিদ্রায়, সফরে, বাড়িতে সর্বত্র সব সময় হেফাজত করেন। তাঁদের বলা হয় ‘মুয়াক্কিবাত’।

কিছু আছেন জান্নাত-জাহান্নামের পাহারায়। উল্লেখ্য যে, জান্নাতের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতার নাম ‘রেদওয়ান’। আর জাহান্নামের রক্ষণাবেক্ষণকারী ফেরেশতার নাম ‘মালেক’।

কতিপয় ফেরেশতা নিয়োজিত আছেন আল্লাহর আরশ বহনের দায়িত্বে।

একদল ফেরেশতা আছেন যাঁরা আল্লাহর জিকিরের মজলিসে মজলিসে ঘুরে বেড়ান।

কিছু ফেরেশতা পাহাড়ের হেফাজতে আছেন।

কিছু ফেরেশতা আল্লাহর সম্মানে সারাক্ষণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

এভাবে আরও অসংখ্য অগণিত ফেরেশতা আল্লাহর হুকুমে বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত আছেন।

ঘ) ফেরেশতাগণের প্রতি ইমান

  • মহান আল্লাহ ফেরেশতাগণের মাধ্যমে তাঁর জগতসমূহ পরিচালনা করেন। তাদেরকে যা আদেশ করেন তারা তা-ই পালন করেন।
  • মানুষের মধ্যে বাধ্যতা ও অবাধ্যতা দুটি প্রবৃত্তিই রয়েছে। কিন্তু ফেরেশতাগণের মধ্যে অবাধ্যতার প্রবৃত্তি নেই। তাঁদেরকে সৃষ্টিগতভাবেই আল্লাহর অনুগত করা হয়েছে।
  • আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টি ফেরেশতাগণের ওপর বিশ্বাস রাখা ইমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেউ যদি ফেরেশতাগণের প্রতি ইমান না রাখে তাহলে সে ইমানদার থাকে না।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“যে আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসুলগণের ওপর বিশ্বাস রাখবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহুদূরে গিয়ে পড়বে।”

(সূরা আন-নিসা, আয়াত ১৩৬)

ফেরেশতাগণের প্রতি ইমান আনা ফরয বা অত্যাবশ্যক। তাই আমরা মহান আল্লাহর ফেরেশতাগণের প্রতি ইমান আনব এবং তাঁদের প্রতি যথাযথ ভালোবাসা পোষণ করব।

(৭) আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি ইমান

ক) আল্লাহর কিতাব

যুগে যুগে আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির পথ প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নবি-রাসুলগণের ওপর অনেক কিতাব নাযিল করেছেন। নবি-রাসুলগণ আল্লাহ তা’আলার নিকট থেকে যেসব কিতাব বা গ্রন্থ লাভ করেছেন সেসব ধর্মগ্রন্থই আল্লাহর কিতাব। এগুলোকে আসমানি কিতাবও বলা হয়।

মহান আল্লাহ হযরত জিবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে তাঁর বাণীসমূহ নবি-রাসুলগণের নিকট প্রেরণ করেছেন। অতঃপর নবি-রাসুলগণ তা সকল মানুষের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত নাজিলকৃত সব আসমানি কিতাবের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ইমানের অঙ্গ।

খ) কিতাবসমূহের প্রতি ইমান আনার অর্থ ও তাৎপর্য

মানব জাতির জন্য হিদায়াত ও আলোকবর্তিকা হিসেবে সত্য ধর্ম নিয়ে সকল আসমানি কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। এগুলো আল্লাহর কালাম বা বাণী। এ বাণীসমূহ আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত জিবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে রাসুলগণের নিকট অবতীর্ণ হয়েছে।

কিতাবসমূহের প্রতি ইমান আনার অর্থ হলো—যুগে যুগে বিভিন্ন জাতির হেদায়েতের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যে কিতাবসমূহ অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলোকে সত্য বলে মুখে স্বীকার ও অন্তরে বিশ্বাস করা।

আমরা জেনেছি, নবি ও রাসুলদের (আঃ) মধ্য থেকে সকল রাসুল (আঃ) আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে কিতাব পেয়েছেন। কিন্তু কিতাবপ্রাপ্ত সকল রাসুলের নাম এবং তাঁদের কিতাব সম্পর্কে বর্ণনা কুরআন-হাদিসে উল্লেখ নেই।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ আমাদের প্রিয় রাসুল (সা.) কে উদ্দেশ্য করে বলেন,

“আমি আপনার পূর্বে অনেক রাসুল প্রেরণ করেছি, তাদের কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করেছি এবং কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করিনি।”

(সূরা গাফির, আয়াত ৭৮)

তাই আল্লাহর কিতাবসমূহের মধ্যে যেগুলোর নাম আমরা জানি, সেগুলোর প্রতি যেমন ইমান আনতে হবে তেমনি নাম না জানা আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতিও ইমান আনতে হবে। এক কথায়, সকল আসমানি কিতাবের ওপর ইমান আনা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয বা অবশ্য কর্তব্য।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,

হে মু’মিনগণ! তোমরা ইমান আনো আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রাসুলের প্রতি, আর সেই কিতাবের প্রতি যা তিনি নাযিল করেছেন তাঁর রাসুলের উপর এবং ঐ কিতাবের প্রতিও যা তিনি নাযিল করেছেন তার পূর্বে। আর যে কুফরি করবে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসুলগণের প্রতি এবং পরকালের প্রতি, সে তো ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে।

(সূরা আন নিসা, আয়াত ১৩৬)

আমরা শেষ নবি ও রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর উম্মাত। তাঁর উপর অবতীর্ণ কিতাবের নাম আল-কুরআন। আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি আমাদের ইমান যথার্থ হওয়ার জন্য আমাদেরকে পূর্বের সকল নবি-রাসুলের উপর অবতীর্ণ কিতাবসমূহকে সত্য বলে স্বীকার ও বিশ্বাস করতে হবে; আর আল কুরআনকে সত্য বলে মুখে স্বীকার ও অন্তরে বিশ্বাস করে এ কুরআনে বর্ণিত সকল বিধি-বিধান মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

আল কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে পূর্বের সকল আসমানি কিতাব এবং তার বিধান রহিত হয়েছে। তাই পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবসমুহতে কেবল বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে কিন্তু সেসব কিতাবের বিধি-বিধানসমূহ আমাদের পালন বা বাস্তবায়ন করতে হবে না। কিয়ামত পর্যন্ত সকলের জন্য কেবল আল কুরআন অনুসরণ ফরয।

আরও উল্লেখ্য যে, পূর্বের সকল কিতাব সত্য কিন্তু যুগে যুগে এগুলোতে মারাত্মক বিকৃতি ঘটেছে। কিন্তু আল কুরআন যাবতীয় বিকৃতি থেকে মুক্ত ও সুরক্ষিত। কারণ, এর সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা নিজে নিয়েছেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্য আমিই এর সংরক্ষক।

(সূরা আল-হিজর, আয়াত ৯)

গ) কিতাবসমূহের পরিচিতি

আল-কুরআনে কেবল ৪ খানা প্রধান কিতাব এবং ২৫ জন নবি-রাসুলের নাম ও প্রসঙ্গ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। এ ছাড়া আল কুরআনে হযরত ইবরাহীম ও হযরত মুসা আলাইহিস সালামের প্রতি কতিপয় ‘সহিফা’ (পুস্তিকা বা ছোট কিতাব) নাজিলের এবং যুগে যুগে অন্যান্য রাসুলগণের (আঃ) উপর আরও অনেক সহিফা নাজিলের কথা উল্লেখ আছে।

যেমন, আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“নিশ্চয়ই এটি রয়েছে পূর্ববর্তী সহিফাসমূহে; ইব্রাহীম ও মুসার সহিফাসমূহে।”

(সূরা আল-আ’লা, আয়াত ১৮-১৯)

কিন্তু এগুলোর নাম ও সংখ্যা আল কুরআনে বর্ণিত হয়নি। একমতে, এ সহিফাসমূহের সংখ্যা মোট ১০০ খানা। সে অনুসারে প্রধান চার কিতাব ও সহীফাসমূহ মিলিয়ে মোট আসমানি কিতাবের সংখ্যা ১০৪ খানা।

প্রধান চারখানা কিতাব হলো-

i) তাওরাত

তাওরাত হযরত মূসা আলাইহিস সালামের উপর অবতীর্ণ।

মহান আল্লাহ বলেন,

“আমি মুসাকে কিতাব (তাওরাত) দিয়েছিলাম যাতে তারা সৎপথ পায়।”

(সূরা আল মু’মিনূন, আয়াত ৪৯)

ii) যাবুর

এ মহাগ্রন্থ হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের উপর অবতীর্ণ।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“আর আমি দাউদকে দিয়েছি যাবুর।”

(সূরা আল ইসরা, আয়াত ৫৫)

iii) ইঞ্জিল

এটি হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের উপর অবতীর্ণ।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“আমি তাদের পশ্চাতে ঈসা ইবনে মরিয়মকে প্রেরণ করেছি। তিনি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তাওরাতের সত্যায়নকারী ছিলেন। আমি তাঁকে ইঞ্জিল প্রদান করেছি। এতে হেদায়েত ও আলো রয়েছে। এটি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তাওরাতের সত্যায়ন করে পথ প্রদর্শন করে এবং এটি আল্লাহ ভীরুদের জন্যে হেদায়েত ও উপদেশ বাণী।”

(সূরা আল মায়িদা, আয়াত ৪৬)

iv) আল কুরআন

আল কুরআন শেষ নবি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি অবতীর্ণ। আল কুরআনের আরেক নাম ফুরকান।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“তিনি সত্যসহ আপনার প্রতি কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন, যা তার পূর্বের কিতাবের সমর্থক। আর তিনি অবতীর্ণ করেছিলেন তাওরাত ও ইঞ্জিল-ইতোপূর্বে মানবজাতির সৎ পথ প্রদর্শনের জন্য; আর তিনি ফুরকান অবতীর্ণ করেছেন। ”

(সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৩-8)

আসমানি কিতাবসমূহে বিশ্বাস করা ইমানের মৌলিক সাতটি বিষয়ের মধ্যে একটি। আমরা জানা-অজানা সকল আসমানি কিতাবে বিশ্বাস রাখব এবং আল কুরআনের বিধি-বিধান মোতাবেক আমাদের জীবন পরিচালনা করব।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts