(১) আকাইদ শব্দের অর্থ কি?
‘আকাইদ’ আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো বিশ্বাসমালা। এটি বহুবচন। এর একবচন আকীদাহ (Buggali), যার অর্থ বিশ্বাস।
(২) আকাইদ কাকে বলে?
ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের প্রতি বিশ্বাসকেই ‘আকাইদ’ বলা হয়। যেমন : আল্লাহ, নবি-রাসুল, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, আখিরাত, তাকদির ইত্যাদির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।
মুমিন হতে হলে সর্বপ্রথম এসব বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। এ ইমান বা বিশ্বাসের বিষয়টিকেই আকাইদ বলা হয়।
যে কোনো কাজ করার আগে তার প্রতি যদি আস্থা ও বিশ্বাস না থাকে তাহলে সে কাজের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। না। ইসলামের বিধিবিধান মেনে চলে সকল মানবিক গুণ অর্জনের জন্যও এ ইমান এবং আকীদাহ বা বিশ্বাস থাকা অপরিহার্য।
(৩) কালিমা তাইয়্যেবাহ
ইসলামে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত বাক্য যা অন্তরে বিশ্বাসের সাথে মুখে উচ্চারণ করা হয়ে থাকে। এটিকে কালিমা তাইয়্যেবাহ বলা হয়। যা হলো-
আরবি: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللَّهِ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইলল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল।’
(৪) কালিমা শাহাদাত
ইমান বলতে মহানবি হযরত মুহাম্মাদ(সা.) যা কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছেন, তার সবকিছুকে অন্তরে বিশ্বাস করাকে বোঝায়।
অন্তরের বিশ্বাসকে জানাতে হলে তা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিতে হয়। সেজন্য আরেকটি কালিমা এভাবে রয়েছে যেটাকে ‘কালিমা শাহাদাত’ বলা হয়।-
আরবি: اشْهَدُ انْ لّآ اِلهَ اِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه، وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدً اعَبْدُهوَرَسُولُه
উচ্চারণ: আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারিকালাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি এক এবং তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসুল।
আমরা জানলাম, আকীদাহ হলো ইমানের বিস্তারিত বিষয়সমূহে বিশ্বাস। আল্লাহ এবং আকাইদের অন্যান বিষয়ের প্রতি বিশ্বাসের স্বরূপ কেমন হবে তা শুদ্ধরূপে জেনে অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। একইভাবে মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর সকল প্রমাণিত বৈশিষ্ট্যও বিশ্বাস করতে হবে। যেমন- তিনি যে শেষ নবি তা বিশ্বাস করা। মহানবি (সা.) কে যথাযথ মর্যাদা না দেয়া বা তাঁকে কোনোভাবে হেয় জ্ঞান করা হলে সেটি হবে ইমান-বহির্ভূত এবং মারাত্মক গুনাহ এর কাজ।
(৫) ইমান মুজমাল
ইসলামের সর্বপ্রথম বিষয়টিই হলো আল্লাহ তা’আলা এবং মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর ওপর ইমান আনা বা দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। তবে ইমান বা বিশ্বাস স্থাপনের পর যদি ইসলামের নিয়ম-নীতি না মানা হয় বা ইসলামের প্রতিষ্ঠিত কোনো বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয় তবে তা ইমান-আকীদাহ এর পরিপন্থী কাজ হবে। ইমান সম্পর্কিত এসব বিষয় সবার জানা থাকে না। তাই সংক্ষিপ্তভাবে ইমানের একটি অঙ্গীকার বাণী আছে, থাকে বলা হয় ‘ইমান মুজমাল’। যা নিম্নরূপ-
আরবি: امَنْتُ بِاللهِ كَمَا هُوَ بِاَسْمَائِه وَصِفَاتِه وَقَبِلْتُ جَمِيْعَ اَحْكَامِه وَاَرْكَانِه
উচ্চারণ: আ-মানতু বিল্লা-হি কামা-হুয়া বিআসমা-ইহী ওয়া সিফা-তিহী ওয়া ক্বাবিলতু জামী-আ আহকা-মিহী ওয়া আরকা-নিহী।
অর্থ: আমি ইমান আনলাম আল্লাহর ওপর ঠিক তেমনি যেমন আছেন তিনি, তাঁর সকল নাম ও গুণসহ। আর আমি তাঁর সকল হুকুম ও বিধি-বিধান গ্রহণ করে নিলাম।
(৬) ইমান মুফাসসাল
কেবল আল্লাহর প্রতি ইমান আনলেই মুমিন হওয়া যায় না; বরং একইসাথে তাঁর প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর প্রতিও ইমান আনতে হয়। এ ছাড়া আরো কয়েকটি বিষয়ে ইমান এবং আকীদাহ বা বিশ্বাস স্থাপন করার বিষয়ে ইসলামে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। এজন্য ইমানের একটি অঙ্গীকার বাণী আছে যাকে ‘ইমান মুফাসসাল’ বলা হয়। এটি নিম্নরূপ-
আরবি: امَنْتُ بِاللهِ وَمَلئِكَتِه وَكُتُبِه وَرَسُوْلِه وَالْيَوْمِ الْاخِرِ وَالْقَدْرِ خَيْرِه وَشَرِّه مِنَ اللهِ تَعَالى وَالْبَعْثِ بَعْدَالْمَوْتِ
উচ্চারণ: আ-মানতু বিল্লা-হি ওয়া মালা-ইকাতিহী ওয়া কুতুবিহী ওয়া রুসূলিহী ওয়াল ইয়াউমিল আ-খিরী, ওয়াল ক্বাদরি খায়রিহী-ওয়া শাররিহী মিনাল্লা-হি তাআলা ওয়াল বা’সি বা’দাল মাওত।
অর্থ: আমি ঈমান আনলাম আল্লাহর উপর তাঁর ফিরিশতাদের উপর, তাঁর আসমানী কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং শেষ দিবসের উপর আর এর উপর যে, অদৃষ্টের ভাল-মন্দআল্লাহ তা’আলার তরফ হতে এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর।
এ কারণেই আমরা আমাদের মহানবি (সা.) এর পূর্বের নবিগণকে এবং তাঁদের প্রতি অবতীর্ণ কিতাবসমূহে বিশ্বাস করি। তবে তাদের কিতাব ও বিধি-বিধান আমাদের জন্য অনুসরণীয় নয়। আমরা কেবল আমাদের নবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর ওপর প্রেরিত ওহী তথা পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহকে অনুসরণ ও অনুকরণ করব।
কারণ, ইসলাম সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন,
“নিঃসন্দেহে ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন।”
(সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯)
[সূত্র: এনসিটিবি]