(১) আত্মশুদ্ধি অর্থ কী?
আত্মশুদ্ধি অর্থ হলো নিজের সংশোধন, নিজেকে খাঁটি করা, পরিশুদ্ধ করা ইত্যাদি।
(২) আত্মশুদ্ধি কাকে বলে?
ইসলামি পরিভাষায়, সর্বপ্রকার অনৈসলামিক কথা ও কাজ থেকে নিজ অন্তরকে মুক্ত ও নির্মল রাখাকে আত্মশুদ্ধি বলা হয়। আল্লাহ তায়ালার স্মরণ, আনুগত্য ও ইবাদত ব্যতীত অন্য সমস্ত কিছু থেকে অন্তরকে পবিত্র রাখাকেও আত্মশুদ্ধি বলা হয়।
(৩) আত্মশুদ্ধি কী?
আত্মশুদ্ধির আরবি পরিভাষা হলো ‘তাযকিয়াতুন নাফস’। একে সংক্ষেপে ‘তাযকিয়াহ’ও বলা হয়। স্বীয় আত্মাকে সবধরনের পাপ-পংকিলতা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত রাখাই তাযকিয়াহ-এর উদ্দেশ্য।
(৪) আত্মশুদ্ধির কেন প্রয়োজন?
মানুষের জন্য আত্মশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বস্তুত দেহ ও অন্তরের সমন্বয়ে মানুষ গঠিত।
দেহ হলো মানুষের হাত-পা, মাথা, বুক ইত্যাদি নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমষ্টি। আর অন্তর হলো আত্মা বা কাল্ব। এ দুটোর মধ্যে কালবের ভূমিকাই প্রধান।
মানুষের অন্তর যেরূপ নির্দেশনা প্রদান করে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তদ্রূপই কাজ করে থাকে। সুতরাং মানুষের কাজকর্মের শুদ্ধতার জন্য প্রথমেই কালবের সংশোধন প্রয়োজন। আর কাবের সংশোধনই হলো আত্মশুদ্ধি।
কাল্ব যদি সৎ ও ভালো কাজের নির্দেশ দেয় তবে দেহও ভালো কাজ করে।
একটি হাদিসে মহানবি (সাঃ) সুন্দরভাবে এ বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন,
“জেনে রেখো! শরীরের মধ্যে একটি গোশতপিণ্ড রয়েছে। যদি তা সংশোধিত হয়ে যায়, তবে গোটা শরীরই সংশোধিত হয়। আর যদি তা কলুষিত হয়, তবে গোটা শরীরই কলুষিত হয়ে যায়। মনে রেখো তা হলো কাল্ব বা অন্তর।”
(বুখারি ও মুসলিম)
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর ইবাদতের পূর্বশর্ত হলো পবিত্ৰতা। কেননা আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং পবিত্র। তিনি পবিত্রতা ব্যতীত কোনো জিনিসই কবুল করেন না। সুতরাং ইবাদতের জন্যও দেহ-মন পবিত্র হওয়া আবশ্যক।
দৈহিক পবিত্রতা লাভ করলেই হবে না বরং অন্তরকেও পবিত্র করতে হবে। অন্য সবকিছু থেকে মনকে পবিত্র রেখে কেবল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত করতে হবে। আর অন্তর-আত্মার পবিত্রতা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব।
মানুষের আত্মিক প্রশান্তি, উন্নতি ও বিকাশ সাধনের জন্যও আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব অপরিসীম। আত্মশুদ্ধি মানুষের নৈতিক ও মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটায়। সদা সর্বদা ভালো চিন্তা ও সৎকর্মে উৎসাহিত করে। আত্মশুদ্ধি মানুষের চরিত্রে প্রশংসনীয় গুণাবলি চর্চার সুযোগ করে দেয়।
পক্ষান্তরে যার আত্মা কলুষিত সে নানাবিধ পাপ চিন্তা ও অশ্লীল কাজে লিপ্ত থাকে। সে অন্যায়-অত্যাচার, সন্ত্রাস-নির্যাতন করতে দ্বিধাবোধ করে না। ফলে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলাও বিনষ্ট হয়।
অতএব, নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষা ও বিকাশের জন্য আত্মশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
(৫) আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব
আত্মশুদ্ধি মানুষকে বিকশিত করে, সফলতা দান করে। ইহজীবনে আত্মশুদ্ধি মানুষকে পূর্ণাঙ্গ মানুষে পরিণত করে। এরূপ মানুষ সবধরনের কুপ্রবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকে, সকল পাপাচার ও অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকে। ফলে সমাজে সে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে সকলের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা লাভ করে।
বস্তুত আত্মশুদ্ধি হলো সফলতা লাভের মাধ্যম। যে ব্যক্তি আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে ব্যর্থ সে দুর্ভাগা। সে কখনোই সফলতা লাভ করতে পারে না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আত্মাকে পূত-পবিত্র রাখবে সেই সফলকাম হবে, আর সে ব্যক্তিই ব্যর্থ হবে যে নিজেকে কলুষিত করবে।”
(সূরা আশ্-শাম্স, আয়াত ৯-১০)
পরকালীন জীবনের সফলতা এবং মুক্তিও আত্মশুদ্ধির উপর নির্ভরশীল। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে নিজ আত্মাকে পবিত্র রাখবে পরকালে সেই মুক্তি লাভ করবে। তার জন্য পুরস্কার হবে জান্নাত।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“সেদিন ধনসম্পদ কোনো কাজে আসবে না, আর না কাজে আসবে সন্তান-সন্তুতি। বরং সেদিন সে ব্যক্তিই মুক্তি পাবে, যে আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ নিয়ে আসবে।”
(সূরা আশ্-শুআরা, আয়াত ৮৮-৮৯)
মূলত ইহ ও পরকালীন সফলতা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমেই অর্জন করা যায়। এজন্যই ইসলামে আত্মশুদ্ধির প্রতি অত্যধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
(৬) আত্মশুদ্ধির উপায়
মানুষের অন্তর হলো স্বচ্ছ কাঁচের মতো। যখনই মানুষ কোনো খারাপ কাজ করে তখনই তাতে একটি কালো দাগ পড়ে। এভাবে বারংবার পাপ কাজ করার দ্বারা মানুষের অন্তর পুরোপুরি কলুষিত হয়ে যায়।
আল্লাহ তায়ালা এ সম্পর্কে বলেছেন,
“কখনোই নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে মরিচা ধরিয়েছে।”
(সূরা আল-মুতাফফিফিন, আয়াত ১৪)
মানুষের কাজের কারণেই মানুষের অন্তর কলুষিত হয়। সুতরাং আত্মশুদ্ধির প্রধান উপায় হলো খারাপ কাজ ত্যাগ করা এবং কুচিন্তা, কুঅভ্যাস বর্জন করা। সদাসর্বদা সৎকর্ম, সৎচিন্তা, নৈতিক ও মানবিক আদর্শে নিজ চরিত্র গড়ে তোলার দ্বারা আত্মশুদ্ধি অর্জন করা যায়।
মহানবি (সাঃ) বলেছেন,
“প্রত্যেক বস্তুরই পরিশোধক যন্ত্র রয়েছে। আর অন্তর পরিষ্কারের যন্ত্র হলো আল্লাহর যিকির।”
(বায়হাকি)
বেশি বেশি আল্লাহ তায়ালার স্মরণ ও যিকিরের মাধ্যমে অন্তরের কালো দাগ ও মরিচা দূর করা যায়। যিকিরের মাধ্যমে আত্মা প্রশান্ত ও পরিশুদ্ধ হয়। এ ছাড়াও তওবা, ইস্তিগফার, তাওয়াক্কুল, যুদ, ইখলাস, সবর, শোকর, কুরআন তিলাওয়াত, সালাত ইত্যাদির মাধ্যমেও আত্মশুদ্ধি অর্জন করা যায়।
[সূত্র: এনসিটিবি]