Skip to content

 

আল-কুরআনের পরিচয়

আল কুরআনের পরিচয় (Al Quran er poricoy)

আলোচ্য বিষয়:

পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআন মহান আল্লাহর কালাম বা বাণী। এ গ্রন্থের ভাষা, ভাব, অর্থ, মর্ম, বিষয়বস্তু সব কিছু আল্লাহর। মানব জাতির ইহ-পরকালীন শান্তি ও মুক্তির সন্ধান দেওয়া হয়েছে এ পবিত্র গ্রন্থে। আল-কুরআনে মানব জীবনের সকল সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়েছে। আল-কুরআনের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য অফুরন্ত। আল্লাহ তা‘আলা হযরত জিবরাইল (আ.)- এর মাধ্যমে অহি যোগে এই কুরআন দীর্ঘ তেইশ বছরে সর্বশেষ ও বিশ্ব নবী হজরত মুহাম্মাদ (স) এর প্রতি নাযিল করেন। আসমানি কিতাবের মধ্যে সর্বশেষ এই মহাগ্রন্থই কেবল অবিকৃত আছে। প্রতিটি মানুষের কুরআন শিক্ষা করা অপরিহার্য কর্তব্য।

(১) আল-কুরআনের পরিচয়

আলোচনার শুরুতেই আমরা- আল-কুরআনের পরিচয় ও এর অর্থ এবং আল-কুরআনের কয়েকটি প্রসিদ্ধ নামের তালিকা ও নামকরণের তাৎপর্য সম্পর্কে জেনে নিব।

ক) আল-কুরআনের পরিচয় ও এর অর্থ

আল-কুরআন শব্দটি করা ‘কারউন’ ধাতু থেকে এসেছে এর অর্থ একত্র করা, সন্নিবেশ করা, জমা করা। আল্লামা যারকানী বলেন করা ও পাঠ করা।

কুরআন হলো একটি পুর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।

ইসলামি পরিভাষায়, আল্লাহ তা’আলা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য হযরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর উপর যে কিতাব নাযিল করেছেন তাকেই আল-কুরআন বলা হয়।

মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র)- বলেন, ‘আল-কুরআন মহান আল্লাহর সেই পবিত্র ও সম্মানিত কালাম যা তাঁর পক্ষ হতে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে যা রাসূলুল্লাহ (স) হতে আমাদের নিকট ধারাবাহিক বর্ণনায় কোনরূপ সন্দেহ-সংশয় ব্যতীত পৌঁছেছে।’

আল-কুরআন মানব রচিত কোন গ্রন্থ নয়। এ গ্রন্থের ভাব, ভাষা, মর্ম-বিষয়বস্তু সবকিছুই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। এতে মানব জাতির পার্থিব ও পরলৌকিক জীবনের যাবতীয় সমস্যার সমাধান রয়েছে। পূর্ববর্তী সকল নবী রাসূলের দাওয়াত ও তাদের প্রতি অবতীর্ণ আসমানি কিতাবের শিক্ষার সারসংক্ষেপ এ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। কুরআন নাযিল হওয়ার পর পূর্ববর্তী সকল আসমানি কিতাব রহিত হয়ে গেছে। সুতরাং এখন আল-কুরআনই একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যা মানব জাতির কল্যাণ ও মুক্তির পথ প্রদর্শক।

এই কুরআন মহান আল্লাহ তার ফেরেশতা জিবরাইল (আ) এর মাধ্যমে নবি মুহাম্মাদ (স) এর কাছে অবতীর্ণ করেন, দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে সম্পূর্ণ কুরআন অবতীর্ণ হয়। কুরআনের প্রথম আয়াত অবতীর্ণ হয় ৬০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর যখন মুহাম্মাদ (স) এর বয়স ৪০ বছর এবং অবতরণ শেষ হয় মুহাম্মাদের তিরোধানের বছর অর্থাৎ ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে।

পবিত্র কুরআন হচ্ছে নবি মুহাম্মদ (স) এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অলৌকিক ঘটনা যা তার নবুয়তের প্রমাণস্বরূপ এবং ঐশ্বরিক বার্তা প্রেরণের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্যায় যা প্রথম নবি আদম (আ) থেকে শুরু হয়ে নবি মুহাম্মাদ (সা) এর মধ্যমে দিয়ে শেষ হয়।

আল-কুরআন মানবজাতির জন্য সুস্পষ্ট দলীল, বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়ত ও রহমত। আল্লাহ তা‘আলা মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর উপর সুদীর্ঘ ২৩ বছরে এটি নাজিল করেন। আসমানি কিতাব সমূহের মধ্যে এটি সর্বশেষ নাজিল করা হয়েছে। এরপর আর কোনো কিতাব আসেনি। আর ভবিষ্যতেও আসবে না। কিয়ামত পর্যন্ত এ কিতাবের বিধি-বিধান ও শিক্ষা বলবৎ থাকবে। এটি সর্বকালের সকল মানুষের জন্য হিদায়াতের উৎসস্বরূপ। আল-কুরআনের নির্দেশনা মেনে চললে মানুষ দুনিয়াতে শান্তি ও সম্মান পাবে। আর আখিরাতে চিরশান্তির জান্নাত লাভ করবে।

খ) আল-কুরআনের কয়েকটি প্রসিদ্ধ নামের তালিকা ও নামকরণের তাৎপর্য 

আল-কুরআনের অনেক নাম আছে। এর প্রমাণ কুরআনে পাওয়া যায়। সবচেয়ে প্রসিদ্ধ নাম দু’টি। তা হল আল-কুরআন ও আল-ফুরকান। কুরআনের নামের অর্থ ও তাৎপর্যসহ একটি তালিকা এখানে দেওয়া হলো- 

১। আল-কুরআন (পঠিত গ্রন্থ): পবিত্র এ কিতাব পঠিত হওয়ার জন্যই নাযিল হয়েছে। কিয়ামন পর্যন্ত তা পঠিত হতেই থাকবে। আজ পর্যন্ত সর্বজনবিদিত ও স্বীকৃত সত্য হচ্ছে পৃথিবীতে একমাত্র কুরআনই সবচেয়ে বেশি পঠিত গ্রন্থ।

ইমাম রাগিব ইস্ফাহানি (র) কুরআন শব্দের এ নামকরণের তাৎপর্য বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আসমানি গ্রন্থের মধ্যে বিশেষ করে এ কিতাবকেই কুরআন বলা হয়েছে এ জন্য যে, আসলে এ কিতাবেই অন্যান্য  সকল আসমানি কিতাবে বর্ণিত তথ্য ও বিষয়সমূহ একত্রে সন্নিবেশিত হয়েছে। পূর্ববর্তী আসমানি গ্রন্থসমূহের শিক্ষা ও সারসংক্ষেপ এ পবিত্র গ্রন্থে সন্নিবেশিত হয়েছে। মূলত বিশ্বের যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমাবেশ ঘটেছে এ কিতাবে।’

২। আল-ফুরকান (পার্থক্যকারী): ফুরকান শব্দের অর্থ পার্থক্য ও প্রভেদকারী। আল-ফুরকান ঈমান ও কুফর, সত্য ও মিথ্যা এবং শিরক ও তাওহীদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্যকারী। এ কারণে কুরআনকে ফুরকান বলা হয়।

৩। আল-কিতাব (মহাগ্রন্থ): কিতাব অর্থ সন্নিবেশিত। কুরআনে সকল বিষয় সন্নিবেশিত হয়েছে বলে একে আল-কিতাব বা মহাগ্রন্থ বলা হয়।

৪। আল-যিকর (স্মারক): যিকর অর্থ স্মারক। এ গ্রন্থে বিভিন্ন উপদেশ এবং পূর্ববর্তী জাতিসমূহের অবস্থা উল্লেখ আছে বলে একে আয-যিকর বলা হয়।

See also  আসমানি কিতাব কাকে বলে, বলতে কী বুঝায়? এটি কয়টি বা কয়খানা? আসমানি কিতাব ১০৪ খানার নাম কী কী?

৫। আত-তানযীল (নাযিলকৃত): এ গ্রন্থ মহান আল্লাহর পক্ষ হতে মানবজাতির নিকট নাযিল হয়েছে। এজন্য একে আত-তানযীল বলা হয়।

৬। আল-কালাম (বাণী): কালাম শব্দের অর্থ বাণী যা আকৃষ্ট করে। শ্রবণকারীর হৃদয়-মনকে আকৃষ্ট করে বলে একে আল-কালাম বলা হয়।

৭। আল-হুদা (দিশা): এ নামকরণের কারণ হচ্ছে এটা সত্য পথের দিশারী।

৮। আন-নূর (আলোকবর্তিকা): কুরআনের মাধ্যমে সত্য-মিথ্যা উদ্ভাসিত হয়, তাই একে আন-নূর বলা হয়।

৯। আশ্-শিফা (প্রতিষেধক): মানবাত্মার বিভিন্ন রোগ, যেমন- কুফর-শিরক, নিফাক, মূর্খতা এমনকি দৈহিক রোগও এর মাধ্যমে উপশম হয়। তাই কুরআনকে আশ-শিফা বলা হয়।

১০। আল-হিকমা (বিজ্ঞানময়তা): আল-কুরআনে জ্ঞান-বিজ্ঞানের শতভাগ নির্ভরযোগ্য তথ্য ও তত্ত্ব বর্ণিত হয়েছে। এজন্য একে আল-হিকমাহ বলা হয়।

১১। আল-হাকীম (বিজ্ঞানময় গ্রন্থ): কুরআনের আয়াতসমূহ জ্ঞান-বিজ্ঞানে পরিপূর্ণ, তাই একে আল-হাকীম বলা হয়।

১২। আল-হাবল (রশি): যে লোক কুরআনকে মজবুত করে আঁকড়ে ধরবে সে অবশ্যই জান্নাত বা সুপথের সন্ধান পাবে। তাই একে আল-হাবল বলা হয়েছে।

১৩। সিরাতুল মুস্তাকীম (সরল পথ): কুরআনের অনুসরণ করলে সরল ও মুক্তির পথে চলে জান্নাতে পৌঁছা যায়। এ কারণে এর নমাকরণ করা হয়েছে সিরাতুল মস্তিাকীম।।

১৪। আল-মাসানী (পুনরাবৃত্তি): প্রাচীন মানবজাতির কাহিনী পুনরায় এতে বর্ণিত হয়েছে। এজন্য এ গ্রন্থের নাম রাখা হয় আল-মাসানী।

১৫। আল-মাজীদ (মর্যাদাপূর্ণ): কুরআন অতীব মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমানি¦ত গ্রন্থ, তাই একে আল-মাজীদ বলা হয়।

১৬। মাসহাফ (ফলক): হযরত আবূ বকর (রা) সর্বপ্রথম কুরআনকে গ্রন্থাবদ্ধ করে এর নামকরণ করেন মাসহাফ।

আল-কুরআন মহান আল্লাহর বাণী। মানবজাতিকে সুপথ প্রদর্শেনের জন্য আল্লাহ তা‘আলা সর্বশেষ এ আসমানি কিতাব নাযিল করেন। কুরআন ব্যতীত এর আরো অনেক নাম রয়েছে। পবিত্র কুরআনের আলোচ্য বিষয় ও বিষয়বস্তুর ব্যাপকতার জন্য এবং বিভিন্ন গুণ-বৈশিষ্ট্যের কারণে এর বিভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে। আসলে কুরআনের মূল নাম আলকুরআন এবং অপর নাম আল-ফুরকান। অন্যান্য নাম হচ্ছে গুণবাচক।

(২) আল-কুরআনের কাঠামোগত পরিচিতি

আলেচনার এ অংশে আমরা- আল-কুরআনের সূরা ও আয়াতের সংজ্ঞা এবং আল-কুরআনের বিভিন্ন তথ্যভিত্তিক পরিসংখ্যান সম্পর্কে জানব।

ক) সূরার পরিচয় 

সূরা অর্থ: সূরা শব্দটি একবচন, এর বহুবচন সুয়ারুন। আভিধানিক অর্থ হলো- দীর্ঘ ও সৌন্দর্যমন্ডিত, উচ্চতর অবস্থানস্থল।

সূরার পারিভাষিক সংজ্ঞা: সূরা হলো আল-কুরআনের একটি অংশবিশেষ, যা নির্দিষ্ট নামে নামকরণ করা হয়েছে। সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো তিন আয়াত। যেমন- সূরা আল-বাকারা, সূরা আল-ইখলাস, সূরা আল-কাওসার ইত্যাদি। কুরআনের সূরা সংখ্যা ১১৪টি।

খ) আয়াতের পরিচয়

আয়াত অর্থ: আয়াত শব্দটির অর্থ চিহ্ন, নিদর্শন, শিক্ষা, মু‘জিযা ইত্যাদি।

আয়াতের সংজ্ঞা: কুরআন মাজীদের বাক্যসমূহকে আয়াত বলা হয়, যাকে বিশেষ বিরাম চিহ্ন দ্বারা অপর বাক্য হতে পৃথক করা হয়েছে।

কুরআনের আয়াতের বিভাগ: কুরআন মাজীদের সূরা ও আয়াতগুলো নাযিলের দিক দিয়ে দু’শ্রেণিতে বিভক্ত। যথা-

  1. মাক্কী: যা মহানবী (স)-এর হিজরত পূর্ব ১৩ বছরের মক্কা জীবনে; 
  2. মাদানী: যা মহানবী (স)-এর হিজরতের পর ১০ বছরের মদিনা। 

গ) আল-কুরআনের বিভিন্ন তথ্যভিত্তিক পরিসংখ্যান

  • কুরআন মাজীদে সর্বমোট সূরা সংখ্যা ১১৪টি।
  • আল-কুরআনে মাক্কী সূরা ৯২টি।
  • আল-কুরআনে মাদানী সূরা ২২টি।
  • মাক্কী সূরার আয়াত সংখ্যা কারও মতে ৪৬০২টি এবং মাদানী সূরার আয়াত সংখ্যা ১৬৩৪টি এ মত অনুযায়ী আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬টি।
  • সূরা আল-বাকারা আল-কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরা। এতে ৪০টি রুকু ও ২৮৬টি আয়াত আছে। এ সূরার ২৮২ নং আয়াতটি কুরআনের সবচেয়ে বড় আয়াত।
  • আল-কুরআনের ১০৮ নং সূরা আল-কাউছার কুরআনের ক্ষুদ্রতম সূরা।
  • পূর্ণ কুরআন যাতে মাসে একবার তিলাওয়াত (খতম) করা যায় সে জন্য কুরআন মাজীদকে ৩০ জুয্ বা পারায় ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক পারা আবার ৩/৪, ১/৪ ও ১/২ অংশ হিসেবে বিভক্ত।
  • সপ্তাহে একবার যাতে কুরআন খতম করা যায় সেজন্য সাত মনযিলে বিভক্ত করা হয়েছে।
  • কুরআনে রুকুর সংখ্যা ৫৪০টি।
  • পবিত্র কুরআনে পঁচিশজন নবী ও রাসূলের নাম উল্লেখ আছে।
  • সূরা আল-আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত সর্বপ্রথম নাযিল হয়।
  • কুরআনের সর্বশেষ নাযিলকৃত আয়াত সূরা আল-মায়িদার ৩৫তম আয়াত।

আল-কুরআন মহান আল্লাহ তা‘আলা নাযিলকৃত পবিত্র গ্রন্থ। এ গ্রন্থে বর্ণিত বিধি বিধান মেনে চলার মাধ্যমে মানবজাতী ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি লাভ করতে পারে। কুরআনে বাক্যকে আয়াত এবং বড় ভাগকে সূরা বলা হয়। আলকুরআন পাঠ করার সুবিধার্থে ৩০পারা ও ৭ মঞ্জিলে ভাগ করা হয়েছে। এতে ১১৪ টি সূরা এবং ৬২৩৬ আয়াত রয়েছে।

(৩) আল-কুরআনের আলোচ্য বিষয়

আলেচনার এ অংশে আমরা- আল-কুরআনের বিষয়বস্তু ও আলোচ্য বিষয়ের বিবরণ এবং আলোচ্য বিষয়সমূহের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে জানব।

ক) আল-কুরআনের আলোচ্য বিষয়

মানব জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। এ সকল বিষয়ের মধ্যে কিছু বিষয় বিস্তারিতভাবে উল্লিখিত হয়েছে আর কিছু বিষয় সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর কোন-কোনটি বিভিন্ন জাগতিক কর্ম তৎপরতার সাথে সম্পর্কিত এবং কোন কোনটি ইবাদাতের সাথে সম্পর্কিত।

আল-কুরআনের কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয় মানব জাতি। কুরআনের উদ্দেশ্য হলো মানব জাতিকে আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থার দিকে পথ প্রদর্শন করা, যাতে মানুষ দুনিয়ার জীবনে কল্যাণ লাভ করতে পারে এবং আখিরাতে সুখময় জীবনের অধিকরী হতে পারে।

কুরআনের প্রথমেই ঘোষণা করা হয়েছে,

“এ তো সেই কিতাব; এতে কোন সন্দেহ নেই, আল্লাহভীরু লোকদের জন্য এ কিতাব নির্দেশক।”

(সূরা বাকারা ২:২) 

মহান আল্লাহ বলেন,

“আমি তো তোমাদের প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যাতে তোমাদের জন্য উপদেশ রয়েছে; তবুও কি তোমরা বুঝবে না?”

(সূরা আম্বিয়া ২১:১০)

আরো বর্ণিত হয়েছে,

“আর অবশ্যই আমি মানুষের জন্য এ কুরআনে বিভিন্ন উপমা বিশদভাবে বর্ণনা করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কুফরী করা ব্যতীত ক্ষান্ত হলো না।”

(সূরা বনী ইসরাইল ১৭:৮৯)

আরো বলা হয়েছে,

“রামাযান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন নাযিল হয়েছে।”

(সূরা বাকারা ২: ১৮৫)

মহান আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

“এটা তো বিশ্বজগতের জন্য উপদেশমাত্র।”

(সূরা আন‘আম ৬:৯০)

মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

“আমি মুসলিমদের জন্য প্রত্যক বিষয় সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা স্বরূপ, পথনির্দেশ, দয়া ও সু সংবাদরূপে তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করলাম।”

(সূরা নাহল ১৬:৮৯)

এভাবে আরো বলা হয়েছে,

“এ কিতাব, এটা তোমার প্রতি নাযিল করেছি যাতে তুমি মানবজাতিকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনতে পারো, তাঁর পথে যিনি পরাক্রমশালী প্রশংসনীয়”

(সূরা ইবরাহীম ১৪: ১)

অন্যত্র আয়াতে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“হে মানব! তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এসেছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যা আছে তার আরোগ্য এবং বিশ্ববাসীদের জন্য পথনির্দেশ ও রহমত”

(সূরা ইউনুস ১০:৫৭)

মনে রাখুন এসব আয়াতে পবিত্র কুরআনের আলোচ্য বিষয় বা উদ্দেশ্য কি, তা সুষ্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। যার সার কথা হলো-

See also  আল-কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলন

মানব জাতির উন্নতি ও কল্যাণ সাধন করাই যেহেতু পবিত্র কুরআনের মূল উদ্দেশ্য ও প্রতিপাদ্য বিষয়, তাই মানব জীবনের সকল বিভাগ নিয়েই পবিত্র কুরআনে আলোচনা করা হয়েছে। মানুষের ব্যক্তি জীবন এবং আধ্যাত্মিকতায় উৎকর্ষ সাধনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন, ধর্ম-সংস্কৃতি-রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, মানবাধিকার সমরনীতি, যুদ্ধ-শান্তি, সন্ধি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ের উল্লেখ কুরআনে আছে। মূলত এসব আলোচ্য বিষয় কুরআনের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তুর সাথে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িত।

খ) আল-কুরআনের আলোচ্য বিষয়ের শ্রেণি বিভাগ

হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলবী (র) পবিত্র কুরআনের আলোচ্য বিষয়সমূহকে প্রধানত পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন- 

১। ইলমুল আহকাম বা সংবিধান সংক্রান্ত জ্ঞান

পবিত্র কুরআনে ইবাদত-বন্দেগী, পারস্পরিক মু‘আমালাত, আচার-ব্যবহার, দাম্পত্য জীবন, সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থ, যুদ্ধ-সন্ধি প্রভৃতি মানব জীবনের যাবতীয় প্রয়োজন ও বিষয় সংক্রান্ত বিধি-বিধান ও নির্দেশাবলি আলোচিত হয়েছে। ফরয, ওয়াজিব, মুস্তাহাব, হালাল-হারাম-মাকরূহ মুবাহ এবং যাবতীয় আদেশ-নিষেধ এর অন্তর্ভুক্ত।

২। ইলমুল মুখাসামা বা তর্ক শাস্ত্র

ইয়াহুদি, খ্রিষ্টান, কাফির-মুশরিক ও মুনাফিক এ চার শ্রেণির পথভ্রষ্ট মানুষের সাথে বিতর্ক সম্পর্কিত জ্ঞান। এ পর্যায়ে তাদের আকিদা-বিশ্বাস এবং মতবাদের ভ্রান্ততা প্রমাণ করা হয়েছে। সাথে সাথে তাদের ভ্রান্ত ও অযৌক্তিক মতাদর্শের প্রতি জনমনে ঘৃণা জাগ্রত করা হয়েছে। এদের কুসংস্কার ও ভ্রান্ত মতবাদের অসারতা প্রতিপন্ন করা হয়েছে। সেগুলোর জবাব দান করা হয়েছে।

৩। ইলমুত্ তাযকীর-বি-আ’লা ইল্লাহ বা স্রষ্টাতত্ত্ব

বিশ্ব স্রষ্টা ও নিয়ন্তা হিসেবে মহান আল্লাহর পরিচয়, অনুগ্রহ, অবদান এবং কুদরতী নিদর্শনাবলি সম্পর্কিত জ্ঞান। এ ছাড়াও আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি রহস্য, দৈনন্দিন জীবনে প্রাপ্ত বান্দার অভিজ্ঞান, সর্বোপরি স্রষ্টার সর্ববিধ গুণাবলির পরিচয় সম্পর্কিত আলোচনা সন্নিবেশিত হয়েছে।

৪। ইলমুত্ তাযকীর-বি-আইয়্যামিল্লাহ বা সৃষ্টিতত্ত্ব

আল্লাহর সৃষ্টিবস্তুর অবস্থা সংক্রান্ত জ্ঞান। এতে হক ও বাতিল, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে অতীত সংঘর্ষ ও রেষা-রেষির ইতিহাস আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে হক ও সত্যপ্রিয়তার শুভ পরিণাম, মিথ্যা ও বাতিলের শোচনীয় পরিণতি এবং মিথ্যার জন্য সতর্ক ও সাবধান করা হয়েছে।

৫। ইলমুত্ তাযকীর বিল-মাউত বা পরকাল সংক্রান্ত জ্ঞান

পবিত্র কুরআনে সৃষ্টিলোকের লয়, মানুষের মৃত্যু, অক্ষমতা এবং মৃত্যুর পর অনন্ত জীবন-জান্নাত বা জাহান্নামের দৃশ্যের প্রত্যক্ষ বর্ণনা রয়েছে। রহমত ও আযাবের ফেরেশতাদের উপস্থিতি, কিয়ামতের আলামত, হযরত ঈসা (আ) -এর অবতরণ, দাজ্জাল- ইয়াজুজ-মা’জুজের আবির্ভাব, ইসরাফিলের শিঙ্গায় ফুঁকের উল্লেখ। হাশর-নশর, হিসাব-নিকাশ, পাপপুণ্যের জ্ঞান, আমলনামা, মু’মিনগণের আল্লাহর সাথে দীদার ইত্যাদির বর্ণনা। তাছাড়া আযাব ও শাস্তির নানা রকম ভীতিপ্রদ বর্ণনা। জান্নাতের নয়নাভিরাম দৃশ্য ও নিয়ামত রাশির বিবরণ। মানব জাতিকে আত্মসচেতন ও সদা সতর্ক করার জন্য এবং আল্লাহ তা’আলার দাসত্ব ও আনুগত্যের জন্য উৎসাহিত করাই এর মূল উদ্দেশ্য।

পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের এ অফুরন্ত জ্ঞান ভান্ডারে সব কিছুরই মৌলিক বর্ণনা ও জ্ঞান আলোচিত হয়েছে। মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণের যাবতীয় বিষয়ের এমন পরিপূর্ণ বর্ণনা আর কোথাও নেই।

সংক্ষিপ্ত পরিসরে কুরআনের আলোচ্য বিষয়গুলোর একটি তালিকা দেওয়া হলো-

১। আল্লাহ তা‘আলার অস্তিত্ব, ২। আল্লাহর একত্ববাদ তথা তাওহীদের প্রমাণ, ৩। আল্লাহ তা’আলার পূত-পবিত্রতা, ৪। অদৃশ্য জ্ঞান, ৫। শিরক, ৬। তাকওয়া, ৭। রিসালাত, ৮। রাসূলের অনুসরণ ৯। জিহাদ বা দ্বীন প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক চেষ্টা, ১০। সালাত, ১১। যাকাত, ১২। সাওম, ১৩। হজ্জ, ১৪। আদল-ইনসাফ তথা ন্যায়বিচার, ১৫। সুদ, ১৬। চরিত্র ১৭। অর্থনীতি, ১৮। মজলিসের শিষ্টাচার, ১৯। রাসূলের সাথে আদব, ২০। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও জ্ঞানার্জনের প্রতি উৎসাহদান ও এর মর্যাদা, ২১। বিবেক-বুদ্ধির চর্চা, ২২। দন্ড-বিধি, ২৩। লুটতরাজ ও ডাকাতির শাস্তি, ২৪। চুরির শাস্তি, ২৫। অপবাদ দেওয়ার শাস্তি, ২৬। যিনা-ব্যভিচার ও ধর্ষণের শাস্তি, ২৭। মাপ বা ওযনে সঠিকতা, ২৮। সৎকর্মের আদেশ ও অসৎ কর্মের নিষেধ, ২৯। অপরকে সাহায্য করা, ৩০। ঈমান, ৩১। মানবাধিকার, ৩২। তাকওয়া অর্জন, ৩৩। দান-সদকা, ৩৪। জান্নাত, ৩৫। জাহান্নাম, ৩৬। উত্তরাধিকারীদের প্রতি সম্পদ বণ্টন ইত্যাদি।

(৪) আল-কুরআনের বৈশিষ্ট্য

আলেচনার এ অংশে আমরা- আল-কুরআনের বৈশিষ্ট্য তার মূল্যায়ন সম্পর্কে জানব।

See also  আদর্শ সমাজ গঠনে আল-কুরআনের অবদান

ক) সর্বশেষ আসমানি কিতাব

কুরআন বিশ্ব মানবতার প্রতি মহান আল্লাহ তা‘আলা নাযিলকৃত সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ কিতাব। এরপর কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন আসমানি গ্রন্থ নাযিল হবে না। এর আগে মানব জাতির হিদায়াতের জন্য তাওরাত, যাবুর, ইনজীল নামক আরো বড় তিনটি আসমানি কিতাব এবং ১০০টি সহিফা বিভিন্ন নবী-রাসূলের উপর নাযিল হয়েছিল। বর্তমানের তাওরাত, যাবুর ও ইনজিল আসল কিতাব নয়। আসল কিতাব বিভিন্ন ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে আমাদের কাছে এসে পৌঁঁছেছে। বিভিন্ন বিপর্যয় এবং ইয়াহুদি-খ্রিষ্টান পাদ্রীদের হাতে ঐসব গ্রন্থের ওহীর আসল ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং এসকল গ্রন্থে কিছু সংমিশ্রণ হয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতিকে আল-কুরআনই পথনির্দেশ করবে।

খ) চিরন্তন গ্রন্থ

অতীত যুগের সকল আসমানি গ্রন্থই ছিল নির্দিষ্ট কোন জাতি বা ভৌগোলিক সীমারেখা বেষ্টিত জনগোষ্ঠীর জন্য এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হিদায়াতের উৎস। কিন্তু কুরআন মাজীদ কোন নির্দিষ্ট জাতি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, দেশ বা কালকে কেন্দ্র করে নাযিল হয়নি। বরং এটা সর্বকালের সমগ্র বিশ্বমানবতার জন্য হিদায়াতের বাণী নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে। এটা চিরন্তন ও বিশ্বজনীন গ্রন্থ।

গ) পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা

কুরআন ইসলামি জীবনব্যবস্থা তথা শরীআতের মূলনীতি ও অনুশাসনের উৎস। কুরআনের উপরই ইসলামের সম্পূর্ণ অবকাঠামো প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ মানুষকে তাঁর খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনকে পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা রূপে নাযিল করা হয়েছে। যুগ পরিক্রমায় মানবজাতি যে সকল সমস্যার সম্মুখিন হবে তার সমাধান ও মানবজাতির প্রয়োজনীয় সকল বিষয় সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে আল-কুরআনে। 

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“আজ আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম”।

(সূরা মায়িদা ৫:৩)

ঘ) চূড়ান্ত দলিল

ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ইসলামের নীতি এবং আইন-কানুন সংক্রান্ত যে কোন আলোচনায় কুরআনই চূড়ান্ত দলিল হিসেবে গৃহীত। এতেই মানব জাতির ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের যাবতীয় বিষয় ও ঘটনাবলির বিবরণ রয়েছে।

পবিত্র কুরআনে অবতীর্ণ হয়েছে,

“হে মানব জাতি! তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট প্রমাণ এসেছে এবং আমি তোমাদের প্রতি স্পষ্ট জ্যোতি নাযিল করেছি।”

(সূরা আন-নিসা ৪:১৭৪)

ঙ) সকল আসমানি গ্রন্থের সারসংক্ষেপ

কুরআন পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের উপর নাযিলকৃত সকল আসমানি কিতাবের সারসংক্ষেপ। আল-কুরআন অন্য সকল ধর্মগ্রন্থের কার্যকারিতা রহিত করে দিয়ে মানবজাতিকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়ে চলছে যুগ-যুগ ধরে এবং এর আবেদন থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত।

চ) চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় উত্তীর্ণ গ্রন্থ

কিছু লোক নিজেদের কুসংস্কার ও অজ্ঞতার কারণে আল-কুরআনকে প্রত্যাখ্যান করার উদ্দেশ্যে একে মানুষের রচনা বলে অপবাদ রটনা করে। একে কবিতা, যাদু কথা ইত্যাদি বলে উপহাস করে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এবং অনাগত কাল পর্যন্ত যাদের মনে এমন ধারণা জন্ম দেবে তাদের লক্ষ করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, এটা যদি সত্যিই কোন মানুষের রচনা হয়ে থাকে, তাহলে তোমরা অনুরূপ বাক্য রচনা করে দেখাও।

কুরআনের এটা একটি বড় মুজিযা ও বৈশিষ্ট্য যে, কোন মানুষই প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত কুরআনের অনুরূপ বাক্য রচনা করতে পারেনি। কিয়ামত পর্যন্ত কোন মানুষ বা জিন তা পারবেও না। সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে কুরআনের এ চ্যালেঞ্জ বিগত দেড় হাজার বছর ধরে ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। যুগে যুগে বহু মানুষ বিশেষ করে ইসলাম বিরোধী মহল এমনকি ইয়াহুদি খ্রিষ্টান জগৎ এ বিজ্ঞানের যুগেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এ চিরন্তন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় কেউ সফল হয়নি। কুরআন বিরোধী শক্তি সর্বাত্মক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে আনত শিরে স্বীকার করে নিজেদের অপারগতা প্রকাশ করে বলতে বাধ্য হয়েছে- ‘এটা কোন মানুষের বাণী নয়।’

ছ) অতীব নির্ভুল গ্রন্থ

পূর্ববর্তী উম্মতগণ তাদের প্রতি প্রেরিত আসমানি গ্রন্থ এবং তাদের নবীর শিক্ষা নিজেদের সুবিধামত পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংযোজন-বিয়োজন করে। কুরআন একমাত্র গ্রন্থ, যা যাবতীয় বিকৃতি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। 

কুরআন বলছে,

“এতো সেই কিতাব; এতে কোন সন্দেহ নেই, আল্লাহভীরু লোকদের জন্য এ কিতাব নির্দেশক।”  

(সূরা আল-বাকারা ২:২)

জ) কুরআনের ভাষা ও গুণগত মান

আল-কুরআন অতুলনীয় এক গ্রন্থ। আল-কুরআনের ভাব-ভাষা, অলংকার, উপমা, ছন্দ, রচনাশৈলী, বিষয়বস্তুর ব্যাপকতা, বাক্যের অনুপম বিন্যাস, শাব্দিক দ্যোতনা সব মিলেই এক অভাবনীয় সাহিত্য। এজন্য এ গ্রন্থ মহানবী (স)-এর চিরন্তন মু‘জিযাপূর্ণ এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রন্থ।

ঝ) বিষয়বস্তুর ব্যাপকতা

আল-কুরআন সংক্ষিপ্ত হলেও এর বক্তব্য ও বিষয়বস্তুর ব্যাপকতা সুগভীর। কুরআনের এ ছোট পরিসরে লুকিয়ে রয়েছে সাগরের বিশালতা। প্রতিটি শব্দ-বাক্য ও বক্তব্য এতই ব্যাপক যে, তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে সহস্র সহস্র পৃষ্ঠা সম্বলিত তাফসীর গ্রন্থের সৃষ্টি হয়েছে।

ঞ) জীবন সমস্যার সমাধান

এ গ্রন্থে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক, আদালতসহ সর্বস্তরে পেশ করেছে নিখুঁত ও শাশ্বত শান্তির সুস্পষ্ট সমাধান।

আল-কুরআনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মহানবী (স) এর নিম্নবর্ণিত হাদিসটি প্রনিধানযোগ্য,

“আল-কুরআন আল্লাহর রশি, আল্লাহর অত্যুজ্জ্বল নূর ও অব্যর্থ মহৌষধ। যে ব্যক্তি মাযবুতভাবে কুরআনকে আঁকড়ে ধরবে, সে পাবে মুক্তির আবে-হায়াত এবং সে কখনো ধ্বংস হবে না।”

(বায়হাকী)

আল-কুরআন বিশ্বমানবতার প্রতি মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত এবং কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির পথ-নির্দেশক। এটি নাযিল হওয়ার পর পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবের শিক্ষা ও বিধি-বিধান রহিত হয়ে গেছে। এটি চিরন্তন ও বিশ্বজনীন গ্রন্থ ও ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রধান উৎস।

মহান আল্লাহ আল-কুরআনকে মানব জাতির পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে নাযিল করেছেন। এটি মানব জাতির ইহকালীন-পরকালীন জীবনের একমাত্র পথনির্দেশক। আলকুরআন সকল আসমানি কিতাবের সারসংক্ষেপ এবং সকল চ্যালেঞ্জের মুকাবিলায় উত্তীর্ণ গ্রন্থ। এটি এমন এক গ্রন্থ, যা যাবতীয় বিকৃতি থেকে মুক্ত এক নির্ভুল গ্রন্থ। আল-কুরআন ভাব, ভাষা, অলংকার, উপমা, ছন্দ, রচনাশৈলী, বিষয়বস্তুর ব্যাপকতা, বাক্যের অনুপম বিন্যাস সব মিলেই এক অভাবনীয় সাহিত্য। এ গ্রন্থ মহানবী (স) এর চিরন্তন মু‘জিযা এবং এক অপ্রতিদ্ধন্দ্বী গ্রন্থ।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page