নিম্নে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আল-কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত তুলে ধরা হলো-
(১) সর্বোত্তম ইবাদাত
মানব জাতির সকল সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান উপস্থাপনের লক্ষ্যেই আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআন নাযিল করেছেন। সুতরাং কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত ও অধ্যয়নের মাধ্যমেই এর মর্ম বাস্তব জীবনে আমল করা সম্ভব। এ কারণেই কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের ফযীলত অফুরন্ত । মহানবী (স) কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের ব্যাপারে খুবই তাকিদ দিয়েছেন।
নফল ইবাদাতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদাত হচ্ছে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত।
মহানবী (স) বলেন,
“কোরআন তিলাওয়াত শ্রেষ্ঠ ইবাদত। তোমরা কোরআন তিলাওয়াত কর, কারণ কিয়ামতের দিন কোরআন পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে।”
(মুসলিম)
হযরত উসমান (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (স) বলেছেন,
“আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন নিয়ে ব্যস্ত থাকার দরুন আমার যিকির করা এবং আমার সমীপে প্রার্থনা করার অবসর পায় না, তাকে ঐ সকল লোকের চেয়ে বেশি কিছু দান করে থাকি, যারা প্রার্থনা করে থাকে।”
(তিরমিযী)
কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের মাধ্যমে অফুরন্ত সাওয়াব হাসিল হয়।
মহানবী (স) বলেন,
“যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পড়ল তার জন্য রয়েছে একটি নেকি। আর একটি নেকি দশ নেকি সমতুল্য। নবীজী বলেন, আমি বলছি না যে, আলিফ লাম মীম- একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।”
(তিরমিযী)
কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের মাধ্যমে করুণাময় আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী হওয়া যায়।
মহানবী (স) বলেন,
“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী যে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।”
(বুখারী)
মহানবী (স) আরো বলেন,
“তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর, কেন না তা তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।”
(তাবারানী)
কুরআনে যে দক্ষ তার জন্য তো পুরস্কার আছেই, এমনকি কুরআন যে পাঠ করতে পারে না বরং পাঠের জন্য চেষ্টা-সাধনা করে, তার জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে।
মহানবী (স) বলেছেন,
“কুরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি সম্মানিত পুণ্য লেখক ফেরেশতাদের সঙ্গী। আর যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াতে দক্ষ নয়, অথচ পাঠ করতে গিয়ে বার বার আটকে যায় এবং তোতলায়, আর তার জন্য তা কষ্টসাধ্য হয়- তবে এমন ব্যক্তির জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে।”
(বুখারী ওমুসলিম)
(২) আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ পাবার মাধ্যম
কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ পাওয়া যায়।
মহানবী (স) বলেন,
“কোন জাতি যখন কোন ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করতে থাকে এবং পরস্পরকে শিক্ষাদান করতে থাকে, তখন আল্লাহর রহমত ও করুণাধারা তাদেরকে আবৃত করে রাখে। রহমতের ফেরেশতারা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখে। এমনকি স্বয়ং আল্লাহ তাঁর নিকটস্থদের সাথে তাদের সম্পর্কে আলোচনা (গর্ব) করে থাকেন।”
(মুসলিম)
মহানবী (স) আরো বলেন,
“যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করে, সে ব্যক্তি যেন কুরআন তিলাওয়াত করে।”
(মুসলিম)
কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে ইহকালীন জীবনে শত্রুর হাত হতে নিরাপত্তা লাভ করা যায়।
কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের মাধ্যমে পরকালীন মুক্তির পথ সুগম হয়।
হযরত আলী (রা) বর্ণনা করেছেন,
“যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে ও তা কণ্ঠস্থ করে আর তাতে বর্ণিত হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম হিসেবে মেনে চলে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে স্থান দেবেন। তদুপরি তাঁর স্বজনদের মধ্য হতে দশজন লোকের জন্য তার সুপারিশ মঞ্জুর করা হবে, যাদের জন্য দোযখের ফয়সালা হয়ে গিয়েছিল।”
(মিশকাত)
যে ব্যক্তি নিষ্ঠার সাথে কুরআন তিলাওয়াত করবে, করুণাময় আল্লাহ তাঁর সার্বিক উন্নতির যাবতীয় পথ সুগম করে দেবেন।
মহানবী (স) বলেন,
“কুরআন তিলাওয়াতের বরকতে বহু লোক উন্নতি লাভ করবে এবং কুরআনকে অবহেলার কারণে বহু লোক অপমানিত হবে।”
(মিশকাত)
কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মানুষের অন্তরের মরিচা দূর হয় এবং হৃদয়ে প্রশান্তি আসে।
মহানবীর (স) হাদীস,
“অন্তরসমূহে মরিচা ধরে, যেভাবে লোহায় পানি লাগলে মরিচা ধরে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, হে রাসূল! (স) এর প্রতিষেধক কী? মহানবী (স) বললেন, বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ এবং কুরআন তিলাওয়াত করা।”
(মিশকাত)
মহানবী (স) বলেন,
“যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং তদনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে, কিয়ামতের দিনে তার পিতামাতাকে সূর্যের চেয়েও অধিকতর আলোকিত মুকুট পরানো হবে।”
(মিশকাত)
মহানবী (স) আরো বলেন,
“কিয়ামতের দিন কুরআন তিলাওয়াতকারীকে বলা হবে কুরআন তিলাওয়াত করতে থাক আর বেহেশতের উপরে উঠতে থাক।”
(মিশকাত)
(৩) হৃদয়ে প্রশান্তি লাভের উপায়
কুরআন তিলাওয়াত মনে প্রশান্তি আনয়ন করে। এর ফলে আল্লাহর রহমত নাযিল হয় এবং আল্লাহর স্মরণ মনে জাগরূক থাকে।
কুরআন মাজীদ বিশ্বমানবতার মুক্তির মহা সনদ। কুরআন যেমনিভাবে অতীব মর্যাদার অধিকারী গ্রন্থ, তেমনিভাবে এর তিলাওয়াতকারীর মর্যাদাও বেশি। আল-কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মানব মনের সকল কালিমা দূর হয়ে পবিত্র ভাবধারায় বিকশিত হয়। বিশ্বসভায় মুসলিম জাতির অভ্যুত্থানের প্রাণশক্তিই ছিল আল-কুরআনুল কারীম।
অতএব প্রতিটি মানুষের উচিত, এ বরকতময় গ্রন্থ নিয়মিত তিলাওয়াত এবং তদনুযায়ী জীবন যাপন করা।
[সূত্র: এনসিটিবি]