(১) ইজমা ও কিয়াসের পার্থক্য কি?
ইজমা ও কিয়াসের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-
ইজমা | কিয়াস |
১. ইজমা অর্থ হলো- ঐকমত্য হওয়া, শক্তিশালী করা, দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া, একমত হওয়া ইত্যাদি। | ১. কিয়াস অর্থ হলো- পরিমাপ করা, অনুমান করা, তুলনা করা, সমান করা ইত্যাদি। |
২. শাব্দিকভাবে কোন বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করার নামই হলো ইজমা। | ২. শাব্দিকভাবে কিয়াস হলো কোন বস্তুকে অন্য বস্তুর সাথে তুলনা করা। |
৩. ইজমা শরীআতের তৃতীয় উৎস। | ৩. কিয়াস হলো ইসলামি আইনশাস্ত্রেরে চতুর্থ উৎস। |
৪. কোন বিশেষ যুগে আইন সংক্রান্ত কোন বিশেষ সমস্যার সমাধান কুরআন ও হাদিসকে অবলম্বন করে মুসলিম পন্ডিতগণ যে সম্মিলিত অভিমত পোষণ করেছেন ইসলামি শরীআতে সেটা ইজমা। | ৪. কিয়াস হলো আইনের বিস্তৃতি। মূল আইন যখন সমস্যার সমাধানে যথেষ্ট না হয়, তখন মূল আইন থেকে ইল্লাতের (হুকুমের কারণের) মাধ্যমে নতুন বিধি আহরণ করতে হয়। আর তখন যে আইনের সম্প্রসারণ হয় তাই কিয়াস। |
৫. ইসলামি শরীআতের ভাষায়- কোন কাজ অথবা কথার ওপর এক যুগের উম্মাতে মুহাম্মদীর ন্যায়বান মুজতাহিদগণের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তকে ইজমা বলে। | ৫. কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে শরীআতের যেসব হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়, শাখা-প্রশাখার মধ্যে ঐ হুকুমের কারণ পাওয়া গেলে শাখায় মূলের অনুরূপ হুকুম প্রদান করাকে শরী‘আতের ভাষায় কিয়াস বলা হয়। |
৬. ইজমার মাধ্যমে আইন সৃষ্ট হয়। প্রকৃতপক্ষে মুসলিম আইনের একটি বিরাট অংশ গড়ে উঠেছে উলামাগণের ঐক্যমতের ভিত্তিতে। | ৬. অন্যদিকে, ‘কিয়াস’ কোন নীতি নির্ধারণ করে না; বরং প্রচলিত নীতির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে মাত্র। |
৭. উদাহরণস্বরূপ: কুরআনের আয়াতগুলিকে একক বই আকারে সংকলন ও বিন্যাস করা হয়েছিল আবু বকরের খিলাফতকালে এবং পরবর্তীতে তৃতীয় খলিফা উসমানের দ্বারা প্রমিত করা হয়েছিল। মুসলিম সম্প্রদায় সর্বজনীনভাবে এই সংকলনকে ইজমা হিসেবে গ্রহণ করে। | ৭. উদাহরণস্বরূপ: কুরআন মাজীদের মাধ্যমে ইসলামি শরীআতে মদ্যপানকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ হলো ‘নেশা’। অনুরূপভাবে কিয়াসের মাধ্যমে গাঁজা, আফিম, হিরোইন ইত্যাদি নেশা জাতীয় জিনিসকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। |
(২) ইজমা ও কিয়াস বলতে কি বুঝায়?
ইজমা বলতে কি বুঝায়: ব্যবহারিক অর্থে কোন বিষয় বা কথায় ঐকমত্য পোষণ করাকে ইজমা বলে৷ ইসলামী শরীয়াতের কোন হুকুমের ব্যাপারে একই যুগের সকল মুজতাহিদদের একমত হওয়াকে ইজমা বলে। ইজমা মহানবি (স.) এর পরবর্তী যেকোন যুগে হতে পারে৷ সাহাবিগণ থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিটি যুগের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে৷ ইজমা কুরআন সুন্নাহ সমর্থিত হওয়া আবশ্যক৷ কুরআন সুন্নাহর মূলনীতি বিরোধী কিংবা কোন অন্যায় ও পাপ কাজে ইজমা হয় না৷ ইজমা আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ মর্যাদা ও নিয়ামত৷
কিয়াস বলতে কি বুঝায়: কিয়াস হলো আইনের বিস্তৃতি। মূল আইন যখন সমস্যার সমাধানে যথেষ্ট না হয়, তখন মূল আইন থেকে ইল্লাতের মাধ্যমে নতুন বিধি আহরণ করতে হয়। আর তখন যে আইনের সম্প্রসারণ হয় তাই কিয়াস। মূলত মূল আইনকে শাখায় তুলনা করেই নতুন আইনের জন্ম হয়। আর এটিই হল কিয়াস।
(৩) ইজমা ও কিয়াস কি?
ইজমা কি: ইজমা শরীআতের তৃতীয় উৎস। গুরুত্বের বিচারে কুরআন ও হাদিসের পরেই ইজমার স্থান। কোন বিশেষ যুগে আইন সংক্রান্ত কোন বিশেষ সমস্যার সমাধান কুরআন ও হাদিসকে অবলম্বন করে মুসলিম পন্ডিতগণ যে সম্মিলিত অভিমত পোষণ করেছেন ইসলামি শরীআতে সেটা ইজমা।
কিয়াস কি: কিয়াস হলো ইসলামি আইনশাস্ত্রেরে চতুর্থ উৎস। কুরআন,সুন্নাহ ও ইজমার পর এর অবস্থান। এই তিন উৎসতে নেই এমন কোন বিষয়ের মাসয়ালা বা বিধান অনুমান করে নির্ণয় করাকে কিয়াস বলে।
ইমাম আবু হানিফা (র) বলেন, ‘কিয়াস হলো আইনের বিস্তৃতি। মূল আইন যখন সমস্যার সমাধানে যথেষ্ট না হয়, তখন মূল আইন থেকে ইল্লাতের মাধ্যমে নতুন বিধি আহরণ করতে হয়। আর তখন যে আইনের সম্প্রসারণ হয় তাই কিয়াস।’ মূলত মূল আইনকে শাখায় তুলনা করেই নতুন আইনের জন্ম হয়। আর এটিই হল কিয়াস।
এক বাক্যে বলা যায়, ক্বিয়াস হলো কোন হুকুমের ক্ষেত্রে মূল দলীলের সাথে শাখাগত দলীলকে উভয়ের মাঝে সমন্বয়কারী ইল্লত (হুকুমের কারণ) থাকার কারণে সমান করা।
(৪) ইজমা কিয়াস কাকে বলে?
ইজমা কাকে বলে: ইসলামি শরীআতের ভাষায়- কোন কাজ অথবা কথার ওপর এক যুগের উম্মাতে মুহাম্মদীর ন্যায়বান মুজতাহিদগণের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তকে ইজমা বলে।
কিয়াস কাকে বলে: কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে শরীআতের যেসব হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়, শাখা-প্রশাখার মধ্যে ঐ হুকুমের কারণ পাওয়া গেলে শাখায় মূলের অনুরূপ হুকুম প্রদান করাকে শরী‘আতের ভাষায় কিয়াস বলা হয়।
প্রিয় পাঠক, উপরোকত আলেচনার মাধ্যমে আমরা ইজমা ও কিয়াসের পার্থক্য কি? ইজমা ও কিয়াস বলতে কি বুঝায়? ইজমা ও কিয়াস কি? ইজমা কিয়াস কাকে বলে? প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে অবগত হলাম।
এই ধরণের তথ্যবহুল ও উপকারি ইসলামিক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসােইটটি স্মরণে রাখুন ও নিয়মিত ভিজিট করুন। আমাদের এই ওয়েবসাইটিকে সফল করতে সকলে দ্বীনী ভাই-বোনদের সহযোগিতা কাম্য। জাজাকাল্লাহু খায়রান।
[সূত্র: ওপেন স্কুল]