নিম্নে ইমাম তিরমিযি (র) সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হলো-
জন্ম ও শৈশব
সিহাহ সিত্তাহ, অন্যতম গ্রন্থ জামে তিরমিযি প্রণেতা ইমাম তিরমিযি (র)-এর পুরো নাম আল-ইমাম আল-হাফেয আবু ঈসা মুহাম্মাদ ইবন ঈসা আত-তিরমিযি।
খলিফা আব্দুল্লাহ আল-মামুনের শাসনামলে মধ্য এশিয়ার মধ্য এশিয়ার ট্রান্স অক্সিয়ানার পার্শ্বে জীহুন নদীর বেলাভূমিতে অবস্থিত ‘তিরমিয’ নামক স্থানে হিজরি ২০৯ সনে এক অভিজাত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ইমাম তিরমিযির বাল্যকাল তিরমিয শহরেই অতিক্রান্ত হয়। ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রখর স্মৃতি শক্তির অধিকারী ছিলেন। ফলে কোন হাদিসে একবার চোখ বুলালে তা পুনরায় দেখার প্রয়োজন হতো না। তাঁর মেধার বিকাশ দেখে অনেকেই অবাক হয়ে যেতো।
শিক্ষা জীবন
ইমাম তিরমিযি প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেই হাদিস অধ্যয়ন ও সংগ্রহে আত্মনিয়োগ করেন। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য তিনি মুসলিম জাহানের বিখ্যাত হাদিস শিক্ষাকেন্দ্রসমূহে গমন করে হাদিস শ্রবণ ও সংগ্রহ করেন। এমনও সময় গেছে যে, কোন স্থানে হাদিস সংগ্রহে তাকে নিরুদ্দেশ থাকতে হয়েছে পরিবার-পরিজন থেকে।
শিক্ষা সফর
তিনি হাদিস সংগ্রহের জন্য বছরের পর বছর ধরে মুসলিম জাহানের জ্ঞানের পাদপিঠ বসরা, কুফা, ইরাক, রাই, খুরাসান, হিজাজ প্রভৃতি স্থানে ব্যাপক সফর করেন। সেখানে অবস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নিকট থেকে তিনি হাদিস সংগ্রহ করতেন।
তিরমিযি (র)-এর ওস্তাদগণ
ইমাম তিরমিযি (র)-এর সৌভাগ্য যে, তিনি সমসাময়িক বড় বড় উস্তাদ ও আলিম -ওলামার সাহচর্য লাভ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে যারা অন্যতম তাঁরা হলেন- ইমাম বুখারী, কুতাইবা ইবনে সাঈদ, ইসহাক ইবনে মূসা, মাহমুদ ইবনে গাইলান, সাঈদ ইবনে আব্দুর রহমান (র) সহ আরো অনেকে।
তাঁর ছাত্রবৃন্দ
ইমাম তিরমিযির যেমন বড় বড় উস্তাদ ছিলেন ঠিক তেমনি তাঁর হাত থেকে বেরিয়েছে সে সময়কার তুখোড় তুখোড় বেশ কয়েক জন শিষ্য। তাঁরা হলেন- আবু হামেদ আহমাদ ইবনে আব্দুল্লাহ মারুফী, আহমদ ইবনে ইউসুফ নাসাফী ও মুহাম্মাদ ইবনে মাহমুদ (র) প্রমুখ শিষ্যগণ।
স্মৃতি শক্তির গভীরতা
তিনি ছিলেন বিস্ময়কর স্মৃতিশক্তির অধিকারী। তাঁর স্মৃতিশক্তির প্রখরতা সম্পর্কে কথিত আছে যে, একবার তিনি জনৈক শাইখের বর্ণিত কয়েকটি হাদিস সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধ করেন। কিন্তু বর্ণনা ভালোভাবে শোনেননি বলে তা ঠিকমতো লিপিবদ্ধ করতে পারেননি। একদিন ঘটনাক্রমে পথিমধ্যে শায়খের সাথে সাক্ষাত হলে তাঁর নিকট থেকে সম্পূর্ণ হাদিস শোনার ইচ্ছা করেন। তখন শাইখ বললেন, আমি পাঠ করি তুমি তোমার লিখিত অংশ বের করে মিলিয়ে নাও। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরও ইমাম তিরমিযি (র) তাঁর লিখিত অংশটি পেলেন না। তাই তিনি একটি সাদা কাগজের টুকরা ধরেই শাইখের বক্তব্য শুনতে লাগলেন। এমতাবস্থায় শাইখ বললেন, তুমি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছ? তিনি বললেন না, আপনি যা বলেছেন তা আমি বলে দিতে পারি। এই বলে তিনি মুখস্থ বলে দিলেন। শাইখ এতে বিস্মিত হয়ে গেলেন।
অবদান
ইমাম তিরমিযি (র) সমসাময়িককালের হাদিস বিশারদদের অন্যতম ছিলেন। হাদিস শাস্ত্রের উৎকর্ষের জন্যে তিনি সারা জীবন সাধনা ও শ্রম বিনিয়োগ করেছেন। তিনি হাদিস শাস্ত্রের ওপর বহু মহামূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। সেগুলোর মধ্যে- আল জামিউত তিরমিযি, কিতাবুল আসমা ওয়ালকুনা, শামায়েলুত তিরমিযি অন্যতম। তবে তাঁর সংকলনগুলোর মধ্যে জামে আত্তিরমিযি অমর সংকলন।
জামে আত-তিরমিযি
ইমাম তিরমিযির অন্যতম সেরা সংকলন ‘আল-জামিউত তিরমিযি’ কে ‘সুনান’ও বলা হয়। ব্যাপকতায় এটি সহীহ বুখারী, হাদিস বিন্যাসে মুসলিম এবং আহকামে আবু দাউদের স্থান দখল করে আছে। গ্রন্থটিতে তিন হাজার আটশত বারটি হাদিস সংগৃহীত হয়েছে।
ইমাম তিরমিযি (র) তাঁর সংকলনটি সম্পর্কে বলেন, ‘যার ঘরে এই কিতাবখানি থাকবে মনে করা যাবে যে, তাঁর ঘরে স্বয়ং নবী (স) অবস্থান করছেন এবং কথা বলছেন।’
চরিত্র
ইমাম তিরমিযি (র) অত্যন্ত নির্মল চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তিনি শিক্ষকদেরকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে সম্বোধন করতেন। তিনি অত্যন্ত পরহেজগার ও আল্লাহভীরু লোক ছিলেন।
সারসংক্ষেপ
হাদিস বিদগণের আরো দু’জন মহামণীষী হলেন- ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযি (র)। এ দু’জন হাদিস বিজ্ঞানীর অশেষ পরিশ্রমে হাদিস বিজ্ঞান বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন হয়।
[সূত্র: ওপেন স্কুল]