নিম্নে ইমাম নাসায়ি (র) সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হলো-
ইমাম নাসায়ি (র) জন্ম ও শৈশব
সিহাহ্ সিত্তাহর অন্যতম গ্রন্থ সুনানে নাসায়ি প্রণেতা ইমাম নাসায়ির পূর্ণ নাম আবদুর রহমান আহমদ ইবন শুআইব আননাসায়ি।এই ক্ষণজন্মা মনীষী খুরাসানের অন্তর্গত ‘নাসা’ শহরে ২১৫ হিজরি সনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান নাসা’র নামানুসারেই পরবর্তীকালে তিনি পরিচিতি লাভ করেন।
তিনি শৈশবকাল থেকেই প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও ইসলামি জ্ঞানের প্রতি পারদর্শিতা দেখাতে শুরু করেন। তিনি শৈশবকাল প্রিয় জন্মস্থানে অতিবাহিত করেন। তিনি স্থানীয় বিদ্যাপিঠে হাদিস ও কুরআন পাঠে মনোনিবেশ করেন।
শিক্ষাজীবন
তিনি অসংখ্য হাদিস মুখস্থ জানতেন বলে তাঁকে হাদিসের হাফিযও বলা হতো। তিনি ১৫ বছর বয়স থেকেই হাদিস সংগ্রহের জন্য ব্যাপকভাবে বিভিন্ন দেশ সফর করেন এবং দীর্ঘদিন বিভিন্ন হাদিসকেন্দ্রে অবস্থান করেন। তিনি হযরত আলী (রা) ও তাঁর বংশধরদের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ছিলেন।
বিদেশ ভ্রমণ
ইমাম নাসায়ি (র) হাদিস শাস্ত্রের উৎকর্ষ সাধনের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করে দেশ বিদেশে সফর করেন। প্রথমে তিনি কুতাইবা বলখীর নিকট উপস্থিত হন এবং দুই মাস এক বছর সেখানে অবস্থান করে তাঁর নিকট থেকে হাদিসের ওপর তা‘লিম গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি মিসর গমন করেন। সেখানে দীর্ঘকাল অবস্থান করে বেশ কিছু রচনা সংগ্রহ করেন। তাঁর মিসর গমন তাঁকে দেশ বিখ্যাত আলিম-ওলামার সাহচর্য লাভের সুযোগ করে দেয়।
হাদিস শাস্ত্রে অবদান
ইমাম নাসায়ি (র) মিসর সফরকালে বেশ কয়েকটি মূল্যবান হাদিসগ্রন্থ প্রণয়ন করেন। পরবর্তীতে এগুলো পাঠকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি হিজরি ৩০২ সনে মিসর ত্যাগ করে দামেস্ক উপস্থিত হন এবং সেখানে হযরত আলী (রা) ও রাসূল (স)-এর বংশধরদের ওপর প্রশংসা সম্বলিত কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন।
শ্রেষ্ঠ সংকলন
ইমাম নাসায়ির অমর সংকলন হলো ‘সুনানুল কুবরা’। এটি তাঁর প্রথম হাদিসগ্রন্থ সংকলন। পরবর্তীতে তিনি কুবরা থেকে যাচাই বাছাই করে সংক্ষিপ্ত আকারে একখানি গ্রন্থ তৈরী করেন এবং এর নাম করেন সুনানুস সুগরা। এর আরেক নাম হলো আল-মুজতাবা-সঞ্চয়িত। এ গ্রন্থে ইমাম নাসায়ি (র) সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের সকল রীতির সমন্বয় ঘটিয়েছেন। ইমাম নাসায়ি (র) এ গ্রন্থের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে যে সনদ প্রদান করেন তা হলো- হাদিসের সঞ্চয়ন মুজতাবা নামের গ্রন্থখানিতে উদ্ধৃত সমস্ত হাদিসই বিশুদ্ধ।
চারিত্রিক গুণাবলি
আল-হাদিস ওয়াল-মুহাদ্দিসুন গ্রন্থের লেখকের মতে, ইমাম নাসায়ি (র) অত্যন্ত উন্নত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তাঁর চারিত্রিক মাধুর্যতা ও সত্যবাদিতা এবং নম্রতা সকলের নিকট প্রশংসনীয় হয়েছিল। তিনি ছিলেন প্রথম শ্রেণির মুত্তাকী। মানুষের সাথে সদাচরণ ছিল তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
তাঁর চরিত্র সম্পর্কে ইমাম যুহরী (র) বলেন, ‘তিনি ছিলেন উন্নত চরিত্রের অধিকারী এবং ইমাম মুসলিমের চেয়েও উচ্চস্তরের হাফিযে হাদিস।’
মিসরবাসীর অশোভন আচরণ
ইমাম নাসায়ি (র) যখন মিসর সফর করছিলেন তখন লক্ষ করলেন যে, উমাইয়া বংশের লোকজনের অত্যাচারে লোকজন হযরত আলী ও রাসূল (স) এর বংশধরদের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করতে শুরু করে। তিনি ব্যাপারটি বুঝতে পেরে অত্যন্ত মর্মাহত হন। তিনি তাদের এ ভুল সংশোধন করার জন্য দামেস্কের মসজিদে একটি লিখিত বক্তৃতা পাঠ করতে শুরু করলেন, যাতে হযরত মুহাম্মদ (স) ও আলী পরিবার-এর ওপর প্রশংসা করা হচ্ছিল। এমতাবস্থায় জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, আপনার খুৎবায় মুয়াবিয়ার কোন প্রশংসা আছে কি? উত্তরে ইমাম নাসায়ি (র) বলেন, মুয়াবিয়ার নিষ্কৃতি পেলেই কি যথেষ্ট নয়? উত্তরে লোকটি বলে উঠলো, এ লোক শিয়া। তাকে প্রহার করো, তারপর তাঁর ওপর অতর্কিত আক্রমণ শুরু হলো। ইমাম নাসায়ি এতে ভীষণভাবে আহত হলেন। তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে বললেন, তোমরা অনুগ্রহ করে আমাকে মক্কা শরীফ নিয়ে যাও। আমি সেখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করব।
ইন্তেকাল
ইমাম নাসায়ি ৩০৩ হিজরিতে ৮৮/৮৯ বছর বয়সে মক্কায় ইন্তেকাল করেন। তাঁকে সেখানেই দাফন করা হয়।
[সূত্র: ওপেন স্কুল]