Skip to content

গিবত শব্দের অর্থ, কী, কাকে বলে? গিবতের কুফল ও পরিণাম

গিবত শব্দের অর্থ, কী, কাকে বলে গিবতের কুফল ও পরিণাম

(১) গিবত শব্দের অর্থ কী?

গিবত আরবি শব্দ। এর অর্থ পরনিন্দা, পরচর্চা, অসাক্ষাতে দুর্নাম করা, সমালোচনা করা, অপরের দোষ প্রকাশ করা, কুৎসা রটনা করা ইত্যাদি।

(২) গিবত কাকে বলে?

ইসলামি পরিভাষায়, কারও অনুপস্থিতিতে অন্যের নিকট এমন কোনো কথা বলা যা শুনলে সে মনে কষ্ট পায় তাকে গিবত বলে।

প্রচলিত অর্থে, অসাক্ষাতে কারও দোষ বলাকে গিবত বলা হয়।

একটি হাদিসে মহানবি (সাঃ) সুন্দরভাবে গিবতের পরিচয় বর্ণনা করেছেন।

একদা নবি (সাঃ) বললেন, 

“তোমরা কি জানো গিবত কী? সাহাবিগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “গিবত হলো-তুমি তোমার ভাইয়ের এমনভাবে আলোচনা করবে যা শুনলে সে মনে কষ্ট পায়। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলা হলো, আমি যা বলব তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে পাওয়া যায় সেক্ষেত্রেও কি তা গিবত হবে? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে থাকে তবে তা গিবত হবে। আর যদি তা তার মধ্যে না পাওয়া যায় তবে তা হবে অপবাদ।”

(মুসলিম)

(৩) গিবত কী?

আমরা অনেক সময় অলস বসে থাকি। হাতে কোনো কাজ থাকে না। বন্ধুবান্ধব মিলে গল্প করি। এসময় কথায় কথায় অন্যের সমালোচনা করি। সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের দোষ খুঁজে বেড়াই। তাদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করি। বস্তুত এসবই গিবত। ঠাট্টাচ্ছলে গল্প করার সময় এসব কথার দ্বারা অনেক বড় গুনাহ হয়।

তবে শুধু কথার মাধ্যমেই নয় বরং আরও নানা ভাবে গিবত হতে পারে। যেমন, লেখনীর মাধ্যমে, ইশারা-ইঙ্গিতে বা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে কারও সমালোচনা করা। কারও কোনো অভ্যাস নিয়ে চিত্র, লেখা বা কার্টুনের মাধ্যমেও গিবত করা যায়।

কারও কোনো দোষ আলোচনা করা গিবতের সবচেয়ে পরিচিত রূপ। এ ছাড়াও শারীরিক দোষ-ত্রুটি, পোশাক-পরিচ্ছদের সমালোচনা, জাত-বংশ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা, কারও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও অভ্যাস নিয়ে সমালোচনা করা ইত্যাদি গিবতের অন্তর্ভুক্ত।

See also  প্রতারণা কাকে বলে? প্রতারণা বর্জনের গুরুত্ব

(৪) গিবতের কুফল ও পরিণাম

ইসলামি শরিয়তে গিবত বা পরনিন্দা করা অবৈধ।

আল্লাহ বলেছেন,

“আর তোমরা একে অন্যের গিবত করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে ভালোবাসবে? বস্তুত তোমরা নিজেরাই তা অপছন্দ করে থাকো।”

(সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত ১২)

গিবত করাকে আল-কুরআনে নিজ মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। সুতরাং গিবত খুবই অপছন্দনীয় কাজ। সুস্থ বিবেকবান কোনো মানুষই এরূপ কাজ পছন্দ করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালাও গিবত করা পছন্দ করেন না।

পবিত্র হাদিসে মহানবি (সাঃ) আমাদের গিবতের পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

“গিবত ব্যভিচারের চাইতেও মারাত্মক। সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! গিবত কীভাবে ব্যভিচারের চাইতেও মারাত্মক অপরাধ হয়? রাসুল (সাঃ) বললেন, কোনো ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তওবা করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু গিবতকারীকে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ মাফ করবেন না, যতক্ষণ না যার গিবত করা হয়েছে সে ব্যক্তি মাফ করবে।”

(বায়হাকি)

ইসলামি শরিয়তে গিবত সম্পূর্ণরূপে হারাম। কারও গিবত করা যেমন হারাম তেমনি গিবত শোনাও হারাম। গিবত না করার পাশাপাশি গিবত শোনা থেকেও বিরত থাকতে হবে। গিবতকারীকে গিবত বলা থেকে বিরত থাকার জন্য বলতে হবে। নতুবা যেসব স্থানে গিবতের আলোচনা হবে সেসব স্থান এড়িয়ে চলতে হবে।

গিবতের পাপ অত্যন্ত ভয়াবহ। আমরা অনেক সময় এমন ব্যক্তির গিবত করে থাকি যার নিকট ক্ষমা চাওয়ারও সুযোগ নেই। ফলে গিবতের এ পাপ আল্লাহও ক্ষমা করবেন না।

সুতরাং আমরা গিবত করা থেকে বিরত থাকব। যদি কোনো কারণে তা হয়ে যায় তবে সাথে সাথে গিবতকৃত ব্যক্তির নিকট থেকে ক্ষমা চেয়ে নেব।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts