প্রশ্ন: জুমার নামাজ কত রাকাত?
উত্তর: জুমার ফরজ নামাজ দুই রাকাত, যা জামাতের সাথে আদায় করা ফরজ অর্থ্যাৎ, বাধ্যতামূলক।
এছাড়া অতিরিক্ত হিসেবে-
- মসজিদে প্রবশ করে বসার আগেই প্রথমে দুই রাকআত দুখুলুল মসজিদ/তাহিয়াতুল মসজিদ সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজ পড়া।
- এরপর চার রাকাত কাবলাল জুমা সুন্নত নামাজ আদায় করা, যা খুতবা শুরু হবার আগেই আদায় করে নিতে হবে, খুতবা শুরু হয়ে গেলে এ নামাজ আর পড়া যাবে না।
অথবা, খুতবা শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দু রাকাত দু রাকাত করে সাধ্যমত যত পারা যায় নফল নামাজ পড়া। - এবং তারাপর ইমামের পিছনে জামাতর সাথে জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার পরে, তারপর মসজিদে পড়লে চার রাকাত বাদাল জুমা সুন্নত নামাজ অথবা, বাড়িতে গিয়ে পড়লে দুই রাকাত বাদাল জুমা সুন্নত নামাজ আদায় করতে হয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: মসজিদে প্রবেশ করেই যদি, চার রাকাত কাবলাল জুমা সুন্নত নামাজ পড়াতে চাইলে, তাহলে মসজিদে প্রবেশ করে শুরুতে দুই রাকআত দুখুলুল মসজিদ/তাহিয়াতুল মসজিদ সুন্নত নামাজ পড়ার দরকার নেই।
কারণ, যে নামাজের আগে সুন্নতে মুয়াক্কাদা আছে, ওই নামাজের আগে মসজিদে প্রবেশ করে সুন্নতে মুয়াক্কাদা পড়লে দুখুলুল মসজিদ/তাহিয়াতুল মসজিদ নামাজ আর পড়তে হয় না। কারণ তখন সুন্নতে মুয়াক্কাদা-ই তাহিয়াতুল মসজিদ নামাজের স্থলাভিষিক্ত ও যথেষ্ট হয়। (দেখুন→ মাজাল্লাতুল বুহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৫/৬৭, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৬৭, ইবনে উসাইমীন ৫৩/৬৯)
নিম্নে জুমার নামাজ কত রাকাত? বা জুম্মার নামাজ কয় রাকাত? (jumma namaz rakat sonkha) সম্পর্কিত সহিহ্ হাদীস সমূহকে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করা হলো-
ক) মসজিদে প্রবশ করে বসার আগেই প্রথমে দুই রাকআত দুখুলুল মসজিদ/তাহিয়াতুল মসজিদ সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজের দলিল
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) …. আবূ কাতাদা সালামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার পূর্বে দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেয়।”
(সহিহ্ বুখারি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩১ নং)
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, তখন বসার আগে দু-রাক’আত সালাত আদায় করবে।”
(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৫২৭ নং)
মসজিদে ঢুকলে না বসে আগে দু’রাকআত সালাত আদায় করা আবশ্যক। এ সালাতকে বলা হয় তাহিয়্যাতুল মসজিদ’। এটাকে ‘দুখুলুল মসজিদও বলা হয়। অন্যান্য সাধারন দুই রাকাত সুন্নাত সালাত যেভাবে পড়া হয় এ সালাতও এভাবেই পড়তে হয়।
তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায়ের বিষয়ে ড. সালিহ আল-মুনাজ্জিদ বলেন,
“মসজিদে প্রবেশের সময় দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করতে হয় মসজিদের প্রতি সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনের জন্য। বস্তুত এর মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশের পর আল্লাহর প্রতি তার আনুগত্যের ঘোষণা ও সূচনা করেন। ”
(সিলসিলাতুল আদাব, পৃষ্ঠা ১৬)
কেউ কেউ বলেছেন, দু’রাক’আত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় মুস্তাহাব এবং দু’রাক’আত আদায় করার পূর্বে বসা মাকরূহ। তবে অধিকাংশ ফকীহর মতে, এ সালাত হলো সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। অনেক আলেম এটিকে ওয়াজিবের কাছাকাছি মনে করেন।
সুতরাং এটি ওয়াজিবের কাছাকাছি একটি সুন্নাহ। এটি পড়তে হয়, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: মসজিদে প্রবেশ করেই না বসে, যদি অন্য কোন সুন্নত নামাজ পড়াতে চাইলে, তাহলে মসজিদে প্রবেশ করে শুরুতে দুই রাকআত দুখুলুল মসজিদ/তাহিয়াতুল মসজিদ সুন্নত নামাজ পড়ার দরকার নেই।
কারণ, যে নামাজের আগে সুন্নতে মুয়াক্কাদা আছে, ওই নামাজের আগে মসজিদে প্রবেশ করেই না বসে, প্রখমে সুন্নতে মুয়াক্কাদা পড়লে, দুখুলুল মসজিদ/তাহিয়াতুল মসজিদ নামাজ আর পড়তে হয় না। তখন সুন্নতে মুয়াক্কাদা-ই তাহিয়াতুল মসজিদ নামাজের স্থলাভিষিক্ত ও যথেষ্ট হয়। (দেখুন→ মাজাল্লাতুল বুহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৫/৬৭, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৬৭, ইবনে উসাইমীন ৫৩/৬৯)
খ) জুমার মূল খুতবা শুরুর পূর্বে চার রাকাত কাবলাল জুমা সুন্নত নামাজের দলিল
হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) বর্ণনা করেন,
“রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য হেলে যাওয়ার পর চার রাকাত সালাত পড়তেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কিসের সালাত, যা আপনি নিয়মিত পড়েন? তিনি বললেন, এটি এমন একটি সময়, যখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। আর আমি পছন্দ করি, যেন এ সময় আমার কোনো নেক আমল উপরে ওঠে। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এর প্রতি রাকাতে কি সূরা মিলাতে হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম, এই সালাত কি এক সালামে না দুই সালামে? তিনি উত্তর দিলেন, এক সালামে।”
(তিরমিযী ১/৭৭ ও আবু দাউদ ১/১৮০)
ইমাম তিরমিযী রাহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। এই হাদীসে উক্ত চার রাকাত নামাজ নিয়মিত পড়ার কথা আছে। জুমার দিনসহ সপ্তাহের সকল দিন এই হাদীসের আওতাভুক্ত।
তাবেঈ আবু আব্দুর রহমান আস-সুলামী বলেন,
“সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে জুমার পূর্বে চার রাকআত এবং পরে চার রাকআত সালাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর আলী রা. আমাদেরকে জুমার পর প্রথমে দুই রাকআত এরপর চার রাকআত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।”
(মুসান্নাফু আব্দুর রাজ্জাক ৫৫২৫ নং/খন্ড-৩ এর পৃষ্ঠা-২৪৭; তবারানী কাবীর ৯৪৩৬ নং; লাউস সুনান ১৭৬২ নং)
এই হাদীসটির বিষয়ে শায়খ আলবানী রহ. বলেছেন: ﻭﻫﺬﺍ ﺳﻨﺪ ﺻﺤﻴﺢ ﻻ ﻋﻠﺔ ﻓﻴﻪ অর্থ্যাৎ, যার অর্থ হলো এটা সহীহ সনদ, তাতে কোন সমস্যা নেই। (দেখুন→ সিলসিলাতুয যয়ীফাহ, ১০১৬ নং হাদীসের আলোচনা)
এছাড়াও হাজার আসকালানী বলেন: رجاله ثقات” অর্থাৎ উক্ত হাদীসের বর্ণনাকারীগণ হলেন বিশ্বস্ত এবং গ্রহণযোগ্য। (দেখুন→ আদ দিরায়াহ: ১/১১৩)
ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) বলেন,
“সাহাবায়ে কেরাম জুমার পূর্বে চার রাকাত পড়তেন।”
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৫৪০৫, ৫৪২২ নং)
পরিশেষে বলা যায়, জুমার পূর্বের সুন্নাত নামাজের রাকাত সংখ্য সরাসরি রাসূল (সা.) এর নিকট থেকে নির্দিষ্ট নয়। তবে, সাহাবীদের আমল থেকে জুমার পূর্বে চার রাকাত কাবলাল জুমা সুন্নত নামাজের দলিল পাওয়া যায়, তাই এটি আমল করা বৈধ।
গ) জুমার মূল খুতবা শুরুর পূর্বে দু রাকাত দু রাকাত করে সাধ্যমত যত পারা যায় তত নফল নামাজ পড়ার দলিল
ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন,
“সাহাবিদের থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা জুমার দিন যখন মসজিদে যেতেন তখন মসজিদে প্রবেশের পর যথাসাধ্য সালাত পড়তেন। কেউ পড়তেন দশ রাকাত, কেউ পড়তেন বারো রাকাত, কেউ পড়তেন আট রাকাত আর কেউ পড়তেন তার চেয়ে কম।”
(মাজমুউুল ফাতাওয়া ২৪/১৮৯)
আবদান ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যাক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, এরপর তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর (মসজিদে) যায়, আর দু’জনের মধ্যে ফাঁক করে না এবং তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমান (তাওফিক মতো) পরিমান সালাত আদায় করে। আর ইমাম যখন (খুতবার জন্য) বের হন তখন চুপ থাকে। তার এ জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। ”
(সহিহ্ বুখারি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮৬৪ নং)
উমাইয়া ইবনু বিসতাম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“জুমার দিনে যে ব্যাক্তি গোসল করে অতঃপর জুমার জন্য যায় এবং সমর্থ অনুযায়ী সালাত আদায় করে, এরপর ইমাম খূতবা সমাপ্ত করা পর্যন্ত নীরবে থাকে, এরপর ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করে। তবে তার এ জুমা হতে পরবতীঁ জুমা পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।”
(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৮৬০ নং)
পরিশেষে বলা যায়, রাসূল (সা.) জুমার পূর্বে সাধ্য মত নামজ আদায় করতে উৎসাহিত করেছেন। উল্লেখিত হাদীসে রাকআত সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয় নি। তাই আলেমগণ বলেছেন দুই রাকআত থেকে শুরু করে যত ইচ্ছা পড়বে, যত বেশী পড়বে সওয়াব ততো বেশী হবে।
ঘ) ইমাম খুতবা দেয়া অবস্থায় কেউ যদি মসজিদে আসে তাহলে কেবল দু রাকআত দুখুলুল মসজিদ/তাহিয়াতুল মসজিদ পড়বে, তারপর মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনবে
ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় যিনি মসজিদে আসবেন তার সংক্ষেপে দু’ রাকা’আত সালাত আদায় করার সহিহ হাদিস, এক:
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“এক জুমার দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দেওয়ার সময় এক ব্যাক্তি প্রবেশ করল। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছ কি? সে বলল, না, তিনি বললেনঃ উঠ, দু’ রাকা’আত সালাত আদায় করে নাও।”
(সহিহ্ বুখারি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮৮৪ নং)
ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় কাউকে আসতে দেখলে তাকে দু’ রাকা’আত সালাত আদায়ের আদেশ দেওয়ার সহিহ হাদিস, দুই:
আবূ নু’মান (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“(কোন এক) জুমার দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে খুতবা দিচ্ছিলেন। এমনি সময় এক ব্যাক্তি আগমণ করল। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে অমুক! তুমি কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছ? সে বলল, না; তিনি বললেন, উঠ, সালাত আদায় করে নাও।”
(সহিহ বুখারি ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮৮৩ নং)
ইমামের খুতবাকালে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করার সহিহ হাদিস, তিন:
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
“সূলায়ক গাতফানী (রাঃ) জুমার দিনে এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। সুলায়ক (রাঃ) বসে পড়লেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সূলায়ক! তুমি দাঁড়িয়ে সংক্ষেপে দু’রাকআত সালাত আদায় করে নাও। তারপর বললেন, তোমাদের কেউ জুমার দিন মসজিদে এলে, ইমাম তখন খুৎবারত থাকলে সংক্ষিপ্ত আকারে দু’ রাকআত সালাত আদায় করে নেবে।”
(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৮৯৭ নং)
ইমামের খুতবাকালে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করার সহিহ হাদিস, চার:
কুতায়বা ইবনু সাঈদ, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
“সুলায়ক গাতফানী (রাঃ) শুক্রবার দিনে (মসজিদে) এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপরে বসা ছিলেন। সুলায়ক (রাঃ) সালাত আদায় না করে বসে পড়লেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি দু’রাক’আত সালাত আদায় করেছ? তিনি বললেন, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি দাঁড়াও দু’রাকআত সালাত আদায় করে নাও।”
(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৮৯৬ নং)
ইমামের খুতবাকালে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করার সহিহ হাদিস, পাঁচ:
মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি বললেন, জুমার দিনে তোমাদের কেউ যখন (মসজিদ) আসে আর তখন যদি ইমাম (হুজরা থেকে) বের হয়ে থাকেন, তবে সে দু’ রাকআত সালাত আদায় করে নেবে।”
(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৮৯৫ নং)
তাই উক্ত হাদীস সমূহের উপর আমলার্থে জুমাআর খুত্বা চলাকালীনও দু রাকআত দুখুলুল মসজিদ/তাহিয়াতুল মসজিদ সালাত আদায় করতে হবে।
ঙ) জামাতে জুমার ফরজ নামাজ শেষে মসজিদে পড়লে চার রাকাত বাদাল জুমা সুন্নত নামাজ অথবা, বাড়িতে গিয়ে পড়লে দুই রাকাত বাদাল জুমা সুন্নত নামাজ এর দলিল
ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“তোমাদের কেউ জুমার সালাত আদায় করলে তারপর চার রাকআত সালাত আদায় করবে।”
(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৯০৯ নং)
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়রা ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“তোমরা জুমার পর সালাত আদায় করলে চার রাকআত আদায় করবে। আমর এর বর্ণনায় এ কথা অতিরিক্ত রয়েছে যে, ইবনু ইদ্রীস বলেন, সুহায়ল বলেছেন যে, যদি তোমার তাড়াহুড়ো থাকে তবে মসজিদে দু’রাকআত ও বাড়ীতে গিয়ে দু’রাকআত পড়ে নাও।”
(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৯১০ নং)
যুহায়র ইবনু হারব, আমরুন নাকিদ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“তোমাদের মধ্যে যে কেউ জুমার পর সালাত আদায় করতে চায় সে যেন চার রাকআত আদায় করে। তবে জারীর (রাঃ)-এর হাদীসে “তোমাদের মধ্যে” কথাটি নাই।”
(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৯১১ নং)
ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া, মুহাম্মদ ইবনু রুমহ ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণিত যে,
“তিনি জুমার সালাত শেষে চলে যেতেন এবং ঘরে গিয়ে দু’ রাকআত পড়ে নিতেন। এরপর তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এরূপ করতেন।”
(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৯১২ নং)
ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) … নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নফল সালাতের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
“জুমার পর তিনি কোন সালাত আদায় করতেন না। তবে বাড়ীতে ফিরে দুই রাকআত আদায় করতেন। ইয়াহয়া (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয় তিনি সালাত আদায় করতেন অথবা এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।”
(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৯১৩ নং)
হজরত ইবনে উমর (রা.) সম্পর্কে আতা (রহ.) বলেছেন,
“তিনি যখন মক্কা মুকাররমায় অবস্থান করতেন এবং জুমার সালাত পড়তেন, তিনি জুমার সালাতের পর জায়নামাজ থেকে একটু অগ্রসর হয়ে (সরে গিয়ে) দুই রাকাত পড়তেন, এরপর আরেকটু অগ্রসর হয়ে (সরে গিয়ে) চার রাকাত পড়তেন। আর যখন মদিনা মুনাওয়ারায় জুমা আদায় করতেন তখন ঘরে ফিরে গিয়ে দুই রাকাত পড়তেন। মসজিদে পড়তেন না। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এমনই করতেন। ”
(আবু দাউদ শরিফ, ১১৩০ নং)
আশা করি উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমার উপরিউক্ত জুমার নামাজ কত রাকাত? বা জুম্মার নামাজ কয় রাকাত? এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা লাভ করতে পেরেছি।
মহান রব্বলু আলামিন আমাদের ভুলগুলো ক্ষমা করুন, আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন, আমাদেরকে জুমার নামাজের রাকাত সংখ্যা অনুযায়ী আমল করার ও জুমারনামাজের ফজিলতসমূহ অর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
Queries discussed: জুমার নামাজ কত রাকাত, জুম্মার নামাজ কয় রাকাত, jumma namaz rakat sonkha, জুমা নামাজের রাকাত সংখ্যা সম্পর্কিত সহিহ্ হাদীস/দলিল।
[সূত্র: hadithbd.com]