Skip to content

 

তাওহিদ অর্থ, কি, কাকে বলে? তাওহিদের তাৎপর্য, গুরুত্ব ও শিক্ষা

তাওহিদ অর্থ, কি, কাকে বলে, তাওহিদের তাৎপর্য, গুরুত্ব ও শিক্ষা

(১) তাওহিদ অর্থ, কি, কাকে বলে?

তাওহিদ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো একত্ববাদ। পরিভাষায় আল্লাহ তা’আলা এক ও একক, তাঁর কোনো শরিক নেই- এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করার নাম তাওহিদ।

আল্লাহ তা’আলাই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও রিজিকদাতা। তিনি ব্যতীত ইবাদাতের যোগ্য কেউ নেই। তিনিই হলেন একমাত্র ইলাহ্। তিনি সকল দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত। আল্লাহ তাআলার প্রতি এরূপ বিশ্বাসই হলো তাওহিদ।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

“বলো, তিনিই আল্লাহ, এক অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন (সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী)। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।”

(সূরা আল-ইখলাস, আয়াত ১-৪)

(২) তাওহিদের তাৎপর্য

ইমান ও ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে তাওহিদ অন্যতম। ইসলামে তাওহিদের গুরুত্ব সর্বাধিক। তাওহিদের মূল বাণী হলো- লা ইলাহা ইল্লালাহ অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। তিনি সবকিছুর স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রণকর্তা। ফলে আসমান ও জমিনের সবকিছু সুচারুরূপে পরিচালিত হচ্ছে।

যেমন পবিত্র কুরআন মাজিদে বর্ণিত হয়েছে,

“যদি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে, আল্লাহ ব্যতীত বহু ইলাহ থাকতো, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত।”

(সুরা আল-আম্বিয়া, আয়াত ২২)

হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত সকল নবি-রাসুল মানুষের নিকট তাওহিদের বাণী প্রচার করছেন।

(৩) তাওহিদ এ বিশ্বাসের গুরুত্ব

একজন মানুষকে মুসলিম হতে হলে সর্বপ্রথম তাওহিদে বিশ্বাসী হতে হয়। তাওহিদে বিশ্বাস ছাড়া কোন ব্যক্তি ইমানদার হতে পারে না। তাওহিদের শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য নবি-রাসুলগণ আজীবন চেষ্টা করেছেন।

একজন মুসলমানের জন্য তাওহিদে বিশ্বাস স্থাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ-

  • আল্লাহ তা’আলা আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তাওহিদে বিশ্বাসের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ তৈরি হয়।
  • তাওহিদে বিশ্বাসীরা আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে মাথা নত করে না। এতে তাদের আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদা বেড়ে যায়।
  • তাওহিদে বিশ্বাসীরা আল্লাহর গুণাবলির পরিচয় জানতে পারে এবং সে অনুযায়ী চলার চেষ্টা করে। ফলে তাদের আচরণ ও চরিত্র সুন্দর হয়।
  • তাওহিদে বিশ্বাসীরা বিশ্বাস করে যে, সকল মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। তাই তারা সকলকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে এবং সমাজে সকলের সাথে মিলেমিশে চলতে চেষ্টা করে।
  • তাওহিদে বিশ্বাস একজন মানুষের মনে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করে। তাই তাওহিদে বিশ্বাসীরা আল্লাহর হক ও বান্দার হক আদায় করার চেষ্টা করে। ফলে সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে।
  • তাওহিদে বিশ্বাসী ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তা’আলা তাকে সবসময় দেখছেন। ফলে সে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে।
See also  তাওহিদ শব্দের অর্থ, কী, কাকে বলে? তাওহিদ বলতে কী বুঝায়? তাওহিদের গুরুত্ব ও প্রভাব

(৪) আল্লাহর পরিচয়

আল্লাহ তা’আলা এক ও অদ্বিতীয়া তিনি এ বিশ্বজগতের স্রষ্টা ও মালিক।

আল্লাহর পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ তা’আলা নিজেই বলেন,

“আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ্ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্ত তাঁরই।”

(সুরা আল-বাকারা, আয়াত ২৫৫)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ। তিনিই প্রকাশ্য, তিনিই গোপন এবং তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।

(সূরা আল-হাদীদ, আয়াত ৩)

(৫) আল্লাহর গুণাবলি

আল্লাহ তাআলা সকল গুণের অধিকারী। তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। এ মহাজগতে যা কিছু আছে সবই তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি আমাদের নানারকম নিয়ামত দান করেছেন। আলো, বাতাস, পানি, খাদ্যসহ পৃথিবীতে এবং আকাশে যা কিছু আছে সব তারই দান।

আল্লাহ তা’আলার রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর নাম। এসব নামের মধ্যেই তাঁর গুণাবলি প্রকাশিত হয়েছে। আল্লাহ তা’আলার এসব গুণাবলি অনুসরণ করলে আমরা চরিত্রবান হতে পারবো এবং সমাজে নৈতিকতা ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠিত হবে।

নিম্নে আল্লাহ তা’আলার কয়েকটি গুণবাচক নাম আলোচনা করা হলো-

ক) আল্লাহ রাহিদুন

রাহিমুন অর্থ পরম দয়ালু। আল্লাহ তা’আলা অসীম দয়ালু। সবকিছুর ওপর তাঁর রহমত বিরাজমান।

হাদিসে বর্ণিত আছে যে,

“কোন এক যুদ্ধবন্দীদলকে মহানবি (সা.)-এর সামনে নিয়ে আসা হলো। এসময় একজন নারী দৌঁড়ে এসে একটি শিশুকে তার পেটের সাথে জড়িয়ে ধরল এবং তাকে দুধ পান করালো, তখন (মহানবি সা.) তাঁর সাথীদের জিজ্ঞেস করলেন- তোমরা কি মনে কর যে, এ মহিলা তার সন্তানটিকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে? সাহাবিগণ উত্তর দিলেন, আল্লাহর শপথ! কখনই না। তখন মহানবি (সা.) বললেন, ‘এ মহিলা তার সন্তানের প্রতি যতটুকু স্নেহশীল ও দয়ালু, মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি এর চেয়েও বেশি দয়ালু।”

(বুখারী ও মুসলিম)

খ) আল্লাহ আযিমুন

আযিযুন অর্থ প্রবল পরাক্রমশালী। মহান আল্লাহ সকল শক্তির অধিকারী। পৃথিবীর কোনো শক্তি তাঁর ক্ষতি করতে পারে না। কোনো ক্ষমতাশীল তাঁকে অক্ষম করতে পারে না।

See also  তাওহিদ শব্দের অর্থ, কী, কাকে বলে? তাওহিদ বলতে কী বুঝায়? তাওহিদের গুরুত্ব ও প্রভাব

কুরআন মাজিদে বলা হয়েছে,

“নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”

(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২২০)

গ) আল্লাহ মুহাইমিনুন

মুহাইমিনুন অর্থ রক্ষক, রক্ষণাবেক্ষণকারী, হেফাজতকারী।

এ সৃষ্টিকূলের একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ তাআলা এবং তিনিই আমাদের রক্ষক। তিনি আমাদের জাগতিক বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন। তাঁরই দেওয়া নিয়ামতের ফলে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করতে পারি।

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,

“তিনিই আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তি ও নিরাপত্তা বিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতীব মহিমান্বিত। তারা যাকে শরিক স্থির করে আল্লাহ তা হতে পবিত্র।”

(সূরা আল-হাশর, আয়াত ২৩)

ঘ) আল্লাহ রাধাকুন

রায়্যাকুন অর্থ রিফিকদাতা। মহান আল্লাহ হলেন রিযিকদাতা। রিষিক অর্থ জীবিকা, জীবন উপকরণ ইত্যাদি।

আল্লাহ তা’আলা বিশ্বের সকল প্রাণীর রিযিকের ব্যবস্থা করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে বেহিসাব রিযিক দান করেন।

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

“ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলেরই জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর।”

(সূরা হুদ, আয়াত ৬)

ঙ) আল্লাহ আলিখুন

আলিমুন অর্থ সর্বজ্ঞ, অর্থাৎ যিনি সবকিছু জানেন বা যিনি সকল জ্ঞানের অধিকারী।

আল্লাহ তা’আলা হলেন সকল জ্ঞানের অধিকারী। তাঁর জ্ঞান অসীম যা পরিমাপ করা যায় না। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। তিনি আসমান-জমিনসহ সকল বিষয়ে সম্যক অবগত।

আমাদের সকল কথাবার্তা ও কাজকর্ম সম্পর্কে তিনি জানেন। এমনকি আমাদের অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কেও তিনি জানেন। আমরা যা কল্পনা করি বা স্বপ্ন দেখি সেগুলোও তাঁর জানার বাইরে নয়।

পবিত্র কুরআনে এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন,

“অন্তরে যা আছে আল্লাহ সে সম্পর্কে বিশেষভাবে অবস্থিত।”

(সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৪)

চ) আল্লাহ হাকিমুন

হাকিমুন অর্থ প্রজ্ঞাময়, সুবিজ্ঞ ও সুনিপুণ কর্মদক্ষ।

আল্লাহ তা’আলা হলেন প্রজ্ঞাময়, মহান হিকমতের অধিকারী। এ মহাবিশ তিনি সুনিপুণভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং মহাপ্রজ্ঞা ও সুদক্ষ কর্মকৌশলের সঙ্গে পরিচালনাও করছেন।

See also  তাওহিদ শব্দের অর্থ, কী, কাকে বলে? তাওহিদ বলতে কী বুঝায়? তাওহিদের গুরুত্ব ও প্রভাব

আমাদের চারপাশে যে দিকেই তাকাই সর্বত্রই মহান আল্লাহর প্রজ্ঞা ও সুনিপুণ কর্মকৌশল দেখতে পাই।

এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন মাজিদে আল্লাহ বলেন,

“যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সপ্তাকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোনো খুঁত দেখতে পাবে না; তুমি আবার তাকিয়ে দেখো, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি?”

(সূরা আল-মুলক, আয়াত ৬৭)

(৬) তাওহিদের শিক্ষা

আকাইদের সর্বপ্রথম ও প্রধান বিষয় হলো তাওহিদ। তাওহিদ অর্থ আল্লাহ তা’আলাকে এক ও অদ্বিতীয় বলে বিশ্বাস করা, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা।

তাওহিদ থেকে আমরা নিম্নলিখিত শিক্ষা লাভ করতে পারি-

  1. আমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করব, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদাত করব না।
  2. আল্লাহ তা’আলা আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীর সবকিছু তিনি আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এ জন্য আমরা সর্বদা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করব।
  3. আল্লাহ তা’আলা বিপদ-আপদ থেকে একমাত্র মুক্তিদাতা। সুতরাং বিপদ আপদ থেকে পরিত্রাণের জন্য আমরা সব সময় আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করব।
  4. আমরা আল্লাহর গুনবাচক নামসমূহ জানব ও সেই সব নামে তাঁকে ডাকব এবং আল্লাহর গুণে গুণাধিত হওয়ার চেষ্টা করব।
  5. আল্লাহ তাআলা আমাদের সব সময় দেখছেন এবং আমাদের সকল কাজের হিসাব রাখছেন। সুতরাং আমরা সর্বদা ভালো কাজ করব এবং অন্যায়, অত্যাচার ও সর্বপ্রকার পাপ কাজ থেকে দূরে থাকব।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page