(১) তাকওয়া শব্দের অর্থ কী?
তাকওয়া শব্দের অর্থ বিরত থাকা, বেঁচে থাকা, ভয় করা, নিজেকে রক্ষা করা। ব্যবহারিক অর্থে পরহেজগারি, খোদাভীতি, আত্মশুদ্ধি ইত্যাদি বোঝায়।
(২) তাকওয়া কাকে বলে?
ইসলামি পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালার ভয়ে যাবতীয় অন্যায়, অত্যাচার ও পাপকাজ থেকে বিরত থাকাকে তাকওয়া বলা হয়।
(৩) তাকওয়া কী?
সকল প্রকার পাপাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করাকে তাকওয়া বলা হয়। যিনি তাকওয়া অবলম্বন করেন তাঁকে বলা হয় মুত্তাকি।
(৪) তাকওয়া মানে কী?
মহান আল্লাহকে ভয় করার অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। আল্লাহ তায়ালা আমাদের স্রষ্টা ও পালনকর্তা। তিনি আমাদের সবকিছু দেখেন, জানেন। তিনি শাস্তিদাতা ও মহাপরাক্রমশালী।
হাশরের দিনে তিনি আমাদের সকল কাজের হিসাব নেবেন। অতঃপর পাপকাজের জন্য শাস্তি দেবেন। আল্লাহ-ভীতি হলো আল্লাহ তায়ালার সামনে জবাবদিহি করার ভয়। অতঃপর এরূপ অনুভূতি মনে ধারণ করে সকল পাপ থেকে বেঁচে থাকতে হয়। সকল প্রকার অন্যায়, অত্যাচার, অশ্লীল কথা-কাজ ও চিন্তাভাবনা থেকে বিরত থাকতে হয়।
আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করলে এসব পাপ থেকে সহজেই বেঁচে থাকা যায়। ফলে মুত্তাকিগণ পরকালে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার ভয় করবে ও কুপ্রবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকবে, তার স্থান হবে জান্নাত।”
(সূরা আন-নাযিআত, আয়াত ৪০-৪১)
(৫) তাওয়ার গুরুত্ব
তাকওয়া একটি মহৎ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। মানবজীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। তাকওয়া মানুষকে ইহকালীন ও পরকালীন উভয় জীবনকেই সম্মান-মর্যাদা ও সফলতা দান করে। ইসলামি জীবন দর্শনে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান ব্যক্তি হলেন মুত্তাকিগণ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত সেই ব্যক্তি যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়াবান। ”
(সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত ১৩)
আল্লাহ তায়ালার নিকট তাকওয়ার মূল্য অত্যধিক। ধন-সম্পদ, শক্তি-ক্ষমতা, গাড়ি-বাড়ি থাকলেই মানুষ আল্লাহ তায়ালার নিকট মর্যাদা লাভ করতে পারে না। বরং যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করতে পারেন সেই আল্লাহ তায়ালার নিকট বেশি মর্যাদাবান। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ভালোবাসেন।
আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং বলেছেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।”
(সূরা আত্ তাওবা, আয়াত ৪)
পার্থিব জীবনে মুত্তাকিগণ আল্লাহ তায়ালার বহু নিয়ামত লাভ করে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা তাকওয়াবানদের সর্বদা সাহায্য করেন। বিপদাপদ থেকে উদ্ধার করেন ও বরকতময় রিযিক দান করেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক দান করবেন।”
(সূরা আত্-তালাক, আয়াত ২-৩)
পরকালেও তাকওয়াবানদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। আল্লাহ তায়ালা শেষ বিচারের দিন মুত্তাকিদের সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন এবং মহাসফলতা দান করবেন।
আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“মুমিনগণ! যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর (আল্লাহকে ভয় কর) তবে আল্লাহ তোমাদের ন্যায়- অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অতিশয় মঙ্গলময়।”
(আল-আনফাল, আয়াত ২৯)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,
“নিশ্চয়ই মুত্তাকিগণের জন্য রয়েছে সফলতা।”
(সূরা আন্-নাবা, আয়াত ৩১)
প্রকৃতপক্ষে তাকওয়া মানব চরিত্রের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্বভাব। এর মাধ্যমে মানুষ সম্মান, মর্যাদা ও সফলতা লাভ করে।
(৬) নৈতিক জীবনে তাকওয়ার প্রভাব
নৈতিক জীবন গঠনে ও নীতি-নৈতিকতা রক্ষায় তাকওয়ার প্রভাব অনস্বীকার্য। তাকওয়া সকল সৎগুণের মূল। ইসলামি নৈতিকতার মূল ভিত্তি হলো তাকওয়া।
- তাকওয়া মানুষকে মানবিক ও নৈতিক গুণাবলিতে উদ্বুদ্ধ করে। হারাম বর্জন করতে এবং হালাল গ্রহণ করতে প্রেরণা যোগায়।
- তাকওয়াবান ব্যক্তি সদাসর্বদা আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করেন। আল্লাহ তায়ালা সবকিছু দেখেন, শোনেন, জানেন, এ বিশ্বাস পোষণ করেন। ফলে তিনি কোনোরূপ অন্যায় ও অনৈতিক কাজ করতে পারেন না।
- তাকওয়াবান কোনোরূপ অশ্লীল ও অশালীন কথা, কাজ ও চিন্তাভাবনা করতে পারেন না। কেননা তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, পাপ যত গোপনেই করা হোক না কেন, আল্লাহ তায়ালা তা দেখেন ও জানেন। কোনোভাবেই আল্লাহ তায়ালাকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে মুত্তাকি ব্যক্তি সকল কাজেই নীতি-নৈতিকতা অবলম্বন করেন এবং অনৈতিকতা ও অশ্লীলতা পরিহার করেন।
- তাকওয়া মানুষের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে এবং সচ্চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তোলে। সকল সৎ ও সুন্দর গুণ অনুশীলনে অনুপ্রাণিত করে। ফলে মুত্তাকিগণ সৎ ও সুন্দর গুণ অনুশীলনে অনুপ্রাণিত হন। অন্যদিকে যার মধ্যে তাকওয়া নেই, সে নিষ্ঠাবান ও সৎকর্মশীল হতে পারে না। সে নানা অন্যায় অত্যাচারে লিপ্ত থাকে। নৈতিক ও মানবিক আদর্শের পরোয়া করে না। ফলে তার দ্বারা সমাজে অনৈতিকতা ও অপরাধের প্রসার ঘটে।
বস্তুত তাকওয়া হলো মহৎ চারিত্রিক গুণ। নৈতিক চরিত্র গঠনে এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা সকলেই তাকওয়াবান হওয়ার চেষ্টা করব।
[সূত্র: এনসিটিবি]