Skip to content

তাসাউফ এর গুরুত্ব

তাসাউফ এর গুরুত্ব

নিম্নে তাসাউফ এর গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

তাসাউফ আরবি শব্দ। আভিধানিক অর্থ সুফিবাদ, আধ্যাত্মিকতা, অধ্যাত্মবাদ। তাসাউফ সুফিবাদ নামে খ্যাত।

তথাকথিত তাসাউফ বা সুফিবাদ বলতে, অবিনশ্বর আত্মার পরিশুদ্ধ সাধনাকে বলা হয়। আরও বলা হয়ে থাকে, আত্মার পবিত্রতার মাধ্যমে ফানাফিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে অবস্থান) এবং ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে স্থায়ীভাবে বিলীন হওয়া) লাভ করা যায়। (আস্তাগফিরুল্লাহ)

তাসাউফ সুফিবাদে আরও বলা হয়, মহান আল্লাহ অদৃশ্য ও নিরাকার। তাঁর মধ্যে ফানা হওয়ার জন্য নিরাকার শক্তির প্রতি প্রেমই একমাত্র মাধ্যম। (আস্তাগফিরুল্লাহ)

সুফিগণের উপলব্ধিতে এ তাসাউফ সাধনাকে ‘তরিকত’ বা আল্লাহ-প্রাপ্তির পথ বলা হয় ও এ সাধনায় একজন পথপ্রদর্শক মুর্শিদ দরকার হয়।


সাহাবী ও তাবেঈদের যুগ থেকে খালেস ইসলামী তাসাউফের একটি ধারা চলে আসছিল। এবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনই ছিল এর একমাত্র লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। কিন্তু পরবর্তীতে এর কর্মধারায় নানা আবর্জনা এমনভাবে মিশ্রিত হয়ে গেল যে, মুসলিমদের এক বিরাট গোষ্ঠিও এই আবর্জনা ধোয়া পানি পান করেই আত্মতৃপ্তি লাভ করতে লাগল।

হিজরী অষ্টম শতকে এসে সুফীবাদ এক গোমরাহী ও ভ্রান্ত মতবাদে পরিণত হয়। তাসাউফের লেবাস ধরে নির্ভেজাল ইসলামী আকীদাহর বিভিন্ন পর্যায়ে গ্রীক দর্শন, সর্বেশ্বরবাদ, অদ্বৈত্ববাদ ইত্যাদির অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। আবর্জনা মিশ্রিত সুফীবাদের দাবীদাররা ইলমকে যাহেরী-বাতেনীতে বিভক্ত করতে থাকে, একজনের বক্ষদেশ থেকে অন্যজনের বক্ষদেশে জ্ঞানের গোপন বিস্তার হয় বলে প্রচার করতে থাকে এবং কামেল পীর-মুরশিদ ও আল্লাহর প্রেমে পাগল ভক্তের জন্য শরীয়তের বিধি-বিধান মেনে চলার প্রয়োজন নেই ইত্যাদি ভ্রান্ত চিন্তা-বিশ্বাস তাসাউফের নামে মুসলিমদের বিরাট এক অংশের উপর চেপে বসে।

আল্লাহর অলী ও তাঁর নেক বান্দাদের ব্যাপারে অমুসলিমদের ন্যায় মুসলিমরাও বাড়াবাড়ি শুরু করে। তাদের কাছে ফরিয়াদ জানাতে এবং নিজেদের দিলের মাকসুদ পূরা করতে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আলেমগণও অলীদের কবরে ধরণা দিত।

ইসলামের নামে এই সব জাহেলীয়াতের অন্ধকারের বিরুদ্ধে জিহাদ করে খালেস তাওহীদের দিকে মুসলিমদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য এমন একজন মর্দে মুজাহিদের প্রয়োজন ছিল, যিনি তাওহীদ ও শির্কের পার্থক্য সম্পর্কে সুস্পষ্টরূপে অবগত, জাহেলীয়াতের সকল চেহারা সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে যিনি ওয়াকিফহাল এবং যিনি জাহেলীয়াতের মূলোৎপাটন করে মুসলিমদের জন্য সরাসরি কুরআন, সুন্নাহ এবং সাহাবী ও তাবেঈদের আমল থেকে নির্ভেজাল আকীদাহ ও আমল তুলে ধরবেন। এই গুরু দায়িত্বটি পালন করার জন্য হিজরী অষ্টম শতকে আল্লাহ তাআলা ইমাম ইবনে তাইমীয়া রাহিমাহুল্লাহ সহ আরও অনেককেই চয়ন করেন। তারা তখন আবারও মুসলিমদের সামনে ইসলামের পরিচ্ছন্ন আকীদাহ্ বিশ্বাস তুলে ধরেন এবং সকল প্রকার শির্ক-বিদআত থেকে মুসলমানদের পরিশুদ্ধ করার চেষ্টো করেন।

See also  শরিয়ত ও তাসাউফের মধ্যে সম্পর্ক

কোরআন ও সহিহ হাদিসের কোন বর্ণনা নেই, যেখানে তাসাউফ বা সুফিবাদের সত্যতা প্রমাণিত হয়। তাছাড়া সাহাবায় কেরাম ও হাক্কানীদের জীবন থেকে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, তাসাউফ একটি নতুন সৃষ্ট পথভ্রষ্ট মতবাদ। সুতরাং আমাদের কর্তব্য তাসাউফ সাধনা নামক এক প্রকার পথভ্রষ্টতা নিজেদের রক্ষা করা এবং জীবনকে বিশ্ব নবি সহরত মুহাম্মদ (সা.) এর দেখানো পথে পরিচালনা করা, নিজেকে কুসংস্কার ও বিদআতমুক্ত রাখা। নিজেদের শুধুমাত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোতে আলোকিত করার চেষ্টা করা।

সুন্দর পরিচ্ছন্ন, হিংসা বিদ্বেষমুক্ত, মানবকল্যাণধর্মী পরোপকারী জীবন গড়লে মুহাম্মদ (সাঃ) জীবনাদর্শের অনুসরণ একমাত্র উপায়। কুরআর ও সুন্নাহর অনুরণই কেবল পারে মানুষকে মানবিক করতে। যার অন্তরে আছে আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা, সেই কেবল পারে একটি আদর্শ জীবন গড়তে। পারে মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে। কুরআন ও সহিহ হাদিসের শিক্ষা মানুষকে করে আল্লাহভীরু, সৎ, বিনয়ী ও আদর্শবান। সুতরাং আদর্শ জীবন গঠনে মাহান রব্বউল আলামেন কর্তৃক প্রদত্ত ইসলামই একমাত্র জীবনব্যবস্থা, আর ইসলাম চলে শুধু মাত্র আল্লাহর প্রেরিত রাসূল মুহাম্মদ (সা.) ও পবিত্র কুরআন দ্বারা। কোন মানব সৃষ্ট মতবাদ দ্বারা নয়।


অন্তর বা রূহের বিশুদ্ধতা অর্জন ছাড়া মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভ করতে পারে না।

মানুষের পরিশুদ্ধ অন্তর আল্লাহকে উপলব্ধি করতে পারে, আল্লাহকে হাযির-নাযির জানে। আত্মা পরিশুদ্ধ হলে আল্লাহকে বুঝা ও তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উপযোগী হয়ে উঠে। প্রকৃত পক্ষে অন্তরের পরিশুদ্ধি ও পবিত্রতা ছাড়া আল্লাহকে বুঝা যায় না। 

রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন,

“সাবধান দেহের মধ্যে গোশতের এমন একটা টুকরা রয়েছে, যা সুস্থ থাকলে সমস্ত দেহটা সুস্থ থাকে, আর তা দূষিত হয়ে পড়লে সারা দেহটাই দুষিত হয়ে পড়ে। সাবধান তাহলো কলব (অন্তর/আত্না)।”

(বুখারী ও মুসলিম)

শয়তানের চক্রান্ত এবং কূপ্রবৃত্তির তাড়নায় মানুষের মন দুনিয়ার আকর্ষণের প্রতি ধাবিত হয়। আল্লাহর যিকর ও আল্লাহর মুহাব্বত প্রাপ্তির উপযুক্ত ব্যক্তির অন্তর সদা জাগ্রত থাকে।

“জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই আত্মার প্রশান্তি।”

(সূরা রা‘আদ ১৩:২৮)

আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় পদ্ধতিতে ইবাদত পালনের জন্য বিশুদ্ধ মনের প্রয়োজন।

See also  সুফিবাদ কি? সুফিবাদ কি ইসলাম সমর্থন করে? সুফিবাদ ও ইসলাম; তাসাউফ কাকে বলে? তাসাউফ এর গুরুত্ব

রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন,

“তোমরা এমনভাবে আল্লাহ্র ইবাদত করবে- যেন আল্লাহকে দেখতে পাও। আর যদি দেখতে না পাও তাহলে মনে করবে তিনি তোমাকে দেখতে পান।”

(বুখারী ও মুসলিম)

হাদিসের পরিভাষায় একে ইহসান বলা হয়। ইহসান মানুষকে পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। বস্তুত মানুষ আল্লাহ্কে দেখছে কিংবা আল্লাহ মানুষকে দেখছেন। এমন উচ্চ মার্গের অনুভূতি নিয়ে কাজকর্ম ও ইবাদত-বন্দেগী সম্পাদন করলেই তা সুন্দর থেকে আরো সুন্দরতম হতে পারে। সেটাই মানব জীবনে ইহকালীন-পরকালীন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। ইহসান পর্যায় উপনীত হওয়ার জন্য মানুষকে অত্যন্ত পরিশ্রম ও কঠোর সাধনা করতে হয়। এ কথা অনস্বীকার্য যে ইলমে তাসাউফ এই ইহসানেরই অপর নাম।

আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে কোন তাসাউফ বা সুফিবাদ নয়, কুরআন ও সুন্নাহ অনুযয়িী জীবন পরিচালতা করা একমাত্রপথ। একমাত্র কুরআন ও মুহাম্মদ (সাঃ) এর সুন্নাহ মেনে জীবনযাপন করলেই আত্রার পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধিতা অর্জন করা সম্ভব।

তাসাউফ নামের এসব, ভুল আকিাদা লালন, পীর-মুরিদী, শির্ক-বিদয়াত ও পথভ্রষ্ট মতবাদ থেকে আমাদের বাঁচতে হবে ও উম্মাহকে বাঁচাতে হবে।


মধ্যপ্রাচ্য, পারস্য উপকূলীয় দেশ, মধ্য এশিয়া ও উত্তর ভারত থেকে আসা মুসলিম মনীষীরা বাংলাদেশে সুফিবাদের বিস্তরণ ঘটান। যেমন : শাহ সুলতান রুমি,  বাবা আদম শহিদ, শাহ সুলতান বলখি, শাহ মখদুম রূপোস, শেখ ফরিদউদ্দিন গঞ্জেশকর, মখদুম শাহদৌলা প্রমুখ। সহজিয়া মানবপ্রেম ও বাগ্মিতায় তাঁরা সর্বসাধারণের খুব কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন।

বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের পর বাংলাদেশে সুফিবাদ পায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। ধর্ম প্রচারক, ব্যবসায়ী, শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গী হয়ে সুফি বা পীর-দরবেশদের আগমন ঘটে বাংলাদেশে। এ ধারার সুফি-দরবেশের মধ্যে শেখ জালালুদ্দিন তাবরিজ, শাহজালাল, খানজাহান আলি, শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা, শাহ ফরিদ উদ্দিন উল্লেখযোগ্য।

এই পীর-দরবেশরা গ্রাম ও বিজন প্রান্তরে বসবাস করে এ দেশীয় ভাষা শিখে ইসলাম প্রচার-প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখে হয়ে যান বাংলা-বাঙালির প্রিয় স্বজন। ফিরে যাননি নিজের দেশে, বরং ঘুমিয়ে আছেন এ বাংলাদেশেরই দেশেরই পবিত্র মাটিতে।

See also  শরিয়ত ও তাসাউফের মধ্যে সম্পর্ক

প্রিয় পাঠক, উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরা আদর্শ জীবন গঠনে তাসাউফের ভূমিকা সম্পর্কে জানলাম।

মানবিক গুণাবলি অর্জন ও পাশবিকতা বর্জনের জন্য আত্নশুদ্ধি অর্জন করা প্রয়োজন। মানবিক গুণাবলি যেমন তাওবা, তাওয়াক্কুল সবর (ধৈর্য), ইখলাস (নিষ্ঠা), যোহদ, শোকর (কৃতজ্ঞতা) নির্জনে ধ্যান-সাধনা ইত্যাদি আর পাশবিকতা যেমন- লোভ, লালসা, রাগ, হিংসা ইত্যাদি।

পরিশুদ্ধ অন্তর ও কুরআন হাদিসের জ্ঞান একজন মানুষকে মর্যাদার উচ্চ আসনে সমাসীন করতে পারে। কেননা এর মাধ্যমে ব্যক্তির মন-মানসিকতার উৎকর্ষ সাধনের পাশাপাশি সৃষ্টিকর্তার মহত্ত্ব সম্পর্কে যে বাস্তব জ্ঞান অর্জিত হয়, তা মানুষকে সৃষ্টির চরম লক্ষে পৌঁছে দেয়। ফলে তার জীবন সার্থক হয়। অন্তরের গুনাহ যা দেখা যায় না, তা ত্যাগ করা যায়- আল্লাহর স্মরণ, আত্মদর্শন, আত্ম-সমালোচনা ও অন্তরের ধ্যানের মাধ্যমে। রাসূলের জীবনাদর্শ ও তার দেখানো শিখানো পথ অনুসরণই হলো অন্তরকে পরিশুদ্ধ রাখার একমাত্র পথ, সে জন্য তাসাউফ নামক মানবসৃষ্ট কোন মতবাদের চর্চার প্রয়োজন নেই।

[সূত্র: ওপেন স্কুল]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts