(১) নিফাক শব্দের অর্থ কী?
নিফাক শব্দের আভিধানিক অর্থ ভণ্ডামি, কপটতা, দ্বিমুখীভাব, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা ইত্যাদি।
নিফাক এর ব্যবহারিক অর্থ হলো অন্তরে একরকম ভাব রেখে বাইরে এর বিপরীত অবস্থা প্রকাশ করা। অর্থাৎ অন্তরে বিরোধিতা গোপন রেখে বাইরে আনুগত্য প্রদর্শন করা।
(২) নিফাক কাকে বলে?
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, অন্তরে কুফর ও অবাধ্যতা গোপন করে মুখে ইসলামকে স্বীকার করার নাম হলো নিফাক। যে এরূপ কাজ করে তাকে বলা হয় মুনাফিক।
(৩) নিফাক বলতে কী বুঝায়?
নিফাক অন্তরের দিক থেকে কাফির ও অবাধ্য হয়ে, কিন্তু বাহ্যিকভাবে তারা ইসলাম ও ইমান স্বীকার করে এবং মুসলিমদের ন্যায় ইবাদত পালন করাকে বুঝায়।
যেই সমস্ত মানুষ নেফাক করে তাদের, মুনাফেক নামে আখ্যায়িত করা হয়।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মুনাফিকদের চিহ্ন বর্ণনা করে বলেছেন,
“মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি। যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে, আর যখন কোনো কিছু তার নিকট আমানত রাখা হয় তার খিয়ানত করে।”
(সহিহ্ বুখারি)
(৪) নিফাকের কুফল ও প্রতিকার:
নিফাক একটি মারাত্মক পাপ। এটি মানুষের চরিত্র ও নৈতিকতা ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে মানুষ মিথ্যাচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদী।”
(সূরা আল-মুনাফিকুন, আয়াত ০১)
মিথ্যার পাশাপাশি মুনাফিকরা অন্যান্য খারাপ ও অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। পার্থিব লোভ-লালসা ও স্বার্থ রক্ষায় তারা মানুষের অকল্যাণ করতেও পিছপা হয় না। তারা পরনিন্দা ও পরচর্চা করে। ফলে সমাজে সন্দেহ ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
মুনাফিকরা ভেতরে এক আর বাইরে অন্য রকম হওয়ায় লোকজন তাদের বিশ্বাস করে না। বরং সন্দেহ ও ঘৃণার চোখে দেখে। সমাজের মানুষের নিকট তারা অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়ে জীবন কাটায়।
ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য মুনাফিকরা খুবই ক্ষতিকর। কেননা তারা মুসলমানদের সাথে মিশে ইসলামের শত্রুদের সাহায্য করে। মুসলমানদের গোপন তথ্য ও দুর্বলতার কথা শত্রুদের জানিয়ে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগেও মদিনাতে মুনাফিকরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।
তারা ইসলাম ও মুসলমানগণের সাথে থেকেও আল্লাহ তায়ালার অবাধ্য ছিল। পরকালীন জীবনে মুনাফিকদের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ।
তাদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে।”
(সূরা আন-নিসা, আয়াত ১৪৫)
আমরা নিফাক থেকে বেঁচে থাকব। আমাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী সকলের নিকট নিফাকের কুফল ও পরিণতির কথা তুলে ধরব ও তাদের সতর্ক করব।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মুনাফিকদের যে তিনটি চিহ্ন বা নিদর্শনের কথা বলেছেন এগুলো থেকে আমরা অবশ্যই বেঁচে থাকব এবং নিজ জীবনে উত্তম চরিত্র অনুশীলন করব।
[সূত্র: এনসিটিবি]