প্রিয় পাঠক বন্ধুরা! আপনারা অনেক সময় সার্চ করে থাকেন- আরবি মাখরাজ, মাখরাজ কি, আরবি হরফের মাখরাজ কয়টি, আরবি হরফের মাখরাজ, মাখরাজ ১৭ টি কি কি, makhraj bangla, ২৯টি আরবি হরফ বাংলা উচ্চারণ সহ, মাখরাজ ১৭ টি তালিকা ইত্যাদি লিখে। তো তারই পেক্ষিতে আমনাদের জন্যই আজকের পোষ্টটি লিখা হলো। তো চলুন মাখরাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
(১) আরবি মাখরাজ
কুরআনকে সহিহ-শুদ্ধরূপে তিলাওয়াত করার জন্য যে কয়টি নিয়ম জানা খুবই জরুরি, তার মধ্যে মাখরাজ অন্যতম।
ক) মাখরাজ কি?
মাখরাজ শব্দটি আরবি। শব্দগত দিক থেকে অর্থ হলো- বের হওয়ার স্থান, উচ্চারণের স্থান।
পরিভাষায় আরবি হরফ (বর্ণ) সমূহের উচ্চারণের স্থানকে মাখরাজ বলা হয়।
খ) আরবি হরফের মাখরাজ কয়টি?
আরবি ভাষায় মোট হরফ রয়েছে ২৯টি। এগুলো ১৭টি মাখরাজ বা উচ্চারণ স্থান থেকে উচ্চারিত হয়।
এই ১৭টি মাখরাজ আবার মুখের ৫টি স্থানে অবস্থিত। মুখের যে স্থানগুলো উচ্চারণের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে তা হলো-
- জাওফ বা মুখের খালি জায়গা ০১ টি;
- লক বা কণ্ঠনালি ০৩ টি;
- জিহ্বা ১০ টি;
- উভয় ফোঁট ০২ টি; ও
- নাসিকামূল ০১ টি।
(২) ২৯টি আরবি হরফ বাংলা উচ্চারণ সহ
- আলিফ (ا): এটি উচ্চারণ করতে উপরের দাঁতের আগা নিচের ঠোঁটের পেটে লাগবে। এক ঠোঁট আরেক ঠোঁটের সাথে লাগবেনা।
- বা (ب): স্বাভাবিক অবস্থায় মিলানো ঠোঁট খোলে দিয়ে ‘বা’ উচ্চারণ করতে হয়।তা
- তা (ت): এক আলিফ পরিমাণ লম্বা করে পড়তে হবে।
- ছা (ث ): এক আলিফ পরিমাণ লম্বা করে পাতলা আওয়াজ করে পড়তে হবে।
- জীম (ج ): চার আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে। শক্ত আওয়াজে পড়তে হবে।
- হা (ح): এক আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে।কণ্ঠনালীর মাঝখান থেকে গরম বাতাসের সাহায্যে উচ্চারিত হবে ।উচ্চারণে বাংলা আকার প্রকাশ পাবে।
- খ (خ): এই হরফ মোটা উচ্চারিত হবে। বাংলা ‘খ’ এর সাথে আকার প্রকাশ পাবে না।
- দাল (د): চার আলিফ লম্বা হবে এবং স্বাভাবিক উচ্চারণ হবে।
- যাল (ذ): চার আলিফ লম্বা হবে এবং নরম উচ্চারণ হবে।
- র (ر): এই হরফ মোটা উচ্চারিত হবে। ‘র’ এর সাথে আকার প্রকাশ পাবে না।
- যা (ز): এক আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে।
- সীন (س): চার আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে।
- শীন (ش): চার আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে।শুরুতে শীশ দিয়ে আওয়াজ হবে।
- ছদ (ص): চার আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে।মোটা আওয়াজে পড়তে হবে।
- দ্বদ (ض): চার আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে।মোটা আওয়াজে পড়তে হবে।
- ত্ব (ط): এক আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে। জিহবার আগা উপরের দাঁতের গোঁড়ায় ভিতর দিয়ে ধাক্কা দিয়ে মুখ খুলে দিবে।
- জ্ব (ظ): এক আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে।মোটা ও নরম উচ্চারণ হবে।
- আঈন (ع): চার আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে।
- গঈন (غ): চার আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে।মোটা আওয়াজে হবে। বাংলা ‘গ’ এর সাথে আকার প্রকাশ পাবে না।
- ফা (ف): এক আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে।
- ক্বফ (ق): শক্ত করে বলতে হয়।
- কাফ (ك): চার আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে। স্বাভাবিক উচ্চারণ হবে।
- লাম (ل): চার আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে।
- মীম (م): চার আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে।
- নূন (ن): চার আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে।
- ওয়াও (و): চার আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে।
- হা (ه): স্বাভাবিক উচ্চারণ হবে। এক আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে।
- হামযাহ্ (ء): বাংলা ‘য’ এর সাথে আকার দিয়ে পরে ‘হ’ হসন্ত যোগ হবে।
- য়া (ي): চার আলিফ পরিমাণ লম্বা হবে।
(৩) আরবি হরফের মাখরাজ ১৭ টি কি কি? makhraj bangla
এক নম্বর মাখরাজ: জাওফ অর্থাৎ মুখের ভিতরের খালি জায়গা। এ স্থান থেকে তিনটি হরফ উচ্চারিত হয়।
- ক. ‘আলিফ’ (ا) যখন এর পূর্বের হরফে যবর থাকে।
- খ. ‘জযম বিশিষ্ট ওয়াও’ (و) যখন এর পূর্বের হরফে পেশ হয়।
- গ. ‘জযম বিশিষ্ট ইয়া’ (ي) যখন এর পূর্বের হরফে ‘যের’ হয়।
দুই নম্বর মাখরাজ: কণ্ঠনালির নিম্নভাগ থেকে দুটি হরফ উচ্চারিত হয়। এ দুটি হলো ‘হামযা’ (ء) ও ‘হা’ (ه)।
তিন নম্বর মাখরাজ: কণ্ঠনালীর মধ্যখান হতে দুটি হরফ উচ্চারিত হয়। ‘হা’ (ح) আঈন (ع)।
চার নম্বর মাখরাজ: কণ্ঠনালির উপরিভাগ থেকে উচ্চারিত হয় দু’টি হরফ। এ দুটি হলো ‘খ’ (خ) ও ‘গঈন’ (غ)।
পাঁচ নম্বর মাখরাজ: জিহবার গোড়া এবং তার বরাবর উপরের তালু। এ স্থান থেকে একটি হরফ উচ্চারিত হয়। এটি হলো ‘ক্বফ’ (ق)।
ছয় নম্বর মাখরাজ: জিহবার গোড়া হতে একটু আগে বাড়িয়ে তার বরাবর উপরে তালুর সাথে লাগিয়ে উচ্চারণ করতে হয়। এ স্থান থেকে ‘কাফ’ (ك) হরফটি উচ্চারিত হয়।
সাত নম্বর মাখরাজ: জিহবার মধ্যভাগ এবং এর সোজা উপরের তালু। এ মাখরাজ থেকে তিনটি হরফ উচ্চারিত হয়। এগুলো হলো- ‘জিম’ (ج), ‘শীন’ (ش), ‘ইয়া’ (ي)।
আট নম্বর সাখরাজ: জিহবার পার্শ্বভাগ ও উপরের পাটির দাঁতের মাড়ি। এ দুই-এর সংযোগে উচ্চারিত হয়। হরফটি হলো- ‘দ্বদ’ (ض)।
নয় নম্বর মামরাজ: জিহবার অগ্রভাগের পাশ ও সামনের উপরের দাঁতের গোড়ার দিকের তালুর সাথে মিলে উচ্চারিত হয় একটি হরফ। এটি হলো- ‘লাম’ (ل)।
দশ নঘর মাথরাজ: জিহবার অগ্রভাগ ও তার বরাবর উপরের তালু। এ মাখরাজ থেকে উচ্চারিত হয় ‘নূন’ (ن)।
এগারো নম্বর মাখরাজ: জিহবার অগ্রভাগের পিঠ এবং সোজা উপরের তালু। এখান থেকে উচ্চারিত হয় ‘র’ (ر)।
বারো নাম্বার মাখরাজ: জিহবার অগ্রভাগ এবং সামনের উপরের দাঁতের গোড়া। এখান থেকে উচ্চারিত হয় তিনটি। হরফ। এগুলো হলো ‘তা’ (ت), দাল (د), ত্ব (ط)।
তেরো নম্বর মাখরাজ: জিহবার অগ্রভাগ ও সামনের নিচের দুই দাঁতের মাথা এবং উপরের দাঁতের সামান্য অংশ মিলে উচ্চারিত হয় মোট তিনটি হরফ। এগুলো হলো ‘যা’ (ز), ‘সিন’ (س), ‘সোয়াদ’ (ص)।
চৌদ্দ নম্বর মাখরাজ: জিহবার অগ্রভাগ ও সামনের উপরের বড় দুই দাঁতের মাথা। এখান থেকে উচ্চারিত হয় ‘ছা’ ث, ‘যাল’ (ذ), ‘জ্ব’ (ظ)।
পনেরো নম্বর সাখরাজ: নিচের ঠোঁটের ভিতরের অংশ বা ভিজা অংশ এবং সামনের উপরের দুই দাঁতের মাথা। এ মাখরাজ থেকে উচ্চারিত হয় ‘ফা’ (ف)।
ষোল নম্বর মাখরাজ: দুই ঠোঁট। এখান থেকে উচ্চারিত হয় তিনটি হরফ। যথা-
- ক. ‘বা’ (ب) উচ্চারিত হয় নিচের ঠোঁটের ভিতরের অংশ থেকে।
- খ. ‘মীম’ (م) উচ্চারিত হয় ঠোঁটের বাইরের বা শুষ্ক অংশ থেকে।
- গ. ‘ওয়াও’ (واو) এ হরফ উচ্চারণে দুই ঠোঁট সরাসরি মিলিত হয় না। বরং উভয় ঠোঁট ডান ও বাম পাশ থেকে গোল হয়ে অর্ধফোটা ফুলের মতো মধ্যস্থলে ছিদ্র রেখে উচ্চারিত হয়।
সতেরো নম্বর মাখরাজ: নাসিকামূল। এখান থেকে গুন্নাহসমূহ উচ্চারিত হয়। যেমন: জয়মযুক্ত নুনকে কখনো কখনো গোপন করে নাসিকামূল থেকে উচ্চারণ করা হয়। তাশদিদযুক্ত নুনের মাখরাজও এটিই। উদাহরস্বরূপ- ইন্না (إِنَّ), মিং-শাররি (مِنْ شَرِّ)।
আল্লাহ পাক আমাদের আরবি হরফের মাখরাজসহ সকল তাজবিদ মেনে পবিত্র কুরআন পাঠের তৌফিক দান করুন। আল্লাহুমা আমিন।
Queries discussed: আরবি মাখরাজ, মাখরাজ কি, আরবি হরফের মাখরাজ কয়টি, আরবি হরফের মাখরাজ, মাখরাজ ১৭ টি কি কি, makhraj bangla, ২৯টি আরবি হরফ বাংলা উচ্চারণ সহ, মাখরাজ ১৭ টি তালিকা।
[সূত্র: এনসিটিবি]