Skip to content

মানবজাতির কল্যাণে আল-কুরআনের শিক্ষা

মানবজাতির কল্যাণে আল-কুরআনের শিক্ষা

আলোচ্য বিষয়:

নিম্নে সংক্ষিপ্তাকারে মানবজাতির কল্যাণে আল-কুরআনের নীতিমালা বা শিক্ষাসমূহ হলো- 

(১) আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস

আল্লাহ তা‘আলা চিরন্তন সত্তা। তিনি আছেন, ছিলেন এবং থাকবেন। তাঁর অস্তিত্ব সম্পর্কে জ্ঞান লাভ ও তাঁর অস্তিত্ব বুঝার জন্য দুটো পথ আছে। একটি হল জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিক পথ, অপরটি হল ধর্মীয় পথ। আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই কুরআন একে বিশদভাবে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছে। এ জ্ঞান না থাকলে মানুষ তার জীবন, জগৎ ও স্রষ্টা সম্পর্কে গোলক ধাঁধায় পড়ে নানা অনাচার ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ত।

(২) আল্লাহর একত্ববাদের শিক্ষা

কুরআন মহান আল্লাহর তাওহীদ বা একত্ববাদে বিশ্বাসের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া এবং তাঁরই আনুগত্য প্রকাশ ও আত্মসমর্পণ করার শিক্ষা দেয়। তাওহীদের অর্থ কথায় কাজে আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা, তাঁরই ইবাদাত করা, তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া, সুখে-দুঃখে তাঁর ওপর ভরসা করা, তাঁর প্রতি নিষ্ঠা ও একাগ্রতা প্রকাশ করা এবং তাঁরই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।

সকল নবী-রাসূলের আহ্বান ছিল এটাই,

“হে আমার সমপ্রদায়! আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না ?”

(সূরা আল-মুমিনূন ২৩: ২৩)

(৩) শিরক পরিহার

আল-কুরআনের গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক শিক্ষা হচ্ছে আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক না করা। আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে অংশীদার মনে করা এবং তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্তাকে ইবাদাতের যোগ্য বলে বিশ্বাস করাই শিরক। শিরকের কারণেই মানুষ মানুষকে প্রভু ভাবে, প্রকৃতিকে পূজা করে, জড়বাদে বিশ্বাসী হয়, মানব রচিত বিধান ও আইনকে কল্যাণকর ভাবে। 

See also  ইলম শব্দের অর্থ, কী, কাকে বলে, কত প্রকার? ইলমের গুরুত্ব

তাই কুরআন স্পষ্ট করে ঘোষণা দেয়,

“নিশ্চয় শিরক বড় যুলম।” (সূরা লোকমান-৩১: ১৩)

(৪) সর্বক্ষেত্রে তাকওয়া অবলম্বন

মানব কল্যাণের আরো একটি বড় দিক তাকওয়া অবলম্বন। কুরআন মানুষকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাকওয়া অবলম্বনের নীতিমালা পেশ করেছে। তাকওয়া অর্থ হচ্ছে আল্লাহকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করা ও তাঁকে ভয় করে জীবন-যাপন করা। 

(৫) রিসালাতের অনুসরণ

তাওহীদের ন্যায় রিসালাতের প্রতি বিশ্বাস ও রিসালাতের অনুসরণ করাও কুরআনের মূল শিক্ষা। আল-কুরআনের বহু স্থানে রিসালাতের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর পথে দাওয়াত, উপদেশ ও পরামর্শদান এবং হিদায়াত রিসালাতের সাথেই সম্পর্কিত। বিভিন্ন দেশ ও জাতির কাছে আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্ন সময় ও যুগে বহু নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। এ সকল নবী-রাসূল মানুষকে হিদায়াতের পথ প্রদর্শন করেছেন এবং সত্য ও অসত্যের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ শিক্ষা দিয়েছেন।

(৬) আসমানি কিতাবের অনুসরণ

পৃথিবীতে মানুষ কীভাবে জীবন পরিচালনা করবে তার দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আসমানি কিতাবে। যুগে যুগে আল্লাহ পথহারা মানুষকে সত্য পথে আনার জন্য নবী-রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন। তাঁদের উপর নাযিল করেছেন কিতাব। সর্বশেষ আসমানি কিতাব হল আল-কুরআন। সকলের উচিত আল-কুরআনে বর্ণিত মানব কল্যাণকর নীতিমালা অনুসরণ করা।

(৭) আখিরাত জীবনে বিশ্বাসের আলোকে জীবন গঠন

আল-কুরআনের নীতিমালার মধ্যে অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে আখিরাত জীবনে বিশ্বাসের আলোকে জীবন গঠন করা। এ সংক্রান্ত কুরআনের সারকথা হচ্ছে দুনিয়ার জীবনই শেষ নয়। এ জগৎ ও জীবন ক্ষণস্থায়ী। নির্দিষ্ট সময় শেষ হলে মানুষকে পরপারের অনন্ত জীবনের দিকে পাড়ি জমাতে হবে। এক দিন এ বিশ্ব ব্যবস্থাপনা আল্লাহর নির্দেশে ধ্বংস হয়ে যাবে। মানব জীবনের প্রতিটি কর্মের ফল ভোগ করার জন্য আখিরাতের জীবনে বিচার হবে।

কিয়ামত, হাশর, নশর, মিযান, পুলসিরাত আখিরাত জীবনের বিভিন্ন ঘাঁটি। কর্মের বিচারে যারা পুণ্যবান বলে বিবেচিত হবে তারা পাবে অনন্ত সুখের ঠিকানা জান্নাত। আর যারা পাপী বলে সাব্যস্ত হবে তাদের জন্য রয়েছে কষ্টময় আবাসস্থল জাহান্নাম। এ বিশ্বাসের ফলে মানুষ দুনিয়ার জীবনে প্রতিটি কর্মের জন্য সচেতন হয় এবং অপরাধ থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করে।

See also  ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি

(৮) মৌলিক ইবাদাত পালন

আল-কুরআনের নীতিমালার মধ্যে রয়েছে মৌলিক ইবাদত পালন করা। কুরআন মানব জাতিকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগীর জন্য আহ্বান জানায়।

(৯) আমলে সালিহ বা সৎকর্ম করা

মানব জীবনের উন্নতির আরো একটি সোপান হচ্ছে আমলে সালিহ’ বা সৎকর্ম। উত্তম ও সৎ কার্যাবলি নিজে পালন করলে এবং অপরকে সৎভাবে চলতে অনুপ্রাণিত করলে জীবনে উন্নতির পথ প্রশস্ত হয়। ঈমানের পরই সৎকর্ম মানুষকে ধ্বংস থেকে বাঁচিয়ে রাখে।

সূরা আল-আসরে বর্ণিত হয়েছে,

“কালের শপথ! সমগ্র মানব জাতিই ধ্বংসের মধ্যে নিমজ্জিত। তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কর্ম করে, হক পথে থাকে ও ধৈর্য ধারণ করে তারা ব্যতিত।”

(সূরা আসর)

(১০) সৎপথে ধৈর্যের সাথে অবিচল থাকা

মানব জীবনকে উন্নত ও সাফল্যমন্ডিত করার অন্যতম উপায় হচ্ছে সৎপথে পূর্ণ ধৈর্যের সাথে অবিচল থাকা। সৎপথে, ন্যায়ের পথে, ইসলামের পথে চলতে গেলে বহু বাধা-বিঘ্ন আসবে, আর সেসব অবস্থায় ধৈর্যের সাথে অবিচল থাকলে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হওয়া যায়।

(১১) মন-মানসের পবিত্রতা

মানব জীবনে উন্নতি লাভ করতে হলে মানুষের মন, মানস পূত-পবিত্র রাখতে হবে। নির্মল মন নিয়ে আল্লাহর স্মরণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানবাত্মার প্রকৃত প্রশান্তি।

(১২) সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ

বিশ্বমানবতার কল্যাণে নীতিমালার মধ্যে আল-কুরআন অতীব গুরুত্ব দিয়েছে সৎকর্মের আদেশ ও অসৎ কর্মের নিষেধের উপর। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদেরকে তাকিদ করা হয়েছে, তারা যেন মানুষকে সৎকর্মের আদেশ দেয় এবং মন্দ ও অন্যায় কর্ম হতে বিরত রাখে।

(১৩) সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা

মানব কল্যাণে আল-কুরআনের মৌলিক নীতিমালার মধ্যে রয়েছে আদল ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। বিচারের ক্ষেত্রে অন্যায়ভাবে কারো পক্ষপাতিত্ব করা কিংবা কোন অসংগত কারণে কারো বিরুদ্ধে রায় দেওয়া কুরআনের ন্যায়নীতির পরিপন্থী। আল-কুরআন অত্যন্ত কঠোর ভাষায় এরূপ কাজ হতে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।

See also  শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্য

(১৪) কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালানো

বিশ্বমানবতার কল্যাণময় জীবন গঠনের নীতিমালার মৌলিক আরো একটি অপরিহার্য দিক হল মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা। সমাজে ইসলামি ভাবধারা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করা একটি বড় ইবাদত। আল-কুরআনের শিক্ষা হল- ইসলামের প্রতিরক্ষার প্রয়োজন, সমাজে শান্তি ও শৃংখলা প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়-অশান্তি নির্মূল করার জন্য সকলে মিলে চেষ্টা করা।

(১৫) অর্থনৈতিক দিক নির্দেশনা

বিশ্ব মানবতার কল্যাণে কুরআনের নীতিমালার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অর্থনৈতিক দিক নির্দেশনা। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন যদিও কোন অর্থনীতির পুস্তক নয় তবুও অর্থনীতি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় নীতিমালা এতে এমনভাবে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে, যার আলোকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়।

(১৬) ফৌজদারি বিধান

কুরআনের নীতিমালার অন্যতম বিধান হচ্ছে কিসাস ও দিয়াত। আল-কুরআনের মতে মানব জীবনের হিফাযত ও রক্ষণাবেক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে হত্যার দ্বার রুদ্ধ করা। লুটতরাজ, ডাকাতি, চুরি, ব্যভিচার, অপবাদ রটানো এগুলো অপরাধ। এসব অপরাধের জন্য রয়েছে নির্ধারিত দ- বা শাস্তি।

(১৭) মানব মর্যাদা ও মানবতার ঐক্য প্রতিষ্ঠা

আল-কুরআনের নীতিমালার অন্যতম দিক-নির্দেশনা হচ্ছে, মানব মর্যাদা ও মানবতার ঐক্য প্রতিষ্ঠা। সব মানুষই জন্মগতভাবে এক, তাদের দেহে একই রক্ত প্রবাহিত। তারা সকলেই এক আদম (আ)-এর সন্তান। তারা পরস্পর ভাই ভাই।

(১৮) মানবতার সেবায় কুরআনের নির্দেশনা

মানবজাতির স্বার্থ ও অধিকারকে রক্ষার জন্য একমাত্র কুরআনই স্থায়ী সমাধান দিয়েছে। হত দরিদ্র, বিপদগ্রস্ত, ইয়াতিম, বিধবা, রোগ-শোকে আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের প্রয়োজনে আর্থিক সাহায্য, সহযোগিতা ও সহানুভূতি দেখানোর জন্য বলা হয়েছে।

(১৯) আধ্যাত্মিক জীবনের দিগদর্শন

মানুষ শুধু দেহসর্বস্ব জীব নয়। মানুষের রয়েছে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক অর্থাৎ আধ্যাত্মিক জীবন। আধ্যাত্মিক জীবনের সমস্যাবলির নির্ভুল ও সঠিক দিক নির্দেশনার নীতিমালা কুরআনই উপস্থাপন করেছে। এক মহান আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাসের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে আধ্যাত্মিক জীবনের গতিধারা। আল-কুরআনই আধ্যাত্মিক জীবনের পূত-পবিত্রতার কথা, তাকওয়া আবলম্বনের কথা, ইখলাস ও নিষ্ঠার কথা, পরম স্রষ্টার সাথে মানবাত্মার মিলনের কথা ও পদ্ধতি শিখিয়েছে।

বিশ্বমানবতার কল্যাণের জন্য মহাগ্রন্থ আল-কুরআন পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা উপস্থাপন করেছে। মানব জীবনের প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ই আল-কুরআনে বিবৃত হয়েছে, যা মানবের আত্মিক, মানসিক, জ্ঞান জগৎ এবং কর্মক্ষেত্রে উপকারে আসতে পারে। কুরআনের উপস্থাপিত এ সকল নীতিমালা কোনটি জাগতিক কর্ম-তৎপরতা সম্পর্কিত, কোনটি মানব চরিত্র বিষয়ক এবং কোনটি আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগির সাথে সম্পর্কিত।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts