Skip to content

 

মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?

মালিক শ্রমিক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচত

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ইত্যাদি একজন মানুষের মৌলিক অধিকার। আর এ অধিকার অর্জনের লক্ষ্যে মানুষ প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।

মানুষ সামাজিক জীব। পৃথিবীর কোনো মানুষই একা তার সকল কাজ করতে পারে না। শিল্পায়নের এ যুগে জীবনধারণের জন্য প্রত্যেক মানুষকেই একে অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরে এক ব্যক্তির অধীনে একাধিক ব্যক্তি কাজকর্ম করে। এতে কেউ মালিক হয় আবার কেউ হয় শ্রমিক।

মালিকের সাথে শ্রমিকের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। মালিক শ্রেণি যেমন শ্রমিক শ্রেণির সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না তেমনিভাবে শ্রমিক শ্রেণির দৈনন্দিন জীবন মালিক শ্রেণির বেতন-ভাতার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল।

নিম্নে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত এই বিষয়ে কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হলো-

★ নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অন্যের কাজ করে শ্রমের মূল্য গ্রহণ করা ঘৃণার কাজ নয়। আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)ও শ্রমিকের কাজ করেছেন।

একটি হাদীসে রয়েছে,

“তাঁকে (মুহাম্মদ (সাঃ)-কে) জিজ্ঞেস করা হলো, কোন প্রকারের উপার্জন উত্তম ও পবিত্র? তিনি বললেন, কোনো ব্যক্তির নিজ শ্রমের উপার্জন এবং সৎব্যবসালব্ধ মুনাফা।”

(বায়হাকি)

★ ইসলাম অধীনস্থ লোকদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তোমরা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও মিসকিনদের সাথে ভালো আচরণ কর এবং নিকট- প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথি, মুসাফির ও তোমাদের অধীনস্থ যেসব দাস-দাসী (শ্রমিক) রয়েছে তাদের প্রতিও সদয় হও।”

(সূরা আন-নিসা, আয়াত ৩৬)

★ মালিক ও শ্রমিকের মাঝে এক চমৎকার দৃষ্টান্ত আমরা হযরত আনাস (রা)-এর জীবন থেকে পাই।

তিনি বলেন,

“আমি দশ বছর যাবৎ রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর খেদমত করেছি। তিনি আমার সম্পর্কে কখনো উহ! শব্দ বলেননি এবং কখনো বলেননি, এটা করোনি কেন ? এটা করেছ কেন ? আমার বহুকাজ তিনি নিজ হাতে করে দিতেন।”

(বুখারি)

★ হযরত উমর (রা) আমিরুল মুমিনিন ছিলেন। জেরুজালেম সফরে উটের পিঠে চড়া ও উট টেনে নেওয়ার ব্যাপারে তিনি সাম্য ও মানবতাবোধ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি উটের পিঠে চড়া ও উটের রশি টানার বিষয়ে নিজের ও ভৃত্যের মাঝে পালাক্রম ঠিক করে নিয়েছিলেন। মালিক-শ্রমিকের এমন দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল।

See also  ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক

★ বিদায় হজের সময় রাসুল (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, একজন অধীনস্থ কর্মচারীকে কতবার ক্ষমা করা যেতে পারে? 

তখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছিলেন,

“দৈনিক সত্তর বার।”

(তিরমিযি)

★ মনিবের উচিত তার শ্রমিকের শক্তি ও সামর্থ্য বিচার করে তাকে কাজ দেওয়া।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

“তাকে (শ্রমিককে) তার সাধ্য ও সামর্থ্যের বাইরে কোনো কাজ দেওয়া যাবে না।”

(মুসলিম)

★ খাওয়া পরা থেকে আরম্ভ করে সকল কাজে মালিক শ্রমিকের মাঝে কোনো বৈষম্য ইসলাম অনুমোদন করে না।

শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,

“তারা (যারা তোমাদের কাজ করে) তোমাদের ভাই, আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। সে (মালিক) যা খায় তার অধীনস্থদেরও যেন তা খাওয়ায়। সে (মালিক) যা পরে তাদেরকে যেন তা পরতে দেয়। আর তাকে এমন কর্মভার দেবে না যা তার ক্ষমতার বাইরে। এমন কাজ (ক্ষমতার বাইরের) হলে তাকে (শ্রমিককে) যেন সাহায্য করে।”

(বুখারি ও মুসলিম)

★ খুব দ্রুত শ্রমিকের পারিশ্রমিক আদায়ের ব্যাপারে ইসলামের বিধান সুস্পষ্ট।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,

“শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর পূর্বেই তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।”

(ইবনে মাজাহ)

★ পারিশ্রমিক দিতে অকারণে বিলম্ব করা সমীচীন নয়।

শ্রমিক যাতে তার শ্রমের সঠিক মূল্য পায় সে ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

“মজুরের পারিশ্রমিক নির্ধারণ না করে তাকে কাজে নিয়োগ করো না।”

(বুখারি ও মুসলিম)

★ একইভাবে শ্রমিককেও তার মালিকের দেওয়া দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার ব্যাপারে ইসলামে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,

“গোলাম (শ্রমিক) যখন তার মালিকের কাজ সুচারুরূপে করে এবং সুষ্ঠুভাবে আল্লাহর ইবাদত করে তখন সে দ্বিগুণ প্রতিদান পায়।”

(বুখারি ও মুসলিম)

মালিক-শ্রমিক যদি ইসলাম স্বীকৃত পন্থায় তাদের সম্পর্ক তৈরি করতে পারে, তাহলে শ্রমিক তার ন্যায্য পারিশ্রমিক পাবে আর মালিকও তার সঠিক শ্রম পাবে। শ্রমিক ও মালিকের মাঝে কোনো দিন মনোমালিন্য হবে না। কল-কারখানায় স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করবে।

See also  ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক

কাজেই দেশ ও জাতির কল্যাণে আমাদের ইসলাম প্রদত্ত আদর্শ শ্রমনীতি অনুসরণ করা উচিত।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page