Skip to content

মুনাফিকের পরিচয় সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

মুনাফিকের পরিচয় সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

নিম্নে মুনাফিকের পরিচয় সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিসের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-

অনুবাদ

হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেনঃ মুনাফিকের (কপট বিশ্বাসীর) নিদর্শন তিনটি। যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে; যখন সে ওয়াদা করে, তখন সে তার বিপরীত করে এবং যখন তার নিকট কোন জিনিস আমানত বা গচ্ছিত রাখা হয়, সে বিশ্বাসঘাতকতা করে।”

(বুখারি ও মুসলিম)

ব্যাখ্যা

আলোচ্য হাদিসে মুনাফিকদের কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

মুনাফিকরা কপট এবং বন্ধুর বেশে মারাত্মক শত্রু। তারা মুখে ইমানের কথা বললেও অন্তরে ঘোর অবিশ্বাস পোষণ করে। তারা মুখে যা বলে; কাজ করে তার বিপরীত। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের সূরা বাকারার ২য় রুকুতে এদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এমনকি তাদের সম্পর্কে ‘মুনাফিকুন’ নামে একটি স্বতন্ত্র সূরাই নাযিল হয়েছে। উক্ত সূরায় তাদের বহুবিধ দোষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

মুনাফিকরা কাফিরদের চেয়েও মারাত্মক ও জঘন্য। কারণ কাফেররা মুসলিমদের প্রকাশ্য শত্রু হওয়ার কারণে তাদের শত্রুতা থেকে আত্মরক্ষা করা সহজ কিন্তু মুনাফিকরা বন্ধুর বেশ ধারণ করে বলে তাদের কবল থেকে আত্মরক্ষা করা খুবই কঠিন। এমনকি রাসূলে করীম (স) ও তাদের দ্বারা বহু কষ্ট পেয়েছেন। এরা মুসলিমদের চরম শত্রু। বিশ্বাসঘাকতা এদের স্বভাব। আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের জন্য অত্যন্ত নিকৃষ্ট ও কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“নিশ্চয় মুনাফিকরা দোযখের সর্বনিম্নস্তরে থাকবে।”

(সূরা নিসা, আয়াত নং ১৪৫)

ছদ্মবেশী গোপন শত্রুদের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য রাসূলে করীম (স) বিভিন্ন হাদিসে তাদের কতিপয় নিদর্শনের কথা উল্লেখ করেছেন। এ হাদিসেও তাদের বড় বড় তিনটি আলামত তুলে ধরা হয়েছে। মিথ্যা কথা বলা, ওয়াদা খেলাফ করা ও আমানতের খেয়ানত করা তাদের স্বভাব। অপর একটি হাদিসে তাদের আরেকটি স্বভাবের কথা বলা হয়েছে। তা হলকারও সাথে বিতর্ক বা ঝগড়া লাগলে তারা অশ্লীল ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে।

See also  মুসলিমদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও কর্তব্য সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

শিক্ষা

এ হাদিস থেকে আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি, তা হলো- 

১. মুনাফিকি মারাত্মক গুণাহের কাজ।

২. মুনাফিকরা ইসলামের ঘোর দুশমন। কখনও মুনাফিকি আচরণ করা উচিত নয়।

৩. মুনাফিকরা সুযোগ সন্ধানী। এরা মুসলিম দলের মধ্যে আসে সুযোগের সন্ধানে। সুযোগ ফুরালে এরা কেটে পড়ে। তাই মুনাফিকদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

৪. মুনাফিকদের চেনার উপায় হচ্ছে ৩টি। যথা- সত্য না বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা এবং আমানতের খিয়ানত করা। যাদের মধ্যে এরূপ দোষ দেখা যাবে, মনে করা হবে এরাই মুনাফিক। কাজেই এদের ধোঁকা থেকে বাঁচতে হবে।

৫. নিজেরা কখনও মুনাফিকি কর্মকা-ে জড়িত হওয়া উচিত নয়।

৬. মুনাফিকরা বিশ্বাসঘাতক ও মুসলিম উম্মাহর ঘোর শত্রু। তাই এদেরকে চিহ্নিত করা দরকার।

৭. মুনাফিকরা কাফিরদের থেকেও নিকৃষ্ট ও জঘন্য চরিত্রের লোক।

অতএব মুনাফিকির মত জঘন্য ও ঘৃণিত কাজ হতে আমাদের বেঁচে থকতে হবে। 

সারসংক্ষেপ

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা মুনাফিকের পরিচয় সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করলাম।

মুসলিমদের মুনাফিকদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা উচিত। উপরোক্ত হাদিসে যে তিনটি লক্ষণের কথা বলা হয়েছে মূলত এ তিনটি লক্ষণই মানুষের গোটা জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে। সুতরাং এগুলো যাতে মানবজীবনে কোন বিপর্যয় সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। অন্যথায় সরলমনা বিশ্বাসীরা প্রতি ক্ষেত্রে ধোঁকা খেয়ে তাদের ঈমান হারিয়ে ফেলবে। হাদিসে মুনাফিকদের স্বরূপ উদ্ঘাটন করে মুসলিমদের সতর্ক করা হয়েছে, যাতে কেউ এ দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন না করে।

[সূত্র: ওপেন স্কুল]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts