নিম্নে মুসলিমদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও কর্তব্য সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিসের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-
অনুবাদ
হযরত ইবনে উমর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ (স) বলেনঃ এক মুসলিম অপর মুসলমানের ভাই। সে তাকে অত্যাচারও করবে না এবং তাকে শত্রুর নিকট সমর্পণও করবে না। আর যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজনে এগিয়ে আসে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন।”
(বুখারি ও মুসলিম)
ব্যাখ্যা
এ হাদিসে রাসূলুল্লাহ (স) এক মুসলমানের সাথে অপর মুসলমানের সম্পর্ক কি এবং একের প্রতি অপরের কর্তব্যই বা কি তা আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন মুসলিমগণ পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং ভাইয়ের কর্তব্য হল তার ভাইকে বিপদাপদে সাহায্য করা এবং শত্রুর আক্রমণ ও নির্যাতন থেকে রক্ষা করা।
এ ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে ঘোষণা করেছেন,
“নিশ্চয় মুসলিমগণ পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমাদের ভাইয়ের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দাও।”
(সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত নং ১০)
কোন মুসলিমকে অত্যাচার করা যাবে না। এবং তাকে কোন অবস্থাতেই দুশমনের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। আপন ভাইয়ের বিপদের সময় অপর ভাই যেমন সাহায্য করতে এগিয়ে আসে, তেমনি এক মুসলিম ভাইও অপর মুসলিম ভাইয়ের বিপদাপদ দূর করার জন্য সম্ভাব্য সকল পন্থায় সাহায্য করবে।
এ মর্মে রাসূলে করীম (স) ইরশাদ করেছেন,
“আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর বান্দাকে সাহায্য করতে থাকেন; যতক্ষণ পর্যন্ত সে কোন মুসলিম ভাইয়ের সাহায্যে লিপ্ত থাকে।”
(মুসলিম)
সুতরাং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাহায্য পেতে হলে অপর মুসলিম ভাইয়ের সাহায্য করা একান্ত কর্তব্য। এক মুসলমানের বিপদে অপর মুসলমানের এগিয়ে না আসার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুসলিমরা অত্যাচারিত ও নিপীড়িত। যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ (স)-এর নির্দেশ অনুযায়ী মুসলিমগণ নিজেদের ভোগ-বিলাস ও সংকীর্ণ স্বার্থচিন্তা পরিহার করে মুসলিম ভাইয়ের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসতো, তাহলে বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের এ দুর্দশা হত না। অত্যাচারিত ও নির্যাতিত মুসলিমদের সাহায্যার্থে অপর মুসলিম এগিয়ে না আসার কারণে জাতি হিসেবে মুসলিমরা আল্লাহর সাহায্য থেকেও বঞ্চিত।
শিক্ষা
১. মুসলিমগণ পরস্পর ভাই ভাই।
২. এক মুসলিম তার অপর মুসলিম ভাইয়ের ওপর অত্যাচার করতে পারে না।
৩. তাকে শত্রুর নিকটও সোপর্দ করতে পারে না।
৪. সর্বদা এক মুসলিম আরেক মুসলিম ভাইয়ের সাহায্যে এগিয়ে আসা কর্তব্য।
৭. মুসলিমদের স্বার্থ হানিকর ও ক্ষতিকর কোন কাজ করা যাবে না।
৮. মুসলিম ভাই কোন অন্যায় করলে তা সংশোধন ও ক্ষমা করে দেওয়া উচিত।
১০. আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় চললে তাঁর সাহায্য পাওয়া যাবে।
সারসংক্ষেপ
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা মুসলিমদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও কর্তব্য সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করলাম।
এক মুসলিম আরেক মুসলমানের ভাই। পরষ্পর ঝগড়া-বিবাদ করা অনুচিত। অত্যাচার-নিগ্রহ করা অন্যায়। শত্রুতা করা এবং শত্রুর হাতে সপর্দ করা ইমানের পরিপন্থী কাজ। অতএব, আল্লাহ আমাদের উল্লিখিত হাদিসের শিক্ষা গ্রহণ করে তা বাস্তব জীবনে অনুশীলনের সামর্থ্য দান করুন। (আমীন)
[সূত্র: ওপেন স্কুল]