(১) যাকাত শব্দের অর্থ কী?
যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো- পবিত্রতা, পরিশুদ্ধতা ও বৃদ্ধি পাওয়া।
(২) যাকাত কাকে বলে?
ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে, কোনো মুসলিম নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে বছরান্তে তার সম্পদের শতকরা ২.৫০ হারে নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করাকে যাকাত বলে। নিসাব হলো ন্যূনতম সম্পদ, যা থাকলে যাকাত ফরজ হয়। এ ক্ষেত্রে যাকাত প্রদানে ধনীর সম্পদ পবিত্র, পরিশুদ্ধ ও বৃদ্ধি পায়। তাই একে যাকাত বলা হয়।
(৩) যাকাত কি?
ইসলামের দৃষ্টিতে যাকাত গরিবের প্রতি ধনীর দয়া নয় বরং এটা গরিবের অধিকার। তাই আল্লাহ যাকাত আদায় করাকে আবশ্যক করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত আদায় কর।”
(সূরা আন-নুর, আয়াত ৫৬)
(৪) যাকাত কেন দিতে হয়?
অর্থনৈতিকভাবে ধনী ও গরিব উভয় শ্রেণির মানুষ সমাজে রয়েছে। ধনী ও গরিবের মাঝে আর্থিক সমন্বয়সাধন করতে মহান আল্লাহ যাকাতের বিধান দিয়েছেন।
যাকাত আদায় করলে সমাজের দুর্বল লোকেরাও আর্থিকভাবে সবল হয়ে উঠবে। ফলে ধনী ও গরিবের মাঝে সেতুবন্ধ তৈরি হবে। এতে সমাজে শান্তি- শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি বজায় থাকবে।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যাকাতকে ইসলামের সেতুবন্ধ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন,
যাকাত হলো ইসলামের সেতুবন্ধ।”
(বায়হাকি)
(৫) যাকাতের গুরুত্ব
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে অনেক স্থানে সালাতের সাথে যাকাতের কথাও বলেছেন। যাকাত ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়।
যাকাতের সামাজিক, নৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। এসব কারণেই মহান আল্লাহ মুসলমানদের উপর যাকাত ফরজ করেছেন।
ক) যাকাতের সামাজিক গুরুত্ব
যাকাত সমাজ থেকে অস্থিতিশীলতা ও বিশৃঙ্খলা দূর করে পারস্পরিক সৌহার্দ স্থাপন করে। সামাজিক নিরাপত্তা দানের পাশাপাশি সমাজের মানুষের মাঝে সম্পদের বৈষম্য দূর করে।
যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যাতে সম্পদ শুধু তোমাদের অর্থশালীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়।”
(সূরা আল-হাশর, আয়াত ৭)
সুতরাং সমাজে যাকাত ব্যবস্থা চালু করে বৈষম্য দূর করে সাম্যের ভিত্তিতে জীবন গড়ে তোলাই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
খ) যাকাতের নৈতিক গুরুত্ব
যাকাত মানুষের মনে খোদাভীতি সৃষ্টি করে। পবিত্র ও উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে। অপচয় রোধ করতে শেখায়। সর্বোপরি যাকাত মানুষের আত্মিক প্রশান্তি, নৈতিক উন্নতি, সম্পদের পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে।
মহান আল্লাহ বলেন,
“আপনি তাদের ধন-সম্পদ থেকে সাদাকা (যাকাত) গ্রহণ করুন। এর মাধ্যমে আপনি তাদের পবিত্র এবং পরিশোধিত করবেন।”
(সূরা আত্-তাওবা, আয়াত ১০৩)
অতএব নৈতিকভাবে পরিশুদ্ধ হওয়ার জন্য আমরা যাকাত আদায় করব।
গ) যাকাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার উৎসগুলোর মধ্যে যাকাত হলো অন্যতম। এর উপর ইসলামি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত্তি ও জনকল্যাণমুখী প্রকল্পসমূহের সাফল্য নির্ভরশীল। এতে সম্পদের প্রবাহ গতিশীল হয়। ধনীর সম্পদ পুঞ্জীভূত না থেকে দরিদ্র লোকদের হাতেও যায়। ফলে রাষ্ট্রের অর্থনীতি সচল হয়। উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং বেকারত্ব হ্রাস পায়। মাথাপিছু আয় বেড়ে যায়। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত মজবুত ও শক্তিশালী হয়। আর্থিকভাবে অসচ্ছল লোকগুলো ধীরে ধীরে সচ্ছল হতে থাকে। দিনে দিনে সম্পদশালী লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বাড়িয়ে দেন।”
(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৭৬)
আমরাও অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য যথাযথভাবে যাকাত আদায়ের চেষ্টা করব।
ঘ) যাকাতের ধর্মীয় গুরুত্ব
কোনো মুসলমান যাকাত না দিলে সে আর পরিপূর্ণ মুসলমান থাকতে পারে না।
আল্লাহ বলেন,
“যারা যাকাত দেয় না এবং তারা পরকালও অস্বীকারকারী।”
(সূরা হা-মীম আস্-সাজদা, আয়াত ৭)
যাকাত অস্বীকার করা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অস্বীকার করার শামিল। ইসলামি আইনে যাকাত দানের উপযুক্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই যাকাত দিতে হবে। ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা.) যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
সালাত ও সাওম শারীরিক ইবাদত। আর যাকাত হলো আর্থিক ইবাদত। সুতরাং যাকাত আদায় করা একজন মুসলিমের ইমানি দায়িত্ব। যাকাত অসহায় ও দরিদ্রের অধিকার যাকাত প্রদান করা দরিদ্রের প্রতি ধনী লোকের কোনো দয়া বা অনুগ্রহ নয়। বরং যাকাত হলো দরিদ্র লোকের প্রাপ্য বা অধিকার।
কেউ ইসলামের অনুসারী হলে তার উচিত স্বেচ্ছায় যাকাত প্রদান করা এবং অসহায় লোকদের নিকট তা পৌঁছে দেওয়া।
মহান আল্লাহ বলেন,
“আর তাদের (ধনীদের) সম্পদে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতের অধিকার রয়েছে।”
(সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত ১৯)
তাই সম্পদশালী ব্যক্তি তার সম্পদ ভোগ করার পূর্বে চিন্তা করবে যে, এতে অসহায়দের অধিকার আছে। তাদের অধিকার অবশ্যই দিতে হবে। অন্যথায় সমুদয় সম্পদ তার জন্য অপবিত্র হয়ে যাবে। পরিণামে তাকে পরকালে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
মহান আল্লাহ বলেন,
“আর যারা স্বর্ণ ও রুপা (সম্পদ) জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে খরচ করে না তাদেরকে কঠিন শাস্তির সংবাদ দিন।”
(সূরা আত্-তাওবা, আয়াত ৩৪)
যাকাত আদায় করে বেকার ও গরিবদের জন্য অনেক কর্মসংস্থান করা যেতে পারে। এতে দেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। দারিদ্র্য দূরীভূত হবে এবং দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। ধনী-দরিদ্রের মাঝে সম্পদের বৈষম্য দূর হবে। কাজেই ধনীদের শরিয়তের বিধান অনুসারে যাকাত আদায় করা একান্ত আবশ্যক।
[সূত্র: এনসিটিবি]