(১) শালীনতা অর্থ কী?
শালীনতা অর্থ মার্জিত, সুন্দর ও শোভন হওয়া।
(২) শালীনতা কাকে বলে?
কথা-বার্তা, আচার-আচরণ ও চলাফেরায় ভদ্র, সভ্য ও মার্জিত হওয়াকেই শালীনতা বলা হয়। গর্ব-অহঙ্কার, ঔদ্ধত্য ও অশ্লীলতা ত্যাগ করে জীবনাচরণের সকল ক্ষেত্রে ইসলামি নীতি-আদর্শের অনুসারী হওয়ার দ্বারা শালীনতা অর্জন করা যায়।
(৩) শালনিতা মানে কী?
শালীনতার পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। এটি বহু নৈতিক গুণের সমষ্টি। ভদ্রতা, নম্রতা, সৌন্দর্য, সুরুচি, লজ্জাশীলতা ইত্যাদি গুণাবলির সমন্বিত রূপের মাধ্যমে শালীনতা প্রকাশ পায়।
অশ্লীলতা হলো শালীনতার বিপরীত। গর্ব-অহঙ্কার, ঔদ্ধত্য, কুরুচি ও কুসংস্কার শালীনতাবিরোধী অভ্যাস। এগুলো থেকে বেঁচে থাকাই শালীনতা অর্জনের উপায়।
(৪) শালীনতার গুরুত্ব
- ইসলাম সৌন্দর্যের ধর্ম। এটি সুন্দর, সুষ্ঠু ও সুরুচিপূর্ণ জীবনযাপনে উৎসাহিত করে। মার্জিত, নম্র, ভদ্র ও পূত-পবিত্র হিসেবে মানুষকে গড়ে তোলা ইসলামি শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য। আর এ লক্ষ্যে শালীনতার গুরুত্ব অপরিসীম। বলা যায় শালীনতাই হলো ইসলামি সমাজ ব্যবস্থার মূল ভিত্তি।
- ইসলাম সকল মানুষকেই নম্র, ভদ্র ও শালীন হওয়ার নির্দেশ প্রদান করে। যেসব কাজ শালীনতাবিরোধী, ইসলামে সেসব কাজকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেননা অশ্লীল ও অশালীন কাজকর্ম মানুষের মানবিকতা ও নৈতিক মূল্যবোধ বিনষ্ট করে দেয়।
- অশ্লীল ও অশালীন কাজকর্মের ফলে মানুষ মনুষ্যত্ব হারিয়ে পশুত্বের অভ্যাস গ্রহণ করে। ফলে সমাজে অনাচার, ব্যভিচার, অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের কুপ্রবৃত্তি ও কামনা-বাসনা পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ ভেঙে দেয়। যার কারণে সর্বত্র অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
- শালীনতার অভাব অনেক সময় সমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঘটায়। যৌন হয়রানি, ব্যভিচার ইত্যাদির জন্ম হয়। এজন্য ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়কে পর্দা রক্ষা ও শালীনতা বজায় রাখার জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“আর তোমরা (নারীরা) নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন জাহিলি যুগের মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।”
(সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৩৩)
- অতএব, বিনা প্রয়োজনে অশালীনভাবে নারীদের বাইরে ঘুরে বেড়ানো উচিত নয়। বরং প্রয়োজনে বাইরে গেলে পর্দা ও শালীনতা অবলম্বন করে যেতে হবে। পুরুষদের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। তাদেরকেও অবশ্যই শালীনভাবে সমাজে বিচরণ করতে হবে।
- পূত-পবিত্রতা ও শালীনতার অন্যতম বিষয় হলো লজ্জাশীলতা। লজ্জাশীলতা মানুষকে শালীন হতে সাহায্য করে। লজ্জাশীলতার ফলে মানুষ পরকালীন সফলতা লাভ করবে।
মহানবি (সাঃ) বলেন,
“লজ্জাশীলতার পুরোটাই কল্যাণময়।”
(মুসলিম)
মহানবি (সাঃ) আরও বলেন,
“লজ্জাশীলতা ইমানের একটি শাখা।”
(সুনানে নাসাই)
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেন,
“অশ্লীলতা যেকোনো জিনিসকে খারাপ করে এবং লজ্জাশীলতা যেকোনো জিনিসকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে।”
(তিরমিযি)
- সুতরাং চলাফেরা, পোশাক-পরিচ্ছদ, কথাবার্তা, আচার-আচরণে লজ্জাশীল হওয়া প্রয়োজন। সর্বাবস্থায় রুচিসম্মত, ভদ্র, সুন্দর ও মার্জিত গুণাবলির অনুসরণ করার দ্বারা শালীনতা চর্চা করা যায়।
- শালীনতার ফলে মানুষের মান-সম্মান সুরক্ষিত থাকে, সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়।
অতএব, আমরা সকল কাজে শালীনতা রক্ষা করব। অশ্লীল ও অশালীন কাজ ত্যাগ করব।
[সূত্র: এনসিটিবি]