Skip to content

 

সাওম শব্দের অর্থ কী, কাকে বলে? সাওমের শিক্ষা ও গুরুত্ব

সাওম শব্দের অর্থ কী, কাকে বলে সাওমের শিক্ষা এবং গুরুত্ব

(১) সাওম শব্দের অর্থ কী?

সাওম আরবি শব্দ। এর ফার্সি প্রতিশব্দ হলো রোযা। এর আভিধানিক অর্থ হলো বিরত থাকা।

(২) সাওম কাকে বলে?

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় নিয়তের সাথে পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকাকে সাওম বা রোযা বলে।

প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেক নারী ও পুরুষের উপর রমযান মাসের এক মাস সাওম পালন করা ফরজ। এটি ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের একটি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাওমের শিক্ষা ও গুরুত্ব অপরিসীম।

(৩) সাওমের নৈতিক শিক্ষা

সাওম কেবল আমাদের উপরই ফরজ নয়। বরং পূর্বের সকল নবি-রাসুলের উম্মতের উপরও ফরজ ছিল। এর মাধ্যমে সাওম পালনকারীর আত্মিক উৎকর্ষ সাধিত হয়।

সাওমের মাধ্যমে মানুষের মনে তাকওয়া (আল্লাহভীতি) ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর হয়েও মানুষ মহান আল্লাহর ভালোবাসা ও ভয়ে কিছুই পানাহার করে না ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি লাভ করে না।

মহান আল্লাহ বলেন,

“তোমাদের উপর সাওম (রোযা) ফরজ করা হয়েছে। যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যেন তোমরা তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) অর্জন করতে পার।”

(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৩)

আমরা তাকওয়া অর্জনের জন্য রমযান মাসে সিয়াম পালন করব।

মানুষ লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ-ক্ষোভ ও কামভাবের বশবর্তী হয়ে অনেক মন্দ কাজে লিপ্ত হয়। সাওম মানুষকে এসব কাজ থেকে মুক্ত থাকতে শেখায়। সাওম হলো কোনো ব্যক্তি ও তার মন্দ কাজের মাঝে ঢাল স্বরূপ।

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,

“সাওম (রোযা) ঢালস্বরূপ।”

(বুখারি ও মুসলিম)

সর্বোপরি সাওম পালনের মাধ্যমে দৈহিক, মানসিক ও আত্মিক প্রশান্তি অর্জিত হয়।

See also  রোজা সম্পর্কে আলোচনা (a to z)

(৪) সাওমের সামাজিক শিক্ষা

সিয়াম সাধনার ফলে সমাজের লোকদের মাঝে পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহমর্মিতা সৃষ্টি হয়। সাওম পালন করে এরূপ ব্যক্তি ক্ষুধার্ত থাকার ফলে সে অন্য আরেকজন অনাহারীর ক্ষুধার জ্বালা সহজে বুঝতে পারে। ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রণা যে কীরূপ পীড়াদায়ক হতে পারে তা সে উপলব্ধি করতে পারে। এতে অসহায় নিরন্ন মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতার ভাব জাগ্রত হয়।

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,

“এ মাস (রমযান) সহানুভূতির মাস।”

(ইবনে খুযায়মা)

রমযান মাসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) অন্যদের দান-সদকা করতে যেমন উদ্বুদ্ধ করেছেন, তিনি নিজেও তেমনিভাবে খুব দান-সদকা করতেন।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন,

“রাসুলুল্লাহ (সাঃ) লোকদের মধ্যে অধিক দানশীল ছিলেন। বিশেষ করে রমযান এলে তার দানশীলতা আরও বেড়ে যেত।”

(বুখারি ও মুসলিম)

সাওম অসহায় ও দরিদ্রকে দান করতে উদ্বুদ্ধ করে।

(৫) সাওমের ধর্মীয় গুরুত্ব

ধর্মীয় দিক থেকেও সাওমের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। সকল সৎকাজের প্রতিদান আল্লাহ দশগুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেবেন।

কিন্তু সাওম এর প্রতিদান সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“সাওম আমার জন্য আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো।”

(বুখারি)

যেহেতু সাওয়াবের আশায় আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাওম পালন করা হয় সেহেতু আল্লাহ তায়ালা রোযাদারের পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন।

যেমন, মহানবি (সাঃ) বলেছেন,

“যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও সাওয়াবের আশায় রমযান মাসে রোযা রাখে, আল্লাহ তায়ালা তার পূর্বের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেন।”

(বুখারি)

এটি একটি মৌলিক ফরজ কাজ। যদি কেউ তা অস্বীকার করে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

(৬) সাওমের সামাজিক গুরুত্ব

  • সাওম পালনের মাধ্যমে একজন লোক ক্ষুধার যন্ত্রণা উপলব্ধি করতে পারে। সমাজের নিরন্ন ও অভাবীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করতে পারে।
  • সাওম (রোযা) পালনকারী ব্যক্তি অন্যায়-অশ্লীল কথাবার্তা পরিহার করে চলে। হানাহানি থেকে দূরে থাকে। ফলে সমাজে শান্তি বিরাজ করে।
  • অধিক সাওয়াব পাওয়ার আশায় একে অপরকে সাহারি ও ইফতার করায় এবং অভাবীকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে। এতে পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয় এবং সামাজিক বন্ধন আরও মজবুত ও শক্তিশালী হয়।
See also  রোজা সম্পর্কে আলোচনা (a to z)

সুতরাং, আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় এবং সাওমের সামাজিক গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে আমাদের সাওম পালন করা উচিত। আমরা নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে সাওম পালন করব।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page