(১) সালাত শব্দের অর্থ কী? কাকে বলে?
সালাত আরবি শব্দ। এর ফার্সি প্রতিশব্দ হলো নামায। এর অর্থ দোয়া, ক্ষমা প্রার্থনা করা ও রহমত (দয়া) কামনা করা।
যেহেতু সালাতের মাধ্যমে বান্দা প্রভুর নিকট দোয়া করে, দয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে তাই একে সালাত বলা হয়।
ইসলাম যে পাঁচটি রুকনের (স্তম্ভের) উপর প্রতিষ্ঠিত তার দ্বিতীয়টি হলো সালাত।
এ সম্পর্কে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,
“ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত: (১) এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসুল; (২) সালাত প্রতিষ্ঠা করা; (৩) যাকাত দেওয়া; (৪) রমযানের রোযা রাখা; (৫) হজ করা।”
(সহিহ বুখারি)
কিয়ামতের দিন আল্লাহ সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেবেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“কিয়ামতের দিন বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেওয়া হবে।”
(তিরমিযি)
মহান আল্লাহ মুমিনের উপর দৈনিক পাঁচবার সালাত ফরজ (আবশ্যক) করেছেন। তা হলো ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব ও এশা।
সালাত একজন মুমিনকে (বিশ্বাসী) মন্দ ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“নিশ্চয় সালাত মানুষকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।”
(সূরা আল-‘আনকাবুত, আয়াত ৪৫)
শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ব্যতীত কখনোই সালাত ত্যাগ করা যাবে না।
(২) সালাতের ধর্মীয় গুরুত্ব
একজন মুসলিমের দৈনন্দিন জীবনে সালাতের গুরুত্ব অপরিসীম। সালাত মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে বান্দা তার প্রভুর সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। ইমান মজবুত হয়, আত্মা পরিশুদ্ধ হয়। মানুষকে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে অভ্যস্ত করে তোলে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
সালাতের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি মনোযোগসহ সালাত আদায় করে, কিয়ামতের দিন ঐ সালাত তার জন্য নুর হবে।”
(তাবারানি)
একদা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর সাথিদের লক্ষ্য করে বললেন,
“যদি কারও বাড়ির পাশ দিয়ে একটি নদী প্রবাহিত হয় এবং কোনো লোক দৈনিক পাঁচবার ঐ নদীতে গোসল করে, তাহলে কি তার শরীরে কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবিগণ উত্তরে বললেন, ‘না’ হে আল্লাহর রাসুল! তখন মহানবি (সাঃ) বললেন- পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ঠিক তেমনি তার (সালাত আদায়কারীর) গুনাহসমূহ দূর করে দেয়। মহানবি (সাঃ) আরও বলেছেন, “সালাত হলো ইমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী।”
(তিরমিযি)
মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জামাআতের সাথে সালাত আদায় করার গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন,
“জামাআতে সালাত আদায় করলে একাকী আদায় করার চাইতে সাতাশ গুণ বেশি সাওয়াব পাওয়া যায়।”
(বুখারি ও মুসলিম)
আর আল্লাহ তায়ালাও সালাতকে জামাআতের সাথে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ বলেন,
“তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।”
(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ৪৩)
(৩) সালাতের সামাজিক গুরুত্ব
- পবিত্র কুরআনের বহুস্থানে সম্মিলিতভাবে সালাত আদায় করার কথা বলা হয়েছে। সালাতের কারণে দৈনিক পাঁচবার মুসলমানগণ একস্থানে মিলিত হওয়ার সুযোগ পায়। একে-অপরের খোঁজ-খবর নিতে পারে। সুখে-দুঃখে একে অপরের সহযোগিতা করতে পারে। এতে তাদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয়।
- সলাত বা নামাযের সারিতে দাঁড়াতে গিয়ে উঁচু-নিচু কোনো ভেদাভেদ থাকে না। ফলে সালাত আদায়কারীদের মধ্যে সাম্য সৃষ্টি হয়। সালাত আদায়ের মাধ্যমে মানুষ পারস্পরিক সকল মতপার্থক্য ভুলে একসাথে কাজ করার শিক্ষা পায়।
- সালাত আমাদেরকে সময়ের গুরুত্ব ও শৃঙ্খলাবোধ শিক্ষা দেয়। নেতার অনুসরণ করতে এবং নিয়মতান্ত্রিক ও পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করে। আমরা সময়ের প্রতি লক্ষ রেখে নিয়মিত সালাত আদায় করব। জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলব।
[সূত্র: এনসিটিবি]