(১) সুরা নাসর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
সূরা আন-নাসর পবিত্র কুরআনের ১১০তম সূরা। এ সূরার ‘নাসর’ শব্দ থেকে সূরাটির নাম রাখা হয়েছে আন- নাসর। এর আয়াত সংখ্যা ৩টি। সর্বসম্মতিক্রমে সূরাটি মদীনায় অবতীর্ণ।
সূরা আন-নাসর কুরআনের সর্বশেষ অবতীর্ণ সম্পূর্ণ সূরা। এরপর কয়েকটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে; কিন্তু আর কোনো সম্পূর্ণ সূরা অবতীর্ণ হয়নি।
এ সূরাতে মক্কা বিজয়ের পর মানুষের দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলমানদের বিজয়ের ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে। মক্কা বিজয় এর অন্যতম।
ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে নুসরত ও সহযোগিতার বর্ণনা হয়েছে। তাই এর নাম সূরা আন নাসর। এই সূরায় রসূলুল্লাহ সাঃ-এর ওফাতের নিকটবর্তী হওয়ার ইঙ্গিত আছে তাই এর একটি নাম ‘তাওদী’ (বিদায়) ও আছে ।
(২) surah nasr bangla
সূরা নাসর | بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি) |
১ম আয়াত | إِذَا جَاء نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ ইযা জা- আনাসুরুল্লাহি ওয়াল ফাতহু। যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়, |
২য় আয়াত | وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا ওয়ারা আইতান্না-সা ইয়াদখুলুউনা, ফি দ্বীনিল্লাহি আফওয়া-জা। এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন, |
৩য় বা শেষ আয়াত | فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا ফাসাব্বিহ বিহামদি রাব্বিকা ওয়াস্তাগ ফিরহ্; ইন্নাহু কা-না তাও-ওয়া-বা। তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন; নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী। |
(৩) সূরা নাসর বাংলা উচ্চারণ
বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম 1. ইযা জা- আনাসুরুল্লাহি ওয়াল ফাতহু। 2. ওয়ারা আইতান্না-সা ইয়াদখুলুউনা, ফি দ্বীনিল্লাহি আফওয়া-জা। 3. ফাসাব্বিহ বিহামদি রাব্বিকা ওয়াস্তাগ ফিরহ্; ইন্নাহু কা-না তাও-ওয়া-বা।
(৪) সূরা নাসর বাংলা অর্থ
বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম 1. যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়, 2. এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন, 3. তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন; নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী।
(৫) sura nasor bangla uccharon chobi
(৬) সূরা নাছর উচ্চারণ অডিও
(৭) সুরা নাসর বাংলা উচ্চারণ ভিডিও
(৮) সূরা নাসর এর শানে নুযুল
সূরা আন নছর রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে উদেশ্য করে অবতীর্ণ হয়। মক্কা বিজয় এবং রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর আগমন ও অবস্থানের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সূরাটি নাজিল হয়।
(৯) সূরা নাসর এর তাফসীর
১ম আয়াত: যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে;
২য় আয়াত: এবং আপনি মানুষকে দেখবেন দলে দলে আল্লাহর ধর্মে প্রবেশ করছে।
নির্ভরযোগ্য মতানুসারে এই সূরায় আলোচিত বিজয় বলে মক্কা বিজয় বোঝানো হয়েছে।
মক্কা বিজয়ের পর আরবের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গোত্রীয় প্রতিনিধিদল মদীনায় আসতে থাকে এবং দলে দলে মানুষ মুসলমান হতে থাকে, সেকথা বলা হয়েছে প্রথম দু’টি আয়াতে।
মক্কা বিজয়ের দিকে অধিকাংশ গোত্রের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল। অনেক গোত্র ইসলামের সৌন্দর্যে মোহিত হলেও মক্কার মুশরিকদের কারণে ইসলাম গ্রহণ করতে সাহস পায়নি।
কিন্তু যখন এই মক্কা ইসলামের ছায়াতলে আসে তখন আরব উপদ্বীপের গোত্রগুলো দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। ইসলাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ইয়ামেন থেকে সাতশত লোক ইসলাম গ্রহণ করে পথিমধ্যে আযান দিতে দিতে ও কুরআন পাঠ করতে করতে মদীনায় উপস্থিত হয়। সাধারণ আরবরাও এমনিভাবে দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করে।
৩য় আয়াত: তখন আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন।
অতঃপর উক্ত অনুগ্রহ লাভের শুকরিয়া স্বরূপ রাসূলের উচিত আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করা এবং বেশী বেশী তওবা-ইস্তেগফার করা, একথাগুলি বলা হয়েছে তৃতীয় অর্থাৎ শেষ আয়াতে।
দ্বীন ইসলামের পূর্ণতা এবং আল্লাহর নবুওয়াত রিসালত তথা খিলাফতের যে দায়িত্ব আপনার ওপর অর্পিত ছিল, তা পূর্ণতা লাভ করেছে। তাই এখন আপনি আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নিন। অতএব আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি মনোনিবেশ করুন। আগের তুলনায় তাসবীহ, তাহলীল, আল্লাহর গুণকীর্তন ও তাওবা বৃদ্ধি করুন। আল্লাহ আপনাকে যে সাহায্য করেছেন এবং বিজয় দান করেছেন তার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করুন।
উল্লেখ্য যে, উল্লিখিত আয়াতে নবীজি সাঃ-কে তাওবা করার যে নির্দেশনা দিয়েছে তা এ জন্য নয় যে, তিনি কোনো অপরাধ বা গুনাহ করেছেন বরং এ জন্য যে, তার মাধ্যমে উম্মতগণ তাওবার পদ্ধতি শিখবে।
মৃত্যু নিকটবর্তী হলে বেশি বেশি পরিমাণে তাসবীহ ও ইস্তিগফার করা উচিত। আর তা ছাড়া তাওবা করা বান্দাদের, বিশেষত তাঁর প্রিয় হাবীবের জন্য মর্যাদাপূর্ণ বিষয়। এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য বৃদ্ধি হয়।
আয়েশা রা. বলেন,
“সূরা নাসর অর্থ্যাৎ ‘ইযা জা- আনাসুরুল্লাহি ওয়াল ফাতহু’ সূরা অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রত্যেক নামাযের পর এই দোয়া পাঠ করতেন- ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলি’। (দোয়ার অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি পবিত্র, তুমিই আমার রব। সকল প্রশংসা তোমারই জন্য নির্ধারিত। হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে ক্ষমা কর।)”
(সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ হাদিস নং-৪৬০৩)
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন,
“এই সূরা (সূরা নাসর) অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আপ্রাণ চেষ্টা সহকারে ইবাদতে মনোনিবেশ করেন। ফলে তাঁর পা দুটি ফুলে যেত।”
(কুরতুবী)
(১০) সূরা নাসর এর ব্যখ্যা
মক্কা মহানবি (সা.)-এর জন্মভূমি এবং বাসস্থান ছিল। কিন্তু সেখান হতে তাঁকে এবং তাঁর সাহাবিগণকে কাফেররা মদিনাতে হিজরত করতে বাধ্য করেছিল।
যখন ৮ম হিজরিতে এই মক্কা নগরী বিজয় হল তখন লোকেরা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করতে লাগল। অথচ এর পূর্বে এক-দুজন করে মুসলমান হতো। মক্কা বিজয়ের পর মানুষের নিকট এ বিষয়টি পূর্ণভাবে পরিষ্কার হয়ে উঠল যে, তিনি আল্লাহর সত্য পয়গম্বর এবং ইসলামই হলো সত্য ধর্ম; যা অবলম্বন ব্যতীত পরকালে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।
ইসলামের এ বিজয়ের ফলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নবুয়তী দায়িত্বের পরিপূর্ণতাও বোঝানো হয়েছে। তাই বিশিষ্ট সাহাবীগণ এ সূরা নাযিল হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাত নিকটবর্তী বলে বুঝতে পেরেছিলেন। মহানবি (সা.) -এর দুনিয়াতে আগমন ও অবস্থান করার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছে বলে এ সূরায় ইঙ্গিত করা হয়েছে।
এ সূরা দ্বারা আরও বোঝানো হয়েছে যে, কোনো ব্যাপারে যখন আল্লাহ তা’আলা সাহায্য করেন, তখন অনেক অসাধ্য কাজও সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। তখন আল্লাহর তাসবিহ, প্রশংসা এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনায় অধিকতর মনোযোগী হওয়া আবশ্যক। তাই এই সূরা নাযিল হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) উঠাবসা, চলাফেরা তথা সর্বাবস্থায় (সুবাহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি) এই তাসবিহ পাঠ করতেন।
(১১) সূরা আন নাসর এর শিক্ষা
এ সূরার শিক্ষা নিম্নরূপ-
- ১. সাহায্য ও বিজয় আসে একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থকে।
- ২. আমাদের যাবতীয় কাজে আল্লাহর সাহায্য প্রয়োজন।
- ৩. আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সফলতা লাভ করা যায় না।
- ৪. কোনো কাজে সফলতা আসলে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করা উচিত।
- ৫. যাবতীয় ত্রুটি, অপরাধ বা পাপ কাজের জন্য তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।
- ৬. মহানবি (সা.)-এর কোনো পাপ কখনো ছিলো না। তবুও তাঁকে ইস্তেগফার করতে বলে মূলত আমাদের তাওবা ইস্তেগফার করতে উৎসাহিত করেছেন এবং শিক্ষা দিয়েছেন।
অতএব, সকল সাওয়াবের কাজ করতে ও পাপ কাজ থেকে বাঁচতে আমরা আল্লাহর সাহায্য চাইব। যখন আমাদের সফলতা আসবে, তখন আমরা আল্লাহর প্রশংসা করব। আর যদি কোনো ত্রুটি হয়ে যায়, এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব।
আলোচিত/উত্তরিত অনুসন্ধানসমূহ: সূরা নাসর বাংলা অর্থ সহ, সূরা নাসর বাংলা উচ্চারণ সহ, surah nasr bangla, সুরা নাসর, sura nasor, সূরা নাসর, সুরা নাসর বাংলা উচ্চারণ, সূরা আন নাসর, সূরা নাছর, সূরা নাসর এর তাফসীর, সূরা নাসর এর শানে নুযুল।
[সূত্র: এনসিটিবি]