প্রিয় দ্বীনি ভাই-বোন, এ পাঠটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- সূরা বাকারার ১৫ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যখ্যা ও শিক্ষা জানতে পারবেন; সূরা বাকারার ১৬ নং আয়াতের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা ও শিক্ষা জানতে পারবেন।
নিম্নে সহজ সংক্ষিপ্তভাবে সূরা বাকারার ১৫ ও ১৬ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-
অনুবাদ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
১৫. | ٱللَّهُ يَسْتَهْزِئُ بِهِمْ وَيَمُدُّهُمْ فِى طُغْيَٰنِهِمْ يَعْمَهُونَ আল্লা-হু ইয়াছতাহঝিউ বিহিম ওয়া ইয়ামুদ্দুহুম ফী তুগইয়া-নিহিম ইয়া‘মাহূন। আল্লাহ্ই তাদের সাথে তামাশা করেন। এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াবার অবকাশ দেন। |
১৬. | أُو۟لَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱشْتَرَوُا۟ ٱلضَّلَٰلَةَ بِٱلْهُدَىٰ فَمَا رَبِحَت تِّجَٰرَتُهُمْ وَمَا كَانُوا۟ مُهْتَدِينَ উলাইকাল্লাযীনাশ তারাউদ্দালা-লাতা বিলহুদা-ফামা-রাবিহাত্তিজা-রাতুহুম ওয়ামা কা-নূমুহতাদীন। এরা হিদায়াতের বিনিময়ে ভ্রান্তি ক্রয় করে। সুতরাং তাদের ব্যবসায় লাভজনক হয়নি, তারা সৎপথেও পরিচালিত নয়। |
ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
১৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
মুনাফিকরা মুসলিমদের নিকট গিয়ে ঈমানের ভণিতা প্রদর্শন করত। নিজেদেরকে পাক্কা ইমানদার বলে জাহির করত। আর অন্যদিকে কাফির-মুশরিক দলপতিদের নিকট গিয়ে তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলত যে, ‘আমরা তাদের সাথে ইমান এনেছি বলে হাসি-তামাশা করে থাকি।’ তাদের এ জঘন্য প্রহসনমূলক আচরণের পরিণাম তুলে ধরে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়।
মহান আল্লাহ মুনাফিকদের ঘৃণ্য আচরণের শাস্তি সম্পর্কে ঘোষণা দিচ্ছেন এ রূপে-
▣ আল্লাহ তা‘আলাও তাদের উপহাসের জবাব দিচ্ছেন। তিনি তাদেরকে আরো অবকাশ দিয়ে যাচ্ছেন যাতে তারা তাদের ঔদ্ধত্যে আরো হতবুদ্ধি ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। অপরাধের মাত্রা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেলে একদিন হঠাৎ তাদের ওপর আল্লাহর গযব আপতিত হয়।
▣ উপহাসের বদলে এ শাস্তি বিধানকেই আল্লাহর উপহাস বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ আল্লাহর পূতঃপবিত্র মহান সত্তা উপহাস করার ন্যায় মানবীয় আচরণ হতে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র। কাজেই আল্লাহ মুনাফিকদেরকে তাদের ঠাট্টার প্রতিফল দান করবেন।
▣ মুনাফিকদের বিদ্রুপের প্রতিফল তাদের ওপরই বর্তাবে। তারা ইমানদারদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।
▣ আল্লাহ মুনাফিকদের লাঞ্ছিত করবেন।
▣ পরকালে তাদেরকে দোযখের অতল গহীনে নিক্ষেপ করা হবে।
▣ অতএব সর্বতোভাবে মুনাফিকী ত্যাগ করে খাঁটিভাবে ইমানদার হয়ে আল্লাহর প্রিয় পাত্র হওয়া সকলেরই কর্তব্য।
১৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
এ আয়াতে হিদায়াত তথা সত্য-সুন্দর ইসলামের পথ গ্রহণের পরিবর্তে মুনাফিকরা যে পথভ্রষ্টতা গ্রহণ করেছে এতে মুনাফিকদের কী লাভ হল তারই বর্ণনায় মহান আল্লাহ বলেন- তারাই সেসব লোক, যারা হিদায়াতের বিনিময়ে গোমরাহী ক্রয় করেছে। এতে তারা লাভবান হতে পারেনি। বরং চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা স্বীয় কার্যকলাপের দরুন সুপথগামী হয়নি। বরং পথভ্রষ্টতার পংকে নিমজ্জিত রয়েছে।
মহান আল্লাহ মুনাফিকীকে ব্যবসায়ের সাথে তুলনা করে তাদের অবস্থা পরিস্কার করে দিয়েছেন। মুনাফিকরা সৎপথের পরিবর্তে অসৎপথ গ্রহণ করেছে। সুতরাং তাদের এ বিনিময় লাভজনক হয়নি।
সারসংক্ষেপ
মুনাফিকরা সুবিধাভোগের জন্য ইসলাম গ্রহণের ভনিতা করে থাকে। সুবিধা দেখলে আগায় এবং বিপদ দেখলে পালায়। তাদের এই ভন্ডামির ব্যবসায় দ্বারা তারা ইহকাল বা পরকাল কোনোটাতেই লাভবান হতে পারবে না।
[সূত্র: ওপেন স্কুল]