প্রিয় দ্বীনি ভাই-বোন, এ পাঠটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- সূরা বাকারার ২৮ ও ২৯ নং আয়াতের বাংলা অনুবাদ জানতে পারবেন; এ সূরার ২৮ ও ২৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ও শিক্ষাসমূহ অনুধাবন পারবেন।
নিম্নে সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে সূরা বাকারার ২৮ ও ২৯ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-
অনুবাদ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
২৮. | كَيْفَ تَكْفُرُونَ بِٱللَّهِ وَكُنتُمْ أَمْوَٰتًا فَأَحْيَٰكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ কাইফা তাকফুরূনা বিল্লা-হি ওয়া কুনতুম আমওয়া-তান ফাআহইয়া-কুম ছু ম্মা ইউমীতুকুম, ছু ম্মা ইউহঈকুম ছুম্মা ইলাইহি তুরজা‘ঊন। তোমরা কিভাবে আল্লাহর সাথে কুফরি করছ? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন জীবিত তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন। আবার তোমাদের মৃত্যুদান করবেন ও পুনরায় জীবিত করবেন। পরিণামে তাঁর নিকটেই তোমাদেরকে ফিরানো হবে। |
২৯. | هُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ لَكُم مَّا فِى ٱلْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ ٱسْتَوَىٰٓ إِلَى ٱلسَّمَآءِ فَسَوَّىٰهُنَّ سَبْعَ سَمَٰوَٰتٍ وَهُوَ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمٌ হুওয়াল্লাযী খালাকালাকুম মা-ফিল আরদিজামী‘আন ছু ম্মাছ তাওয়াইলাছছামাই ফাছাওওয়া-হুন্না ছাব‘আ ছামা-ওয়া-তিওঁ ওয়া হুওয়া বিকুল্লি শাইয়িন ‘আলীম। তিনিই সেই সত্তা (আল্লাহ) যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দান করেন এবং তাকে সপ্ত আকাশে বিন্যস্ত করেন এবং তিনিই সর্ববিষয়ে সবিশেষ অবগত। |
ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
২৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
ব্যাখ্যা
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা অন্য কাউকে তাঁর সাথে শরীক না করার জন্য সুস্পষ্ট যুক্তি পেশকরে কাফির ও মুশরিকদের লক্ষ্য করে বলেছেন, তোমরা কিসের ভিত্তিতে, কোন যুক্তিতে আল্লাহর অনুগ্রহসমূহের কথা ভুলে তাঁর বিরোধিতা করছ এবং অন্যকে উপাস্য ও মাবুদ স্বীকার করছ? অথচ তিনিই যে তোমাদের একমাত্র মাবুদ এবং আনুগত্যের অধিকারী। যেমন- তোমরা কিছুই ছিলে না, দেহে প্রাণ সঞ্চার করার পূর্বে তোমাদের কোন অস্তিত্বই ছিল না। তোমরা ছিলে সম্পূর্ণ নির্জীব। তিনিই তোমাদের প্রাণ দান করে সঞ্জীবিত করেছেন। পিতার ঔরসে ও মায়ের গর্ভের মাধ্যমে তোমাদের পৃথিবীতে আনয়ন করা হয়েছ ভূমিষ্ঠ হবার পর কিছুকাল পৃথিবীতে অবস্থান করলে। তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন। মৃত্যুর পর আবার হিসাব-নিকাশের জন্য আবার তাঁর কাছেই তোমরা সমবেত হবে। তোমাদের জীবনের উপরিউক্ত অবস্থাগুলোর কোন একটাও কি তোমাদের নিজস্ব ক্ষমতায় কিংবা তোমাদের দেব-দেবীদের সহায়তায় ঘটেছে? যদি তা না হয়ে থাকে, তবে তোমরা অকৃতজ্ঞের ন্যায় কেন এবং কি করে তাঁর বিরোধিতা করছ, সুস্থ বুদ্ধি ও বিবেকবান প্রত্যেকটি হৃদয় অবশ্যই এর বিরোধিতা করবে।
শিক্ষা
এ আয়াতের বিশ্লেষণ হতে আমরা যে মূল শিক্ষা পাচ্ছি তা হচ্ছে-
- আল্লাহ মানুষকে অফুরন্ত করুণা ও অনুগ্রহ দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।
- মানুষ প্রথমাবস্থায় ছিল নি®প্রাণ।
- আল্লাহ তাতে প্রাণ সঞ্চার করেছেন।
- আল্লাহ মানুষকে মৃত্যু ঘটিয়ে অনন্ত জীবনের দিকে নিয়ে যাবেন।
- বিচারের জন্য পুনর্জীবিত করবেন।
- তারপর সকলকেই তাঁর কাছে উপস্থিত হতে হবে এবং কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হবে।
- অতএব কখনই আল্লাহর অবাধ্য ও বিরুদ্ধাচরণ করা মানুষের পক্ষে উচিত নয়।
২৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে মানুষের প্রতি আল্লাহর অসীম দান ও অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, হে কাফিরগণ! তোমাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি করেছেন। আকাশ-বাতাস, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, সাগর-মহাসাগর, নদীনালা, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি একমাত্র তোমাদের কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন।কোনটি তোমাদের খাদ্য, কোনটি তোমাদের পানীয়, আবার কোনটি তোমাদের চোখের আরামদায়ক। অতএব দাতার দানসমূহ স্বীকারপূর্বক তাঁর প্রত্যেকটি আদেশনিষেধ মেনে চলাই প্রত্যেকটি বিবেকবান মানুষের কর্তব্য। এ জন্যই আল্লাহ তাঁর সাধারণ ও বিশিষ্ট নিআমতসমূহ স্মরণ করে দিয়েছেন।
‘সাতটি আকাশ’ বলতে কি বুঝানো হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। প্রত্যেক যুগেই মানুষ আকাশ বা পৃথিবী বহির্ভূত জগৎ সম্পর্কে নিজেদের পর্যবেক্ষণ বা ধারণা-কল্পনার ভিত্তিতে বিভিন্ন মতবাদ পেশ করেছে এবং পরবর্তী যুগে আবার তা পরিবর্তিতও হয়ে গেছে। সুতরাং কোন মতবাদের ওপর ভিত্তি করে কুরআনের এ কথার ব্যাখ্যা করা সঙ্গত হবে না। তবে সাতটি আকাশ বিন্যস্ত করার অর্থ এই যে, পৃথিবী ব্যতীত আরও যে বিরাট জগৎ রয়েছে, তাকে আল্লাহ তা‘আলা সাতটি সুদৃঢ় স্তরে বিন্যস্ত করে রেখেছেন।
‘তিনি সর্ব বিষয়ে সবিশেষ অবগত’- এ বাক্যাংশ দ্বারা দুটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব উদঘাটিত হয়েছে। প্রথমত এই যে, তোমরা সেই আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করার সাহস কর যিনি তোমাদের সকল কাজকর্ম ও গতিবিধি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল এবং যার দৃষ্টি থেকে তোমাদের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাজ এমনকি মনের কল্পনাও অদৃশ্য নয়। আর দ্বিতীয় এই যে, আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত নিগূঢ় তত্ত্ব ও তথ্য সম্পর্কে সম্যক অবগত। তিনিই মূলত সকল জ্ঞানের উৎস। সুতরাং তাঁর দিক থেকে বিমুখ হয়ে মূর্খতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই লাভ হবে না। বরং এটা চরম ক্ষতিকর।
তাফসীরে আশরাফীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “প্রথমে মহান আল্লাহ জমিনের মৌল পদার্থ সৃষ্টি করেছেন এবং তা পৃথিবীর বর্তমান আকৃতিতে আসার পূর্বেই আকাশের মৌল পদার্থ সৃষ্টি করেন- যা প্রাথমিক অবস্থায় ধোঁয়ার আকারে ছিল। অতঃপর পৃথিবীকে বর্তমান আকার দান করে তাতে গাছ, পালা, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি সৃষ্টি করেন। অতএব এ ব্যাখ্যার পর আর কোন মতানৈক্য থাকে না।
তিনি সকল বিষয়ে সার্বিক জ্ঞান রাখেন। কেননা তিনিই সকলের স্রষ্টা, সকল জিনিসের নিয়ন্ত্রক, ব্যবস্থাপক। কাজেই মানুষের উচিত তাঁরই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং তাঁরই ইবাদাত ও আনুগত্য করে জীবনকে সার্থক করে তোলা।
শিক্ষা
এ আয়াতের পর্যালোচনায় আমরা যে সব শিক্ষা পাই তা হলো-
- মহান স্রষ্টা আল্লাহ রব্বুল আলামীন একক সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। তিনিই সকলের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক।
- মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি এবং প্রতিনিধি।
- মানুষের জন্যই পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে।
- কাজেই মানুষ কোন সৃষ্ট বস্তুর কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করবে না বা তার মাথা কোন সৃষ্টি বস্তুর কাছে নত করবে না।
- মহাশক্তিধর আল্লাহ তা‘আলা মহাবিশ্বের আকাশম-লের স্রষ্টা এবং তিনিই তা সুবিন্যস্ত করেছেন। এতে অপর কারো হাত নেই।
সারসংক্ষেপ
তিনি সকল সৃষ্টিলোক সম্পর্কে অবহিত। তাঁর জ্ঞানের ও কর্তৃত্বের বাইরে কিছুই নেই। কাজেই মহান স্রষ্টা আল্লাহ রব্বুল আলামীনকে অস্বীকার করা বা অমান্য করা কারো উচিত নয়। তাঁরই ইবাদাত করা এবং তাঁরই বিধানমত জীবন পরিচালনা করা আমাদের সকলের কর্তব্য।
[সূত্র: ওপেন স্কুল]