Skip to content

 

সূরা বাকারার ৩৫, ৩৬, ৩৭ এর অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

সূরা বাকারার ৩৫, ৩৬, ৩৭ এর অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

প্রিয় দ্বীনি ভাই-বোন, এ পাঠটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- সূরা বাকারার ৩৫, ৩৬, ৩৭ নং আয়াতের বাংলা অনুবাদ জানতে পারবেন; এসব আয়াতের বক্তব্য বিশ্লেষণে এবং এসব আয়াতের বক্তব্য থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন।

নিম্নে সহজ সংক্ষিপ্তভাবে সূরা বাকারার ৩৫, ৩৬, ৩৭ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-

অনুবাদ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

৩৫.وَقُلْنَا يَٰٓـَٔادَمُ ٱسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ ٱلْجَنَّةَ وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَٰذِهِ ٱلشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ

ওয়াকু লনা-ইয়া আ-দামুছকুন আনতা ওয়াঝাওজুকাল জান্নাতা ওয়াকুলা-মিনহা-রাগাদান হাইছুশি’তুমা- ওয়ালা-তাকরাবা- হা-যিহিশশাজারাতা ফাতাকূনা- মিনাজ্জা-লিমীন।

আর আমি (আল্লাহ) বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর। এবং যেখানে ইচ্ছা পরিতৃপ্ত হয়ে আহার কর। কিন্তু এ গাছের নিকটবর্তী হইও না, হলে তোমরা যালেমদের দলভুক্ত হয়ে যাবে।
৩৬.فَأَزَلَّهُمَا ٱلشَّيْطَٰنُ عَنْهَا فَأَخْرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيهِ وَقُلْنَا ٱهْبِطُوا۟ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ وَلَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَٰعٌ إِلَىٰ حِينٍ

ফাআঝাল্লাহুমাশশাইতা-নু‘আনহা- ফাআখরাজাহুমা- মিম্মা-কা-না ফীহি ওয়া কুলনাহ বিতূবা‘দুকুম লিবা‘দিন ‘আদুওউওঁ ওয়া লাকুম ফিল আরদিমুছতাকাররুওঁ ওয়ামাতা-‘উন ইলা-হীন ।

অতঃপর শয়তান এ থেকে তাদের পদস্থলন ঘটাল এবং তারা যেখানে ছিল সেখান থেকে তাদেরকে বের করল। আর আমি বললাম, তোমরা একে অপরের শত্রুরূপে নেমে যাও এবং পৃথিবীতে কিছু কালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল।
৩৭.فَتَلَقَّىٰٓ ءَادَمُ مِن رَّبِّهِۦ كَلِمَٰتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ

ফাতালাক্কা আ-দামুমির রাব্বিহী কালিমা-তিন ফাতা-বা ‘আলাইহি ইন্নাহূ হুওয়াত্তাওওয়া-বুর রাহীম।

অতঃপর আদম (আ) তাঁর প্রতিপালকের নিকট থেকে কিছু কথা শিখলেন এবং আল্লাহ তাঁর তাওবা কবুল করলেন। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়াবান।

টীকা

‘যুলমুন’ (ظلم) শব্দের অর্থ হল যেখানে যে জিনিস রাখা দরকার তা সেখানে না রেখে অন্য স্থানে রাখা এবং কারও অধিকার হরণ করা। আর যে ব্যক্তি এরূপ কর্ম করে তাকে বলা হয় যালিম।

যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানি করে সে তিনটি বড় বড় অধিকার হরণ করে থাকে। যেমন-

  1. আল্লাহর অধিকার,
  2. যে সব জিনিস সে ব্যবহার করে সে সবের অধিকার এবং
  3. নিজের অধিকার হরণ করে।
See also  মুমিন-মুত্তাকি কাকে বলে? বৈশিষ্ট্য কি কি? (সূরা বাকারা)

কুরআনের বিভিন্ন স্থানে ‘পাপ’ কে ‘যুলুম’ এবং পাপীকে ‘যালিম’ বলা হয়েছে।

ব্যাখ্যা

৩৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যা

এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা হযরত আদম (আ) ও হজরত হাওয়া (আ)-এর প্রতি বেহেশতে অবস্থানের নির্দেশ ও কতিপয় প্রয়োজনীয় বাধা-নিষেধের কথা উল্লেখ করেছেন। হজরত আদম (আ) কে সিজদা করার নির্দেশ অমান্য করার কারণে শয়তান বেহেশত থেকে বিতাড়িত হয় এবং হজরত আদম (আ) ও হজরত হাওয়া (আ) সেখানে অবস্থান করতে থাকেন।

আল্লাহ তা‘আলা আদম (আ) কে বললেন, তোমরা নির্ভয়ে এবং সুখন্ডশান্তিতে এখানে (বেহেশতে) বসবাস করতে থাক এবং মনের আনন্দে যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঘুরে বেড়াও, যা ইচ্ছা খাও, কিন্তু এ গাছটির ফল খাওয়া তো দূরের কথা, কখনও এর ধারেকাছেও যাবে না। যদি এ আদেশ অমান্য কর তবে নাফরমানদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় তাঁরা আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা ভুলে গিয়ে সেই নিষিদ্ধ গাছটির ফল খেয়ে ফেললেন। এ ভুলের কারণে আল্লাহ তাঁদের উভয়ের ওপর অসন্তুষ্ট হলেন এবং তাঁদেরকে জান্নাত থেকে বের করে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিলেন।

যে নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে হযরত আদম (আ) ও হজরত হাওয়া (আ) জান্নাত থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন তার নাম সম্পর্কে তাফসীরকারকদের মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ ওটাকে ‘গন্ধম’ ফল বলে উল্লেখ করেছেন।

৩৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যা

হযরত আদম (আ) কে সিজদা না করার অপরাধে আল্লাহ তা‘আলা শয়তানকে তাঁর রহমত ও জান্নাত থেকে বিতাড়িত করলেন এবং আদম (আ) ও হাওয়া (রা) কে জান্নাতে স্থান দান করলেন। তাঁরা পরম সুখে জান্নাতে বসবাস করতে লাগলেন। শয়তান তাঁদের সুখন্ডশান্তি দেখে হিংসায় জ্বলতে লাগল এবং কি করে তাঁদের সুখন্ডশান্তি বিনষ্ট করা যায় তার চিন্তায় মশগুল হল।

শয়তান যখন জানতে পারল যে, আল্লাহ তা‘আলা হজরত আদম (আ) ও হজরত হাওয়া (রা) কে একটি গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছেন তখন সে বুঝতে পারল যে, যে করেই হোক এ নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়াতে পারলেই ওদের সর্বনাশ করা যাবে। শয়তান সে সুযোগের অপেক্ষায় রইল।

See also  সূরা বাকারার ১৩ ও ১৪ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

একবার শয়তান হযরত আদম (আ) ও হজরত হাওয়া (রা) কে বেহেশতে ভ্রমণরত অবস্থায় দেখে তাড়াতাড়ি এক দরবেশের বেশ ধারণপূর্বক রাস্তায় বসে কাঁদতে শুরু করে। হজরত আদম (আ) ও হজরত হাওয়া (রা) তার ক্রন্দনের কারণ জানতে চাইলে সে বলল, আমি তোমাদের অমঙ্গলের কথা চিন্তা করেই কাঁদছি। কেননা আমি জানতে পেরেছি যে, তোমরা বেহেশতের এ সুখ বেশি দিন ভোগ করতে পারবে না। অচিরেই তোমাদের মৃত্যু হবে। আদম (আ) ও হাওয়া (রা) তার এ কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলেন ও ভীষণভাবে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। শয়তান যখন বুঝল যে, তার কথায় কাজ হয়েছে তখন তাদের আরও বিশ্বাস উৎপাদনের জন্য বার বার আল্লাহর নামে কসম খেয়ে বলল আমি তোমাদের বন্ধু, তোমাদের কল্যাণ সাধনই আমার জীবনের পরম লক্ষ্য। তোমরা যদি ঐ নিষিদ্ধ গাছের ফল খাও তবেই তোমরা অমর হয়ে যাবে এবং বেহেশতে চিরকাল অবস্থান করতে পারবে। হজরত আদম (আ) প্রথমে ফল খেতে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করলেন; কিন্তু শয়তানের বার বার আল্লাহর নামে কসম খাওয়া দেখে একটু নরম হয়ে গেলেন। তার ঐ নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেললেন। এরপর তাঁদের দেহ থেকে বেহেশতী লেবাস খসে পড়ল। তাঁরা লজ্জা অনুভব করলেন এবং গাছের পাতা দিয়ে লজ্জা নিবারণের ব্যবস্থা করলেন।

আল্লাহর হুকুম হয়ে গেল যে, তোমরা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে বেহেশতে বসবাসের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছ। অতএব তোমরা পৃথিবীতে চলে যাও এবং সেখানে একে অপরের দুশমন অর্থাৎ শয়তান মানুষের চরম শত্রুরূপে বসবাস করতে থাক। তোমরা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পৃথিবীতে বসবাস করবে। যদি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আত্মরক্ষা করে আমার হুকুম অনুযায়ী সৎভাবে জীবন যাপন করতে পার তবে পুনরায় এ বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে, নতুবা দোযখের কঠিন আযাব তোমাদের জন্য অবধারিত। অতঃপর তাঁদেরকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেওয়া হল।

৩৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যা

হযরত আদম (আ) দুনিয়ায় এসে তাঁর ত্রুটি-বিচ্যুতি বুঝতে পেরে অত্যন্ত লজ্জিত হলেন, অতঃপর তিনি আল্লাহর নিকট ঐকান্তিকভাবে ক্ষমা কামনা করছিলেন। কিন্তু কিভাবে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, তার ভাষা ও পদ্ধতি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তখন করুণাময় মহান আল্লাহ তাঁর অপার অনুগ্রহে তাঁকে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য কতিপয় বাক্য ও প্রার্থনানীতি শিখিয়ে দিলেন। 

See also  সূরা বাকারার ১১ ও ১২ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

পরম করুণাময় আল্লাহ আদম (আ)-কে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য প্রার্থনাটি শিখিয়েছেন তা হলো,

“رَبَّنَا ظَلَمۡنَاۤ اَنۡفُسَنَا ٜ وَ اِنۡ لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَ تَرۡحَمۡنَا لَنَكُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ”

“রাব্বানা জলামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।”

“হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের ওপর অত্যাচার করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি করুণা না করেন, তবে আমরা নিশ্চয় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।”

(সূরা আরাফ ৭:২৩)

অতঃপর মহান আল্লাহ তাঁদের প্রতি করুণা করলেন এবং তাঁদের তাওবা গ্রহণ করে নিলেন। কেননা নিশ্চয় তিনি মহাক্ষমাশীল এবং অতীব মেহেরবান।

‘ফা-তাবা আলাইহি’- এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, তাওবা-এর অর্থ: ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা।

তাওবার সম্বন্ধ যখন মানুষের সঙ্গে হয়, তখন তার অর্থ হয় তিনটি বস্তুর সমষ্টি। যথা-

  1. কৃত পাপের স্বীকৃতি এবং সেজন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া। 
  2. পাপ সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা।
  3. ভবিষ্যতে আর এরূপ না করার সংকল্প করা।

এ আয়াতের মূল শিক্ষা হল বান্দা নিজের ভুল স্বীকার করে কৃত পাপ থেকে বিরত হলে আল্লাহ তার পাপ ক্ষমা করেন এবং মুক্তি ও রহমত দান করেন।

শিক্ষা

উল্লিখিত তিনটি আয়াত থেকে যে সব শিক্ষা আমরা গ্রহণ করতে পারি তা হলো-

  • আল্লাহ তা‘আলা আদম (আ)-কে সৃষ্টির সেরা বানিয়েছেন এবং শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদায় ভূষিত করেছেন।
  • আল্লাহ তা‘আলা আদম (আ)-কে সস্ত্রীক জান্নাতে সুখে-শান্তিতে বসবাস করার ব্যবস্থা করেন।
  • আল্লাহর আদেশ অমান্যকারী অহংকারী শয়তানকে জান্নাত হতে বহিষ্কার করেন।
  • আল্লাহর আদেশ অমান্য করা কারও জন্যই মঙ্গলদায়ক নয়। তাই আদম (আ) ও হাওয়া (রা) কে আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করার কারণে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় আসতে হয়।
  • আদম (আ) ও হাওয়া (রা) শয়তানের প্ররোচনায় আল্লাহর আদেশ ভুলে গিয়ে নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে আল্লাহর শাস্তি ভোগ করেন।
  • শয়তান মানব জাতির চরম দুশমন।
  • শয়তান সব সময় মানব জাতিকে আল্লাহর বিধান অমান্য করার ব্যাপারে প্ররোচনা দিতে থাকবে। তাই শয়তানের প্ররোচনা থেকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।
  • পৃথিবীর জীবন ক্ষণস্থায়ী। তাই পৃথিবীর মোহে মত্ত হয়ে আল্লাহকে ভুলে যাওয়া কারো জন্যই মঙ্গলদায়ক নয়।
  • পৃথিবীর জীবন সীমিত সময়ের জন্য। পৃথিবীর জীবনের পর মানুষকে অনন্ত জীবনে যেতে হবে। সেটা মানুষের আসল জীবন। সে জীবনের সফলতা বা ব্যর্থতাই মানুষের প্রকৃত সফলতা ও ব্যর্থতা। তাই দুুনিয়ার জীবনের জন্য আখিরাত জীবনের কথা ভুলে যাওয়া সমীচীন নয়।
  • সর্বাবস্থায় আমরা আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলব, শয়তানের প্ররোচনা থেকে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করব। ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর জীবনকে তুচ্ছ মনে করে আখিরাতের অনন্ত জীবনের সুখন্ডশান্তি পাওয়ার জন্য ইমান ও আমলী জিন্দেগী গড়ে তুলব।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page