প্রিয় দ্বীনি ভাই-বোন, এ পাঠটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- সূরা বাকারার ৩ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা সম্পর্কে জানতে পারবেন; সূরা বাকারার ৪ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা সম্পর্কে জানতে পারবেন; সূরা বাকারার ৫ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
নিম্নে সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে সূরা বাকারার ৩, ৪, ৫ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-
অনুবাদ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
৩. | الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ وَیُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَمِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ আল্লাযীনা ইউ’মিনূনা বিলগাইবি ওয়াইউকীমূনাসসালা-তা ওয়া মিম্মা-রাঝাকনা-হুমইউনফিকূ ন। যারা অদৃশ্যে ইমান আনে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে ও তাদের যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে, |
৪. | وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ ওয়াল্লাযীনা ইউ’মিনূনা বিমাউনঝিলা ইলাইকা ওয়ামা উনঝিলা মিন কাবলিকা ওয়াবিল আ-খিরাতি হুম ইউকিনূন। এবং তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তাতে যারা ইমান আনে ও আখিরাতে যারা নিশ্চিত বিশ্বাসী। |
৫. | أُو۟لَٰٓئِكَ عَلَىٰ هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ وَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ উলাইকা ‘আলা-হুদাম মিররাব্বিহিম ওয়া উলাইকা হুমুল মুফলিহূন। তারাই তাদের প্রতিপালক নির্দেশিত পথে রয়েছে এবং তারাই সফলকাম। |
ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মুত্তাকীদের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, তারাই মুত্তাকী যারা গায়েব বা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি (আল্লাহ) যে ধন-সম্পদ তাদের দান করেছি, তা থেকে সৎ পথে ব্যয় করে।
অদৃশ্য বা গায়েব বলতে সাধারণত মানবীয় জ্ঞান-বুদ্ধিতে যে সমস্ত বিষয় বোধগম্য হয় না, সেগুলোই বুঝানো হয়েছে। অদৃশ্য বিষয়াবলির মধ্যে আল্লাহ, নবী-রাসূল, ফেরেশতা, জান্নাত, জাহান্নাম, আরশ, কুরসী, লাওহ্, কলম, কিয়ামত, পুলসিরাত ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এ সকল গায়েবের ওপর বিশ্বাস করা ও ইমান আনা মুত্তাকীদের প্রথম বৈশিষ্ট্য।
ঈমানের পর সালাত সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদাত। ইমান এবং কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী ইবাদাত হল এই সালাত। হাদিস শরিফে আছে, ‘সালাত হল দ্বীনের খুঁটি বা স্তম্ভ। যে ব্যক্তি সালাত কায়েম করল সে যেন দীনকে কায়েম করল, আর যে ব্যক্তি সালাত পরিত্যাগ করল সে যেন দীন ধ্বংস করে ফেলল।’ অতএব সালাত কায়েমের মাধ্যমে কুরআন থেকে যারা হিদায়াত চায় তারা পায়। আর যারা চায় না তারা পায় না।
আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকা থেকে সৎপথে ব্যয় করা হল মুত্তাকীদের তৃতীয় বৈশিষ্ট্য। এ আয়াত দ্বারা যাকাত দেওয়াকে বাধ্যতামূলক করা হলেও এখানে শুধু যাকাতের কথাই বলা হয়নি বরং ধন-সম্পদসহ মানব জাতিকে আল্লাহ যা কিছু দান করেছেন তার সবই এই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। মুত্তাকী হিসেবে আল্লাহর নিকট পরিগণিত হতে হলে আমাদেরকেও এ সকল বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হবে।
৪নং আয়াতের ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
এ আয়াতে মুত্তাকীদের চতুর্থ বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ঐ সকল লোক মুত্তাকী যারা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর ওপর নাযিলকৃত আল-কুরআনকে আল্লাহর বাণী তথা আসমানি কিতাব বলে স্বীকার করে। মহানবী (স)-এর পূর্বে অন্যান্য নবীদের ওপর প্রেরিত আসমানি গ্রন্থ যথা- তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ইত্যাদিকেও আসমানি কিতাব হিসেবে বিশ্বাস করে। অতএব যারা আল-কুরআনকে আল্লাহর কিতাব বলে স্বীকার করে কিন্তু তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিলকে আল্লাহর কিতাব বলে স্বীকার করে না তারা মুমিন নয়। তবে একথা সত্য যে, মহাগ্রন্থ আল-কুরআন ব্যতীত অন্যান্য আসমানি গ্রন্থসমূহের শিক্ষা ও হুকুম-আহকামের অধিকাংশই বিলুপ্ত ও বিকৃত করা হয়েছে।
মুত্তাকীদের পঞ্চম বৈশিষ্ট্য হল, আখিরাতের ওপর ইমান আনা। আখিরাতের ওপর ইমান আনার অর্থ হল নির্ধারিত কতকগুলো বিষয়ের ওপর দ্বিধাহীনভাবে বিশ্বাস করা। দুনিয়ার সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাওয়াকে কিয়ামত বলে। কিয়ামতের পর দুনিয়ার সকল মানুষ ও জিন জাতিকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল প্রদান করা হবে। যারা দুনিয়াতে সৎকর্ম করেছে তাদের পুরস্কার হিসেবে জান্নাত এবং যারা মন্দ ও অন্যায় কাজ করেছে তাদের শাস্তি হিসেবে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে।
৫নং আয়াতের ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
সূরা বাকারার ৩ ও ৪ নং আয়াতে আল-কুরআন থেকে হিদায়াত গ্রহণকারী মুত্তাকীদের পরিচয় ও গুণাবলি তুলে ধরা হয়েছে। এই ৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন, যারা মুত্তাকীর গুণ-বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হবে, তারা তাদের প্রতিপালক মহান আল্লাহর পছন্দনীয় ও প্রদর্শিত পথে রয়েছে। সত্যিকার অর্থে তারাই দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি, মুক্তি ও সাফল্য লাভ করবে।
সারসংক্ষেপ
এখানে মুত্তাকীগণের ছয়টি গুণ-বৈশিষ্ট্যের কথা বলে দিয়েছেন।
মুত্তাকী হল তারা যারা-
- অদৃশ্যে বিশ্বাসী,
- সালাত প্রতিষ্ঠা করে,
- আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকা হতে আল্লাহর পথে ব্যয় করে,
- হযরত মুহাম্মদ (স)-এর প্রতি অবতীর্ণ আল-কুরআনকে আল্লাহর প্রদত্ত জীবন বিধান হিসেবে বিশ্বাস করে,
- পূর্ববর্তী বিভিন্ন নবীর প্রতি যে সকল আসমানি গ্রন্থ নাযিল হয়েছে, সে সকলকে সত্য বলে স্বীকার করে এবং
- আখিরাত বা পারলৌকিক জীবন সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে।
এ সমস্ত গুণ-বৈশিষ্ট্য যাদের মধ্যে রয়েছে, মহান আল্লাহ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, তারাই আল্লাহ প্রদর্শিত সহজ-সরল-সঠিক পথে রয়েছে। তারাই দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করবে।
মূলত এ আয়াতের মূল শিক্ষা হচ্ছে কুরআন থেকে পথনির্দেশনা বা হিদায়াত পাবার জন্য আমাদেরকে কুরআনে বর্ণিত উক্ত মুত্তাকী হওয়ার গুণ-বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হবে।
[সূত্র: ওপেন স্কুল]